অন্য-পুরুষের গল্প

অন্য-পুরুষের গল্প সমাজের সেইসব মানুষগুলির জন্য, যারা অন্যসব মানুষের মতই, তবে তথাকথিত কিছু মানুষ তাদের অন্য চোখে দেখে..!

৭ম বর্ষ পদার্পণ উপলক্ষে বিশেষ গল্প আয়োজনের ষষ্ঠ গল্প -""" শেষ থেকে শুরু"""লেখা – মাতাল ঋত্বিক________________________আমি...
31/08/2025

৭ম বর্ষ পদার্পণ উপলক্ষে বিশেষ গল্প আয়োজনের ষষ্ঠ গল্প -

""" শেষ থেকে শুরু"""
লেখা – মাতাল ঋত্বিক

________________________
আমি আসছি তোমার কাছে। আরও একবার তোমার মুখোমুখি হবো বলে। টানা ৫ বছরের সম্পর্কের ইতি টানতে আমি আসছি। আমি খুব ভালো করেই জানি, তুমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছো।
আমার নামে হাজারটা অভিযোগ নিয়ে বসে নেই তুমি। কাঠগড়ায় যেহেতু টেনে এনেছো, পিছুপা হবো না আজ।

হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে যায় সেই ফেলে আসা ৫ বছরের কথা। কতটা সুখের ছিল এই ৫টি বছর!
প্রথম প্রথম আমি কথা বললেও, তোমার কাছে কবিতার মত মনে হতো। এখন আমি কথা বললে এমন ভাব নাও, যেন দুনিয়ার সব বিরক্তির ভার বিধাতা তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে।
একদিন তো বলেই দিয়েছিলে—
“তোমার এফ এম রেডিওটা বন্ধ করবে?”
একটুও দেখোনি, কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন।

বিদেশে আমার প্রথম জন্মদিনের কথা মনে আছে তোমার? কি অদ্ভুত কাণ্ডটাই না করেছিলে সেদিন!
ঠিক রাত ১২টায় কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙে। মুখে বিরক্তি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখি, তুমি বসে আছো গাড়িতে। পুরো গাড়ি বেলি আর গোলাপ দিয়ে ঢাকা।
তুমি জানতেই, আমার পছন্দের ফুল বেলি আর গোলাপ। তোমার হাতে খাঁচায় রাখা ছিল এক জোড়া সাদা খরগোশ। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম— এই ছেলে আমাকে এতটা ভালোবাসে কেন? ওকে হারালে আমি বাঁচবো না বোধহয়।

অথচ আজ পরিস্থিতি কোথায় দাঁড় করিয়েছে আমাদের! আমার গত জন্মদিনের কথাতো ভুলেই গিয়েছিলে তুমি। অভিমান করে বারান্দার অন্ধকারে গান শুনে শুরু করেছিলাম জীবনের ২৭তম বছর।

অনেক আশা আর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম তোমার কাছে। মা–বাবা, ভাই–বোন সবাইকে ছেড়ে এই আমেরিকায়। কোন দিনও ভাবিনি, আমাকে এতটা কষ্ট পেতে হবে। তোমার বন্ধুরা সবাই আমাকে নিয়ে কম উপহাস করেনি। ইংরেজিতে ভালো কথা বলতে পারতাম না তখন। এখানকার মানুষদের সাথে তাল মিলাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম।

মনে আছে, প্রথম যখন আসি, তুমি আমাকে একটা পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিলে?
ওখানে সবাই বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল।
তুমি কাছে এসে সবার সামনে আমায় চুমু দিলে। বললে—
“চল, চলে যাই।”
আমি বললাম, এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছি কেন আমরা?
তুমি বলেছিলে,
“আমার ভালো লাগছিল না সবাই তোমার দিকে হা করে তাকাচ্ছে। তোমার দিকে আর কেউ তাকাক, সেটা আমি চাই না।”

কত আনন্দ লেগেছিল তোমার ওই কথা শুনে, বলে বোঝাতে পারবো না। আমি চেয়েছিলামও তাই।
তুমিই শুধু আমার দিকে তাকাবে। আমার ঠোঁট, আমার শরীর—সবই শুধু তোমার।

কিন্তু দেখ, কাল রাতেও আমি সেক্স করেছি এক সাদা চামড়ার মানুষের সাথে। আমার শরীর নিয়ে কী খেলাটাই না খেললো সে। নিজের ওপর প্রচণ্ড অভিমান আমার। সেই সাথে তোমাকেও বুঝাতে— আমি-ও পারি, আমারও চাহিদা আছে।

তোমার অফিসের এক নতুন ছেলের সাথে তোমাকে আবেগময় মুহূর্তে দেখে ফেলেছিলাম আমি।
আমি বুঝতে দিইনি তোমাকে। তুমি বাসায় এসে কত সুন্দর করে ধারাবাহিক কবিতার লাইনে আমাকে বোঝালে। তারপরেও চুপ করেছিলাম— শুধু তোমায় ভালোবাসি বলে।

একটা ছেলে হয়েও রাত পর রাত খাবার নিয়ে তোমার অপেক্ষা করেছি। বাহিরে কোন চাকরি করতে দাওনি আমাকে— তোমার ঘরের গৃহিণী বানাবে বলে।
তাও মেনে নিয়েছিলাম তোমার জন্য।

সেদিন মদ খেয়ে রাতে বাসায় ফিরে আমাকে একটা চড় মেরেছিলে, জানিয়েছিলে কতটা ভালোবাস তুমি আমায়। গালাগালিতেও যে তোমার দখল আছে, সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝিয়েছিলে।

অসহায় একা আমি কোথাও যেতে পারিনি তোমাকে ছেড়ে। কতদিন চোখের পানি দিয়ে ভাত খেয়েছি, তুমি কি জানো? রাতে তোমাকে ঘুমে রেখে বারান্দায় বসে আকাশের সাথে কথা বলতাম আমি।

তোমার জন্য পরিবারকে বিসর্জন দিয়েছিলাম।
এখন বুঝতে পারছি, কত বড় ভুল করেছি আমি।
কিন্তু আমার আর কোন পথ খোলা নেই।
আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম তোমাকে নিয়ে— কিন্তু আর পারছি না আমি।
মুক্তি চাই তোমার থেকে। হ্যাঁ, তাই আসছি— আরও একবার তোমার মুখোমুখি হবো বলে।

নিউইয়র্কের বাঙালিরা আমাকে দেখে প্রশ্ন করতো—
“ভাই, তুমি কি খুব দুঃখী? সারাক্ষণ চুপচাপ থাকো কেন?”
তাদের বলতে পারতাম না, আমার ভাগ্যই দায়ী।
নিয়তি আমাকে কঠিন খেলায় মেতে তুলেছে।

এক বড়ভাই না থাকলে হয়তো আমি এখন পরপারে চলে যেতাম। সেদিন তোমার সাথে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে নাইটক্লাবে গিয়ে ভরপেট মদ খেয়ে পড়েছিলাম বাসের নিচে। কিন্তু সেই ভাই আমাকে মরতে দেননি। এখন তাঁর বাসায় আছি আমি।

এই ২ মাসে একবারও তুমি খোঁজ করোনি— আমি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি?
নিশ্চয় খালি বাসা পেয়ে কাউকে নিয়ে মেতেছো সেক্স আর মদে। আচ্ছা, একবারও কি মনে পড়েনি তোমার?
গত ৫ বছর ধরে একটা মানুষ কতটা কষ্ট আর অবহেলা সহ্য করে পড়ে ছিল তোমার ওই চার দেওয়ালের মাঝে! আমার কান্নার শব্দ তোমার ঘরের আসবাবপত্রও ভুলেনি বোধহয়।

এখন আমি দাঁড়িয়ে আছি তোমার সেই চিরচেনা ঘরের ভেতর। ঘড়িতে সময় ৫টা।

দরজার কলিং বেল বাজাতেই তুমি দরজা খুলে দিলে।
আমাকে দেখে যেন ভূত দেখলে! কোনো কথা বলতে পারছিলে না তুমি... বোধহয় আশা করোনি।
আমাকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ জড়িয়ে ধরলে।
বাধা দিতে পারছিলাম না।
আরও অবাক হচ্ছিলাম— জীবনে প্রথমবার তোমাকে কাঁদতে দেখে।

আমার চোখে একটুও পানি নেই— শুকিয়ে গেছে অনেক আগে।
তুমি আমায় জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলে—
“কোথায় ছিলে তুমি? আমি পাগলের মত খুঁজেছি তোমায়! তুমি চলে যাবার পর বুঝেছি তুমি আমার কী ছিলে। একটা রাতও ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি... সারাক্ষণ তোমার কান্নাভরা চেহারাটা চোখে ভাসত। তুমি বারান্দায় যে চেয়ারটায় বসে আকাশের সাথে কথা বলতে— ঠিক ওখানটায় বসেই এই দুই মাস কেটেছে আমার।”

তোমার কান্নাভরা কণ্ঠে কথা শুনে আমি নির্বাক।
শুধু কঠিন স্বরে বললাম—
“অনেক ভালোবেসেছিলাম তোমায়। তোমার জন্য সব ছেড়ে আজ আমি এক যাযাবর। শুধু তোমার জন্য আমার মায়ের মুখ দেখতে পাইনি ৫ বছর। আমার একমাত্র বোনের বিয়েতে থাকতে পারিনি। বাবার কবরে একমুঠো মাটিও দিতে পারিনি। শুধু তোমার জন্য এত ভালো ছাত্র হয়েও এমবিএ করতে পারিনি। শুধু তোমার জন্য আমি আমার নিজের জীবনকে ঘৃণা করি। আর কি বাকি আছে তোমার? বলো!”

