22/10/2025
"তুই মানুষটা বড্ড দামী"
লেখা- ঈশান রায়
_____________________
_"আচ্ছা প্রিতম তুই আমাকে কখনো ছেড়ে যাবি না তো!"বিষন্নতা আর আনন্দিত হয়ে করুন গলায় নিজের ভালোবাসার মানুষটি'কে জিজ্ঞেস করল ঋত্বিক।)
ঋত্বিকে'র প্রশ্নের উত্তরে প্রিতম হেঁসে বলল,
_ধুর পাগল।"প্রান ছাড়া কী কখনো দেহ থাকে!"তুমি যে আমার প্রান ঋত্বিক দা। "তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব কী করে?"
প্রিতমে'র এই উওর শুনে ঋত্বিক প্রিতম কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল এবং বলল,
_চুপ, একদম চুপ।আমি থাকতে আমি তোর কিছু হতে দেব না।"
ঋত্বিকে'র বুক থেকে সরে প্রিতম বলল,
_"ঋত্বিক দা সন্ধ্যা নামছে চল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যায়!"
প্রিতম বলল,
_হ্যা চল।…
সন্ধ্যা নেমে আসায় ঋত্বিক আর প্রিতম বাড়িতে চলে আসে।"
প্রিতম আর ঋত্বিকের ঘর একসাথেই। ঋত্বিক আর প্রিতম প্রতিবেশি ভাই হয় কিন্তু এতে ওদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ঋত্বিক আর প্রিতম একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসে কয়েকবছর ধরে। "চলুন তাহলে জেনে নিই এদের ভালোবাসার প্রেমকাহিনী কোনদিকে এগোয়!"…
রাত দশটাই প্রিতম খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেল নিজের রুমে। বিছানায় যাওয়ার আগে কেউ একটা পিছন থেকে হাত দিয়ে প্রিতমের চোখ হঠাৎ করে ধরে রাখে।…
প্রিতম ভয় পেয়ে বলল,
_"কে ,কে?"…
হঠাৎ পিছনে থাকা লোকটি প্রিতমের চোখ থেকে হাত সরিয়ে লোকটির বুকে টেনে নেয়।
প্রিতম লোকটি'কে দেখে বলল,
_ ওফ ঋত্বিক দা তুমি, আমি তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম।"
ঋত্বিক বলল,
_আমি এসেছি আর তুই সেটা বুঝতে ও পারিস নি।"এ কেমন ভালোবাসা!"
প্রিতম বলল,
_"আরে এরকম ভাবে পিছন থেকে ধরলে কে বুঝতে পারবে বলতো!"
ঋত্বিক বলল,
_হ্যা তাও ঠিক।
প্রিতম বলল,
_আচ্ছা তুমি ওসব ছাড়।"এটা বল তুমি এত রাতে এখানে কী করছ?"…
ঋত্বিক বলল,
_বারে, "আমি কী রাতে তোকে একটু আদর করার জন্যও আসতে পারি না!"
ঋত্বিকের এই কথা শুনে প্রিতম বলল,
_'কী?'
তক্ষুনি ঋত্বিক প্রিতমের মুখে আঙ্গুল ধরে বলল,
_চুপ, একদম চুপ।…
এদিকে প্রিতম ঋত্বিকের স্পর্শে আসায় প্রিথমের হার্টবিট বেড়ে গেল। প্রিতম এর বুকের ভিতরে ধুকপুক-ধুকপুক করছে শুধু।
প্রিতমের নিঃশ্বাস বেড়েই চলেছে, প্রিতম চাইতেও কিছু বলতে পারছে না।নিঃশ্বাস কে একটু নিজের বশে এনে প্রিতম বলল,
_ঋত্বিক দা আমার কেমন একটা লাগছে।
ঋত্বিক বলল,
_এটা স্বাভাবিক।
ঋত্বিক প্রিতমের হাত টা বুকে টেনে ধরে প্রিথমের কপালে একটা হালকা চুমু খেল। ঋত্বিকের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে প্রিতম ঋত্বিকের কাঁধ টা শক্ত করে ধরে রাখল। ঋত্বিকের এই স্পর্শে প্রিতম ঋত্বিকের ভালোবাসা অনুভব করল।
ঋত্বিক প্রিতম'কে কোলে তুলে নিল এবং বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিল এরপর ঋত্বিক ঘরের আলো টা নিভিয়ে দিল।…
______________
সকাল হতে চলল তাই ঋত্বিক'ও তার ঘরে চলে গেল।…
এইভাবেই দিন কাটতে লাগলো ঋত্বিক আর প্রিতমের। সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসার এক নতুন মিল বন্ধন তৈরি হলো তাদের মধ্যে।একে অপরকে ছাড়া তারা তাদের জীবন ভাবতে'ও পারত না।
এদিকে আজ প্রিতম অনেকদিন পর স্কুলে আসল। প্রথম ক্লাসেই প্রিতম স্যার কে দেখে অবাক হয়ে গেল কারণ ক্লাসে একজন নতুন শিক্ষক এলো আজ।
প্রিতম তার এক বন্ধু কে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করল,
_"এই ইমন, এই স্যার টা নতুন এসেছে নাকি!"
