
09/04/2025
ওয়াক্বাফ বিল নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড়, অথচ বহু মুসলমান ওয়াক্বাফের মসলা-মাসায়েল সম্পর্কে তেমন কিছু জানেই না।
প্রশ্নোত্তরে وقف ওয়াক্বাফ সম্পর্কে
কিছু জরুরী মসলা-মাসায়েল।
প্রথম পর্ব।
প্রশ্ন নং ১/
ফিক্বাহ শাস্ত্রে ওয়াক্বাফ কাকে বলা হয়?
উত্তর:- ফেক্বাহ শাস্ত্রে, কোন বস্তুকে নিজের মালিকানা থেকে বের করে, আল্লাহ তায়ালার মালিকানায় করে দেওয়ার নাম হলো ওয়াক্বাফ।
(তারিফাত-১১৭ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন নং ২/ কোন না জায়েয ও গুনাহের কাজের জন্য কি কিছু ওয়াক্বাফ করা জায়েয হবে?
উত্তর:- জী না, জায়েয হবে না। ওয়াক্বাফের যত শর্তাবলী রয়েছে, তার মধ্যে এটাও একটি শর্ত যে, যার জন্য ওয়াক্বাফ করবে, সেটা যেন মূলতঃ নেকীর কাজ হয়, যদি সেটা নেকীর কাজ না হয়, তাহলে ওয়াক্বাফ দুরুস্ত হবে না।
দুর্রে মুখতার ওয়াক্বাফ অধ্যায় ৬তম খন্ড ৫২৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে,
ان يكون قربة فى ذاته معلوما
প্রশ্ন নং ৩/ ওয়াক্বাফের সম্পত্তি কি বিক্রি করা চলবে?
উত্তর:- জী না, ওয়াক্বাফের সম্পত্তি বিক্রি করা, দান করা এবং ওয়ারিস সূত্রে তার মালিক হওয়া চলবে না।
হেদায়া কিতাবের ২ খন্ডের ওয়াক্বাফ অধ্যায় এ ৩৫০ পৃষ্ঠায় আছে যে,
ولا يباع ولا يوهب ولا يورث
প্রশ্ন নং ৪/ ওয়াক্বাফের সম্পত্তির মধ্যে কোন রকম পরিবর্তন আনা কি চলবে?
উত্তর:- জী না, ওয়াক্বাফের সম্পত্তি পরিবর্তনশীল নয়। ওয়াক্বাফের সম্পত্তি যে কাজের জন্য ওয়াক্বাফ করা হয়েছে, ঐ কাজের জন্য তার ব্যবহার বহাল রাখা জরুরী।
রাদ্দুর মুহতার ৪র্থ খন্ডের ৩৮৮ পৃষ্ঠায় আছে,
الواجب ابقاء الوقف على ما كان عليه
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২ খন্ডের ৪৯০ পৃষ্ঠায় আছে যে,
لا يجوز تغيير الوقف عن هيئته
অর্থাৎ - ওয়াক্বাফের সম্পত্তিতে পরিবর্তন আনা জায়েয নয়।
প্রশ্ন নং ৫/ কোন জমি-জায়গা জবরদস্তি দখল করা কি জায়েয??
উত্তর:- জী না, কোন জমি-জায়গা জবরদস্তি দখল করা জায়েয নয়, বরং নাজায়েয ও হারাম।
সহী বোখারী শরীফ ১ম খন্ডের ৩৩২ পৃষ্ঠায় একটি হাদীসে আছে যে,
من اخذ من الأرض شيئا بغير حقه خسف به يوم القيامة الى سبع أرضين
অর্থাৎ - যে ব্যক্তি অন্য লোকের জমি-জায়গার কিছু অংশ জবরদস্তি দখল করে নিয়ে নিবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তাবাক জমিনের নিচে ধসিয়ে দেওয়া হবে।
প্রশ্ন নং ৬/ কোন বস্তুর উপর নির্ভরশীল করে এবং অস্থায়ী ভাবে কিছু ওয়াক্বাফ করা কি জায়েয?
উত্তর:- জী না, কোন বস্তুর উপর নির্ভরশীল করে এবং অস্থায়ী ভাবে কিছু ওয়াক্বাফ করা জায়েয নয়।
ওয়াক্বাফের যত শর্তাবলী রয়েছে তার মধ্যে এই দুটিও আছে যে, ওয়াক্বাফ করাকে কোন বস্তুর উপর নির্ভরশীল বা ঝুলিয়ে না রাখে এবং সেই ওয়াক্বফ অস্থায়ী না হয়।
তানাহলে ওয়াক্বাফ বাতিল বলে গণ্য হবে।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২ খন্ডের ৩৫৬ পৃষ্ঠায় আছে যে,
(و منها) التابيد و هو شرط على قول الكل.
