অন্য-পুরুষের গল্প

অন্য-পুরুষের গল্প সমাজের সেইসব মানুষগুলির জন্য, যারা অন্যসব মানুষের মতই, তবে তথাকথিত কিছু মানুষ তাদের অন্য চোখে দেখে..!

|| নেশা ||(A True Story...)লেখা- অনিকেত চৌধুরীকিছু কথা:- গল্পটা আমার এক বন্ধুর থেকে শোনা। তার পরিচয় গোপন করে গল্পটা পোস্...
26/10/2025

|| নেশা ||
(A True Story...)

লেখা- অনিকেত চৌধুরী
কিছু কথা:- গল্পটা আমার এক বন্ধুর থেকে শোনা। তার পরিচয় গোপন করে গল্পটা পোস্ট করলাম।

_______________________
শারদীয় পুজোর মেলা চারিদিকে আলোয় আলো, ধূপের গন্ধ, চিৎকার চেচামেচির শব্দ। সেই ভিড়েই প্রথম দেখি তাকে, বয়স উনিশ কিংবা বিশ হবে, হয়তো কুড়ির নিচে। হাতে একটা ছোট্ট কৌটা, মুখে ক্লান্তি, চোখে কেমন যেন হারিয়ে যাওয়া শূন্যতা। অসাধারণ সুন্দর একটা ছেলে। দেখে বোঝা যায় খুব ভালো পরিবারের সন্তান।
সে কাছে এসে বলল,
"ভাই, কিছু টাকা দেবেন? খাওয়া হয়নি অনেকক্ষণ"

আমি ওর চোখে তাকালাম সেখানে ছিল না ভিক্ষার অভ্যেস, ছিল কষ্টের ছায়া, আর একরাশ লজ্জা। কথায় কিছুটা জড়তা। চোখে চোখ রাখছেনা আমার। বুঝতে পারলাম ভাত তাট কিছু নয়। সে টাকা দিয়ে নেশা করবে। পকেট থেকে কয়েকটা টাকা বের করে দিলাম। ও কিছুই বলল না। শুধু একটা হাসি দিল,যে হাসি আজও আমার মনে গেঁথে আছে।

মেলার ঠিক পাশে দাঁড়িয়েছিলাম কিছু বন্ধুর সঙ্গে তারাও সমকামী, তবে তাদের মুখে শোনা গেল অন্য কথা।
“ওকে নিয়ে যাওয়া যায়, টাকা নেবে, যা খুশি করা যাবে,” কেউ ফিসফিস করে বলল।

আমি চুপ করে গেলাম। বুকের ভেতর কেমন ভারি হতে লাগল। ও যেন শুনতে পেয়ে চোখ নামিয়ে নিল। সেই মুহূর্তে কিছু একটা বদলে গেল আমার ভিতরে।
ওর দিকে হাত বাড়িয়ে বললাম,
"চলো, আমার সঙ্গে চলো। খেয়ে নিও আগে।"

ও অবাক চোখে তাকাল। তারপর নিঃশব্দে হাঁটতে শুরু করল আমার পেছনে। বন্ধুরা আমার উপর কথা বলেনা। তবে একজন খুব বাজে কথা বললো, যদিও সেটা মজা করেই বলেছে। বললো,
"কড়া মাল যা ইচ্ছা মত লাগা"

-----------------
আমার ছোট্ট ফ্ল্যাটে সেই রাতে ও কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আমি বসে ছিলাম অনেকক্ষণ ধরে, সেই মুখটার দিকে তাকিয়ে। এত শান্ত, এত নিরীহ, যেন পৃথিবীর সমস্ত দোষ ভুলে সে শুধু একটু ঘুম চায়। ওর নাম জানতাম না তখনও।

পরদিন সকালে জানলাম ওর নাম হৃদয়।
বাবা ডাক্তার। মা একটা কলেজের শিক্ষক। সে নেশা করে তার একসময় অতিষ্ঠ হয়ে তারা খোজ নেয়া অফ করেছে।

এভাবে দিন কেটে গেল। কখন যে ও প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে গেল, টের পাইনি। সকালে উঠে দেখি মাঝে মাঝে ও রান্না করছে, কখনো চুপচাপ বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। আমি কাজের ফাঁকে ওর সঙ্গে গল্প করি, হাসি, কখনো শুধু চুপচাপ বসে থাকি। ও ঘুমালে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। হয়তো ভালোবেসে ফেলেছিলাম,এক অচেনা, বখে যাওয়া ছেলেকে।

---
তখন শীত পড়তে শুরু করেছে। একরাতে হৃদয় শীতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার বুকের কাছে এসে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকলো। একটু পর ওর গরম নিঃশ্বাস এসে পড়তে লাগল আমার মুখে। আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। ওর ঠোঁটটা নিয়ে চুষতে শুরু করলাম। সেও সায় দিল বাধা দিলো না। সেদিন দুজনার মাঝে আর কোনো বাধা ছিল না। ক্ষুধার্ত হায়নার মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম তার শরীরের উপর। সে কিছুটা কষ্ট পাচ্ছিল দাঁতে দাঁত চেপে সবকিছু সহ্য করছিল। একবার জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। হালকা আলোত দেখতে পারলাম ওর চোখ জলে চিকচিক করছে।
রেতপাত শেষে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। নিজেকে কেমন পশু পশু লাগছিল। ওর কপালে চুমু দিয়ে বললাম "ব্যথা পেয়েছিস।"

ও কিছু বলল না। আমি বললাম "আমাকে মাফ করে দিস" তবুও কিছু বলল না। ঘাপটি মেরে আমার বুকে থাকলো। আমি ওকে বললাম "আমাকে ছেড়ে যাবি নাতো?"

ও বলল, "না কোথাও যাবো না"
.........................
জীবনের গল্প এত সহজ হয় না।
ও মাঝে মাঝেই হারিয়ে যেত। রাতে ফিরত না। চোখ লাল, হাতে কাঁপুনি।
আমি বুঝতাম, ও এখনো মাদক ছাড়তে পারেনি। অনেক বুঝিয়েছি, রাগ করেছি, একবার মেরেও ছিলাম।
ও প্রতিশ্রুতি দিত, “শেষবার নিচ্ছি, তারপর আর না।”

আমি বিশ্বাস করতাম, কারণ ভালোবাসা মানেই বিশ্বাস।

কিন্তু এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘর ফাঁকা। ল্যাপটপ নেই, মোবাইল নেই, টাকা নেই। ওই মুহূর্তে কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।
রাগ হয়নি, বরং বুকের ভেতর কেমন এক অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করছিলো।
যে মানুষটাকে আশ্রয় দিয়েছিলাম, সে চলে গেল সব নিয়ে, শুধু আমার বিশ্বাসটা ফেলে রেখে।

হৃদয় আর কোনোদিন ফেরেনি।
কখনো শুনেছি ওকে শহরের এক গলিতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা গেছে। আমি চেষ্টা করেছি খুঁজে বের করতে, পাইনি।
এখনো পুজোর মেলায় গেলে আলো-আঁধারির মাঝে সেই মুখটা খুঁজে ফিরি। যে ছেলেটা একদিন আমার জীবনে এসে, ভালোবাসার সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছিল,সে আজ কোথায়, জানি না।
কিন্তু আমি জানি, ভালোবাসা কোনো পাপ নয়। শুধু ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেললে, তার পরিণতি অনেক সময় একাকিত্ব হয়ে ফিরে আসে। তাকে ভালোবাসাটাও আজকাল আমার নেশার মত,কিছুতেই ছাড়তে পারিনা.....

(অসমাপ্ত)

|| রুমমেইট ||লেখা-অনিকেত চৌধুরী______________________নিজের রুমে পা রাখলে এখনো আবিরের কানে বাজে নীলের সেই হাসির শব্দ। চার...
25/10/2025

|| রুমমেইট ||
লেখা-অনিকেত চৌধুরী

______________________
নিজের রুমে পা রাখলে এখনো আবিরের কানে বাজে নীলের সেই হাসির শব্দ। চার বছর আগের সেই দিনগুলো যেন স্মৃতির পাতায় জমে আছে। চাইলেই কি সবকিছু ভোলা যায়?

তখন তারা দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একই বিভাগ, একই ক্লাসে আলাপ। পরে কাকতালীয়ভাবে একই মেসে রুমমেইট হয় তারা। প্রথম দিন নীল এসে জিজ্ঞেস করেছিল,
“তুমি কি নাক ডাকো?”