কথা গুলো বলে নিঃশ্বাস নিলাম।
নিজেকে হালকা লাগছিলো— অনেক দিনের জমানো কষ্ট কিছুটা কমে গিয়েছিল।

তুমি দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে বসে পড়লে আমার সামনে।
কাঁদছিলে বাচ্চাদের মত।
আমার একটুও কান্না পাচ্ছিল না।

তুমি এবার বললে—
“প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। সারাজীবন তোমার কাছে থাকবো। কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে। শুধু একবার সুযোগ দাও। আমাকে দয়া করো। তুমি না থাকলে আমি সত্যিই আত্মহত্যা করব।”

আমি বললাম—
“দেখো, তোমার নাটক অনেক দেখেছি। আর নয়। আমি এসেছি আমাদের নাটকের শেষ দৃশ্যটা সম্পূর্ণ করতে। আমি যাই। ভালো থেকো।”

আমি এক পা, দুই পা করে ঘর থেকে বের হলাম।
গেটের দিকে এগুচ্ছি।
বুঝতে পারছিলাম, ভেতরে প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছে।
বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছিলাম।

তুমি পেছন থেকে বাচ্চাদের মত চিৎকার দিয়ে বললে—
“তুমি যদি চলে যাও, রাতে এখানে আমার লাশ থাকবে।”

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।
আর এগোতে পারছিলাম না।
আমার মনে হচ্ছিল— আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি।
তোমার গলার আওয়াজ কানে বাজছে, বুকের ভেতরে কাঁপন ধরাচ্ছে।
এত কষ্ট পাবার পরও তোমাকে ভুলতে পারিনি।

হায়রে মানুষের মন!

মনে পড়ে গেল কোথায় যেন পড়েছিলাম কথাটা—
“যদি তুমি কাউকে ভালোবাসো তবে তাকে ছেড়ে দাও। যদি সে ফিরে আসে, তবে সে তোমারই ছিল— তোমারই থাকবে। আর যদি না আসে, তবে সে কোনোদিনও তোমার ছিল না— থাকবেও না।”

পারলাম না।
পেছন ফিরলাম।
এগিয়ে গেলাম তোমার দিকে।
হাত বাড়িয়ে তোমাকে বুকে টেনে নিলাম।
কাঁদতে লাগলাম আমরা দুজনেই।

এটা দুঃখের কান্না নয়— আনন্দের কান্না।
মনে হচ্ছিল, আবারও শেষ থেকে শুরু হলো নতুন করে...

___________________________
৭ বর্ষ পদার্পণ এবং ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই বিশেষ গল্প আয়োজন উপভোগ করুন।
গল্প পড়ে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন।
"অন্য-পুরুষের গল্প" – সব আয়োজনের সবার আগে, সবসময়।

শুভ জন্মদিন ঋতুপর্ণ ঘোষ🎂১৯৬৩ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতায় ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্ম। তার বাবা-মা উভয়েই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ...
31/08/2025

শুভ জন্মদিন ঋতুপর্ণ ঘোষ🎂

১৯৬৩ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতায় ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্ম। তার বাবা-মা উভয়েই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র-নির্মাতা ও চিত্রকর। ঋতুপর্ণ ঘোষ সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন।

ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি রূপান্তরকামী জীবনযাত্রা নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করছিলেন। তিনি নিজের সমকামী সত্ত্বাটিকে খোলাখুলিভাবে স্বীকার করে নেন, যা চলচ্চিত্র জগতের খুব কম মানুষ করেছেন.....

________________________
তার উল্লেখ্যযোগ্য কিছু এলজিবিটি কমিউনিটি ভিত্তিক মুভি হলো-

আরেকটি প্রেমের গল্প (২০১০)
মেমোরিজ ইন মার্চ (২০১০)
Chitrangada (২০১২)

এই মহান ব্যাক্তির জন্মদিনে "অন্য-পুরুষের গল্প" পেজের পক্ষ থেকে জানাই গভীর সম্মান এবং শ্রদ্ধা। ওপারে ভালো থাকবেন হে মহামানব....

৭ম বর্ষ পদার্পণ উপলক্ষে বিশেষ গল্প আয়োজনের পঞ্চম গল্প- "" বটতলায় প্রেম""লেখক:- দ্বিগবিজয় চৌধুরী ______________________...
30/08/2025

৭ম বর্ষ পদার্পণ উপলক্ষে বিশেষ গল্প আয়োজনের পঞ্চম গল্প-

"" বটতলায় প্রেম""
লেখক:- দ্বিগবিজয় চৌধুরী

_________________________
-আরিফ,এবার কিন্তু রেড কভার দিতেই হবে! না হলে আমরা গেম খেয়ে যাব।
-আরে এত টেনশন নিচ্ছিস কেন? আরিফ আছে যেখানে-চিন্তা নাই সেখানে।
আরিফ একদম সাদা গুটি দিয়ে কভার দেওয়ার জন্য চোখ সেদিকে নিয়েছে ঠিক সে মুহূর্তে টং দোকানে সামনে এসে মুখ ফুলিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছে।খুব সাদামাটা একটা কলেজ ড্রেস পড়ে।সাদা রঙের শার্ট,নেভী ব্লু প্যান্ট এবং কালো জুতো।সে আর কেউ নয়,আরিফের চাচাতো ভাই আসিফ আহমেদ।

আজ তার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন।গতকাল রাতে খুব বড় মুখ করে আরিফ বলে এসেছিল,চিন্তা করিস না!তোর বড় ভাই আছে কেনো? আমি তোকে কালকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাব।কিন্তু সকাল হতেই জনাব আরিফ সাহেব এসে কেরাম খেলা শুরু করেছে।এ জন্য তাকে কঠিন বকা শুনতে হবে,সে বুঝে গিয়েছে আসিফের মুখ ফুলিয়ে থাকা দেখে।

-আরে জানো কি হয়েছে?
এলাকার ছেলেরা না....আমাকে ছাড়া কিছু বুঝেই না!
আর্কষ্মিকভাবে আরিফের মাথায় হার্ডবোর্ড দিয়ে মেরে বলল,তোমাকে তো আমি পরে দেখে নিব।আগে তাড়াতাড়ি বাইকটা নিয়ে চলো,সাড়ে নয়টা অলরেডি বেজে গেছে।প্রথম পরীক্ষা যদি দিতে না পারি! তোমাকে কি করব উপরওয়ালাই জানে।

আরিফ বাধ্য বালক এর মত বাইক স্টার্ট করে আসিফ কে বাইকের পেছনে বসিয়ে পরীক্ষা দিতে নিয়ে গেল।যতক্ষণ পরীক্ষা চলল আরিফ সেখানেই বসে রইল। পরীক্ষা শেষ করে বাহিরে এসে আরিফকে দেখে কিছুটা লাজুক চোখে বললো,সরি।
-সরি! কিন্তু কেন?
মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে বলল,সকালে কি বেশি ব্যথা লেগেছে?
-ওরে বাবারে এত ঢং কোথায় শিখেছো? তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠো। বজলু চাচার দোকানে এক কাপ চা খেয়ে এখন বেলা গড়িয়ে দুপুর হতে চলল। আমি মানুষটা না খেয়ে আছি।
বিড়বিড় করে আসিফ বলল,আমি কি তাকে না খেয়ে থাকতে বলেছি!
অতঃপর দুইজনে বাসায় আসলো।

আরিফ আর আসিফের বাসার মাঝে তাদের মেঝো কাকার বাড়ি। আরিফ ভীষণ রকমের আসিফের প্রতি আসক্ত।তাকে একদিন না দেখে বুঝে থাকতে পারবে না। আবার আসিফ কে সে প্রচন্ড পরিমাণে ভয় করে। তার কোন কথা ফেলতে পারেনা। তারা দুজন একে অপরকে চাচতো বলে ডাকে(গ্রামে চাচাতো ভাইকে অনেকে চাচতো বলে)। আসিফ এর সাথে কথা বলতে গিয়ে ভুলেই গেছে তার পরীক্ষা কেমন হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে।তাই পেটে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও সে আসিফের বাসায় গিয়ে দেখে সে ফ্রেশ হয়েছে।

আরিফকে দেখে সে বলল,কি চাচতো!কিছু বলবে?
-ইয়ে মানে...কেমন পরীক্ষা হল আজ?
-এ কথা বলতে মনে ছিল না,তাই না? সেজন্য না খেয়ে এসেছো এখানে।
-আরে কে বলেছে আমি খাইনি? খেয়ে উঠে আসলাম।
-সে তো তোমার চেহারাতে ফুটে উঠেছে,ভেতরে আসো।

আরিফ ভেতরে যাবার সাথেই আসিফ দরজা বন্ধ করে দিল।আরিফ কিছুটা অবাক হয়ে বললো,কি ব্যাপার কি করছো? আরে বাবা মা কেউ বাসায় নেই,বড় আপুর বাসা গেছে।এটাই তো সুযোগ!
-সুযোগ মানে? ছি! না,চাচতো।এভাবে আমি পারবো না।আমার ভয় করে।কেউ যদি দেখে ফেলে? মান সম্মান কিছু থাকবে না।আমি একটা ভার্সিটি পাশ করা ছেলে।
আসিফ হাসতে হাসতে বিছানায় পড়ে গেলাম।
-কি হল তুমি এমন করে হাসছো কেন?
-আরে বুদ্ধু আমি তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিব,সেই সুযোগের কথা বলেছি।
মাথা নিচু করে আরিফ বললো,তুমি আগে বলবা না!
-বলার কি সুযোগ দিছো? নিজেই তো বকবক করে গেলা।দাঁড়াও খাবার নিয়ে আসছি।
খাবার এনে আরিফ খাইয়ে দিল।

