11/09/2025
স্বর্ণকুমারী দেবী ও জানকীনাথ ঘোষালের কন্যা সরলা দেবী কে কেউ বলেন 'দেবী চৌধুরানী ' কেউ বলেন তিনি 'জোয়ান অফ আর্ক'। আর সরলার নিজের আবেগ, ভালবাসার জায়গায় অনেকটা জায়গা দখল করে আছেন তাঁর দিদি হিরণ্ময়ী। যখন যা সাধ হত সরলা দিদিকে ধরলেই পেতেন।বেলফুলের মালা ভারি পছন্দ ছিল বোনটির । বড় দিদি জানতে পেরে সেটা নিয়মিত আনার ব্যবস্থা করে দেন। আর একবার একটি মেয়ের গলায় সোনার নেকলেস পছন্দ হয়েছে সরলার। কে দিল সেই নেকলেস, মা নয় দিদি হিরণ্ময়ী। শুধু বোন সরলা নয় গোটা জগতের কাছে হিরণ্ময়ী তাঁর 'মা'মূর্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন..💫🌻
প্রেসিডেন্সী কলেজের বোটানির অধ্যাপক মেধাবী ফণিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হিরণ্ময়ীর, তাঁকে অনেকগুলি সন্তানবিয়োগ সহ্য করতে হয়েছে ।হয়ত সেই কারণে হিরণ্ময়ীর হৃদয় স্নেহদানের জন্য বুভুক্ষিত ছিল। মায়ের প্রতিষ্ঠিত সখি সমিতিতে আশ্রিত কোনও কোনও অনাথ বালিকাদের নিজের কাছে রেখে পালনের জন্য উন্মুখ হলেন।তারা হিরণ্ময়ী দেবী কে 'মা'বলতেন।
বোন সরলা নিজ গুণে নিজের পরিচিতি লাভ করেছেন। মাত্র সতেরো বছরে বেথুন কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক হয়েছেন।সঙ্গীতে বিশেষ দক্ষতা ও আজন্ম অনুরাগ সরলাকে সেকালের সমাজে বিশেষ পরিচিতি দিয়েছে।
'নবান্ন' উৎসব করে পৌষপার্বণের দিন পিঠেপুলি গড়া ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে সকলের মনে স্বাদেশিকতা ও জাতীয়তাবোধ জাগ্ৰত করতে চেয়েছিলেন। শুধু তাই নয় বঙ্গভঙ্গের অনেক আগে 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার 'নামে স্বদেশী জিনিসের দোকান করে জিনিস বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন স্বদেশভাবনায় বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করতে।তাই তাঁর সম্পাদনায় 'ভারতী'পত্রিকা কেবল সুকুমার সাহিত্যের বিচরণভূমি নয় বরং বাহন হয়েছিল জাতীয়তাবাদের। বীরাষ্টমী উৎসব প্রবর্তন,বাঙালি যুবকদের শরীর চর্চায় উৎসাহিত করা,ভাবোদ্দীপক স্বদেশ সঙ্গীত রচনা সর্বোপরি 'ভারতী'র পাতায় তেজোদৃপ্ত লেখনীর সাহায্যে বাঙালি কে উদ্দীপ্ত করার কাজটি সরলাদেবী করেছেন।
অবশ্যই সেসব কাজে তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন দিদির থেকে। যখন তাঁর বয়স দশ -এগারো দিদির সাথে খুলে বসেছিলেন পাঠশালা।🌿
প্রধানশিক্ষিকা হিরণ্ময়ী বোন সরলা সহকারী শিক্ষিকা। দিনের বেলায় দুই বোন বেথুন স্কুলে যেতেন।সকাল -সন্ধ্যায় বাড়িতে সতীশ পণ্ডিতের কাছে স্কুলের পড়া তৈরি করেন,সংস্কৃত পণ্ডিতের কাছে সংস্কৃত,ওস্তাদ ও মেমের কাছে গান,সেতার ও পিয়ানো শেখেন।আর স্কুল থেকে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে মুখে কিছু দিয়ে দুই বোন সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে ছটা পর্যন্ত নিজেদের পাঠশালা চালাতেন। বাংলা, ইংরেজি,অঙ্ক ও সেলাই এই চারটি বিষয় শেখানো হত।সব মিলিয়ে কুড়ির কাছাকাছি মেয়ে দুই বোনের পাঠশালায় পড়তে আসতেন। তাদের কেউ কুমারী কেউ বাল্যবিধবা। হিরণ্ময়ীর বিয়ের পরেও সেই স্কুলের দায়িত্ব পালন করছেন সরলা দেবী। অবশ্য এন্ট্রান্স পরীক্ষার দিন ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলতে সেই স্কুল বন্ধ হল। পরিশেষে হয়ত একথা বলা অত্যুক্তি হয় না সরলা দেবীর জীবন একটা ইতিহাস, তিনি নিজেই সেই ইতিহাস তৈরি করেছেন।
আজ সরলা দেবী চৌধুরানীর জন্মদিবস আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি..🌷
সংকলনে ✒️ অরুণাভ সেন
♦️তথ্যসূত্রঃ জীবনের ঝরাপাতা,সরলা দেবী,লেখিকা,ব্যক্তি ও বিষয় পরিচিতি (শ্যামলী বসু)
© এক যে ছিলো নেতা
| ে_ছিলো_নেতা |
📌 Facebook এর পাশাপাশি আমরা পথচলা শুরু করেছি YouTube এও.. আমাদের কাজ ভালো লাগলে আমাদের channel টি Subscribe করে পাশে থাকবেন..