আবির হেসে বলেছিল, “না, তবে মাঝেমধ্যে ঘুমের ভেতর কথা বলি।”
সেদিন থেকেই ওদের বন্ধুত্বের শুরু।

দিন গড়ায়, বন্ধুত্ব বাড়ে। নীল ছিল কিছুটা অগোছালো,বই ছড়ানো, জামা বিছানায়, আর কখন না খেয়ে থাকার অভ্যাস। আবির ছিল একদম উল্টো— গুছানো, শান্ত, যত্নশীল। দুজন দুজনের ঠিক বিপরীত, কিন্তু সেই বিপরীতটাই যেন এক অদ্ভুত বন্ধন তৈরি করেছিল।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় তারা একসাথে বারান্দায় বসে চা খেত। আবির বানাতো, নীল শুধু বলতো,
“তোর হাতের চা ছাড়া আর কারওটা ভালো লাগে না।”
আবির মুচকি হেসে কিছু বলতো না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা অন্যরকম অনুভূতি জন্ম নিত,যা বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু।

----------
একদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। নীল সেদিন খুব চুপচাপ ছিল। জানলার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিল,
“আবির, কখনো কি মনে হয়, আমরা যা অনুভব করি, সব কথা দিয়ে বোঝানো যায় না?”

আবির অবাক হয়ে বলেছিল, “মানে?”
নীল মাথা নাড়িয়ে বলেছিল, “না, কিছু না।”
সেদিন আর কথা হয়নি, কিন্তু সেই কথাটাই আবিরের মনে গেঁথে যায়।

_____________
চার বছরের শেষে চাকরির সুযোগ আসে আবিরের হাতে। ঢাকা শহরের বাইরে, অনেক দূরে। মেসের ছেলেরা সবাই খুশি, শুধু নীল চুপচাপ থাকে। বিদায়ের আগের রাতে নীল খাবার আনতে বেরিয়ে গিয়ে অনেকক্ষণ ফিরে আসেনি। যখন ফিরে এলো, দেখলো আবির জানলার পাশে বসে গুছিয়ে রাখা ব্যাগের পাশে তাকিয়ে আছে।

-এত তাড়াতাড়ি চলে যাবি?
-যেতেই হবে। চাকরি মানে নতুন শুরু।

নীল হাসলো, কিন্তু চোখের কোণে হালকা জল।
“তুই গেলে এই ঘরটা ফাঁকা লাগবে।”

রাতটা তারা একসাথে কাটালো।সিনেমা দেখে, পুরোনো গল্প বলে, হাসতে হাসতে। কিন্তু মাঝ রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকার ঘরে শুধু ঝু। বৃষ্টির শব্দ। সেই সময় নীল বলেছিল নিচু গলায়,
“আবির, আমি যদি বলি, তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না, তুই কী বলবি?”

আবির কিছু বললো না। শুধু হাত বাড়িয়ে নীলের কাঁধে রাখলো। অন্ধকারে দুজনেই কেঁদে ফেললো, কেউ কাউকে দেখতে পেল না, কিন্তু অনুভব করলো,তারা একে অপরকে ভালোবাসে।

পরদিন সকালবেলা ট্রেন ছাড়ার সময় কোনো কথা হয়নি। নীল শুধু বলেছিল,
"নিজের খেয়াল রাখিস।"

আবির উত্তর দেয়, "তুইও"
ট্রেন চলছে, নীল ট্রেনের দিকে তাকিয়েই আছে। আবির যেন দরকারী কিছু ফেলে যাচ্ছে যা ছাড়া সে অচল।

----------
আচ্ছা তাদের সমকামী সত্ত্বার কথা একে অন্যরা কি বুঝতে পেরেছিলো? চাইলেই কি সব অনুভূতি প্রকাশ করা যায়? নাকি সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়ে আমরা হারিয়ে ফেলি কতকিছু, হারিয়ে ফেলি কত আপনজন?

(অসমাপ্ত)

""" বিরহবিধুর  """লেখা- আহান______________________একপ্রকার বাধ্য হয়েই রোহানের মুখোমুখি হল নাবিল। পুরো চার বছর পর তারা পু...
23/10/2025

""" বিরহবিধুর """
লেখা- আহান

______________________
একপ্রকার বাধ্য হয়েই রোহানের মুখোমুখি হল নাবিল। পুরো চার বছর পর তারা পুনরায় মুখোমুখি হয়েছে। দেখা হয়েছে আকস্মিকভাবে। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের ছয়তলার করিডোরে মানুষের ভিড়ের মধ্য দিয়ে হাঁটছিল নাবিল। তখন হঠাৎ সে ভিড়ের মাঝখানে এক ঝলক রোহানকে দেখল। রোহানকে দেখামাত্রই তার বুক চিন করে কেঁপে উঠল। সে থমকে দাঁড়াল। অন্তরের শূন্যতা হো হো করে উঠল যেন। কিন্তু তন্মধ্যে নিজেকে সংযমে ধরে রেখে সে রোহানকে দেখেও না-দেখার ভান করে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিল। তবে কোনো এক অদৃশ্য মায়ার কারণে সে বিপরীত দিকের মানুষটির প্রতি অদ্ভুত টান অনুভব করছিল, বোধহয়। তাই তো কিছুক্ষণ পর পর পিছনে ফিরে তাকাচ্ছিল। তখন রোহানও তাকে দেখতে পেয়ে পাশ থেকে ছুটে এসে ডেকে উঠল, “নাবিল, নাবিল।”

করিডোরের কোলাহল ছেদ করে রোহানের কণ্ঠস্বর যেন সরাসরি নাবিলের কানে এসে পৌঁছায়। সে নিজেকে আর আড়াল করতে পারল না। সে ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। রোহানের চোখে একরাশ বিস্ময়, ঠোঁটে এক চিলতে হাসি আর কণ্ঠস্বর শুনে সে অস্বীকার করতে পারল না রোহান বলে কাউকে চিনে না। এড়িয়ে যেতেও পারল না, এমনকি ভালো-মন্দ দুই কথা বলে বিদায় নিতেও পারল না।

এখন যে তারা চন্দ্রিমা উদ্যানে বসে আছে, সেটিও রোহানের অনুরোধেই। নাবিলের এতে খুব একটা সম্মতি ছিল না। নাবিল শুরু থেকেই প্রথম পরিচয়ের মতো দূরত্ব বজায় রেখেছে। অথচ তাদের পরিচয় বহুদিনের। তাই রিকশায় বসে আসার সময় তাদের মধ্যে কথোপকথনও তেমন হয়নি। চার বছরের দূরত্ব যেন আজ যোজন যোজন দূরত্বে পরিণত হয়েছে।

এই ক্ষণে রোহান ভালো করে নাবিলের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। সে লক্ষ্য করল এ কয়বছরে নাবিলের একটি বড় পরিবর্তন ঘটেছে, আগে যে ছেলেটি খুব বেশি কথা বলতো, এখন সে কথা বলতেও অনিচ্ছা প্রকাশ করছে। ব্যাপারটা সহজে ধরে ফেলার মতো, তবুও রোহান স্বাভাবিকভাবে তা এড়িয়ে গেল।

চন্দ্রিমা উদ্যান নাবিলের কাছে এক প্রিয় জায়গা। চার বছর আগেও ওরা দুজন এখানে এসে কত সময় কাটিয়েছিল! সবুজ বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বসে প্রেমালাপ করেছিল, আড্ডা দিয়েছিল। একজনের কোলে মাথা রেখে আরেকজন অনুভব করেছিল— প্রেম স্বর্গ থেকে আসে; সত্যিই! প্রেম স্বর্গ থেকে আসে। কিন্তু সেই সময় এখন শুধু অতীত, শুধু স্মৃতি। বর্তমানে তাদের কারোরই অপ্রয়োজনে এখানে আসা হয় না।

নীরবতার কয়েক মুহূর্ত কেটে যাওয়ার পর রোহান বলল, “তো, এখন রিলেশনশিপে কার সঙ্গে আছো? অনলাইন কমিউনিটিতেও তো তোমাকে দেখা যায় না!”

নাবিল মৃদু হেসে বলল, “রিলেশনশিপ? তা আপাতত কারো সাথেই নেই। আর অনলাইন কমিউনিটি থেকে লিভ নিয়েছি।”

রোহান ঠাট্টার ভঙ্গিতে বলল, “ওহ্, আবার ব্রেকাপ হয়েছে?”

