10/05/2020
ফিরে দেখা দেউলঘাটা
গড়জয়পুর,পুরুলিয়া
পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত এই সুপ্রাচীন ধর্মস্থল টি।
দেউলঘাটা শব্দ টির অর্থ "দেউল" বা মন্দির এর সমাবেশ।একদিকে ধর্মীয় ও অন্য দিকে এইরকম ঐতিহাসিক জায়গা; বৌদ্ধ ও হিন্দু পুরাতত্ত্ব এর এরকম নিদর্শন পুরুলিয়া তে একমাত্র এখানেই আছে,কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অনেক কাল আগের ভিন দেশীয় আক্রমনে ও সময়ের সাথে সাথে দেউলঘাটা আজ ধ্বংসস্তূপ এ পরিনত হয়েছে।
কিন্তু এত কিছুর পরও যা অবশিষ্ট আছে তা দেখলেই প্রাচীন সভ্যতার শিল্পের নমুনা ভালভাবেই পাওয়া যায়।
কংসাবতী নদীর তীরে অবস্থিত এই দেউলঘাটা অনেক ঐতিহাসিক ওঠা পড়ার সাক্ষী,সবথেকে প্রথম এ এখানে পা পড়ে বৈদিক যুগের আর্যঋষি দের, বৈদিক আর্যঋষি রা সাধারনত উত্তরমুখি নদীর তীরেই আশ্রম তৈরি করতেন।নদী তে নামার পুরনো যে সিঁড়ি গুলো ছিল তা আর্যঋষি দের দ্বারা নির্মিত।
তারপর এলো সম্রাট অশোক এর আমলে বৌদ্ধ ধর্মের স্বর্ণযুগ,সেই সময় বৌদ্ধধর্ম ভারতের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল।দেউলঘাটাও তার প্রভাব থেকে নিস্তার পায় নি, বৌদ্ধ ধর্মের নিচে চাপা পড়ে গেল বৈদিক ধর্ম। বলা যেতে পারে যে,অশোক এর আমল থেকে কনিস্ক পর্যন্ত এখানে বৌদ্ধ প্রতিপত্তি ছিল তার প্রমান আজও পাওয়া যায়।যদিও তা খুবই অল্প।
এরপর প্রায় সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ভারতবর্ষে আবির্ভাব হয় শঙ্করাচার্যের,
বহু বৌদ্ধমঠ শঙ্করাচার্যের প্রভাবে হিন্দু মন্দিরে পরিনত হয়।খুব সম্ভবত তখন থেকেই এই জায়গার নাম হয় দেউলঘাটা।তখন দেউলঘাটা পুরোপুরি হিন্দু দেবদেবী দের পীঠস্থান কিন্তু সেই গৌরব বেশিদিন টেকে নি,বিধর্মী শাসক দল যখন জানতে পারলো হিন্দুসাধু দের ঘাটির কথা,তারা আক্রমন করল.........
দেউলঘাটার মাটি লাল হয়ে গেল হিন্দু সাধু দের রক্তে,বর্বর বিধর্মীরা ধ্বংস করে দিয়েছিলো সবকিছু, এই অঞ্চলের সব থেকে বড় পীঠস্থান শ্মশানভুমি তে পরিনত হল।
আর্যঋষি দের হাতে প্রান পেয়েছিল,বৌদ্ধদের সানিধ্য পাওয়ার পর শঙ্করাচার্যের হাতে পড়েছিল তারপর ধর্মদ্রোহীদের অত্যাচার এ শেষ হয়ে গেল সবকিছু।
আস্তে আস্তে জঙ্গল এ পরিনত হল দেউলঘাটা।
বর্তমানে অবশিষ্ট মূর্তি ও দেউল গুলো কে ঘিরে পুজা অর্চনা করা হয়,পৌষ মাসে বিশাল মকর মেলা বসে এখানে আর একবার চৈত্র মাসে বারুনি মেলা হয় এছাড়া শীতকালে এখানে পিকনিক করার জন্য অনেক জায়গা থেকে লোকজন আসে।
লেখা ও ছবি-রণ দাস
সহযোগিতা-রূপম লাহা
তথ্য-"মন্দির নগরী" লেখিকা-তনুশ্রী মুখার্জি
উইকিপেডিয়া