-ঈশ! কি যে মজা চাচতো।তোমার হাতটা মনে হচ্ছে চেটেপুটে খাই।
-খাও চাচতো! মন ভরে খাও এটার জন্য কিন্তু ট্রিট পাওনা থাকলো।
-আচ্ছা তোমারে নেক্সট পরীক্ষা দিন আইসক্রিম খাওয়ামু নে।তোমার না আইসক্রিম পছন্দের!
-না,চাচতো।বিরিয়ানি খাওয়াতে হবে।কাচ্চি বিরিয়ানি!
-চাহিদাটা একটু বেশি হয়ে গেল না? তয় আমারও একটা জিনিস চাই....
বলার সঙ্গে সঙ্গেই আসিফ সরাসরি আরিফের ঠোঁটে চুম্বন এঁকে দিল।আর এদিকে অধিক উত্তেজনায় আরিফ সাহেব কাঁপতে শুরু করলেন।এটা নতুন কিছু নয়।আসিফকে যতবার চুম্বন করেছে ততোবার শরীর কেঁপেছে,জ্বর হয়েছে।যেন আসিফের এত ভালোবাসা আরিফের শরীর সহ্য করতে পারে না।

পড়ন্ত বিকেল বিস্তর প্রান্তর। দূর দূরান্তেও মানুষের আনাগোনা কম। গ্রীষ্মের এ সময়টা বড়ই বিচিত্র।আরিফ বসে আছে তাদের এলাকার শেষ প্রান্তে যে বটগাছ তার নিচে।লোকজন বসার জন্য টং,সেখানে শুয়ে আকাশের পানের চেয়ে কি যেন ভাবছে! গ্রাজুয়েশন শেষ করে কেন সেই গ্রামে এসে পড়ে আছে? কি প্রয়োজন তার এখানে? কিসের মায়া? বাবা-মা নাকি আসিফ?
তার কি বয়স বাড়ছে না? তার বয়সী ছেলেরা চাকরি করে সংসারী হয়ে গেল!

অথচ সে এখনো তার হাঁটুর বয়সী ছেলেদের সাথে টঙ দোকানে বসে থাকে ক্যারাম খেলে।বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে তারা কিছু বলে না।বাবার যা আছে তা হয়তো দূর প্রজন্ম খেয়ে বাঁচতে পারবে।কিন্তু এবার কিছু একটা করা দরকার কি করবে সে গত মাসের সেই স্কলারশিপের জন্য ইতালিতে এপ্লাই করেছিল। দুদিন আগে সেখানে স্কলারশিপটা পেয়ে গেছে কিন্তু সে এ কথা কাকে বলবে? বাবা মা কখনো রাজি হবে না।আরিফ শুনলে হয়তো কান্নাকাটি করে শেষ হয়ে যাবে। এ বয়সে ছেলেদের মাঝে যেন এক অদ্ভুত আচরণ কাজ করে।এরা ভাবে কম,বলে বেশি আর বুঝেও কিঞ্চিত বেশি।

-কি ব্যাপার চাচতো কোন শোক পালন করছেন এখানে?
-আসিফ তুমি!
-আমি না হয়ে কি আর কেউ হওয়া দরকার ছিল?
-মনে মনে আরিফ বলল, এই যে শুরু হলো উল্টো বোঝা!
-মাথাটা খুব ব্যথা করছে।একটু টিপে দিবে!
-জি, তোমার কি মন খারাপ? কিছু হয়েছে?
-আচ্ছা আসিফ,আমি যদি কখনো দূরে চলে যাই আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে তো?
কিছুক্ষণ ভেবে, আমি তো পারব। কিন্তু তুমি কি পারবে? নিজেকে প্রশ্ন করো।
-জানিনা তোমাকে আমার করে পাবার পর এখনো অব্দি তো একদিনও না দেখে থাকতে পারি নি।
-তাহলে বাদ দাও।আমি জানি তুমি কি নিয়ে ভাবছো!
- কি নিয়ে?
-স্কলারশিপ। শুনো, তুমি পারবেনা এটা বাদ দাও! বড় কাকা তোমার জন্য একটা ভালো কোম্পানিতে জব রেফার করেছেন। তুমি আমাদের শহরেই থাকো।আমার হয়ে থাকো!
-তোমার এই বেকার প্রেমিক চলবে তো? যে সামান্য তোমাকে উপহার অবধি দিতে পারেনা।
-চলবে, আমার উপহারের দরকার নেই। তুমি আমার জীবনের সেরা উপহার।আর সারাজীবন আমি এ উপহার কে আমার করে রাখতে চাই।
-বাব্বাহ! এ যে ভারী কথা।তুমি সত্যি বললে,আমার সামান্য বেতন তোমার চলবে তো?
-জি,চাচতো।
সাহস করেই এবার আসিফের হাত ধরে চুমু দিল।কিন্তু এবার আর শরীর কেঁপে উঠলো না।হয়ত মনের ভয়টা কাটতে শুরু করেছে।

(সমাপ্ত)

__________________________
৭ বর্ষ পদার্পণ এবং ৬ষ্ঠ বর্ষপুর্তি উপলক্ষে এই বিশেষ গল্প আয়োজন উপভোগ করুন। ‎গল্প পড়ে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন। "অন্য-পুরুষের গল্প" সব আয়োজনে সবার আগে সবসময়.....

৭ম বর্ষ পদার্পণ উপলক্ষে বিশেষ গল্প আয়োজনের চতুর্থ গল্প-""" ‎বহ্নি শ্রাবণ """‎লেখক: মেঘকুমার ‎উৎসর্গ: প্রিয় ভাই রাজকুমার...
29/08/2025

৭ম বর্ষ পদার্পণ উপলক্ষে বিশেষ গল্প আয়োজনের চতুর্থ গল্প-

""" ‎বহ্নি শ্রাবণ """

‎লেখক: মেঘকুমার
‎উৎসর্গ: প্রিয় ভাই রাজকুমার কে

‎(বি:দ্র: গল্পে ব্যবহৃত 'লীঢ়' শব্দের অর্থ হলো জিভ দিয়ে আস্বাদিত হয়েছে এমন)

_______________________
‎"ধ্যের বাবা, তখন পইপই করে বলেছিলাম, এই বর্ষা-বাদলের মধ্যে পাহাড়ে যেতে হবে না। কিন্তু আমার কথা লোকটার মাথায় কোনোদিন ঢুকলে তো! কি যে এত বৃষ্টি ভালো লাগে বুঝি না বাপু।", শাড়ির কুঁচি ধরে হাঁটতে হাঁটতে কথাগুলো বলল শ্রী। শ্রী আমার দুই বছরের পুরোনো সহধর্মিনী। সম্পর্কের গায়ে সময়ের দাগ পড়লেও, প্রেমে এখনও ভাঁটা পড়েনি একটুও। বৃষ্টিটা তখন সবে মাত্র ধরেছে। তবে এলোপাথাড়ি হাওয়ায় ছাতায় তা বাগ মানছে না। সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলের ফোঁটা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে সারা শরীর। পশ্চিমের আকাশে বাড়তে থাকা কালো মেঘের অস্পষ্ট অবয়ব বার্তা নিয়ে এসেছে আসন্ন কোনো দুর্যোগের। হালকা ঠান্ডায় প্রত্যেকটা বারিবিন্দু দেহের অনাবৃত অংশে যেন সূচের মতো এসে বিঁধছে। লক্ষ্য করলাম শ্রী এর কানের পাশে, কলি বেয়ে একফোঁটা তরল গাল বেয়ে নেমে যাচ্ছিল নীচের দিকে। ধীরে ধীরে ঘাড়ের ওপর এসে দিক পরিবর্তন করে হঠাৎই সেটা নেমে গেল তার বক্ষ বিভাজিকা বরাবর। আমার কান গরম হয়ে উঠলো। দিনের আকাশ তখন রাতের চেয়েও ঘন। পাহাড়ি রাস্তায় লোক চলাচল নেই বললেই চলে। সেই সুযোগে শ্রী এর ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম। ও চমকে উঠে বলল, "আরে রাস্তাঘাটে কি শুরু করলে তুমি?"
‎"কেন, আমার বউয়ের সাথে প্রেম করছি, তাতে কার বাপের কি? আর দেখোই না, এখানে তো কোথাও কেউ নেই।"

‎আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি আর মেঘের তীব্র গর্জনে কান পাতা দায়। শ্রী সলজ্জ মুখে এদিক ওদিক চাইলো। বৃষ্টিটা আবার পাগলের মতো শুরু হয়েছে। রাস্তার একধারে ছোট্ট একটা বেঞ্চ, মাথার ওপরে সিমেন্ট দিয়ে গাঁথা ছাউনি। গা বাঁচাতে সেখানে গিয়েই বসলাম দুজনে। সামনে থেকে সমানে বৃষ্টির ছাঁট উড়ে আসছে। বর্ষাতিটা সামনে মেলে ধরে নিজেদের আড়াল করলাম। বৃষ্টির সাদা অস্বচ্ছ চাঁদোয়ায় ঢাকা পড়েছে এক হাত সামনের দৃশ্যও। এই সুযোগে আর শ্রী এর প্রচ্ছন্ন সম্মতিতে হাত রাখলাম তার সুডৌল বক্ষযুগলের উপর। তার উন্মুখ পদ্মের ন্যায় বৃন্তের স্পর্শে আমার নিঃশ্বাস আরো ঘন হয়ে এলো। তীব্র আশ্লেষে লেহন করে চললাম তার গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট দুটি।

