03/07/2025
🌿🌹💚 #জয়_জগন্নাথ_অনন্ত_কোটি_প্রনাম💚🙏
👉🌻রথ যাত্রা কি ?
👉🌻 জগন্নাথ কে ?
🌿🌹১) প্রশ্ন রথ যাত্রা কি?
উত্তর: রথ এর আক্ষরিক অর্থ "রথে যাত্রা" বা "রথে ভ্রমণ"। মূলত এটি ভগবান জগন্নাথের উদ্দেশ্যে পালিত একটি উৎসব। শ্রী জন্নাথায় নমঃ “জগন্নাথ স্বামী নয়ন পথগামী ভবতু মে” রথযাত্রা আমাদের সনাতন ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ মহোউৎসব। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা প্রথম শুরু হয়েছিল ওড়িশার পুরী শহরে। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের আমলে এই রথযাত্রা শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই যাত্রা শুরু হয় এবং দশমী তিথি পর্যন্ত চলে। পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে এই রথযাত্রা শুরু হয়ে গুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত যায়। সেখানে সাত দিন থাকার পর আবার জগন্নাথ মন্দিরে ফিরে আসে।
এই উৎসবটি "রথযাত্রা" বা "রথ উৎসব" নামে পরিচিত। রথযাত্রার মূল উদ্দেশ্য হল, জগন্নাথ দেব কে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে আসা, যারা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারে না, যারা মন্দিরের বিগ্রহ দর্শন থেকে বঞ্চিত তাদের কে দর্শন লাভের সুযোগ করে দেওয়া। সুতরাং, রথযাত্রা একটি ধর্মীয় উৎসব, যা রথে চড়ে জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা কে নগর প্রদক্ষিণের মাধ্যমে পালিত হয়।
জগন্নাথ পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথের মাহাত্ম্য : রথযাত্রা মুলত তিনটি প্রধান রথে হয়ে থাকে ১. জগন্নাথ, ২. বলদেব, ৩. সুভদ্রা মহারাণীর রথ তাদের নাম এবং বর্ণনা:
🌿🌹১. নন্দীঘোষ - শ্রীজগন্নাথদেব এই রথে থাকেন। (এই রথ রথের শেষে থাকে )
রথের রং: লাল ও হলুদ
চাকা: ১৬টি উচ্চতা: প্রায় ৪৫ ফুট
ধ্বজা: কপিলধ্বজ
রথ টানার দড়ির নাম: শঙ্কচূড়া
🌿🌹২. দর্পদলন - শ্রীমতী সুভদ্রা মহারাণী এই রথে থাকেন। (এই রথ রথের মধ্যে খানে থাকে)
রথের রং: কালো ও লাল
চাকা: ১২টি উচ্চতা: প্রায় ৪৪ ফুট
ধ্বজা: নাড়ীধ্বজ
রথ টানার দড়ির নাম: স্বর্ণচূড়া
Q🌿🌹৩. তালধ্বজ - শ্রীবলভদ্র (বলরাম) এই রথে থাকেন। (এই রথ রথের প্রথম থাকে)
রথের রং: সবুজ ও লাল
চাকা: ১৪টি উচ্চতা: প্রায় ৪৬ ফুট
ধ্বজা: উন্মত্তধ্বজ
রথ টানার দড়ির নাম: বাসুকি
এই তিনটি রথ একসঙ্গে শ্রীগুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে জগন্নাথ - বলদেব - সুভদ্রা মহারাণী কিছুদিন অবস্থান করেন। এই শ্রীক্ষেত্র পুরীধামের রথ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও বিখ্যাত রথ।
রথ মানবদেহের অস্থির প্রতীক : মানবদেহ বা জীবন রথ। রথের কাঠামো আমাদের মানবদেহের ২০৬টি অস্থির প্রতীক এই রথ। সংক্ষিপ্ত ভাবে রথের চাকা-রশি-সারথি-পথ নিয়ে আলোচনা করা যাক। রথের ১৬টি চাকার সাথে আমাদের দেহের এই প্রতীক গুলো কে তুলনা করা হয় : ১) পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়, ২)পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয় এবং ৩) ছয়টি রিপুর প্রতীক।