ইমন বলল,
_আরে হ্যাঁ ইনি হলো মাহির স্যার,কয়েকদিন আগেই এসেছে। সাবধানে থাকিস ক্লাসে,কারণ ওনার মাথা ভীষণ গরম।
স্যার টা দেখতে যেমন রাগী তেমনি বেশ সুন্দর, স্মার্ট।শাট পড়া সত্বেও তার জীম করা বডি দেখা যাচ্ছিল।
প্রিতম কেমন নজর দিয়ে নতুন স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ স্যারের নজর পড়ল প্রিতমের দিকে, স্যার প্রিতমের কাছে এগিয়ে এলো।
প্রিতমে'র কাছে এসে মাহির স্যার বলল,
_তুমি'কী ক্লাসে নতুন, তোমাকে তো এতদিন দেখি নি,"কোথায় ছিলে!"
হঠ্যাৎ প্রিতম'কে স্যারের এই প্রশ্ন টা করায় প্রিতমে'র মুখে কেমন একটা হাঁসি দেখা গেল।প্রিতম ও স্যার'কে সুন্দর করে উওর দিল।…
দুপুর হয়ে গেছে এদিকে প্রিতম ক্যান্টিনে বসে আছে। হঠাৎ ক্যান্টিনে মাহির স্যার এসে উপস্থিত হলো। মাহির স্যার আসা মাত্র প্রিতমে'র চোখ মাহির স্যারের দিকে গেল আর মাহির স্যার ও একপলক প্রিতমের দিকে তাকিয়েছিল।
কিছুক্ষণ অন্য টেবিলে বসে থাকার পর মাহির স্যার প্রিতমের কাছে গিয়ে তার পাশের চেয়ারে বসলেন।
মাহির স্যার প্রিতম'কে বললেন,
_"কিছু খাচ্ছ না যে!" "কিছু হয়েছে!"…
প্রিতম বলল,
_না না স্যার, আসলে আমার খিদে নেই।
স্যার বললেন,
_আচ্ছা। তুমি তো ক্লাসে ভালোই পড়া পারছিলে, ভালো ভাবে স্কুলে উপস্থিত হয়ে পড়াশোনা কর!"
প্রিতম বলল,
_হ্যা স্যার।…
এদিকে প্রিতম আর স্যার অনেকক্ষন গল্প করল। গল্প করতে করতে তারা তাদের অনেক কাছে আসতে লাগল।…
এইভাবে কাটাতে লাগলো দিন। প্রিতম'কে বাইকে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, ক্লাসে একে অপরের প্রতি নিজেদের মনযোগ, পার্কে গল্প করা এই নিয়ে প্রিতম আর মাহির স্যারের দিন ভালোই কাটছিল এবং তারা একেঅপরের প্রতি এক অদ্ভুত সম্পর্ক অনুভব করতে লাগলো।…
___________
এদিকে প্রিতম আর ঋত্বিক এর সম্পর্কে ভাঙন ধরতে লাগলো। প্রিতম ঋত্বিকের সাথে আর ঘুরতে যাই না, ঋত্বিকে'র কাছে আর আসে না প্রিতম।
হঠাৎ একদিন রাতে ঋত্বিক প্রিতমে'র ঘরে আসল।
প্রিতম ঋত্বিক'কে দেখে অবাক হয়ে হম্বিতম্বি করে বলল,
_ ঋত্বিক দা তুমি এখানে কী করছ?কেউ দেখে নিবে।…
ঋত্বিক বলল,
_"আমার কলিজার টুকরোর সাথে দেখা করব এতে আমার ভয় কীসের?"