শান্ত স্বরে নাবিল উত্তর দিল, “ব্রেকআপ তো একবারই হয়েছে!”

রোহান বিদ্রূপাত্মক কণ্ঠে বলল, “ও, তাহলে আমাদের ব্রেকআপের পর আর কেউ পাত্তা দেয়নি তোমাকে?”

এ কথায় নাবিল হঠাৎ রোহানের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। এই হাসি রোহানকে দেখানোর জন্য নাকি নিজেকে আড়াল করার জন্য বোঝা গেল না। কিন্তু হাসিটা দেখতে রসকষহীনের মতো লাগল, সে বলল, “পাত্তা তো আমি দিয়েছিলাম তোমাকে, রোহান! আচ্ছা একটা কথা বলো তুমি আমাকে, পাল্টে পাল্টে কি একজনের পর আরেকজনকে ভালোবাসা যায়?”

রোহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “কি জানি! তবে... আমি তো শাফায়াতকে ভালোবেসেছি। এখনো ভালোবাসি। তুমি দেখেছো আমাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস? কমিউনিটির সবাই আমাদের আরও বেশি উৎসাহ দেয়।”

রোহানের কথা শোনামাত্র নাবিলের বুকের ভেতর যেন হঠাৎ মুচড়ে গেল। মনে হচ্ছে কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে তার হৃদয়ে আঘাত করেছে। গলায় কী যেন আটকে গেছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। রোহান হঠাৎই কেন শাফায়াতের বিষয় টেনে আনলো? সে যে সুখে আছে এর স্পষ্টতা বোঝাতে চাচ্ছে! মন-পোড়া অনলে রোহান কেন ঘি ঢালছে! সে কি নাবিলের অনুভূতি টের পাচ্ছে না? নাকি ইচ্ছে করেই পুরনো ক্ষতগুলো নতুন করে রক্তাক্ত করছে!

নাবিল করুণ দৃষ্টিতে রোহানের দিকে তাকাল। রোহানের নির্লজ্জ মুখাবয়ব দেখে নাবিলের মনে মৃদু ক্ষোভ জাগল। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “তুমি শাফায়াতকে ভালোবাসো, কারণ তুমি শুধুই শাফায়াতকে ভালোবেসেছ। রোহান, জানো তো ভালোবাসার অনেক দিক আছে এবং প্রেমের দিক থেকেও ভালোবাসা ধাপে ধাপে থাকে। আর প্রেমিক বা প্রেমিকা হিসেবে মনেপ্রাণে একজনকেই সত্যিকারের ভালোবাসা যায়। বাকিগুলো নিছক মায়া। কখনো হয়তো আমরা নিজেকে ভালো রাখার জন্য ভালোবাসি, কখনো বা ভালোবাসা পেয়ে ভালোবাসি। আবার কখনো ভালো না বেসেও ভালোবাসার অভিনয় করি, সেটিও হয়তো বা কোনো উদ্দেশ্যে। কিন্তু আমি তো অভিনয় করে বাঁচতে চাই না, রোহান! আর না তো কারো সাথে মিথ্যা ভালোবাসায় জড়াতে পারি। তুমি বললে না, তুমি চলে যাবার পর আমাকে আর কেউ পাত্তা দেয়নি! না... না রোহান, বাস্তবে তো তুমি কটাক্ষ করে আমাকে কথাটি বলেছ।”

রোহান তৎক্ষনাৎ নাবিলের হাত ধরে বলল, “নাবিল! না, তা নয়। তুমি যা ভাবছো...”

রোহানের কথার উপর নাবিল হাত তুলে বলল, “আমাকে বলতে দাও। আমাকে বলতে দাও, রোহান।”

রোহান স্তম্ভিত হয়ে নাবিলের দিকে তাকিয়ে রইল।

নাবিল বলে, “পাত্তা! সত্যি তো এটাই যে আমি আর কারো প্রেমে পড়তে চাই না, কাউকে মূল্যায়নও করতে চাই না। তুমি শাফায়াতকে খুব ভালোবাসো, তাই না?! হ্যাঁ তুমি শুধুই শাফায়াতকে ভালোবেসেছ। আর বাকিগুলো ছিল অভিনয়। তুমি জানো! তোমার একটি মহৎ গুণ আছে। আর সেটি হলো তুমি খুব চমৎকার অভিনয় করতে পারো, যা বাহির থেকে দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না! কিন্তু আমি... আমি তোমার অভিনয়ে তাল মিলিয়ে অভিনেতা হতে পারিনি।”

রোহান বলল, “সরি, নাবিল, আমি বুঝতে পারিনি তুমি এভাবে রিয়েক্ট করবে। তুমি যে এতটা বদলে যাবে আমি বুঝতে পারিনি। কথাটি আমি তোমাকে সেরকম বলতে চাইনি।”

নাবিল উঠে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলল, “মানুষ বদলায়, রোহান। সময়ের সাথে, পরিস্থিতির সাথে, বয়স বাড়ার সাথে বদলায়। তুমি বলেছো, তোমাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস আমি দেখেছি কিনা! কিন্তু আমি তো ফেসবুকে এই কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত নয়। লুকিয়ে অনুসরণও করি না। তাই যেমন দেখার কথা নয়, তেমন দেখতে চাওয়ার আগ্রহও বোধ করি না। তবে শুনে খুশি হলাম যে তুমি সুখী আছো। চিরসুখী হও, সেই কামনাই করি।”

রোহান দাঁড়িয়ে নাবিলের পাশে এসে বলল, “নাবিল, তুমি কি এখনো আমাকে...!”

রোহানের কথা থামিয়ে নাবিল শান্ত গলায় বলল, “না, তুমি যে প্রশ্ন করতে চাইছো, সেটির উত্তর না-ই হবে। আর প্রশ্ন করো না। ওহ্ হ্যাঁ, খালাম্মা কেমন আছেন? খালাম্মাকে আমার সালাম জানিও। আর বিচ্ছুটা কেমন আছে?”

রোহানের ভাইপো নূহকে নাবিল এক সময় ‘বিচ্ছু’ বলে ডাকতো। নূহ নামটাও নাবিলই দিয়েছিল। লক্ষ্মী একটি ছেলে নূহ। এখন নাবিলকে মনে রাখার কথা নয়। তখন বয়স ছিল মাত্র আড়াই বছর। এখন ক্লাস টু-তে পড়ে।

রোহান বলল, “নূহ ভালো আছে। আম্মাজানও ভালো আছেন। আম্মাজান এখনো তোমার কথা জিজ্ঞেস করেন, জানো!”

—“কী বলেন?”

—“অনেক কিছুই বলেন। চলো, আজ আম্মাজানের কাছে তোমাকে নিয়ে যাই।”

—“আজ সময় হবে না। খালাম্মাকে বলো আজ দেখা হয়েছে। টিউশনির সময় হয়ে আসছে... আমার যেতে হবে এক্ষুনি।”

—“আরেকটু পরে গেলে হয় না?”

—“না, বড্ড দেরি হয়ে গেছে। জ্যামে পড়লে আর পড়ানো হবে না আজ। শাফায়াত আর তোমার জন্য দোয়া রইল। ভালো থেকো।”

রোহানের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসার সময় নাবিলের বুক ধুকপুক করছিল, চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। কিন্তু রোহানকে বুঝতে দেওয়ার আগেই সে টিউশনির মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে চলে এলো।

শহরের কোলাহল পেরিয়ে মেট্রোরেলে উঠে নাবিল সিটে বসল। রোহানের সঙ্গে এত বছর পর দেখা হবে তা সে কখনো ভাবেনি। রোহানকে দেখেও আজ সে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। অথচ তার ইচ্ছে হচ্ছিল রোহানকে দুচোখ ভরে দেখতে, দু'হাতে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু সেই অধিকার যে সে অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। গোপনে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুবিন্দু সে আঙুল দিয়ে মুছে নিল। বাইরে রাত নেমেছে। আঁধারে আলোর ঝলমল করছে।

নাবিল ঘরে ফিরে কাঠের আলমারি খুলে বের করল একটি শার্ট। রোহানের শার্ট। যেদিন তাদের ব্রেকআপ হয়েছিল, সেদিনই রোহানের এই শার্টটি সে চেয়ে নিয়েছিল শেষবারের মতো।