🌿🌹১) পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়: ১) চোখ, ২) কান, ৩) নাক, ৪) জিহ্বা, ৫) ত্বক।
🌿🌹২)পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয়: ১) বাক্ (কথা বলা), ২) পাণি (হাত),৩) পাদ (পা),৪) পায়ু (মলদ্বার),৫) উপস্থ (প্রজননাঙ্গ)
🌿🌹৩) ছয়টি রিপু : ১) কাম, ২) ক্রোধ, ৩) লোভ, ৪) মোহ, ৫)মদ, ৬) মাৎসর্য ।
🌿🌹৪)রথের রশি: মানুষের মন।
🌿🌹৫) রথের সারথি (নিয়ন্ত্রক): বুদ্ধি।
🌿🌹৬)পথ: ইন্দ্রিয় দ্বারা ভোগ্য বিষয়।
সুতরাং, রথযাত্রা কেবল একটি উৎসব নয়, এটি মানব জীবনের প্রতীক, যেখানে রথ একটি গাড়ির মতো, যা মন ও ইন্দ্রিয় দ্বারা চালিত হয় এবং বুদ্ধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
🌿🌹২) প্রশ্ন জগন্নাথ কে ?🌹🌿
উত্তর: জগন্নাথ শব্দের অর্থ হল ‘জগতের নাথ’। বৈদিক শাস্ত্রানুসারে জগন্নাথ হলেন কৃষ্ণ, বলদেব হলেন তাঁর ভ্রাতা ও সুভদ্রা হলেন তাঁর বোন। যদিও কৃষ্ণ হলেন পরম ও অপ্রাকৃত তবুও তাঁর ভক্তদের সেবা গ্রহণার্থে তিনি কাঠ, পাথরের তৈরি বিগ্রহ রূপে মন্দিরে আবির্ভূত হন। যদিও জগন্নাথের রূপ কৃষ্ণের মতো নয়, তাই সাধারণ লোকেরা অবাক হতে পারে, “কিভাবে তিনি কৃষ্ণ হতে পারে?” জগন্নাথের এরকম অদ্ভুত রুপের পেছনে শাস্ত্রে অনেক কাহিনি রয়েছে। জগন্নাথদেবের আরেকটি নাম দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দারুব্রহ্ম জগন্নাথ হলেন ভগবান বিষ্ণুর একটি রূপ, যিনি কাঠের মূর্তিতে পূজিত হন। এটি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা এই ত্রিমূর্তির একটি অংশ। "দারুব্রহ্ম" শব্দটি এসেছে "দারু" (কাঠ) এবং "ব্রহ্ম" (চূড়ান্ত বাস্তবতা) থেকে, যা নির্দেশ করে যে এই মূর্তিটি কাঠের তৈরি হলেও এটি ব্রহ্মের প্রতীক।
"দারুব্রহ্ম জগন্নাথ" কথাটি মূলত ভগবান জগন্নাথের একটি বিশেষ নাম, যা তার কাঠের মূর্তিকে বোঝায়।
পুরাণে বর্নিত আছে, বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার কাঠের স্তম্ভ ভেঙে বেরিয়েছিলেন। তাই জগন্নাথকে দারুব্রহ্ম রূপে নৃসিংহ স্তোত্র পাঠ করে পূজা করা হয়। জগন্নাথকে এককভাবে পূজা করার সময় বলা হয় "দধিবামন"। প্রতি বছর ভাদ্র মাসে এই জগন্নাথকে বিষ্ণুর বামন অবতারের বেশে পূজা করা হয়।
🌹🌿বেদের বর্ণনায় জগন্নাথঃ স্কন্দ পুরাণ শাস্ত্রের বিষ্ণু খন্ড,পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য,১-২১ তম অধ্যায়ের বর্ণনা অনুযায়ী, বিষ্ণুভক্ত ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রার্থনায় স্বয়ং বিষ্ণু দারুরুপে উড়িষ্যার দক্ষিণ সাগরের তটে অবস্থান করেন। পরে ইন্দ্রদ্যুম্ন সেবকগন কতৃর্ক সেই দারুকে মহাবেদীতে স্থাপন করেন।ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রার্থনায় ভগবান বিষ্ণু যিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তিনি দারু থেকে জগন্নাথ( শ্রীকৃষ্ণ), বলদেব (বলরাম), সুভদ্রা এবং সুদর্শনরুপে প্রকাশিত হয়েছিলেন। বেদ শাস্ত্রে সমুদ্রের তীরবর্তী দারুব্রহ্ম জগন্নাথের কথা বর্ণিত আছে।