‎পাহাড়ে রাত নামে বড্ড তাড়াতাড়ি। ন'টা বাজলেই সেটা শহরের মধ্যরাত্রির সমান। সেই হিসেবে এখন অনেক রাত। আজ বহুদিন পর শ্রীকে এমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে শুয়ে আছি। পাহাড় প্রেমকে বুঝি এমন বন্য, এমন অসংযত করে তোলে! শহুরে ব্যস্ততা যেখানে প্রেমকে করে তোলে আপাদমস্তক মানসিক, পাহাড়ে এসে তা হয়ে ওঠে প্রচণ্ড রকমের শরীরী। বিয়ের পর থেকে শ্রীকে আগে কখনও এতটা আবেদনময়ী লাগেনি। ওর চোখের চাহনি, শরীরী ভাষা সবই এত তীব্র, এতটাই নগ্ন, যে আমার দেহটা তাতে তেঁতে উঠছিল ক্রমশ। এখনও তার তুলোর মতো শরীরটা ঘেঁষে রয়েছে আমার বুকের কাছে। যত সেটাকে অনুভব করছি, বুঝতে পারছি তাপমাত্রার পারদ আবার চড়ছে। লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে সজারুর কাঁটার মতো। দেহের সমস্ত রক্তস্রোত ক্রমশ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট জায়গায়। মাথা কাজ করলো না, মুখটা গুঁজে দিলাম ওর নরম বুকের ভেতর।
‎____________

‎পরদিন সকালে দেখলাম শ্রীর শরীরটা ভালো নেই। কাল এত ভিজেছে, বেচারী জ্বর আর কাঁপুনি নিয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। ওর গালদুটো জ্বরে লালচে হয়ে উঠেছে, যেন রঙতুলি দিয়ে হালকা লাল ছুঁইয়ে দিয়েছে কেউ। ঠোঁট দুটো শুকিয়ে গেছে খানিকটা, কিন্তু তাতে যেন আরও মোহময়ী দেখাচ্ছে তাকে। শ্রীর উষ্ণ শরীর থেকে একধরনের ভাপ উঠছে, ওতে মিশে আছে জ্বরের গন্ধ আর ঘামের হালকা নোনাভাব। অনুভব করলাম আমার শরীরেও ধীরে ধীরে উষ্ণতা ছড়াচ্ছে। ওকে খাবার খাইয়ে, ওষুধ দিতেই দুই ঘণ্টার মধ্যে জ্বরটা নেমে গেল।

‎দুপুর থেকে আর বৃষ্টি হয়নি। আকাশে তখনও ছেঁড়া ছেঁড়া ধূসর মেঘের আনাগোনা। ভাবলাম চারপাশটা একটু টহল দিয়ে আসি। শ্রীকে আর সাথে নিলাম না। ওকে বিশ্রাম করতে বলে একাই বেরোবার উদ্যোগ করলাম।

‎হাঁটার সাথে সাথে পাহাড়ি রাস্তার দুপাশে সবুজের ছায়া আরও গাঢ় হয়েছে। পাথরের গায়ে ইতিউতি বেড়ে উঠেছে লতাগুল্ম। একটা দুটো গাছের পাতায় তখনও টিপটিপ করে জল ঝরছে। দূরের ঘন জঙ্গল থেকে বেশ কয়েকটা পাখি ডানা ছড়িয়ে উড়ে গিয়েই আবার কোথায় যে হারিয়ে যাচ্ছে, দেখা গেল না। সেই সঙ্গে ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশা আর ভেজা মাটির গন্ধ। আজকের বৃষ্টিস্নাত পাহাড় যেন অভিমানী ভালোবাসার মতো। যত ভিজে, তত কোমল, আর ঠিক ততটাই উন্মাদ। হঠাৎ একটা বাঁক ঘুরতেই চোখে পড়লো ছোট্ট একটা টিলা, তার গায়ে প্রাকৃতিক মাটির তৈরি ধাপ। ধাপগুলোকে ঘিরে নাম না জানা বুনো ফুলের সমারোহ। তারা মাথা তুলে চেয়ে রয়েছে আকাশের দিকে। ধীরে ধীরে পা রাখলাম। প্রতিটি ধাপ উঠতেই শরীরের মধ্যে অদ্ভুত রোমাঞ্চ অনুভূত হতে লাগলো। শ্রীর কথা মনে পড়ছে। গত রাতের স্পর্শ, ঠোঁটের উষ্ণতা, বুকের কাঁপুনি, তার চোখের সেই অদ্ভুত চাহনি। আমার ভিতরে আবার কিছু যেন ক্রমশ জেগে উঠছে। হঠাৎই মনে হলো শরীরের এক অন্ধকার কোণে জ্বলে উঠেছে দাবানল, যার উত্তাপে দেহের নিম্নভাগ শিরশির করে উঠছে, দাবী জানাচ্ছে ভালোবাসার স্পর্শের। উপরের ধাপ শেষ করে যখন টিলার চূড়ায় এসে পৌঁছালাম, চোখ আটকে গেল এক দৃশ্যপটে। সামনে বিস্তৃত সবুজ উপত্যকা। ছোট ছোট নদী এঁকেবেঁকে ছুটে যাচ্ছে পাহাড়ের ভাঁজে। সূর্য তখন দিগন্তের খুব কাছাকাছি। দূরে ধোঁয়া-ধোঁয়া পাহাড়ের কাঁধে মেঘের নরম চাদর। একটা হালকা হাওয়া এসে যেন ঠান্ডা হাত বুলিয়ে গেল ঘাড়ের কাছে। রোমগুলো দাঁড়িয়ে গেল সটান। টিলার একদম শেষ মাথায় একটা পাথর। তার ওপর বসে আছে একটা ছেলে। আমার দিকে পিছন করে বসায় আমি তাকে দেখতে পেলেও সে আমাকে দেখতে পাচ্ছে না। পরনে ঢিলেঢালা একটা শার্ট, যা হাওয়ার ঝটকায় পতাকার মতো পতপত করে উড়ছে। ছেলেটির দিকে একটু একটু করে এগিয়ে গেলাম। তার দিকে চোখ পড়তেই একটা তীব্র ধাক্কা লাগল বুকের ভেতর। এতক্ষণ চোখে পড়েনি, বাম হাতে ধরা বাঁশিটা যেন তার আঙুলের সাথে লতিয়ে আছে। পাকা গমের মতো তার গায়ের রং। আমি আরেকটু এগোতেই সে বাঁশি ঠোঁটে তুলল। কাকতালীয় ভাবে তারপরেই নামল বৃষ্টি। অতর্কিতে, ঠিক যেন কোনও মন্ত্রপুত বাঁশির টানে আকাশ গলে চুঁইয়ে পড়ছে জলের স্রোত। সে তখনও আমার দিকে ফিরে তাকায়নি।

‎বৃষ্টিতে তার ভেজা চুলগুলো ঝুলে পড়েছে ঘাড় বেয়ে। শার্টের কাপড় ভিজে গিয়ে এখন শরীরের সঙ্গে একাকার। উঁচু বুক, পেটের খাঁজ, পিঠের গিরিখাত সবই এক রহস্যময় ছন্দে আমার চোখের সামনে তুলে ধরছে নিজেদের। ছেলেটির চোখের পাতা ভারী, বাঁশির কিনারায় ছুঁয়ে থাকা ঠোঁট রক্তাভ। পুরুষের সৌন্দর্যের এমন তীব্র, নির্মম ও নিখুঁত রূপ আমি আগে কখনও দেখিনি। আমার বুকের মধ্যে কী একটা যেন ছটফট করতে লাগলো। আদিম রিপুর একটা তীব্র ঢেউ খেলে বেড়াচ্ছে আমার দেহ জুড়ে। সে হঠাৎ বাঁশি থামিয়ে আমার দিকে ফিরল। চোখে তার কোনও অভিব্যক্তি নেই। ঠোঁট দুটো সামান্য ফাঁক করে সে বলল, "পাহাড়ে এসেছো কেন?"

‎আমি কিছু বলতে পারলাম না। সে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে মুখের খুব কাছাকাছি এসে থামল। এত কাছে, যে তার গরম নিঃশ্বাস আমার ঠোঁট ছুঁয়ে যাচ্ছিল। আমার চোখে চোখ রেখে সে বলে উঠলো, "পাহাড় আমাদের বুনো করে তোলে। এ পাহাড় কেবল কেড়ে নিতে জানে। দিতে জানে না কিছুই।"

‎তার ভারী গলার প্রতিটি শব্দ যেন ছুঁয়ে যাচ্ছে আমার অন্তর্গত গোপনতম বাসনা। আমি চাইছিলাম তাকে জড়িয়ে ধরি, ঠোঁটে ঠোঁট রাখি, উন্মাদ হয়ে তার শরীরের প্রতিটি পেশিতে হাত ছুঁইয়ে দেখি। কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, অনড়। হঠাৎই পাহাড়ি হাওয়ায় ভেসে এলো এক অচেনা ফুলের গন্ধ, তীব্র মিষ্টি, মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। সে হালকা ঝুঁকে এল আমার দিকে। তার ঠোঁট আমার ঠোঁট ছুঁয়ে গেল, মুহূর্তের জন্য কেবল। আবেশে আমার ঠোঁট কাঁপছিল। কতক্ষন চোখ বুজে ছিলাম জানিনা, তাকিয়ে দেখি সে আর নেই। শুধু তার গায়ের গন্ধটা তখনও বাতাসে মিশে আছে। আর আমি একা, বৃষ্টিতে ভেজা, কামনার আগুনে পুড়তে থাকা এক প্রমাণবিহীন সাক্ষীর মতো দাঁড়িয়ে আছি সেই টিলার চূড়ায়।
‎____________

‎টিলা থেকে নেমে আসছি ধীরে ধীরে। বৃষ্টির বেগ কম হলেও থামেনি। শরীরটা ভারী লাগছে। মনে হচ্ছে, একটু আগে যা ঘটেছে, সেটা কি আদৌ ঘটেছিল? কিন্তু ঠোঁটে এখনও ছেলেটার আলতো স্পর্শ মিষ্টি রসের মত লেগে রয়েছে। বারবার অজান্তেই জিভটা চলে যাচ্ছে ঠোঁটের ওপর। পায়ে পায়ে ফিরে আসছি, অথচ মনটা পড়ে আছে টিলায়। হোমস্টেতে ঢুকতেই দেখলাম শ্রী একটা পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে আছে, এক হাতে গরম ধুমায়মান কফির মগ। তার চোখের কোলে বিগত অসুস্থতার ক্লান্তি। আমাকে দেখেই সে হেসে বলল, "কোথায় ছিলে এতক্ষণ? আমার তো চিন্তা হচ্ছিল। আরেকটু হলেই তো উঠছিলাম, এগিয়ে গিয়ে দেখার জন্য।"
‎আমি বললাম, "বাইরে একটু হেঁটে এলাম। খুব সুন্দর একটা জায়গা খুঁজে পেয়েছি জানো!"