চার বছর আগে নাবিলের কি কোনো দোষ ছিল?
তখন তাদের সম্পর্কের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। নাবিল মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ছেলে। পড়াশোনার জন্য থাকতো ঢাকায়। নিজের খরচ নিজেই বহন করতো, এমনকি পরিবারকেও সাহায্য করতো। সেই জন্যই টিউশনি আর পড়াশোনার ব্যস্ততায় সারাক্ষণ রোহানকে সময় দিতে পারতো না। অন্যদিকে রোহান, তার এই ব্যস্ততা দেখে যেন তাকে ইগনোর করছিল। নিজে থেকে যোগাযোগ করতো না; নাবিলের পাঠানো মেসেজ দুই-তিন দিন পর সিন করলেও উত্তর দিত না। নাবিল চার-পাঁচবার ফোন করলে একবার ধরতো, তাও কথা বলতো বিরক্তিভাব নিয়ে।

নাবিল বোঝতে পেরেছিল, তাদের এই সম্পর্ক আর টিকবে না, তবুও সে চেষ্টা করেছিল রোহানকে ধরে রাখতে। একদিন রোহান তাকে দেখা করতে বলল। নাবিল সেদিন ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি, সেই সাক্ষাৎ হবে শেষ দেখা। শ্রাবণের সিক্ত সন্ধ্যায়, মেঘলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে সেদিন রোহান বলেছিল, সে তার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে, এই অসামাজিক প্রেম তাকে তৃপ্তি দিচ্ছে না। পরোক্ষ কারণ নাবিল জানেনি, কিন্তু সেই সন্ধ্যায় তাদের সবকিছু ভেঙে পড়ল। নাবিলকে ফেলে ঘামে সিক্ত শরীরে যখন রোহান ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছিল, তখন নাবিল কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রোহানের গায়ের শার্টটি চেয়ে নিয়েছিল। রোহান গা থেকে শার্টটি খুলে নাবিলের হাতে তুলে দিয়ে চলে গিয়েছিল। অথচ তখন নাবিলের হৃদয়ের আকুতির কথা সে উপলব্ধি পর্যন্ত করেনি। তার এই শার্ট চেয়ে নেবার পেছনে নাবিলের অনুভূতি সে মনে নেয়নি। এমনকি আজও বুঝতে পারেনি। বরং শাফায়াতের কথা বলে নাবিলের হৃদয়ে পুনরায় আঘাত করল।

সেই শার্ট নাবিল কোনোদিন ধোয়নি। বিরহবিধুর হয়ে সে কত রাত যে শার্টটি বুকে চেপে রেখেছে, শার্টে মুখ গুঁজে নিয়েছে রোহানের গায়ের গন্ধ, অনুভব করেছে অতীতের স্পর্শ।

কিন্তু আজ?

নাবিল সেই শার্টটি বুকে চেপে ধরল। ঘ্রাণ নিল... কিন্তু তাতে আর রোহানের শরীরের গন্ধ নেই। এত বছর পরও কি গন্ধ থাকে! সময়ের সাথে সব গন্ধ হয়তো মুছে গেছে, কিন্তু অন্তরের ব্যথা?

হৃদয়ের যে ক্ষতস্থানে আজ আবার নতুন করে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে, সেখানে আজ কোনো প্রলেপই যে কাজ করে না। নাবিল চোখ মুদল, সঙ্গে সঙ্গে অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ল চোখ দিয়ে। এ যে বিরহবিধুর অশ্রুবিন্দু তা শুধুমাত্র নাবিলই জানে, তা কি রোহান কোনোদিন অনুভব করবে?

(সমাপ্ত)

"তুই মানুষটা বড্ড দামী"লেখা- ঈশান রায়______________________"আচ্ছা প্রিতম তুই আমাকে কখনো ছেড়ে যাবি না তো!"বিষন্নতা আর আ...
22/10/2025

"তুই মানুষটা বড্ড দামী"
লেখা- ঈশান রায়

_____________________

_"আচ্ছা প্রিতম তুই আমাকে কখনো ছেড়ে যাবি না তো!"বিষন্নতা আর আনন্দিত হয়ে করুন গলায় নিজের ভালোবাসার মানুষটি'কে জিজ্ঞেস করল ঋত্বিক।)

ঋত্বিকে'র প্রশ্নের উত্তরে প্রিতম হেঁসে বলল,
_ধুর পাগল।"প্রান ছাড়া কী কখনো দেহ থাকে!"তুমি যে আমার প্রান ঋত্বিক দা। "তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব কী করে?"

প্রিতমে'র এই উওর শুনে ঋত্বিক প্রিতম কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল এবং বলল,
_চুপ, একদম চুপ।আমি থাকতে আমি তোর কিছু হতে দেব না।"

ঋত্বিকে'র বুক থেকে সরে প্রিতম বলল,
_"ঋত্বিক দা সন্ধ্যা নামছে চল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যায়!"

প্রিতম বলল,
_হ্যা চল।…

সন্ধ্যা নেমে আসায় ঋত্বিক আর প্রিতম বাড়িতে চলে আসে।"

প্রিতম আর ঋত্বিকের ঘর একসাথেই। ঋত্বিক আর প্রিতম প্রতিবেশি ভাই হয় কিন্তু এতে ওদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ঋত্বিক আর প্রিতম একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসে কয়েকবছর ধরে। "চলুন তাহলে জেনে নিই এদের ভালোবাসার প্রেমকাহিনী কোনদিকে এগোয়!"…

রাত দশটাই প্রিতম খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেল নিজের রুমে। বিছানায় যাওয়ার আগে কেউ একটা পিছন থেকে হাত দিয়ে প্রিতমের চোখ হঠাৎ করে ধরে রাখে।…

প্রিতম ভয় পেয়ে বলল,
_"কে ,কে?"…

হঠাৎ পিছনে থাকা লোকটি প্রিতমের চোখ থেকে হাত সরিয়ে লোকটির বুকে টেনে নেয়।

প্রিতম লোকটি'কে দেখে বলল,
_ ওফ ঋত্বিক দা তুমি, আমি তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম।"

ঋত্বিক বলল,
_আমি এসেছি আর তুই সেটা বুঝতে ও পারিস নি।"এ কেমন ভালোবাসা!"

প্রিতম বলল,
_"আরে এরকম ভাবে পিছন থেকে ধরলে কে বুঝতে পারবে বলতো!"

ঋত্বিক বলল,
_হ্যা তাও ঠিক।

প্রিতম বলল,
_আচ্ছা তুমি ওসব ছাড়।"এটা বল তুমি এত রাতে এখানে কী করছ?"…

ঋত্বিক বলল,
_বারে, "আমি কী রাতে তোকে একটু আদর করার জন্য‌ও আসতে পারি না!"

ঋত্বিকের এই কথা শুনে প্রিতম বলল,
_'কী?'

তক্ষুনি ঋত্বিক প্রিতমের মুখে আঙ্গুল ধরে বলল,
_চুপ, একদম চুপ।…

এদিকে প্রিতম ঋত্বিকের স্পর্শে আসায় প্রিথমের হার্টবিট বেড়ে গেল। প্রিতম এর বুকের ভিতরে ধুকপুক-ধুকপুক করছে শুধু।

প্রিতমের নিঃশ্বাস বেড়েই চলেছে, প্রিতম চাইতেও কিছু বলতে পারছে না।নিঃশ্বাস কে একটু নিজের বশে এনে প্রিতম বলল,
_ঋত্বিক দা আমার কেমন একটা লাগছে।

ঋত্বিক বলল,
_এটা স্বাভাবিক।

ঋত্বিক প্রিতমের হাত টা বুকে টেনে ধরে প্রিথমের কপালে একটা হালকা চুমু খেল। ঋত্বিকের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে প্রিতম ঋত্বিকের‌ কাঁধ টা শক্ত করে ধরে রাখল। ঋত্বিকের এই স্পর্শে প্রিতম ঋত্বিকের ভালোবাসা অনুভব করল।

ঋত্বিক প্রিতম'কে কোলে তুলে নিল এবং বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিল এরপর ঋত্বিক ঘরের আলো টা নিভিয়ে দিল।…
______________

সকাল হ‌তে চলল তাই ঋত্বিক'ও তার ঘরে চলে গেল।…
এইভাবেই দিন কাটতে লাগলো ঋত্বিক আর প্রিতমের। সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসার এক নতুন মিল বন্ধন তৈরি হলো তাদের মধ্যে।একে অপরকে ছাড়া তারা তাদের জীবন ভাবতে'ও পারত না।

এদিকে আজ প্রিতম অনেকদিন পর স্কুলে আসল। প্রথম ক্লাসেই প্রিতম স্যার কে দেখে অবাক হয়ে গেল কারণ ক্লাসে একজন নতুন শিক্ষক এলো আজ।

প্রিতম তার এক বন্ধু কে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করল,
_"এই ইমন, এই স্যার টা নতুন এসেছে নাকি!"

