03/12/2025
#কচি_পাতা
#বইমেলার_বই
চিনারের পাতা যখন শুঁকিয়ে যায়, তখন তা লাল রক্তবর্ণ ধারণ করে। নভেম্বরের শেষ সময় থেকেই এই শুঁকনো পাতা উড়ে গিয়ে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে। ঠিক যেভাবে ১৯৯০ সালে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন কাশ্যপ ভূমির ভূমিপুত্র কাশ্মীরি পন্ডিতেরা। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হল কাশ্মীরি পণ্ডিত খেদাও অভিযান, মিছিল জমায়েত থেকে আওয়াজ উঠতে লাগলো – “না রা য়ে তক দির, আল্লা হো আকবর”। পণ্ডিত মহল্লায় হামলার সময় মসজিদের মাইকে আজানের আওয়াজ বহু গুন বাড়িয়ে দেওয়া হল যাতে আর্তনাদ, চিৎকার বাইরে শোনা না যায়। স্লোগান দেওয়া হতে লাগলো – “হাম ক্যা চাহতে আজাদি কিংবা অ্যায় জালিমো, অ্যায় কাফিরোঁ, কাশ্মীর হমারা ছোড় দো”। হ*, অপ*রণ, লুটপাট, মহিলাদের রে* কোনো কিছুই বাদ গেলো না, ১৯৯০ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ পণ্ডিত পরিবার হল কাশ্মীর ছাড়া। বেশিরভাগ আশ্রয় পেল জম্মুতে তৈরি হওয়া আশ্রয় শিবিরে আর বাকিরা ছড়িয়ে পড়ল ভারতের অন্যান্য শহরে। জম্মুর হাঁসফাঁস করা গরমে নোংরা বস্তির এক চিলতে তাঁবুতে কোনোমতে সংসার, সরকারের দেওয়া রেশনের চাল-ডাল নিয়ে কোনোরকমে ক্ষুন্নিবৃত্তি। এক সময়ে যাঁদের আপেলের বাগান ছিল, দেওদার কাঠের বহুমুল্য আসবাব ছিল তারাই জম্মুতে চরম অসম্মানের জীবনযাপন করে চলেছেন।
কেউ তো প্রশ্নও করেন না – এ কেমন স্বাধীনতার লড়াই? যেখানে এক সম্প্রদায়কে স্বদেশ, ঘরবাড়ি, পরিবার, ইজ্জত সব কিছু হারাতে হবে? কেনই বা দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে, উপত্যকায় পণ্ডিতদের ফেরার সম্ভাবনা কমে আসায়, নেকড়েরা তাঁদের বসতবাড়ি, বাগান জলের দরে কিনে নিতে জম্মুতে দালাল পাঠাতে থাকবে? এই এত বড় exodus, কিন্তু তদানীন্তন ভারত সরকারের টনক নড়ল অনেক বাদে, ততদিনে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে। কাশ্মীরের স্টেট পুলিশের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে দেওয়া হল সেনাবাহিনী আর প্যারা মিলিটারি বাহিনীর হাতে, কাশ্মীর পরিণত হল battlefield এ। যেকোনো যুদ্ধক্ষেত্রে যা হয়, সন্ত্রাসবাদী/ জিহাদীদের সাথে প্রাণ যেতে লাগলো সাধারন নিরাপরাধ মানুষের। আপনাদের মনে আছে পাকিস্থানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো একসময় বলেছিলেন “হাম হাজার সাল ঘাস খায়েঙ্গে, লেকিন কাশ্মীর লেকে রেহেঙ্গে”, পাকিস্থানের চিরদিনের স্বপ্ন কাশ্মীর বনেগা পাকিস্থান। তাই বাস্তবতার নিরিখে কাশ্মীরের স্বাধীনতার অসম্ভব। একটু জেনে নেওয়া যাক এই স্বাধীনতার দাবী কি আপামর জম্মু এবং কাশ্মীরের জনগনের? না, এই দাবী প্রধানত মুসলিম প্রধান কাশ্মীর ভ্যালির। কয়েকটি জেলা নিয়ে এই কাশ্মীর ভ্যালি। হিন্দু প্রধান জম্মু এবং বৌদ্ধ প্রধান লাদাখ ভারতের সাথেই থাকতে চায়। তাহলে কয়েকটি জেলা নিয়ে তৈরি কাশ্মীর ভ্যালির অবস্থা কেমন? একটি ল্যান্ড লকড জায়গার মতন, ভারতের মাথার উপর এধরনের একটি ল্যান্ড লকড দেশ না ভারতের পক্ষে শুভ হবে না সেই দেশটির পক্ষে শুভ। তর্কের খাতিরে যদি মেনে নেওয়া হয় যে কাশ্মীর ভ্যালি স্বাধীনতা পায়ও তবে পরের দিনই পাকিস্থান এটিকে দখল করে নেবে। আর তাঁর ফল হবে এই যে, কাশ্মীর ভ্যালীতে এখনও যে কয়েক লক্ষ হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ আছে তাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করা হবে। নয়ত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সাথে যা ঘটে ছিল ঠিক তাই হবে।
এই উপন্যাসে সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখের অনুভূতিও তুলে ধরা হয়েছে। উপত্যকায় বাসবাসকারি প্রতিটি মুসলিম পরিবার দেশদ্রোহী, হিন্দুবিদ্বেষী, এ ধারণা সঠিক নাকি বেঠিক, তা এই উপন্যাস পড়লে পাঠকরা বুঝতে পারবেন। এখনও উপত্যকায় বহু পণ্ডিত পরিবার থাকেন যারা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোনো সাহায্যই পাননি, কিন্তু তারা কাশ্মীর উপত্যকায় এখনও বসবাস করছেন এবং তারা বসবাস করছেন তাঁদের প্রতিবেশীদের ওপর নির্ভর করে।
‘কচি পাতা’ থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে দেবশ্রী চক্রবর্তী বিরচিত ‘লাল চিনার পাতা’।
প্রচ্ছদ: কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল
প্রিবুকিং শীঘ্রই শুরু হবে…