‎শ্রীর কাছে এসে বসলাম। আমার ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে হাত রাখলাম ওর ঊরুর উপর। সে কপট রাগ দেখিয়ে বলল, "আবার শুরু করেছো?"
‎আমি কিছু বললাম না। শুধু ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। ওর নরম, চেনা অধরে আমি তখনও খুঁজে চলেছি অচেনা এক ছোঁয়ার। শ্রীকে ঘরে নিয়ে এসে ওর ওপর আমার শরীর চাপিয়ে দিলাম। গলায় মুখ গুঁজে আবিষ্ট কন্ঠে বললাম, "খুব ভালোবাসি তোমায়।"
‎কিন্তু মন বলছিল, আমি এখন অন্য কাউকে ছুঁতে চাই। ঠিক এখন, এই মুহূর্তে, শ্রীর শরীরের ছায়ায় আমি খুঁজে চলেছি যার শরীরের রেখা। মিলনের সেই উত্তাল মুহূর্তে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল টিলার সেই ছেলেটির পেশিবহুল পিঠ, জলে ভেজা শার্ট, বাঁশি ঠোঁটে রাখা তার অবিন্যস্ত দৃষ্টি। একটা কাঁপুনি ছড়িয়ে পড়ল দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তারপর শ্রী এর ওপর থেকে শরীরটাকে নামিয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়লাম।

‎সন্ধ্যের দিকে দরজায় টোকা পড়ল। হোমস্টের মালিক এসেছেন। সঙ্গে তার ছেলেও। আমি এক পলকেই চিনে ফেললাম তাকে। বিকেলের সেই ছেলেটাই। সে মাথা হালকা হেলিয়ে বলল, "আমি আয়ান। এই হোমস্টেটা আমাদের পারিবারিক। আপনাদের কিছু লাগলে আমাকে জানাবেন।"
‎সেই গভীর স্বরে আমার ঠোঁটের একটা নির্দিষ্ট অংশ তিরতির করে কাঁপতে লাগলো। শ্রী তখন হাসিমুখে তাদের সাথে আলাপ করছে, কিন্তু আমার দৃষ্টি আয়ানের চোখে আটকে গেছে। সেও যেন একবার ঠান্ডা ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে আমার চোখে তাকাল।

‎রাতটা নামল ধীরে। বাতাসে মিষ্টি হিমের আমেজ। শ্রী ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি বালিশে মাথা রেখে ঘুমাবার তোড়জোড় করছি, এমন সময় দরজায় আলতো শব্দ। সতর্ক অথচ ক্ষিপ্র। প্রথমে ভাবলাম বাতাসের ধাক্কায় শব্দ হচ্ছে। কিন্তু পরেরবার আবার একই শব্দে গাত্রোত্থান করলাম। দরজা খুলতেই মনে হলো, হৃদপিণ্ডটা যেন বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে। হালকা কাঁপতে কাঁপতে দরজা খুলে বারান্দায় এলাম। আয়ান দাঁড়িয়ে। আলো আঁধারিতে ওর চোখে একটা চাপা উচ্ছ্বাস। বলল, "চিনতে পেরেছো আমায়?"
‎আমি মাথা নাড়লাম। সে আমার মুখের এত কাছে এসে দাঁড়াল, যে তার নিঃশ্বাস ঠেকতে লাগলো আমার গালে। তারপর একেবারে ঠোঁটের ওপর ঠোঁট ছুঁইয়ে একটা দীর্ঘ চুম্বনে আমার দেহের ভেতর পর্যন্ত পুলকিত হয়ে উঠলো। আমার হাত চলে গেল আয়ানের মাথার পিছনে। ওর ঘন কেশরাজি খামচে ধরলাম। পাথরের মতো শক্ত, উত্তপ্ত এক শরীরে মিশে যেতে থাকলাম ধীরে ধীরে। সেই মুহূর্তে সব ভুলে গেলাম। শ্রী ঘরে নিদ্রায় আচ্ছন্ন। বৃষ্টি পড়ছে নরম সুরে। দূরে পাহাড়ের কালো আবছা অবয়ব যেন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আমাদেরই দিকে। আর আমি, এই বারান্দায়, বর্ষণের রিমঝিম শব্দে, এক অচেনা ছেলের শরীরের গন্ধে, তার নিষিদ্ধ উষ্ণতায় জড়িয়ে পড়ছি ক্রমশ।

‎সকালবেলায় ঘুম ভাঙতেই দেখলাম শ্রী জানালার পাশে বসে রোদ মাখছে। ঘন কুয়াশার ভিতর দিয়ে পাহাড়ের গায়ে একফালি রোদ এসে পড়েছে। "চা খাবে?", আমাকে উঠে পড়তে দেখে প্রশ্ন করল শ্রী।
‎আমি মাথা নেড়ে ওর চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। তবে বুঝলাম সেটা অপরাধবোধের জন্য নয়, আসলে আমার চোখ তখন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে এক বিশেষ ব্যক্তির দর্শনের প্রতীক্ষায়। সেদিন আর দেখা হলো না আয়ানের সাথে। আমি সারাটা দিন ভেতর ভেতর ছটফট করে কাটালাম। সম্ভাব্য গোপন, অপ্রত্যাশিত মুহূর্তের আশায় তনুমন শিহরিত হয়ে উঠলো। শ্রী এর সঙ্গে ঘুরতে বেরোলাম, তবু কোনো কিছুতেই যেন মন বসাতে পারলাম না।

‎পরদিন দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর শ্রী তখন ব্যালকনিতে বসে বই পড়ছে। একটা সিগারেট ধরাবো বলে পকেট থেকে প্যাকেটটা বার করেই দেখি সেটা খালি। হোমস্টের পাশেই একটা ছোট গুমটি দোকান আছে। শ্রী কে বলে সেই দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় খেয়াল করলাম মাঝ সিঁড়িতে আয়ান দাঁড়িয়ে আছে। চোখে একটা ইশারা করে সে এগিয়ে চলল হোমস্টের পেছন দিকে। আমিও পা বাড়ালাম তার পেছন পেছন। কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছাতেই সে হঠাৎ আমার হাত ধরে টেনে নিল ছোট্ট একটা স্টোররুমে। ভেতরটা অন্ধকার। আলো নেই। কেবল আমার আর ওর শ্বাসের শব্দ বাতাস ভারী করে তুলছে। চোখ একটু সয়ে যেতে বুঝলাম বেশ কিছু কাঠের সারি হেলান দিয়ে রাখা আছে দেওয়ালের গায়ে। সেগুলো থেকেই কেমন একটা সোঁদা গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে হাওয়ায়। বাইরে আবার বৃষ্টি নেমেছে। টিনের চালে তার রিনিঝিনি গীত শোনা যাচ্ছে। আয়ান আমার গায়ে গা লাগিয়ে বলল, "তোমার গন্ধ কিন্ত এখনও লেগে আছে আমার গায়ে। একটু ফিকে যদিও হয়েছে অবশ্য, তবে এবার আর সে সুযোগ দেবো না।"
‎আমি ঠোঁট রাখলাম তার ঘাড়ে। তারপর ঘাড় থেকে বুকে, বুক থেকে তলপেটে। সে পরনের জামা খুলে ফেলল, আমার হাত তখন তার আবরণহীন তপ্ত বুকের ওপর থরথর করে কাঁপছে। বক্ষঃস্থলের ওপর নরম কৃষ্ণবর্ণ লোমের গালিচা। সেখান হতে একটা ক্ষীণ রেখা নেমে গেছে নাভি বরাবর। তার গতিপথ আড়াল করে রেখেছে নিম্নাঙ্গের পোশাক। তখনই বাইরে পায়ের শব্দ! আমার বুক ধড়ফড় করে উঠলো। আয়ান মুহূর্তেই আমাকে কাঠের সারির পিছনে ঠেলে দিয়ে, জামাটা গায়ে গলিয়ে নিজে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল। আমি কাঠের ফাঁক দিয়ে লক্ষ্য করলাম সবটা। রঙিন একটা ছাতা মাথায় উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছে শ্রী। সে প্রশ্ন করল, "আপনি অর্ককে দেখেছেন? বলল যে পাশের দোকানেই যাচ্ছে, দেরি হচ্ছে দেখে আমি তাই দোকানে গেছিলাম। গিয়ে দেখি ওখানে নেই। ফোনটাও লাগছে না। তারপর ভাবলাম আশেপাশেই ঘুরে দেখি ওর দেখা পাই কিনা।"
‎আয়ান হেসে বলল, "উনি হয়তো আরেকটু সামনে গিয়েছেন। এখান থেকে এগিয়েও আরেকটা দোকান পড়ে। আমিও এখন ওখানেই যাচ্ছি, দেখা হলে না হয় বলে দেবো আপনাকে ফোন করতে। আপনি এই বৃষ্টির মধ্যে খালি খালি ঘুরবেন কেন, তার চেয়ে বরং ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করুন।"