ইমন বলল,
_আরে হ্যাঁ ইনি হলো মাহির স্যার,কয়েকদিন আগেই এসেছে। সাবধানে থাকিস ক্লাসে,কারণ ওনার মাথা ভীষণ গরম।

স্যার টা দেখতে যেমন রাগী তেমনি বেশ সুন্দর, স্মার্ট।শাট পড়া সত্বেও তার জীম করা বডি দেখা যাচ্ছিল।

প্রিতম কেমন নজর দিয়ে নতুন স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ স্যারের নজর পড়ল প্রিতমের দিকে, স্যার প্রিতমের কাছে এগিয়ে এলো।
প্রিতমে'র কাছে এসে মাহির স্যার বলল,
_তুমি'কী ক্লাসে নতুন, তোমাকে তো এতদিন দেখি নি,"কোথায় ছিলে!"

হঠ্যাৎ প্রিতম'কে স্যারের এই প্রশ্ন টা করায় প্রিতমে'র মুখে কেমন একটা হাঁসি দেখা গেল।প্রিতম ও স্যার'কে সুন্দর করে উওর দিল।…

দুপুর হয়ে গেছে এদিকে প্রিতম ক্যান্টিনে বসে আছে। হঠাৎ ক্যান্টিনে মাহির স্যার এসে উপস্থিত হলো। মাহির স্যার আসা মাত্র প্রিতমে'র চোখ মাহির স্যারের দিকে গেল আর মাহির স্যার ও একপলক প্রিতমের দিকে তাকিয়েছিল।

কিছুক্ষণ অন্য টেবিলে বসে থাকার পর মাহির স্যার প্রিতমের কাছে গিয়ে তার পাশের চেয়ারে বসলেন।

মাহির স্যার প্রিতম'কে বললেন,
_"কিছু খাচ্ছ না যে!" "কিছু হয়েছে!"…

প্রিতম বলল,
_না না স্যার, আসলে আমার খিদে নেই।

স্যার বললেন,
_আচ্ছা। তুমি তো ক্লাসে ভালোই পড়া পারছিলে, ভালো ভাবে স্কুলে উপস্থিত হয়ে পড়াশোনা কর!"

প্রিতম বলল,
_হ্যা স্যার।…

এদিকে প্রিতম আর স্যার অনেকক্ষন গল্প করল। গল্প করতে করতে তারা তাদের অনেক কাছে আসতে লাগল।…

এইভাবে কাটাতে লাগলো দিন। প্রিতম'কে বাইকে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, ক্লাসে একে অপরের প্রতি নিজেদের মনযোগ, পার্কে গল্প করা এই নিয়ে প্রিতম আর মাহির স্যারের দিন ভালোই কাটছিল এবং তারা একেঅপরের প্রতি এক অদ্ভুত সম্পর্ক অনুভব করতে লাগলো।…
___________


এদিকে প্রিতম আর ঋত্বিক এর সম্পর্কে ভাঙন ধরতে লাগলো। প্রিতম ঋত্বিকের সাথে আর ঘুরতে যাই না, ঋত্বিকে'র কাছে আর আসে না প্রিতম।

হঠাৎ একদিন রাতে ঋত্বিক প্রিতমে'র ঘরে আসল।

প্রিতম ঋত্বিক'কে দেখে অবাক হয়ে হম্বিতম্বি করে বলল,
_ ঋত্বিক দা তুমি এখানে কী করছ?কেউ দেখে নিবে।…

ঋত্বিক বলল,
_"আমার কলিজার টুকরোর সাথে দেখা করব এতে আমার ভয় কীসের?"

ঋত্বিক প্রিতম'কে তার বুকে টেনে নিল, হঠাৎ প্রিতম ঋত্বিক'কে জোরে ধাক্কা দিল এবং ঋত্বিক মাটিতে পড়ে গেল।

প্রিতমের এই ব্যবহার দেখে ঋত্বিক মাটি থেকে উঠে বলল,
_"তুই এরকম ব্যবহার কেন করছিস!"…"কী হয়েছে তোর?" "আ.আ.আমায় বল কী হয়েছে তোর!"

প্রিতম বলল,
_ঋত্বিক দা তুমি এখন এখান থেকে যাও, 'প্লিজ!'…

ঋত্বিক যেতে না চাইলে প্রিতম ঋত্বিক'কে শাসিয়ে বের করে দিল। ঋত্বিকের চোখে হঠাৎ জল চলে এল, সেদিকে খেয়াল না করেই প্রিথম ঋত্বিক কে জানালা দিয়ে বের করে দিল।

ঋত্বিক চলে যেতেই প্রিতমে'র মোবাইলে মাহির স্যার মেসেজ করে বলল,
_আগামীকাল সন্ধ্যায় যেন তার সাথে নদীর তীরে দেখা করে। মেসেজ টা পড়ে মোবাইল টা বুকে চেপে ধরে প্রিতম হেঁসে ঘুমিয়ে পড়ল।

অন্যদিকে ঋত্বিক তার ঘরের জানালার দিকে দাঁড়িয়ে প্রিতমে'র রুমের দিকে তাকিয়ে আছে আর কাঁদছে।

ঋত্বিক কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলল,
_প্রিতমে'র হঠাৎ কী হলো,"আগে তো এরকম করত না!"

কিছু একটা ভেবে ঋত্বিক বলল,
_না না এসব আমার মনের ভুল,কাল হয়তো পরীক্ষা তাই ও নার্ভাস হয়ে উঠেছে হয়তো। কালকে সকালেই গিয়ে ওর মনোবল বৃদ্ধি করতে হবে। আমি আমার প্রিতম'কে ভেঙে পড়তে দেব না। এখন ঘুমাই বাপু,কাল সকালে দেখা হচ্ছে।…

________________

পরেরদিন সন্ধ্যায় প্রিতম সুন্দর করে তৈরি হয়ে নদীর দিকে এগিয়ে গেল।মাঝ রাস্তায় প্রিতম'কে দেখতে পেয়ে ঋত্বিক বলল,
_"একী প্রিতম এই সন্ধ্যা বেলায় কোথায় যাচ্ছে?"

প্রিতম নদীর পাড়ে গিয়ে দেখল মাহির স্যার তার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রিতম স্যারের কাছে গিয়ে বলল,
_কী হলো স্যার,এই সন্ধ্যা বেলায় আমাকে ডাকলেন যে!"কিছু কী বলবেন!"...

মাহির স্যার বললেন,
_অনেককিছুই তো বলতে চাই, কিন্তু অত সময় নেই তাই সবকিছু সংক্ষিপ্ত আকারে বলতে চাই।

প্রিতম হেঁসে বলল,
_'কী কথা স্যার!'…

মাহির স্যার প্রিতমের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল এবং একটা লাল গোলাপ বের করে বললেন,
_আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রিতম, ভীষণ-
ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।

মাহির স্যারের মুখে এই কথা শুনে প্রিতমে'র বুক হঠাৎ কেঁপে উঠলো।প্রিতমে'র মুখের ভাষা কেন যেন থেমে গেল।

মাহির স্যার কিছু একটা বুঝতে পেরে বলল,
_"তুমি চুপ করে আছ'যে কিছু তো বল!"

মনকে শান্ত করে আনন্দে আত্মহারা। প্রিতম ও বলল,
_স্যার আমি ও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি।

মাহির স্যার উঠেই প্রিতম'কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, এদিকে ঋত্বিক দূর থেকে সবকিছু দেখছে আর সবকিছু নিজের চোখে দেখে ঋত্বিকের চোখ থেকে টপটপ করে জড়তে লাগল পানি ।

কিছুক্ষণ কথা বলার পর প্রিতম ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। অন্ধকার রাস্তায় একেক টা পা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিথম, হঠাৎ প্রিতমে'র হাত ধরে কেউ টান দিল।

লোকটিকে প্রিতম চিনতে পেরে রেগে বলল,
_ ঋত্বিক দা এসব কী অসভ্যতা।

ঋত্বিক বলল,
_ও আচ্ছা এখন এসব তোর কাছে অসভ্যতা লাগছে, আগে যখন এসব করতাম তখন তো কিছু বলিস নি,এখন বোধহয় স্যারকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি!