ঋত্বিক প্রিতম'কে তার বুকে টেনে নিল, হঠাৎ প্রিতম ঋত্বিক'কে জোরে ধাক্কা দিল এবং ঋত্বিক মাটিতে পড়ে গেল।
প্রিতমের এই ব্যবহার দেখে ঋত্বিক মাটি থেকে উঠে বলল,
_"তুই এরকম ব্যবহার কেন করছিস!"…"কী হয়েছে তোর?" "আ.আ.আমায় বল কী হয়েছে তোর!"
প্রিতম বলল,
_ঋত্বিক দা তুমি এখন এখান থেকে যাও, 'প্লিজ!'…
ঋত্বিক যেতে না চাইলে প্রিতম ঋত্বিক'কে শাসিয়ে বের করে দিল। ঋত্বিকের চোখে হঠাৎ জল চলে এল, সেদিকে খেয়াল না করেই প্রিথম ঋত্বিক কে জানালা দিয়ে বের করে দিল।
ঋত্বিক চলে যেতেই প্রিতমে'র মোবাইলে মাহির স্যার মেসেজ করে বলল,
_আগামীকাল সন্ধ্যায় যেন তার সাথে নদীর তীরে দেখা করে। মেসেজ টা পড়ে মোবাইল টা বুকে চেপে ধরে প্রিতম হেঁসে ঘুমিয়ে পড়ল।
অন্যদিকে ঋত্বিক তার ঘরের জানালার দিকে দাঁড়িয়ে প্রিতমে'র রুমের দিকে তাকিয়ে আছে আর কাঁদছে।
ঋত্বিক কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলল,
_প্রিতমে'র হঠাৎ কী হলো,"আগে তো এরকম করত না!"
কিছু একটা ভেবে ঋত্বিক বলল,
_না না এসব আমার মনের ভুল,কাল হয়তো পরীক্ষা তাই ও নার্ভাস হয়ে উঠেছে হয়তো। কালকে সকালেই গিয়ে ওর মনোবল বৃদ্ধি করতে হবে। আমি আমার প্রিতম'কে ভেঙে পড়তে দেব না। এখন ঘুমাই বাপু,কাল সকালে দেখা হচ্ছে।…
________________
পরেরদিন সন্ধ্যায় প্রিতম সুন্দর করে তৈরি হয়ে নদীর দিকে এগিয়ে গেল।মাঝ রাস্তায় প্রিতম'কে দেখতে পেয়ে ঋত্বিক বলল,
_"একী প্রিতম এই সন্ধ্যা বেলায় কোথায় যাচ্ছে?"
প্রিতম নদীর পাড়ে গিয়ে দেখল মাহির স্যার তার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রিতম স্যারের কাছে গিয়ে বলল,
_কী হলো স্যার,এই সন্ধ্যা বেলায় আমাকে ডাকলেন যে!"কিছু কী বলবেন!"...
মাহির স্যার বললেন,
_অনেককিছুই তো বলতে চাই, কিন্তু অত সময় নেই তাই সবকিছু সংক্ষিপ্ত আকারে বলতে চাই।
প্রিতম হেঁসে বলল,
_'কী কথা স্যার!'…
মাহির স্যার প্রিতমের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল এবং একটা লাল গোলাপ বের করে বললেন,
_আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রিতম, ভীষণ-
ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।
মাহির স্যারের মুখে এই কথা শুনে প্রিতমে'র বুক হঠাৎ কেঁপে উঠলো।প্রিতমে'র মুখের ভাষা কেন যেন থেমে গেল।
মাহির স্যার কিছু একটা বুঝতে পেরে বলল,
_"তুমি চুপ করে আছ'যে কিছু তো বল!"
