
02/02/2025
সারদা প্রসাদ কিস্কু ছিলেন সাঁওতালি সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি শুধু একজন কবি বা লেখকই নন, বরং সমাজ সংস্কারক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর জীবন ও সাহিত্য সাঁওতাল সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং আজও তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে।
১৯২৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আজকের দিনে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার দাঁড়িকাডোবা গ্রামে সারদা প্রসাদ কিস্কুর জন্ম হয়। তাঁর বাবা চরণ কিস্কু এবং মা ধনমনি কিস্কু ছিলেন সাধারণ কৃষক, কিন্তু তাঁরা তাঁদের সন্তানের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সারদা প্রসাদ পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন, তবে দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষাজীবন সহজ ছিল না। তিনি জোরোবাড়ি নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে বড়গড়িয়া উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়, রানিবাঁধ মিডল স্কুল এবং খাতড়া হাই ইংলিশ স্কুল থেকে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন, যা সেই সময়ের জন্য এক বিশাল অর্জন ছিল।
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি বিষ্ণুপুরের রামানন্দ কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যা তাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বাধা দেয়। তবে তিনি শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কখনো হারাননি। পরবর্তী সময়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন এবং জামতোড়িয়া সিনিয়র বেসিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।
১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি তাঁকে ‘আদর্শ শিক্ষক’ উপাধিতে ভূষিত করেন, যা তাঁকে প্রথম সাঁওতাল শিক্ষক হিসেবে এই সম্মান এনে দেয়। ১৯৮৩ সালে ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘কবিরত্ন’ উপাধিতে সম্মানিত করে।
ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্যচর্চার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। সাধু রামচাঁদ মুরমুর ‘সারিধরম সেরেঞ পুঁথি’ তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, এবং তিনি কবিতা ও প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম সাঁওতালদের সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম ও দৈনন্দিন জীবনকে তুলে ধরে। তিনি ‘হড় সম্বাদ’, ‘সুসৗর ডাহার’, ‘তেতরে’ ইত্যাদি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন এবং ‘টটকো মলং’ ও ‘পাতাং সুরৗই’ ছদ্মনামে রচনা প্রকাশ করতেন।
সারদা প্রসাদ কিস্কু শুধু সাহিত্য রচনা করেই থেমে থাকেননি, তিনি সমাজ সংস্কারের কাজেও নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি সাঁওতাল সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন এবং সারিধরমের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর নেতৃত্ব ও প্রচেষ্টায় অনেক সাঁওতাল তরুণ শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়েছিল এবং নিজেদের উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পেরেছিল।
১৯৮৯ সালে তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করেন, তবে তাঁর সাহিত্য ও সমাজসেবার কাজ কখনো বন্ধ হয়নি। তিনি আমৃত্যু সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন। ১৯৯৬ সালের ১৮ ই মার্চ তিনি পরলোকগমন করেন।
তাঁর স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছর ২ ই ফেব্রুয়ারি ‘কবি সারদা প্রসাদ কিস্কু স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করে আসছে। এটি তাঁর অবদানের স্বীকৃতি এবং সাঁওতালি সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন।
কবি সারদা প্রসাদ কিস্কুর জন্মদিন JOHAR DIARY ফেসবুক পেজের পক্ষ থেকে কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি রইলো ।