‎শ্রী মাথা নেড়ে চলে গেল। অল্পক্ষণের মধ্যেই আয়ান আবার ফিরে এলো ভেতরে। দরজা বন্ধ করল। তারপর কোনও পূর্বাভাস ছাড়াই, ঠোঁট চেপে ধরল আমার ঠোঁটে। তার কর্তৃক লীঢ় হতে থাকলো আমার শ্মশ্রুমন্ডিত চিবুক। আমি এই ঠান্ডা আমেজেও ঘেমে উঠেছি। ঘর্মাক্ত, পিচ্ছিল দেহ দুটো লেপ্টে রয়েছে পরস্পরের সাথে, যেন শেষ দেহতরলটুকুও তারা শুষে নিতে চাইছে একে অপরের থেকে। আয়ানের বুকের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে যে রোমশ ক্ষীণকায়া নদী, তাতে আলতো চুমু খেলাম। একটা হালকা নোনাভাব এসে ঠেকলো জিভের ডগায়। নদীপথ ধরে নামতে নামতেই একসময় আবিষ্কার করলাম তার অববাহিকা। সেখানে আমার স্পর্শে সে কেঁপে উঠলো খানিকটা। আমিও সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে সেই অববাহিকায় নতুন স্পন্দনের সঞ্চার ঘটালাম। আয়ান আমাকে ঠেলে ধরল সার দেওয়া কাঠের গায়ে। পুরোনো কাঠের শব্দ আর আলতো শীৎকার মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। তার হাত তখন খেলে বেড়াচ্ছে আমার দেহের নীচের অংশে। বুকের বৃত্তে আঙুল ছুঁইয়ে সে হালকা একটা কামড় বসালো। আমি শব্দ করার আগেই তার ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরলো আমার ঠোঁট। গোঙানির মতো আওয়াজ উঠলো একটা। তারপর পেছন থেকে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে, আর চুলের ভেতর মুখ গুঁজে নেশাতুর কন্ঠে বলে উঠলো, "এই পাহাড়ে তুমি আমার। যতক্ষণ আছো, শুধু আমার।"
‎এই কথার কোনো উত্তর দিলাম না। দেওয়ার প্রয়োজনও হলোনা, শুধু দুটো শরীর বুঝে নিলো, কে কার কতটা প্রয়োজন।
‎____________

‎বাড়ি ফেরার আগের সন্ধ্যা। আকাশ আবার ধূসর হয়ে উঠেছে। একটানা হালকা ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে পাহাড় আর মেঘের গোপন অভিসারের ফলস্বরূপ। কফি হাতে আমি আর শ্রী তাকিয়ে ছিলাম বাইরের দিকে। পুরোনো দিনের কত ঘটনা অগ্নুৎপাতের মতো বেরিয়ে আসছিল মনের গভীর হতে। সন্ধ্যেটা আজ গল্পমুখর। আবার অনেক দিন পর শ্রীর কোলে মাথা রাখতে ইচ্ছে হলো। তাতে কোনো কামনার আগুন নেই, আছে কেবল মন ছোঁয়ার তীব্র আকুলতা। ঝুলবারান্দার শেষে আয়ানকে দেখতে পেলাম। ইশারায় ডাকছে আমায়। আমি সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে শ্রীর কোলে মাথা রাখলাম।

‎রাত তখন বেশ গভীর। দরজায় আবার চিরপরিচিত টোকা। দরজা খুলে বাইরে এসে দেখি আয়ান দাঁড়িয়ে, ওর চোখে সেই একই গভীরতা, সাথে মিশে আছে প্রবল আশা। সে বলল, "এবার শুধু শরীর নয় অর্ক, এবার আমি তোমাকে চাই পুরোটাই। তোমার ওই হৃদয়টাও।"
‎আমি ওর দিকে তাকালাম। সে যা চায় আমার পক্ষে তা দেওয়া কোনোকালেই সম্ভব নয়। আয়ান আমার দুর্বল মুহূর্তের বাসনা মাত্র। কিন্তু আমার হৃদয় জুড়ে বাস করছে কেবল শ্রী। এই গোপন, ক্ষণিকের ব্যভিচারের নেশা আমি কখনোই আগলে রাখতে চাইনা। আয়ানকে বললাম, "আমার যা দেওয়ার ছিল, আমি তোমাকে দিয়েছি। কিন্তু এর বেশি দেওয়ার কিছুই আর নেই।"

‎ওর চোখ ভরে উঠল জলে। রাগে, কষ্টে, হতাশায় সে বলল, "তাহলে আমি জানিয়ে দেবো পুরোটা। শ্রীয়েরও তো অধিকার আছে সবটা জানার।"

‎নিজের গালে নিজেই চড় মারতে ইচ্ছে করছিল। বুঝলাম শরীরের নেশা করতে গিয়ে সাজানো গোছানো জীবনটাকেই এখন নষ্ট করতে বসেছি। মাথা কাজ করছিল না। একটু ভেবে বললাম, "এমন করে নয়। চলো ওই টিলায় আরেকবার যাই, যেখানে সূচনা হয়েছিল আমাদের এই প্রেম কাব্যের। সেখানেই না হয় নতুন রূপে গ্রহণ করবো তোমায়।"

‎আয়ানের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কিছু না বলে সে চলল আমার সঙ্গে। টিলার চূড়ায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে কাকভেজা হয়ে গেলাম দুজনে। মেঘের আড়াল ফুঁড়ে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ ছুটে আসছে আকাশে। আমি ওর দিকে ফিরলাম। বললাম, "ভেবেছিলে পাহাড় শুধু নিতে জানে? আজ আমিও এই পাহাড় থেকে কিছু নিতে চাই। তোমাকে!"

‎ও এগিয়ে এল। আমরা দুজন আবার জড়িয়ে ধরলাম একে অপরকে। ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালাম। তবে এই চুম্বনে তাপমাত্রার পারদ যেন আরো নেমে গেল কয়েক ডিগ্রি। চুমুও বুঝি এত শীতল হয়! তারপর ঠোঁট সরিয়ে ওর দুই কাঁধে হাত রেখে দিলাম এক ধাক্কা। একটা দীর্ঘ আর্তচিৎকার বজ্রপাতের আওয়াজের ফাঁকে মিশে গেল বাতাসে। এখন শুধুই অখন্ড নীরবতা। খাদের অতল গহ্বরের দিকে তাকিয়ে এক দলা কুয়াশা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না। মেঘ গর্জে উঠল আবার, বজ্রপাত খানখান করে দিল পাহাড়ের স্তব্ধতা। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। বৃষ্টির জল এসে ধুয়ে দিয়ে গেল আয়ানের শেষ পায়ের ছাপগুলো।

‎পরদিন খুব ভোরেই আমাদের ট্রেন। তাই বেরিয়ে পড়েছিলাম রাত পোহানোর আগেই। শ্রাবণের শেষদিন আজ। পাহাড় থেকে নামতে নামতে দেখলাম ঊষার প্রথম লালচে রোদ এসে পড়েছে সবুজের ঢালে। বাতাসে ভাসছে একরাশ ভেজা মৃতপ্রায় গন্ধ, তার সাথে জেগে আছে এক চেনা তীব্র সুবাস, যা কেউ আর চিনবে না কোনোদিন। গাড়িতে আমার কাঁধে মাথা হেলিয়ে ঘুমিয়ে আছে শ্রী। ওর দিকে তাকালেই বুকটা কেমন মোচড় দিচ্ছে। ওর তো কিছুই জানা নেই, মেয়েটা এখনো আমায় ভালোবাসে। আর আমি? অবগাহন করেছি সেই রিপুতে, যাকে ছুঁয়ে ফেলা মানেই ষড়রিপুর সমস্ত রিপুতে চূড়ান্ত ভাবে নিমজ্জিত হওয়া। আজ হঠাৎ খেয়াল করলাম, শ্রাবণ শুধু প্রকৃতির তৃষ্ণা মেটায় না, সে কেবল শীতের আবেশও আনে না, এই শ্রাবণ পোড়ায়ও। মন, শরীর, আর সেই প্রেমটাকে, যার নাম কেউ কখনও জোর গলায় বলতে পারেনি।

‎(অসমাপ্ত)


__________________________
৭ বর্ষ পদার্পণ এবং ৬ষ্ঠ বর্ষপুর্তি উপলক্ষে এই বিশেষ গল্প আয়োজন উপভোগ করুন। ‎গল্প পড়ে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন। "অন্য-পুরুষের গল্প" সব আয়োজনে সবার আগে সবসময়.....

৭ম বর্ষ পদার্পণ উপলক্ষে বিশেষ গল্প আয়োজনের তৃতীয় গল্প-||ইলুর সংসার||লেখা- আব্দুল্লাহ নূর রবি____________________(উৎসর্গ ...
28/08/2025

৭ম বর্ষ পদার্পণ উপলক্ষে বিশেষ গল্প আয়োজনের তৃতীয় গল্প-

||ইলুর সংসার||
লেখা- আব্দুল্লাহ নূর রবি
____________________
(উৎসর্গ :- ইলেনিয়া।
আমি সবচাইতে বেশি ঝগড়া করি যার সাথে সে হলো এই ইলু, অর্থাৎ লেখক ইলেনিয়া। অথচ সর্বান্তে দেখা যায় ও-ই হলো আমার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু/ শত্রু। ওর হাত ধরেই আমরা সেই গত ২০২০ সাল হতে এই পেইজটিকে এতদূর পর্যন্ত এগিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমার নিজেকে লেখক হিসেবে মনে হয় না, অথচ এই ইলুই সবসময় আমার লেখনীর এত সুন্দর পর্যালোচনা করে যে মনে হয়, আমি কত বড় লেখক। আজকের এই গল্প পুরোটাই ওকে উৎসর্গ করে আর ওকে নিয়েই লেখা। যদিও বাস্তবের সাথে এই গল্পের কোনো মিল নেই।)