মনকে শান্ত করে আনন্দে আত্মহারা। প্রিতম ও বলল,
_স্যার আমি ও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি।
মাহির স্যার উঠেই প্রিতম'কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, এদিকে ঋত্বিক দূর থেকে সবকিছু দেখছে আর সবকিছু নিজের চোখে দেখে ঋত্বিকের চোখ থেকে টপটপ করে জড়তে লাগল পানি ।
কিছুক্ষণ কথা বলার পর প্রিতম ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। অন্ধকার রাস্তায় একেক টা পা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিথম, হঠাৎ প্রিতমে'র হাত ধরে কেউ টান দিল।
লোকটিকে প্রিতম চিনতে পেরে রেগে বলল,
_ ঋত্বিক দা এসব কী অসভ্যতা।
ঋত্বিক বলল,
_ও আচ্ছা এখন এসব তোর কাছে অসভ্যতা লাগছে, আগে যখন এসব করতাম তখন তো কিছু বলিস নি,এখন বোধহয় স্যারকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি!
ঋত্বিকে'র মুখে স্যারের কথা শুনে প্রিতম কিছুটা চমকে গেল।
ঋত্বিক আবার বলল,
_"আমি জানি তুই এসব করতে পারিস না,বল'না একবার যে এই সব কিছু মিথ্যা,"বল না প্লিজ!"
প্রিতম ঋত্বিকের হাত টা সরিয়ে বলল,
_এইসব কিছু সত্যি বুঝেছেন, আমি আপনাকে কখনো ভালোই'বাসিনি। আরে আপনার কী আছে এমন যে আপনাকে ভালোবাসবো, 'বলুন!'
ঋত্বিক বলল,
_"ভালোবাসায় চাওয়া পাওয়া হয় না রে!"
প্রিতম ঋত্বিক'কে সরিয়ে দিল এবং বলল,
_সেটা তুমি না চাইতে পার কিন্তু আমি চাই। আফসোস সেটা তুমি দিতে পারবে না। "এখন সরো এখান থেকে!"
ঋত্বিক আবার প্রিতমে'র হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
_দেখ তুই যা চাস আমি সব দেব,"তাও আমাকে ছেড়ে যাস না প্লিজ!"তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না। ভীষণ ভালোবাসি তোকে, 'প্লিজ!'
প্রিতম ঋত্বিকের থেকে নিজের হাত টেনে নিয়ে ঋত্বিক'কে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল এবং বলল,
_ব্যাস, অনেক হয়েছে।এক কথা বলে বলে কানের মাথা খেয়ে নিল একেবারে। আরে তুমি মর বা বেঁচে থাক তাতে আমার কিছু যায় আসে না,'হু…!'
প্রিতম চলে যাচ্ছিল এদিকে ঋত্বিক প্রিথমে'র পা আটকে কাঁদতে কাঁদতে সরু গলায় বলল,
_"প্রিথম প্লিজ!"
ঋত্বিকে'র এতসব আকুতি কে অবজ্ঞা করে প্রিতম ঋত্বিক'কে লাথি মেরে সরিয়ে দিল এবং চলে গেল।
এতসব কিছু শোনার পর ঋত্বিক তার নিজের মধ্যে নেই। চাঁদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর মূল্যবান চোখের জল জড়াচ্ছে।…
এদিকে প্রিতম ঘরে আসা মাত্র মাহির স্যারের কল এল।
প্রিতম কল ধরে বলল,
_কিছুক্ষন আগেই তো কথা বলে এলাম, "এখন আবার কী বলবেন!"
মাহির স্যার বলল,
_তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে, "তোমাকে একটা হোটেলের নাম পাঠিয়েছি কাল সকালে চলে এস প্লিজ!"
প্রিতম বলল,
_ঠিক আছে জান।লাভ ইউ।…
মাহির স্যার বলল,
_লাভ ইউ টু।…
সকাল হয়ে গেল, এদিকে প্রিতম সুন্দর করে তৈরি হয়ে হোটেলের দিকে রওনা হল।ঘর থেকে বেড়িয়ে কিছুক্ষণ এগিয়ে যেতেই প্রিথমের সামনে ঋত্বিকের দাড়িঁয়ে আছে।
ভাঙ্গা গলা, ময়লা কাপড় পড়ে আছে ঋত্বিক। মুখ থেকে মদের দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
প্রিতম নাকে হাত দিয়ে বলল,
_"এখান থেকে সরো আমাকে যেতে হবে!"