🌹🌿যদ্ দারু প্লবতেসিন্ধোঃ পারে অপূরুষম্।
তদা রভস্ব দুর্হণো তেন গচ্ছ পরস্তরম্।। (ঋগ্বেদ সংহিতাঃ ১০/১৫৫/৩)
🌹🌿অনুবাদঃ ঐ দূরদেশে, সমুদ্রের পারে কোন প্রযত্ন ছাড়াই প্রকাশিত অপৌরুষেয় দারু ভাসছে– হে চিরঞ্জীবী স্তুতিকর্তা– তাঁর উপাসনা কর। সেই দারুময় বিগ্রহের উপাসনায় তুমি শ্রেষ্ঠতর দিব্যলোক প্রাপ্ত করবে।
তাছাড়া মহাভারতে বহুবার শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীবিষ্ণু নামে সম্বোধন করা হয়েছে
(“অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোক নমস্কৃতঃ।বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।।”
“ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন৷” -মহাভারত আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮)। সে শ্রীকৃষ্ণ বা বিষ্ণু হলেন স্বয়ং দারুব্রহ্ম জগন্নাথ।দারুব্রহ্ম জগন্নাথ রুপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উৎকল বা উড়িষ্যায় সমুদ্রের তীরবর্তী শ্রীক্ষেত্র পুরুষোত্তম ধাম জগন্নাথ পুরীতে নিত্য বিরাজমান।
🌹🌿জগন্নাথ দেবের কেন এমন রূপ :
রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন নীলমাধবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজদরবারে কারিগর কে ডেকে পাঠান, তখন সেই কারিগর অর্থাৎ বিশ্ব সৃষ্টিকারী বাবা বিশ্বকর্মা তাদেরকে শর্ত দেন 'যতদিন আমি এই ঘরে মূর্তি তৈরি করব ততদিন এই ঘরে যেন কেউ ভুল করেও প্রবেশ না করে' আর এই শর্ত মাথা পেতে নেন পুরীর রাজা। কিন্তু একদিন হঠাৎই রাজার স্ত্রী গন্ডিচা নীলমাধবের মূর্তি দেখার জন্য বিচলিত হয়ে পড়েন এবং বারণ সত্বেও সেই ঘরে তিনি প্রবেশ করেন। আর যাহা মাত্র তিনি ঘরে প্রবেশ করেন অমনি চোখের পলকে ভ্যানিস হয়ে যাই মূর্তি নির্মাণকারী কারিগর। আর সেই অসম্পূর্ণ মূর্তি ছোট্ট একটি ভুলের কারণে অসম্পূর্ণই থেকে যায়। সেই রাতে নীলমাধব আবারো রাজাকে স্বপ্না দেশ দেন এই অসম্পূর্ণ মূর্তি পুজো করার জন্য, আর যার নাম হবে জগন্নাথ। আর প্রভু জগন্নাথ দেবের বড় বড় চোখ হওয়ার পেছনে কারণ হলো, তিনি জগতের নাথ অর্থাৎ প্রভু জগন্নাথ। যিনি এক সেকেন্ডের জন্যেও চোখের পলক ফেলেন না। কারণ, তার এই দুটি নয়ন দিয়ে সদা সর্বদা মহাবিশ্বে তিনি নজর রাখেন। আর সেই কারণেই জগন্নাথ দেবের চোখ কখনো বন্ধ হয় না ও তার চোখ এত বড় বড়। তাই আজ প্রভু জগন্নাথ দেবের এই রহস্য
“বাসুদেব ঘোষ বলে করি জোড় হাত যেই গৌর- সেই কৃষ্ণ - সেই জগন্নাথ” আমরা সবাই জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে যেন জগন্নাথ দেবের লীলা মাহাত্ম শুনে জগন্নাথ দেবের কৃপা লাভ করতে পারি ও জগন্নাথ দেবের রথ স্পর্শ করে অপ্রাকৃত আনন্দ ও জগন্নাথ দেবের বিশেষ কৃপালাভ করতে পারি । তাই আমাদের সকলকেই এই জগন্নাথের রথ যাত্রায় অংশগ্রহন করা উচিত।