১. ঢাকার এক পুরনো পাড়ার ভেতর, নাগরিক কোলাহল থেকে একটু আড়ালে, এক নিভৃত ভগ্নদশা সরু গলি নীরবে বেঁচে আছে, নাম ভূতের গলি। নামটা শুনলেই যেন বুকের ভেতর কাঁপুনির সৃষ্টি হয় অনেকের, অথচ বাস্তবে এখানে আছে সাদামাটা জীবনের জোড়া জোড়া কিছু পদচিহ্ন। গলির দুপাশে মাথা নুয়ে থাকা কিছু বাদামি রঙপড়া টিনের চালাঘর, দেয়ালের ফাটলে বুনো বট অশ্বথের গাছ মাথা তুলেছে বহু আগেই। স্থানে স্থানে স্ট্রিট ল্যাম্পের ভঙ্গুর মরচে ধরা খুটি, তার পুরোনো বাতির কটকটে ধিমিধিমি আলোয় এখানে আজও সন্ধ্যা নামে ধীরে ধীরে। সন্ধ্যের শঙ্খধ্বনি কিংবা আযানের সাথে সাথেই বাতাসে ভেসে আসে এ বাড়ি ও বাড়ির রান্নার আর লঙ্কা পোড়ার তীব্র ঝাঁঝালো কটু গন্ধ, আর রাত বাড়তেই বাসি শিউলি ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ মিইয়ে গিয়ে পাশের বাগান থেকে সদ্য ফোটা নতুন হাসনাহেনার ঘ্রাণে ঘরের কোণ থেকে গলিময় পথ চনমনে হয়ে ওঠে।

এই গলির এক কোণেই আছে মোগল আমলের পুরাতন ক্ষয়ধরা কালচে ইটের এক দ্বিতল ভবন, যেথায় আমরা গত ছয়টি মাস যাবত সংসার পেতে বসেছি। খুবই ছোট্ট আমাদের সংসারটি। আমরা বলতে, আমি ইলু মিয়া, হাসনাহেনার মতোই সদ্য কৈশর পেরুনো যুবক এ বাড়ির ক্ষুদ্র এক ভাড়াটিয়া এবং আরেক ভাড়াটিয়া মধ্যবয়সী ছিপছিপে চেহারার সংগীত শিক্ষক মোনায়েম আকন্দ চাচা, যিনি এ বাড়ির অন্যতম প্রধান সদস্য। এছাড়াও আছে দুই গৃহকর্মী তথা তোরাব মিয়া আর জয়ের মা হাসিনা বেগম ওরফে হাসু আপা। তোরাব মিয়ার বয়স আমার চায়তে সামান্য বেশি, তবে গঠনবঠনে একেবারে লিকলিকে হ্যাংলা পাতলা কালো করে দেখতে। আমার চায়তেও কমবয়সী লাগে। সে এ বাড়ির রোজকার বাজার সদাই থেকে শুরু করে ঘরদোর ঝাঁট দেওয়া, বাগানে পানি দেওয়া, আর এ বাড়ি প্রহরা দেওয়ার মতো টুকরো টুকরো করে সব ধরনেরই কাজই করে থাকে। কি জানি এত কাজের পরেও মালিক কত টাকা বেতন ধার্য করেছে তার। জয়ের মা হাসিনা আপা হুলস্থুল চেহারার মধ্যবয়সী রাগিসাগি এক মহিলা। তারও চেহারায় অস্বচ্ছলতার স্পষ্ট ছাপ, চোখগুলো নির্ঘুম, চেহারায় নিরেট রুক্ষতা। একসময় সেই এই বাড়ির রান্নাসহ ঘরকন্নার কাজ করতো, কিন্তু এখন রান্নাবাদে তোরাবের সাথে ঘরকুনোর বাকি সব কাজেই হাত লাগাতে হয় তার। আর এজন্য আমার উপর তিনি বেজায় ক্ষীপ্ত। কারণ তার রান্নার দায়িত্ব এখন আমার উপরেই অর্পিত। আমি মোটামুটি ভালোই রান্না করতে পারি, ক্যাম্পাসে সেদিনও ভালোই সুনাম ছিলো, আর তারই সুবাদে এ বাড়ির মালিক তথা জালাল চাচা আমায় ক্যাম্পাস থেকে তুলে এনে তার এ নিবাসের স্থায়ী আশ্রিত করে দিলেন৷ শর্ত হলো আমায় প্রতিদিন তার একমাত্র সুপুত্রের জন্য, মোনায়েম চাচা আর তার নিজের জন্য রান্না করতে হবে, আর এর দরুন আমার মাসিক ভাড়া তো লাগবেই না বরঞ্চ তিনবেলার খাবারও পাবো সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই। এ যেন মেঘ না চায়তেই জল কিংবা হঠাৎ করেই অভাগার অমৃতলাভের মতো ব্যাপার হলো।

আমি পাশেরই একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক পর্যায়ের একজন ছাত্র হিসেবে এই মাত্র অল্প কয়েক বৎসর যাবত এ শহরে এসেছি। ঠিকঠাক মতো এখনও কিছুই চিনি না শহরের। বাবা সামর্থ্য মতো টাকা পাঠান, আর বাকিটা আমি টিউশনি করিয়ে জমাই। তবে হঠাৎ করেই সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পারায় কয়েকটা টিউশনে বিরতি দিয়েছিলাম। তাই আর্থিক অবস্থাও ছিলো সঙ্গিন। মেসের ভাড়াও জমে গিয়েছিলো কয়েক মাসের, হাতে ছিলো না হাত খরচ এমনকি খাবার কেনার পয়সাটুকুও। ভার্সিটির বন্ধু বান্ধবরা দয়াপরবশ হয়ে তাদের ক্যাম্পাসে লুকিয়ে বাঁচিয়ে আশ্রয়ে রেখেছিলো কিছুদিন। ঠিক সেই সময়েই জালাল চাচা প্রদীপের জ্বীনের মতো হাজির হয়ে বললেন, বৎস, মাঙো, তোমার তিন তিনটি ইচ্ছে??

আর আমিও যেন সোনার হরিণ হাতছাড়া হবার ভয়ে ইতস্তত করে তৎক্ষনাৎই চেয়ে বসলাম, খাদ্য, বাসস্থান এবং নিরাপত্তা।" ওমনি তিনি কোলে করে আমায় তাদের বাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে এলেন। আসলে ব্যাপারটা ঠিক সেভাবে না হলেও, তিনি কার কাছে যেন আমার কথা শুনেছিলেন। তখন এক দুপুরে তিনি এসে বললেন, ভূতের গলিতে আমাগো ফ্ল্যাট আছে একটা। ফ্ল্যাট বললে ভুলই হবে। বাসাবাড়িই কয়তে পারো, সামনে ওঠান এবং বাগানও আছে বিশাল একটা। আমাগো তোরাব মিয়া সুযোগ পায়লেই ফল ফলাদির গাছ লাগায়, সবজি চাষ করে। যাই হোক, আসল কথা হয়লো আমার পোলাডায় একা একাই থাকে এই বাড়িতে। সেও তোমাগো এই ভার্সিটিরই একজন ছাত্র আর খুব নামকরা ছাত্রও বটে। রেজাল্ট যেমন তেমনই হোক সাংঘাতিক ক্রিকেট খেলে, প্রত্যেক বারই ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়। ভাবছি পড়ালেখার না করলে তারে ক্রিকেটারই বানামু। আচ্ছা থাক ওসব কথা, কথা হয়লো ঐ বাড়িতে একজন রাঁধুনি খালাও আছে। তার হাতের রান্না আমাগো সবার ভালো লাগলেও আমার পোলাডার নাকি ভালো লাগে না, ঘিন্না করে। তাই সে বাড়িতে খাবার খায় না৷ কি জানি কোথায় ঘুরে ঘুরে কাকের মতন কোন অখাদ্য কুখাদ্য গিলে। শুনলাম তুমি খুব ভালো রাঁধতে জানো। আবার তোমার নাকি থাকা খাওয়ারও ব্যাপক সমস্যা চলতাছে। তাই, ভাবলাম তোমার জন্য প্রস্তাবটা উপযুক্ত হয়বো। আমাগো বাসায় রাঁধতে পারবা? মাস শেষে সামান্য কিছু হাত খরচও পায়বা, আর থাকাখাওয়ার খরচও সম্পূর্ণ ফ্রি। এহন কও, প্রস্তাবটা কেমন লাগলো, রাজি আছো তো??

প্রস্তাবটা যেন আমার নিকট সোনার হরিণ প্রাপ্তির মতোই মনে হলো। তাই আর একবিন্দুও সংকোচ না করে তারপর দিনই এ বাড়িতে এসে ওঠলাম। তারপরেই একেক করে পরিচয় ঘটলো সবার সাথে৷ সেই তোরাব ভাই, জয়ের মা অথবা মোনায়েম চাচা। আর একজন সদস্যও যে এই বাড়িতে থাকতো প্রথম পনেরোদিন তাকে এক নজরের জন্যেও দৃষ্টিসীমার আওতায় নাগাল পাইনি। এরপর একদিন হঠাৎ করেই সকালে এরওর ঘর গুছাতে গিয়ে নজরে পড়লো দ্বিতীয় তলার সবচায়তে পশ্চিম কোণের ঘরে কে যেন কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। সময় তখন নয়টা কি সাড়ে নয়টা। আমি কোনো কথাবার্তা না বলেই তার রুমের মেঝে আর খাটের তলায় ঝাঁট দিচ্ছিলাম। তবে যেই খাটের তলা থেকে মাথা বের করে দাড়িয়ে একবার ফের খাটের দিকে দৃষ্টি দিলাম, ওমনি আমার চক্ষু বিস্ফোরিত হবার অবস্থা। লোকটি গায়ের কম্বলটি পাশে ঠেলে দিয়ে সম্পূর্ণ দিগম্বর শরীরে হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙছিলো।। সে ভাবতেই পারেনি হঠাৎ করে তার রুমে কেউ এভাবে চলে আসবে, অতএব প্রথমবার আমায় দেখে সে ছিটকেই ওঠাটাই স্বাভাবিক। সে ছিটকেও ওঠলো ভীষণরকমের। তারপর পাশের কম্বল টেনে শরীরের লজ্জাস্থানগুলোকে যতটা সম্ভব আড়াল করে আড়ষ্ট গলায় বলে ওঠলো, এই এই, আমার রুমে কি করছো তুমি?? তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না! কে তুমি? বলা নেই কওয়া নেই আমার রুমে ঢুকেছো কেন? শুনেছি এ বাড়িতে নতুন একটা বাবুর্চি ছেলে এসেছে, তুমিই কি সে??