ঋত্বিক প্রিথমে'র হাত ধরে মাতলামি করে বলল বলল,
_না তুই কোথাও যাবি না, এখানেই থাকবি।
প্রিতম বলল,
_আমার দেরী হচ্ছে, আমাকে যেতে দাও।
ঋত্বিক প্রিথমে'র হাত টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাটিতে পড়ে গেল।
ঘুম চোখ আর মাতলামি করে ঋত্বিক বলল,
_জানিস প্রিতম তুই মানুষ টা বড্ড বেইমান। আমরা একসাথে কত সময় কাটিয়েছি,কত ঘুরেছি আর তুই...তুই সব এক মূহুর্তে ভুলে গেলি।"কী করে পারলি এটা!"
প্রিতম বলল,
_হ্যা আমি এরকম'ই আর এরকম'ই থাকব। আমি তো তোমাকে কখনো ভালোবাসি নি। এবার আমাকে ছাড়।
ঋত্বিক বলল,
_জানিস তোর ওই কথাগুলোতে কাল শুধু কেঁদে'ছি। প্রিতম, ওই প্রিতম আমাকে তোর ভালোবাসা'টা ভিক্ষা দে না যে রে, আমি কথা দিচ্ছি আমি তোর হাত কখনো ছাড়ব না।
প্রিতম হেঁসে বলল,
_আরে আমি একজনের হাত আগে থেকেই ধরে রেখেছি, তোমার হাত ধরার কোনো শখ আমার নেই।
ঋত্বিককে পা দিয়ে ঠেলে চলে যেতে লাগল প্রিতম।
ঋত্বিক আবার প্রিতমে'র পা ধরে বলল,
_আজ হয়তো তুই ভালোবাসা বুঝলি না কিন্তু তুই একদিন ঠিকই বুঝতে পারবি যে আসল ভালোবাসা কী? কিন্তু…!
প্রিতম চিন্তিত হয়ে বলল,
_"কিন্তু কী?"
ঋত্বিক বলল,
_সেদিন তুই সেই ভালোবাসা পাবি না,ঘুমড়ে-ঘুমড়ে কাঁদবি একদিন।
প্রিতম বলল,
_এরকম কিছুই হবে না কারণ আমি আমার যোগ্য ভালোবাসা পেয়ে গেছি। "এখন ছাড় আমাকে!"
ঋত্বিক বলল,
_জানিস আজকের পর তুই আমাকে আর দেখতে পাবি না, "প্লিজ আমার কাছে একটু থাক!"
প্রিতম অবাক হয়ে বলল,
_"এসব কী বলছ তুমি!"
ঋত্বিক একটা বিশের শিশি বের করে বলল,
_আমি এটা খেয়েছি, "জানিস এই জিনিস টা না ভীষণ স্বাদ,এটাই আমার শেষ খাবার!"
প্রিতম ভয় পেয়ে গেল এবং ঋত্বিক সেটা বুঝতে পেরে বলল,
_ভয় পাস না, আমার এই মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী থাকবি না। আমি বাড়িতে সুসাইট নোট লিখে এসেছি, তুই কোনো ভাবে ফাঁসবি না।"শুধু মৃত্যুর আগে আমার চোখের সামনে একটু থাক!"
প্রিতম বলল,
_"এতসব কিছু শোনার পর কেন আপনি মৃত্যুর আগে আমাকে দেখতে চাইছেন কেন!"
ঋত্বিক মুচকি হেসে বলল,
_ওই যে বললাম ভালোবাসি।এটাই তো তোর প্রতি আমার সত্যিকারের ভালোবাসা।…
ঋত্বিকে'র মুখ থেকে এই কথা শোনার পর প্রিতমে'র চোখ থেকে একফোঁটা জল বেরিয়ে এল।
ঋত্বিক আবার মুচকি হেসে বলল,
_"ভীষন কষ্ট হচ্ছে প্রিতম, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার!"
