05/05/2025
এই শিক্ষাটা কেন আমাদের কেউ দেয় না??
আমরা অনেক কিছু শিখি ছোটবেলা থেকে।
“ভদ্র হতে হবে”
“সবাইকে খুশি রাখতে হবে”
“বড়দের না বলতে নেই”
“বন্ধুকে নিরাশ করা যাবে না”
“বিয়ের পর কারোর একটা কথাই শেষ কথা”
আমাদের প্রতিদিনের পাঠ্যবইয়ের কোথাও লেখা থাকে না— “না বলাও একটা অধিকার”।
আমার এক ছাত্রী। ভীষণ হাসিখুশি, চুপচাপ একটা মেয়ে। সবাই তাকে খুব পছন্দ করে। কারণ সে কখনও কাউকে না বলে না। ক্লাস চলাকালীন একদিন ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
“তুমি শেষ কবে কাউকে না বলেছ?”
সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল,
“বোধহয় ক্লাস সিক্সে। মা বলেছিল, আমি যেন ভাইয়ের সঙ্গে চকলেট ভাগ করে খাই। আমি তখন বলেছিলাম, না। মা অনেক রেগে গিয়েছিল। তারপর থেকে আর না বলা হয় না।”
আমি কিছু বলিনি। চুপ করে শুধু ভাবছিলাম—আমরা যারা নিজেকে ভদ্র বলে ভাবি, তারাই কি কারও 'না' শুনলেই এতটা অস্বস্তিতে পড়ে যাই?
আমার পরিচিত একজন মানুষ, বড় একজন সাংবাদিক, আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলেন—
“আপনি কখনও নিজের পরিবারকে না বলেছেন?”
আমি বলেছিলাম—
“প্রথমে পারতাম না প্রথমে আমি ভালো মেয়ে ছিলাম। তারপর যবে থেকে খারাপ হলাম বহুবার না বলেছি। সেইজন্যই তো এতো জগঝম্প।"
আমরা এমন একটা সমাজে বড় হই, যেখানে “হ্যাঁ” বলাটাই শিক্ষা, আর “না” বলাটা বিদ্রোহ। যেন “না” বললেই সম্পর্ক ভেঙে যাবে, চাকরি যাবে, সংসার ভেঙে চৌচির হবে। তাই আমরা “না” বলা শিখি না। আমাদের শেখানো হয় না।
আর যখন বুঝতে পারি, সেই “না” বলাটাই আসলে মুক্তির চাবিকাঠি— তখন আমরা অনেক বড় হয়ে গেছি এবং অনেকটাই একা।
আমরা সবাই মাথায় একটা করে খাঁচা বয়ে বেড়াই। কারও খাঁচাটা খুব ভারী, কারও খাঁচাটা হালকা।
কিন্তু খাঁচা আছে। আর তার চাবিটা আমাদের কাছেই।
শুধু দরকার একটু সাহস—“না” বলার সাহস।
শেষে একটা প্রশ্ন রইল।
তুমি শেষ কবে “না” বলেছ?
বসকে?
বন্ধুকে?
মা-বাবাকে?
জীবনসঙ্গীকে?
নিজেকে?
না বলা মানে সব সময় অস্বীকৃতি নয়।
না বলা মানে—আমি আছি, আমি বুঝি, আমি অনুভব করি। না বলা মানে—নিজের কাঁধে একটা হাত রাখা। সবাইকে খুশি করতে গেলে, নিজের মনটাই সবচেয়ে কষ্ট পায়। তাই না বলাটা একরকম ভালোবাসা। নিজের জন্য।
নিজেকে ভালোবাসো।
An Animesh