
23/03/2025
৭ ২৫মিনিট এ মিছিল করে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে চললেন ভগৎ সিং ,রাজগুরু , সুখদেব..সবার কন্ঠে জেলের আকাশ বাতাস ধ্বনিত হয়ে উঠেছিলো- " ইনকিলাব জিন্দাবাদ , বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক " | ভূপেন্দ্র কিশোর রক্ষিত রায়ের কথায় "যাদের নয়নে বন্হিশিখা , বাহুতে অমিত শক্তি ,হৃদয়ে আত্ম বলি দান এর আবেদন, রক্তে সর্বনাশ এর নেশা "
১৯৩১ সালের ২৩ সে মার্চ লাহোর সেন্ট্রাল জেলে মাত্র ২৩ বছর বয়সে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দিয়েছিলেন অগ্নি যুগ এর বীর সেনা ভগৎ সিং |১৯০৭ সালের ২৮ এ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাব এর বাংগা গায়ের এক বিপ্লবী পরিবারে জন্ম |পিতা কিষেন সিং ও দুই কাকা অজিত সিং এবং সরণ সিং সবাই স্বদেশী আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন |মানুষ এর চরিত্র তার পরিবেশ এর প্রভাবে বিকশিত হয়ে ওঠে |ছোটো বয়সে কর্তার সিং সারাবা কে দেখে গভীর ভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন |আবার শিক্ষক হিসেবে বিপ্লবী নেতা সচিন সান্যাল , জয়চাঁদ বিদ্যালঙ্কার প্রমুখ এর সান্নিধ্যে আসেন | ভগৎ সিং বিশ্বাস করতেন অন্ধভাবে কোনও মতামত ও পন্থা অনুসরণ করা উচিত নয় সমস্ত কিছু কে মূল্যায়ন করে তার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে তবেই তা গ্রহণ করতে হয় |তাই তার জ্ঞানাকাঙ্ক্ষা ছিল তীব্র ,তাকে নিবিড় ভাবে পড়তে দেখা যেতো ধনতন্ত্র , সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ ধর্ম বিভিন্ন বিষয় | জেলে থাকা কালীন ও তার বই পড়া ছিল অব্যাহত |শেষ ইচ্ছে তে জানিয়ে ছিলেন তিনি লেনিনের জীবনী পড়ছেন সেটি শেষ করে যেতে চান মৃত্যুর আগে |
দেশের জন্য কাজ করবো বলা সহজ কিন্তু করা খুব কঠিন | কারণ পদে পদে অপেক্ষা করে থাকে অসংখ্য বিপত্তি, দুঃখ কষ্ট এবং মৃত্যু সম অশেষ পীড়ন | দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও সাহসিকতা | কারণ ইতিহাস তাদেরই শুধু মনে রাখে যারা ষোলো আনা দিতে সক্ষম |যারা পারে না তারা হারিয়ে যায় মানুষের মন থেকে | ভারত মাতার দামাল ছেলেদের মুখে মুখে তখন রামপ্রসাদ বিসমিল এর লেখা
"
Sarfaroshi ki tamanna
Abb hamaare dil mein hai
Dekhna hai zor kitna
Baazu-e-qaatil mein hai"
এরপর ১৯২৭ সালের মে মাসে কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলার সাথে যুক্ত থাকার সন্দেহে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং রাজসাক্ষী হিসেবে পেশ করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন | ঠাকুর রোশন সিং, রাজেন্ লাহিড়ী ও আসফাকউল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে কাকোরী মামলার শেষ হয় |১৯২৮ সালের ১৭ ই নভেম্বর সর্ব ভারতীয় নেতা পাঞ্জাব এর লালা লাজপত রায় এর মৃত্যু হয় পুলিশ এর অত্যাচার এ | তার ঠিক ১ মাস পর ভগৎ সিং ,রাজগুরু , সুখদেব.,প্রমুখ বিপ্লবী রা তার বদলা নিলেন পুলিশ এর ছোটো কর্তা s.p স্যান্ডার্স কে হত্যা করে | এরপর সহকর্মী ভগবতী চরণ ভোরার স্ত্রী দুর্গা দেবীর সাথে ছদ্মবেশে ভগৎ সিং এলেন বাংলায় | প্রথমে অস্ত্র সংগ্রহ এর চেষ্টা তে বিশেষ সাফল্য পেলেন না এরপর দেখা হল বাংলার যতীন দাস এর সাথে | এরপর ৮ এই এপ্রিল ১৯২৯ সাল দিল্লী অ্যাসেমবলি হল এ বোমা বিস্ফোরণ করে স্বেচ্ছায় ধরা দিলেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত |আস্তে আস্তে পুলিশ এর তল্লাশি তে ধরা পড়লেন যতীন দাস সহ বাকিরা | ১৯২৯ এর ১৫ জুন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত জেলের মধ্যে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার দাবি তে অনশনে বসেন পরে ১৩ জুলাই থেকে বাকি সদস্যরাও যোগ দিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম যতীন দাস |দীর্ঘ তেষট্টী দিনের অনশন শেষে যতীন দাস শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন.. এরপর ভগৎ সিং এর ফাঁসি তে লাহোর থেকে বাংলা সকলের মধ্যে আগুন জ্বলে ওঠে | একের পর এক আঘাত নাড়িয়ে দেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কে| মানুষের কান্না বুকে নিয়ে বিপ্লবী দের পথ চলা শুরু হয় সেই পথচলা আজও শেষ হয় নি. এখনও আকাশে বাতাসে দুঃখ এর হাহাকার ,ক্ষুধার আর্তনাদ, অভাবের অব্যক্ত বেদনা | কাজী নজরুল ইসলাম এর কথায়
"মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না –
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত!"
কলমে -
প্রীতি নায়ক, বি এস সি নার্সিং, দ্বিতীয় বর্ষ