প্রশ্ন নং ৭/ যিনি ওয়াক্বাফ করবেন, তিনি যদি ওয়াক্বাফে কোন শর্ত দেন, তাহলে কি ওয়াক্বাফ করা জায়েয হবে?
উত্তর:- জী হ্যাঁ, ওয়াক্বাফকারী তার ওয়াক্বাফ নামাতে যদি এমন কিছু শর্ত দেন যে গুলি শরীয়ত বিরোধী নয়, তাহলে জায়েয হবে।
রাদ্দুর মুহতার ৬তম খন্ড ৫২৭ পৃষ্ঠায় আছে যে,
ان شرائط الوقف معتبرة اذا لم تخالف الشرع
প্রশ্ন নং ৮/ ওয়াক্বাফের সম্পত্তি যদি কেউ দখল করে, তাহলে মুসলমানদের করনীয় কি?
উত্তর:- যথা সাধ্য এবং বৈধ পন্থায় ওয়াক্বাফের সম্পত্তিকে অত্যচারির হাত থেকে রক্ষা করা মুসলমানদের উপর ফরয।
ফাতাওয়া রেজবীয়া শরীফ ৬তম খন্ড ৩৫০ পৃষ্ঠায়, আ'লা হাযরাত ইমাম আহমাদ রেযা খান ক্বাদেরী বেরেলবী আলাইহির রহমা লিখেছেন যে,
مسلمانوں پر فرض ہے حتیٰ المقدور ہر جایز کوشش حفظ مال وقف۔۔ کریں
এই কাজ করতে যত টাকা ও সময় খরচ হবে, তার জন্য নেকীর অধিকারী হবে।
প্রশ্ন নং ৯/ যিনি ওয়াক্বাফ সম্পত্তির মুতাওয়াল্লী বা সম্পাদক, তিনি কি ইচ্ছা করলে ওয়াক্বাফ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন?
উত্তর:- জী না, তিনিও ওয়াক্বাফ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন না।
ফাতাওয়া রেজবীয়া শরীফ ৬তম খন্ড ৪৪২ পৃষ্ঠায় আছে,
وہ کہ واقف نے مسجد پر وقف کیا اسے کوئی بیچ نہیں سکتا نہ متولی نہ اہل محلہ نہ حاکم نہ کوئی ۔
ওয়াক্বাফের সম্পত্তি কেউ বিক্রি করতে পারবে না, না মুতাওয়াল্লী, না গ্রামবাসী না বাদশা না আর কেউ।
প্রশ্ন নং ১০/ সরকারী জায়গা কি কেউ ওয়াক্বাফ করতে পারে?
উত্তর:- জী না, সরকারী কোন জমি-জায়গা কেউ ওয়াক্বাফ বা দান করতে পারে না।
কেননা, ওয়াক্বাফের যত শর্তাবলী রয়েছে তার মধ্যে একটি শর্ত হলো, ঐ সম্পত্তির মালিক হতে হবে।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২য় খন্ডের ৩৫৩ পৃষ্ঠায় আছে যে,
و منها الملك وقت الوقف
تلك عشرة كاملة
আরও বিস্তারিত জানতে হলে দেখুন, ফাতাওয়া মারকাযে তারবিয়াতে ইফতা, ওয়াক্বাফ অধ্যায়।
আল্লাহ তায়ালা সকলকে যেন বিষয়টি বুঝার এবং আমল করার তাওফীক দান করেন ।
আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
আরয গুযার ও দোওয়া প্রার্থী
(মুফতী মোঃ আলিমুদ্দিন রেজবী মাযহারী।
সহকারী শিক্ষক:- নাইত শামসেরিয়া হাই মাদ্রাসা (উচ্চ মাধ্যমিক) রঘুনাথগঞ্জ, জঙ্গীপুর, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ।
বিঃ দ্রঃ - বানানগত ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
আর তথ্যগত কোন ভুল ত্রুটি কারো নজরে পড়লে আমাকে জানাবেন পরে আমি সংশোধন করে দিবো। ইনশাল্লাহ।
সকলকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য শেয়ার করতে ভুলবেন না।