ঋত্বিকে'র মুখে স্যারের কথা শুনে প্রিতম কিছুটা চমকে গেল।

ঋত্বিক আবার বলল,
_"আমি জানি তুই এসব করতে পারিস না,বল'না একবার যে এই সব কিছু মিথ্যা,"বল না প্লিজ!"

প্রিতম ঋত্বিকের হাত টা সরিয়ে বলল,
_এইসব কিছু সত্যি বুঝেছেন, আমি আপনাকে কখনো ভালোই'বাসিনি। আরে আপনার কী আছে এমন যে আপনাকে ভালোবাসবো, 'বলুন!'

ঋত্বিক বলল,
_"ভালোবাসায় চাওয়া পাওয়া হয় না রে!"

প্রিতম ঋত্বিক'কে সরিয়ে দিল এবং বলল,
_সেটা তুমি না চাইতে পার কিন্তু আমি চাই। আফসোস সেটা তুমি দিতে পারবে না। "এখন সরো এখান থেকে!"

ঋত্বিক আবার প্রিতমে'র হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
_দেখ তুই যা চাস আমি সব দেব,"তাও আমাকে ছেড়ে যাস না প্লিজ!"তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না। ভীষণ ভালোবাসি তোকে, 'প্লিজ!'

প্রিতম ঋত্বিকের থেকে নিজের হাত টেনে নিয়ে ঋত্বিক'কে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল এবং বলল,
_ব্যাস, অনেক হয়েছে।এক কথা বলে বলে কানের মাথা খেয়ে নিল একেবারে। আরে তুমি মর বা বেঁচে থাক তাতে আমার কিছু যায় আসে না,'হু…!'

প্রিতম চলে যাচ্ছিল এদিকে ঋত্বিক প্রিথমে'র পা আটকে কাঁদতে কাঁদতে সরু গলায় বলল,
_"প্রিথম প্লিজ!"

ঋত্বিকে'র এতসব আকুতি কে অবজ্ঞা করে প্রিতম ঋত্বিক'কে লাথি মেরে সরিয়ে দিল এবং চলে গেল।

এতসব কিছু শোনার পর ঋত্বিক তার নিজের মধ্যে নেই। চাঁদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর মূল্যবান চোখের জল জড়াচ্ছে।…

এদিকে প্রিতম ঘরে আসা মাত্র মাহির স্যারের কল এল।
প্রিতম কল ধরে বলল,
_কিছুক্ষন আগেই তো কথা বলে এলাম, "এখন আবার কী বলবেন!"

মাহির স্যার বলল,
_তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে, "তোমাকে একটা হোটেলের নাম পাঠিয়েছি কাল সকালে চলে এস প্লিজ!"

প্রিতম বলল,
_ঠিক আছে জান।লাভ ইউ।…

মাহির স্যার বলল,
_লাভ ইউ টু।…

সকাল হয়ে গেল, এদিকে প্রিতম সুন্দর করে তৈরি হয়ে হোটেলের দিকে র‌ওনা হল।ঘর থেকে বেড়িয়ে কিছুক্ষণ এগিয়ে যেতেই প্রিথমের সামনে ঋত্বিকের দাড়িঁয়ে আছে।

ভাঙ্গা গলা, ময়লা কাপড় পড়ে আছে ঋত্বিক। মুখ থেকে মদের দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।

প্রিতম নাকে হাত দিয়ে বলল,
_"এখান থেকে সরো আমাকে যেতে হবে!"

ঋত্বিক প্রিথমে'র হাত ধরে মাতলামি করে বলল বলল,
_না তুই কোথাও যাবি না, এখানেই থাকবি।

প্রিতম বলল,
_আমার দেরী হচ্ছে, আমাকে যেতে দাও।

ঋত্বিক প্রিথমে'র হাত টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাটিতে পড়ে গেল।

ঘুম চোখ আর মাতলামি করে ঋত্বিক বলল,
_জানিস প্রিতম তুই মানুষ টা বড্ড বেইমান। আমরা একসাথে কত সময় কাটিয়েছি,কত ঘুরেছি আর তুই...তুই সব এক মূহুর্তে ভুলে গেলি।"কী করে পারলি এটা!"

প্রিতম বলল,
_হ্যা আমি এরকম'ই আর এরকম'ই থাকব। আমি তো তোমাকে কখনো ভালোবাসি নি। এবার আমাকে ছাড়।

ঋত্বিক বলল,
_জানিস তোর ওই কথাগুলোতে কাল শুধু কেঁদে'ছি। প্রিতম, ওই প্রিতম আমাকে তোর ভালোবাসা'টা ভিক্ষা দে না যে রে, আমি কথা দিচ্ছি আমি তোর হাত কখনো ছাড়ব না।

প্রিতম হেঁসে বলল,
_আরে আমি একজনের হাত আগে থেকেই ধরে রেখেছি, তোমার হাত ধরার কোনো শখ আমার নেই।

ঋত্বিককে পা দিয়ে ঠেলে চলে যেতে লাগল প্রিতম।

ঋত্বিক আবার প্রিতমে'র পা ধরে বলল,
_আজ হয়তো তুই ভালোবাসা বুঝলি না কিন্তু তুই একদিন ঠিকই বুঝতে পারবি যে আসল ভালোবাসা কী? কিন্তু…!

প্রিতম চিন্তিত হয়ে বলল,
_"কিন্তু কী?"

ঋত্বিক বলল,
_সেদিন তুই সেই ভালোবাসা পাবি না,ঘুমড়ে-ঘুমড়ে কাঁদবি একদিন।

প্রিতম বলল,
_এরকম কিছুই হবে না কারণ আমি আমার যোগ্য ভালোবাসা পেয়ে গেছি। "এখন ছাড় আমাকে!"

ঋত্বিক বলল,
_জানিস আজকের পর তুই আমাকে আর দেখতে পাবি না, "প্লিজ আমার কাছে একটু থাক!"

প্রিতম অবাক হয়ে বলল,
_"এসব কী বলছ তুমি!"

ঋত্বিক একটা বিশের শিশি বের করে বলল,
_আমি এটা খেয়েছি, "জানিস এই জিনিস টা না ভীষণ স্বাদ,এটাই আমার শেষ খাবার!"

প্রিতম ভয় পেয়ে গেল এবং ঋত্বিক সেটা বুঝতে পেরে বলল,
_ভয় পাস না, আমার এই মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী থাকবি না। আমি বাড়িতে সুসাইট নোট লিখে এসেছি, তুই কোনো ভাবে ফাঁসবি না।"শুধু মৃত্যুর আগে আমার চোখের সামনে একটু থাক!"

প্রিতম বলল,
_"এতসব কিছু শোনার পর কেন আপনি মৃত্যুর আগে আমাকে দেখতে চাইছেন কেন!"

ঋত্বিক মুচকি হেসে বলল,
_ওই যে বললাম ভালোবাসি।এটাই তো তোর প্রতি আমার সত্যিকারের ভালোবাসা।…

ঋত্বিকে'র মুখ থেকে এই কথা শোনার পর প্রিতমে'র চোখ থেকে একফোঁটা জল বেরিয়ে এল।

ঋত্বিক আবার মুচকি হেসে বলল,
_"ভীষন কষ্ট হচ্ছে প্রিতম, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার!"