প্রিতম কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই ঋত্বিকে'র নিঃশ্বাস থেমে গেল। মৃত্যুর পর ও ঋত্বিকে'র চোখ প্রিতমে'র দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিতম চোখ দুটো বন্ধ করে দিতে গিয়ে ও হাত সরিয়ে চলে গেল হোটেলে।
প্রিতম হোটেলে গিয়ে দেখল লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো বিছানা।প্রিতম'কে দেখা মাত্রই মাহির স্যার হেঁসে উঠলেন এবং প্রিতমে'র কাছে গিয়ে প্রিতম'কে কোলে তুলে নিল।
প্রিতম'কে বিছানায় শুয়ে দিল মাহির স্যার এবং নিজের শার্ট টা খুলে ফেলে দিলেন, এদিকে প্রিতমের মন অন্য দিকে। কিছুক্ষণ পর পুরো ঘরের লাইট নিভিয়ে দিলেন মাহির স্যার।…
বিকাল হয়ে গেল।জানালা দিয়ে রোদের তাপ প্রিতমে'র চোখে পড়তেই প্রিতম ঘুম থেকে উঠে পড়ল। মাহির স্যার'কে দেখতে না পেয়ে প্রিতম টেবিলে একটা চিঠি দেখতে পেল।জামা-কাপড়হীন শরীরে প্রিতম কম্বল জড়িয়ে চিঠি টি নিয়ে খুলে পড়তে শুরু করলো।
চিঠিতে লেখা আছে-প্রিতম তোমাকে প্রথম দিন দেখেই আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল।মনে প্রাণে চেয়েছিলাম তোমার সাথে একটা রাত কাটানোর। তোমার সাথে সময় কাটিয়ে ভালো লাগলো।আমি আজ শহড়ের বাইরে চলে যাচ্ছি। তুমি আমাকে ভীষণ আনন্দ দিয়েছ ভবিষ্যতে হয়তো আবার দেখা হবে।
ইতি, তোমার মাহির স্যার
সব কথা পড়ে প্রিতমের চোখ থেকে জল জড়তে লাগল আর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো প্রিতম। কিছুক্ষণ পর ঋত্বিকের কথা মনে পড়লো প্রিতমের। তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পরে দৌড় দিল প্রিতম।
পুরো গ্রাম নির্জীব আর নিরব হয়ে গেল।প্রিতম ঋত্বিককে যেখানে দেখেছিল সেখানে নেই দেখে শ্মশান ঘাটের দিকে দৌড় দিল। শ্মশান ঘাটে এসে প্রিতম দেখল ঋত্বিকে'র ছিতাই দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলছে।
প্রচন্ড আগুন জ্বলছে ঋত্বিকের চিতাই আর প্রিতম সেখানে গিয়ে নিরবে বসে পড়ল। অনেকক্ষন চুপ থাকার পর প্রিতমের চোখ একটা গাছের উপর পড়ল।গাছে কিছু একটা লেখা ছিল।
প্রিতম গাছের কাছে গিয়ে লেখাটা পড়ে বলল,
_ আমি জানি প্রিতম তুই একদিন এখানে ঠিক আসবি।জানিস প্রিতম আমি না তোকে সত্যি ভীষণ ভালোবাসি আর মৃত্যুর পরও বাসব।এই কথা দেখে প্রিতম কেঁদে উঠলো কেঁদে উঠলো।
আরো লেখা ছিল, তুই তোর নতুন জীবনে খুশি থাকিস, আমি তোর জন্য সত্যি বেমানান ছিলাম।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে প্রিতম আর শক্ত করে গাছটাকে জড়িয়ে ধরল এবং বলল
_আমি সত্যি ভীষণ খারাপ ঋত্বিক দা, ভীষণ খারাপ আমি। তোমার মতো মানুষ কে পেয়ে ও হারিয়ে ফেললাম। এসব কিছুর জন্য আমি'ই দায়ী। ঋত্বিক দা ঠিক বলেছিল, "আমি মানুষ'টা বড্ড দামী"তাই তো আমার কপালে ভালোবাসা সইল না!"…
••••সমাপ্ত••••