প্রিতম কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই ঋত্বিকে'র নিঃশ্বাস থেমে গেল। মৃত্যুর পর ও ঋত্বিকে'র চোখ প্রিতমে'র দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিতম চোখ দুটো বন্ধ করে দিতে গিয়ে ও হাত সরিয়ে চলে গেল হোটেলে।

প্রিতম হোটেলে গিয়ে দেখল লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো বিছানা।প্রিতম'কে দেখা মাত্রই মাহির স্যার হেঁসে উঠলেন এবং প্রিতমে'র কাছে গিয়ে প্রিতম'কে কোলে তুলে নিল।

প্রিতম'কে বিছানায় শুয়ে দিল মাহির স্যার এবং নিজের শার্ট টা খুলে ফেলে দিলেন, এদিকে প্রিতমের মন অন্য দিকে। কিছুক্ষণ পর পুরো ঘরের লাইট নিভিয়ে দিলেন মাহির স্যার।…

বিকাল হয়ে গেল।জানালা দিয়ে রোদের তাপ প্রিতমে'র চোখে পড়তেই প্রিতম ঘুম থেকে উঠে পড়ল। মাহির স্যার'কে দেখতে না পেয়ে প্রিতম টেবিলে একটা চিঠি দেখতে পেল।জামা-কাপড়হীন শরীরে প্রিতম কম্বল জড়িয়ে চিঠি টি নিয়ে খুলে পড়তে শুরু করলো।

চিঠিতে লেখা আছে-প্রিতম তোমাকে প্রথম দিন দেখেই আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল।মনে প্রাণে চেয়েছিলাম তোমার সাথে একটা রাত কাটানোর। তোমার সাথে সময় কাটিয়ে ভালো লাগলো।আমি আজ শহড়ের বাইরে চলে যাচ্ছি। তুমি আমাকে ভীষণ আনন্দ দিয়েছ ভবিষ্যতে হয়তো আবার দেখা হবে।
ইতি, তোমার মাহির স্যার
সব কথা পড়ে প্রিতমের চোখ থেকে জল জড়তে লাগল আর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো প্রিতম। কিছুক্ষণ পর ঋত্বিকের কথা মনে পড়লো প্রিতমের। তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পরে দৌড় দিল প্রিতম।

পুরো গ্রাম নির্জীব আর নিরব হয়ে গেল।প্রিতম ঋত্বিককে যেখানে দেখেছিল সেখানে নেই দেখে শ্মশান ঘাটের দিকে দৌড় দিল। শ্মশান ঘাটে এসে প্রিতম দেখল ঋত্বিকে'র ছিতাই দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলছে।

প্রচন্ড আগুন জ্বলছে ঋত্বিকের চিতাই আর প্রিতম সেখানে গিয়ে নিরবে বসে পড়ল। অনেকক্ষন চুপ থাকার পর প্রিতমের চোখ একটা গাছের উপর পড়ল।গাছে কিছু একটা লেখা ছিল।

প্রিতম গাছের কাছে গিয়ে লেখাটা পড়ে বলল,
_ আমি জানি প্রিতম তুই একদিন এখানে ঠিক আসবি।জানিস প্রিতম আমি না তোকে সত্যি ভীষণ ভালোবাসি আর মৃত্যুর পর‌ও বাসব।এই কথা দেখে প্রিতম কেঁদে উঠলো কেঁদে উঠলো।

আরো লেখা ছিল, তুই তোর নতুন জীবনে খুশি থাকিস, আমি তোর জন্য সত্যি বেমানান ছিলাম।

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে প্রিতম আর শক্ত করে গাছটাকে জড়িয়ে ধরল এবং বলল
_আমি সত্যি ভীষণ খারাপ ঋত্বিক দা, ভীষণ খারাপ আমি। তোমার মতো মানুষ কে পেয়ে ও হারিয়ে ফেললাম। এসব কিছুর জন্য আমি'ই দায়ী। ঋত্বিক দা ঠিক বলেছিল, "আমি মানুষ'টা বড্ড দামী"তাই তো আমার কপালে ভালোবাসা স‌ইল না!"…

••••সমাপ্ত••••

""" কালীকথন """লেখা- প্রিয়ম দাশ______________________________________মধ্যগগন তখন ভরে উঠেছে ধুপ-ধুনোর গন্ধে। ঘোর অমাবস্যা...
21/10/2025

""" কালীকথন """
লেখা- প্রিয়ম দাশ
______________________________________
মধ্যগগন তখন ভরে উঠেছে ধুপ-ধুনোর গন্ধে। ঘোর অমাবস্যার রাত কিন্তু অন্ধকারের লেশমাত্র নেই। থরে থরে সাজানো প্রদীপের প্রতিটি শিখা শোনাচ্ছে এক পবিত্রতম উর্জার কাহিনী। দ্যুলোকে কোনো নক্ষত্রের অস্তিত্ব নেই আবার ক্ষণে ক্ষণে নক্ষত্রের অভাবও নেই। থেকে থেকে একটা দুটো আতশবাজির ঝলকানি শোনা যাচ্ছে দূর থেকে। প্রতিটা বাড়ি ঝলমল করছে টুনিবাতির আলোয়। দক্ষিনা হওয়ায় খুব কাছের কোথাও থেকে ভেসে আসছে স্নিগ্ধ দোলনচাঁপার ঘ্রাণ।

উলুধ্বনিতে মুখরিত হলো সারা মন্দির। শক্তির অন্যতম প্রতীক কালীপূজো। পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণে দেবীকে প্রসন্ন করার চেষ্টা। মন্দিরের একপাশে বিন্দি কাহিনী শোনাচ্ছে কিছু বাচ্চাদের। সেই কাহিনীতে উঠে আসছে শক্তির কালীরুপে দানব বধের গল্প। সেসময় কামিনী দৌড়ে এলো উদ্ভ্রান্তের ন্যায়।

—বিন্দি মাসি শ্যাম ফিরেছে গো কিন্তু কেমন জানি করছে!

কামিনী আরো কিছু বললো কিন্তু অর্ধেকটা শুনেই বিন্দি পূজোর আসর ছেড়ে দৌড় দিলো বাড়ির দিকে। বাড়ির উঠোনে আলু-থালু অবিন্যস্ত অবস্থায় বসে আছে শ্যাম। ছেলেটার অবস্থা দেখে বিন্দির চোখ উত্থিত হয় জলে। পড়নের ফতুয়াটা জায়গায় জায়গায় ছেড়া, ঠোটের কোনায় চিকন ধারায় গড়িয়ে পড়েছে রক্ত, হাতে-পায়ে-মুখে কাটা-ছেড়া-আচরের দাগ। ফর্সা চেহারাটা বিবর্ণ। বিন্দি বুকে জড়িয়ে নিলো দ্বাদশবর্ষী ছোট্ট ছেলেটাকে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে বারো বছর আগের একটা দৃশ্য।

এমনই এক অমাবস্যার সন্ধ্যায় বিন্দি সারাদিন টাকা তুলে বাড়ি ফিরছিলো। লিঙ্গ পরিচয়ে বিন্দি একজন বৃহন্নলা। সাধারণ মানুষের কাছে তার পরিচয় একজন হিজরা হিসেবে। সেই সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় কানে ভেসে আসে নবজাতকের কান্নার স্বর। ধারে একটা বড় ডাস্টবিন। পলিথিনের মাঝে দুধফর্সা এক ফুটফুটে নবজাতক। বিন্দি নবজাতককে তুলে নিলো। অদূরেই একটা হাসপাতাল আছে। হয়তো কারো ক্ষনিকের সুখের ফসল ও যাকে ফেলে গিয়েছে এখানে।

পল্লীর সকলেই ঘোর বিরোধ করলো বাচ্চাটাকে না রাখার জন্য। বিন্দি কারোর কথা শুনলো না। পল্লীর প্রধান লক্ষ্মী এসে বিন্দির চুলের মুঠি ধরে গালাগাল দিলো সাথে বললো গলা টিপে মেরে ফেলতে বাচ্চাটাকে। তখন বাচ্চাটাকে বুকের মাঝে আড়াল করে বিন্দি গর্জে উঠলো। একমুহূর্তেই মাতৃত্বের বোধ জেগে উঠলো তার মাঝে। 'মা' নামক ভারী শব্দটাকে ভেতর থেকে অনুভব করলো সে। এই বারোটা বছর ধরে সে প্রমাণ করলো অর্ধেক পুরুষ আর অর্ধেক নারী অঙ্গেও মা থাকতে পারে। তার মা হওয়ার কথা ছিলো না তবুও ঈশ্বর এক বহুমূল্য দায়িত্ব তার কাধে তুলে দিয়েছেন ভেবে আদরে-যত্নে কোনো ত্রুটি রাখে নি সে। শুধু সে নয় তার দেখাদেখি কামিনী সাথে আরো কয়েকজন হয়ে উঠেছিলো বাচ্চাটার মা।

—কি হয়েছিলো? খুলে বল মাকে!

শ্যাম মুখ তুলে তাকায় মায়ের পানে। অবুঝ ছেলেটা হাত দুটো বাড়িয়ে দেয়। দেখায় পুরো হাতজুড়ে জ্বলন্ত সিগেরেটের ছ্যাঁকা দিয়েছে। কাঁদো কাঁদো চোখ দিয়ে বোঝাতে চায়—খুব ব্যাথা করছে মা!

—করালি দাদুর বাড়ির পেছন দিয়ে আসছিলাম আমি। রনি দাদা আর তার বন্ধুরা বসেছিলো সেখানে। আমায় দেখে তাদের কাছে ডাকলো। বলেছে আদর করবে। আমার এখানে ধরেছে আর খামচে ব্যাথা দিয়েছে বলে নিতম্বদেশের দিকে ইঙ্গিত করলো। তারপর আমার বুকেও ব্যাথা দিয়েছে। ফতুয়াটা তুলে দেখায় রক্ত জমাট বেধে কালশিটের দাগ পড়ে গেছে। নরম অঙ্গে চাপ প্রয়োগের কারণে নখের ক্ষত সৃষ্টি হয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। আমি কান্না করেছি বলে আমার হাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে চড় মেরেছে।

হিচকি তুলে কাঁদে ছেলেটা। মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না। ছোট্ট ছেলেটার উপর কি যাচ্ছে তা কি কেউ অনুমান করতে পারে? কাঁদতে কাঁদতে অবুঝ ছেলেটা মাকে নালিশ জানায়। পাশ থেকে জয়া নামের আরেকজন বলে উঠে-

—মুখুজ্জেদের ছেলে। চলা-ফেরা করা জীবন্ত শয়তান এই রনি। গত তিনবছরে তিনটে নাবালিকা মেয়ের সম্মানহানি করেছে ও। কতো মায়েদের চোখের জল ঝরিয়েছে, কতো মেয়েদের পায়ের তলায় পিষেছে। কিন্তু বাপের ক্ষমতা আছে বলে কেউ কিছু করার সাহস পায় না। তিনমাস আগে বাড়ুজ্জেদের ছোট নাতিটাকেও অন্ধকারে এইভাবে অত্যাচার করেছে ও। ছেলেটার রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। হাসপাতালে নেওয়ার পথিমধ্যে মারা যায় ছেলেটা। এতোদিন মেয়েদের দিকে নজর দিতো এখন তো ছেলেদের দিকেও....

জয়া কথা শেষ করতে পারে না বিন্দি তার আগেই উঠে পড়ে। ছেলের গালে হাত রেখে বলে-

—খেলনা চাই? খেলবি?

ছেলের হাত ধরে ফিরে আসে মন্দিরে। পুরোহিত তখন ভক্তদের কালীকথা শোনাচ্ছেন।

—চন্ড, মুন্ড, আর রক্তবীজ নামের অসুর যখন অসহায়দের ওপর অত্যাচার করছিলো তখন মা কালী তাদের বধ করে শিরশ্ছেদ করে তাদের রক্তপান করেছিলেন আর ঘোষনা করেছিলেন যখন যখন অসুরেরা মাথা তুলে তাকাবে তিনি স্বয়ং তাদের মুন্ডুচ্ছেদ করতে আসবেন।

বিন্দির নজর পড়ে পাশে বলিবেদির ওপর। তার পাশেই বাধা আছে বলির পাঠা। বিন্দি সহসায় মন্দিরে প্রবেশ করে। মায়ের হাত থেকে তুলে নেয় তীক্ষ্ণ খাড়াটা। উচ্চস্বরে অ্যালার্ন করে-

—আজ মা নিরীহের রক্তে প্রসন্ন হবেন না। মা আজ নরপিশাচের বলি চান।

পাশের বলির পাঠাকে দেখিয়ে বলে-

—ওকে ছেড়ে দাও। আজ মায়ের রক্তপান করার ইচ্ছে। তাই আজ মায়ের নরপিশাচের রক্ত দিয়ে রক্তস্নান হবে।

তারপর গমগমিয়ে মিলিয়ে যায় অন্ধকারে।

করালিদের বাড়ির পেছনটা কিছুটা জঙ্গল ধরনের। আগাছা আর বড় বড় গাছাপালা দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জঙ্গল। সেখানে বসে রনি তার দলবল নিয়ে অশ্লীল গানে মদ্যপান করে নাচছিলো। অকস্মাৎ নুপূরের ঝংকার ওঠে। মজায় ব্যাঘাত ঘটে বলে কয়েকটা গালাগাল দেয় রনি।

—কে ওখানে? কে?

কয়েকবার জিজ্ঞাসা করে কিন্তু উত্তর পায় না। নুপূরের ঝংকার তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে।

—কে ওখানে? সাহস থাকে তো সামনে আয় মজা বোঝাবো ভালো করে।

বিন্দি এগিয়ে আসে আলোয়। ওকে দেখে রনি আর সাঙ্গপাঙ্গরা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ওঠে। ভাবে আজকের শিকার পেয়ে গেছে তারা। মুখে দিয়ে লোল ঝরে পড়ে যেনো। একজন রনিকে ইশারা করে বলে ওঠে-

—কিছুক্ষণ আগে যে ছানার মজা নিয়েছি সে ছানার মা ও।

রনি হাসে আর তুচ্ছ নিয়ে বলে-

—তাই নাকি! তাহলে ছানার সাথে সাথে ছানার মাকেও....
অসুরের মতো বিশ্রী হেসে উঠে রনি। লোলুপ দৃষ্টি দেয় বিন্দির বুকের দিকে। হাত বাড়ায় সে। তখনও কারো চোখে পড়েনি বিন্দির ডান হাতখানা তার পেছনে লুকোনো। আস্তে আস্তে হাতটা বের করে আনে সে। বন্ধ চোখ দুটো খুলেই এক কোপ মারে। রক্ত ছলকে উঠে। কিছুটা এসে পড়ে বিন্দির মুখে। ঝিনঝিন শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই সেখানে। ধর থেকে আলাদা হয়ে পড়ে রনির কাটা মুন্ডুটা। মুহূর্তেই রক্তে ভেসে যায় সেই স্থান। বিন্দির চোখ দুটো প্রদীপের লাল শিখার মতো জ্বলজ্বল করে ওঠে। দমকা হাওয়া এসে খুলে দেয় বেধে রাখা চুলগুলো। পাগলের ন্যায় দিকবিদিকশুন্য হয়ে উড়তে থাকে তা। রক্ত দেখে অট্টহাসি হাসে বিন্দি। সে হাসি শুনে গায়ে কাটা দেয় বাকিদের। তাহলে কি বিন্দির উপর মা কালী ভর করলো? ভয়ে সবাই পালাতে চায় কিন্তু পা যেনো জমে গিয়েছে একজায়গায়। যেনো মাটি টেনে ধরে রেখেছে তাদের। একে একে সবগুলো দেহ থেকে মুন্ডচ্ছেদ হয়। ফোঁটায় ফোঁটায় আঠালো রক্ত গড়িয়ে পড়ে খর্গ থেকে। বিন্দি রনির কাটা মুন্ডুটা তুলে নেয়।

মন্দির চত্বরে বিন্দি এসে থামে। ছেলের দিকে কাটা মুন্ডুটা এগিয়ে দিয়ে বলে-

—নে তোর খেলনা। খেল এটা দিয়ে।

ছোট্ট বাচ্চাটা কি আর এতো কিছু বুঝে। সে ভয়ে কামিনী মায়ের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। বিন্দি মন্দিরে প্রবেশ করে। দেবীর হাত থেকে মাটির নকল মুন্ডটা খুলে নিয়ে তার পরিবর্তে বেধে দেয় এক আসল নরপিশাচের মুন্ডু। বসে পড়ে মন্দিরের সিঁড়িতে। বিন্দির এহেন রূপ দেখে পুরোহিত বলে উঠলেন-

—মা তার কথা রেখেছেন। এ যুগে অসুর যেমন এসেছে তেমনি মাও এসেছেন। উদাহরণ স্থাপন করেছেন প্রত্যেক নারী অঙ্গেই মায়ের বাস তা সে পূর্ণ নারী হোক অথবা বিন্দির মতো অর্ধ নারী। দেবীর বলি দেবী নিজেই নির্বাচন করেছেন তাই এই মন্দিরে আর কোনো নিরীহের বলি হবে না।

ভক্তেরা জয়ধ্বনিতে ফেটে পড়ে-

—জয় মা কালীর জয়।

তা দেখে বিন্দি হাসে..খুব হাসে।

-----------(সমাপ্ত)-----

Address

Rajpur
700064

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অন্য-পুরুষের গল্প posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category