আমি তখনও কিছুটা লজ্জায় আর কিছুটা সংকোচে আনত হয়ে ছিলাম। তবুও লজ্জা ভেঙে জবাব দিলাম, জ্বি। আমিই সে। আমার নাম ইলেনিয়া। সবাই ডাকে ইলু মিয়া। আপনাদের ভার্সিটিতে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি।

সে অনাগ্রহ দেখিয়ে বললো, আচ্ছা আচ্ছা থাক। আর বলতে হবে না। তুমি এখন যাও। আর শুনো পরের বার থেকে না বলে কয়ে আমার রুমে ঢুকবে না, প্রায় সময়ই আমার শরীরে কোনো কাপড় টাপড় থাকে না।। পরে নিজেও লজ্জায় পড়বে আর আমাকেও লজ্জায় ফেলবে। বুঝলে, মনে থাকবে তো? আর হ্যা, তুমি না বাবুর্চি, তো তোমার হাতে ঝাঁটা কেন?? এসব কাজের জন্য তো তোরাব আছে, ও কই?

আমি মেকি হেসে বললাম, আজ তো ছুটির দিন। তাই ভাবলাম বাড়িটাকে ঝাড়পোঁছ করি। তোরাব ভাই মনে হয় ঠিক মতো কাজকর্ম করে না। কেমন ধূলোময়লা আর মাকড়শার জাল দিয়ে বাড়িটা ভুতুরে হয়ে আছে। মনে হয় যেন সত্যিই কোনো ভূত টুত থাকে এ বাড়িতে।

লোকটি রহস্যের হাসি হেসে বললো, থাকতেই পারে। সন্দেহ আছে কোনো?? শুনো রাত বারোটার পর এ বাড়িতে ভূতেরা টহল দিয়ে বেড়ায়৷ তাই একা একা যখন তখন বাইরে বেড়িও না কেমন!

বলেই লোকটি খিটমিট করে হেসে ফেটে পড়লো। এরপর হাসি থামিয়ে বললো, শুনো। তোমার হাতের রান্না কিন্তু খুব ভালো হয়। এতদিন আমি বাসায় খেতাম না, কাল রাতেই প্রথম খেয়েছি। খুব ভালো লেগেছে। ভাবছি এখন থেকে রোজ বাড়িতেই খাবো। আজ সকালে কি রেঁধেছ শুনি? খিদে খিদে লাগছে কেমন, কিছু খাবার হবে কি?

আমার খাবার রান্না করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ছিলো। যেদিন যা রাধতাম তাই সবাই খেতো, কেউ কিছুটি বলতো না বারণ করতো না। তাই আজ সকালেও নিজের মর্জি মতো খিচুরি রেধেছিলাম। আর তাই তাকে এনে খেতে দিলাম। সে খুব আয়েশ করে খেলো। খাওয়া শেষে এক গাদা প্রশংসাও করলো। তবে তখনও তার বিস্তারিত পরিচয় এমনকি নামখানাও বললো না মুখ ফসকে । অবশ্য পরে এক রাতে গানের বৈঠকে বসে জালাল চাচার কাছ থেকে জেনেছিলাম তার নাম হলো ইমন বকশি। মোহাম্মদ জালাল বকশির একমাত্র সুপুত্র মো. ইমন বকশি। সেই ছোটোবেলায় মা হারিয়ে ছেলেটা কেমন ঘরছাড়া চোরের মতো স্থানে স্থানে ঘুরে বেড়ায়। আগে চেহারায় কেমন লাবন্য ছিলো, আকর্ষণ ছিলো, বড় হয়ে যে পিতার মতোই পৌরুষ খেলবে শরীরে সে ভাবনা সবারই ছিলো। কিন্তু ছেলেটা কারো ভাবনাকেই সাকার করতে পারেনি। বরং দিনদিন কেমন শুকিয়ে রোগা পাতলা হয়ে যাচ্ছে আরও। যেন ঝড় এলেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে সাথে। আমি মনে মনে ভাবতাম, এই ছেলেই নাকি ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন?? তবে এটাও আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ছেলেটা আসলেই ভীষণ সহজ সরল উদার প্রাণের মানুষ। প্রথমদিনেই কেমন রসিকতা শুরু করে দিয়েছিলো আমার সাথে। তবে এরপর মাঝে অনেকদিন সময় চলে গেলেও সকাল কিংবা রাতে ইমনের সাথে আর আমার দেখা হবার সৌভাগ্য হয়নি।

বিষয়টি কেমন গোলমেলে বা অদ্ভুত লাগতো। বাড়ির ছেলে কেমন করে এমন ভবঘুরে জীবন কাটাতে পারে? সেকি গৃহস্থ নাকি মরুর বেদুইন? আমি কয়েকদিন গভীর রাত পর্যন্তও জেগে থেকেছি, এমনকি ঐ ভূতের ভয় উপেক্ষা করেও রাত বারোটা পার করে ফেলেছি। কিন্তু ইমনের দেখা আর পাইনি। এই নিয়েই সেদিন রাতের বৈঠকে আলাপচারিতা হচ্ছিলো। সংগীতশিল্পী মোনায়েম চাচা প্রায় প্রতি রাতেই হারমোনিয়াম বাজান, গভীর রাত পর্যন্ত সারগাম চর্চা করেন। মাঝে মাঝে সুন্দর সুন্দর গানও বাঁধেন। আর তখনই জালাল চাচা তার কক্ষে গিয়ে বসেন, কিছুক্ষণ পান চিবুতে চিবুতে চুপটি করে তার মায়াবী কন্ঠের আবহে হারিয়ে যেতে থাকন। এক পর্যায়ে নিরবতা ভেঙে তিনিও গেয়ে ওঠেন তার পরিপক্ব তবে ভগ্নপ্রায় গলায় বিরহের গান। তাদের এ সুরের যুদ্ধ আমাকেও প্রচুর আকর্ষণ করে, তখন আমিও চলে যাই সেখানে৷ মাঝে মাঝে তারা আমাকেও গান ধরতে বলেন। তখন উপায় না পেয়ে আমিও গেয়ে যাই প্রাণের কোনো গান।......

আমার ভাঙা ঘরে, ভাঙা চালা, ভাঙা বেড়ার ফাঁকে।অবাক জোছনা ঢুইকা পড়ে, হাত বাড়াইয়া ডাকে। অথবা, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, বন্ধুয়ারে কইরো তোমার মনে যাহা লয়.....!!

এই সমস্ত গানগুলি গায়তে আমার কেমন জানি ভালো লাগে। পরিচিত এক প্রশান্তিতে তানমন জুরিয়ে ওঠে। তারাও কেমন তন্ময় হয়ে শুনে আমার কন্ঠধ্বনি। মোনায়েম চাচা সুর ধরে ধরে হারমোনি বাজান, আর জালাল চাচা খঞ্জনি ধরেন। মাঝে মধ্যে তোরাব মিয়াও চলে আসেন নিচ তলা থেকে। তারপর সেও গানের ধুনো ধরে সজোরে টান দিতে দিতে হঠাৎই ফ্যাঁত করে কেঁদে ফেলে।

গান শেষে ইমনের কথা তুলে জালাল চাচা বহুক্ষণ আফসোস করলেন, কেঁদে বুক ভাসালেন। আমি কেমন যেন স্থির হয়ে গেলাম তার কথাগুলো শুনে। মানুষের কষ্ট কেন যে আমায় এমনভাবে কাতর করে তুলে, জানিনা।
________________
২.
সে রাতে গান শেষে দ্বিতলার বেলকনি ধরে আমার শোবার ঘরে ফিরছিলাম। আমার কক্ষটি মূলত প্রথমতলার সিঁড়ির সাথেই লাগোয়া। সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে আমি যখন নিচে নামছিলাম, আচমকা কারো ছায়া আমার শরীর স্পর্শ করে গেলো যেন মনে হলো। কি জানি কি মনে করে শরীর জেগে ওঠলো হঠাৎ করেই। লোমগুলি পর্যন্ত দাড়িয়ে গেলো তীক্ষ্ম তীরের ফলার মতো। তবুও ভয়কে শান্ত করে জোরস্বরে শ্বাস ফেলে আমি আরও কয়েক পা বাড়ালাম। ওমনি আরও একবার শব্দ হলো কিছুর। তখন মনে পড়লো ইমনের সেই সকালের গল্পের কথা। আসলেই ভূত টুত নেই তো এ বাড়িতে? এমন পুরাতন মরচে ধরা ভূতুরে বাড়ি, থাকতেই পারে কিছু একটা। নয়লে এমন বিনামূল্যে কাউকে কেউ থাকতে দেয় এমন করে? নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল আছে বৈকি।

এসব ভেবে যেই আরও একটু অগ্রসর হলাম, সামনে থেকে কালো করে কিছু একটা এসে জোরস্বরে 'হাউ' করে ওঠতেই যেন আমার পিলে চমকে ওঠলো। জোরালো আতঙ্কে শরীর সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে আমি সিড়িঁতে বসে পড়লাম, ওমনি নজরে আসলো সেটা ইমন ছিলো আসলে। আমার এমন অবস্থা দেখে সে হেসেও কুল পাচ্ছিলো না, আবার চিন্তিত না হয়েও পারছিলো না। শেষমেশ হাসি থামিয়ে, দুঃখপ্রকাশ করে সেও সিঁড়ি ঘেঁষে আমার পাশেই এসে বসে পড়লো। তারপর দুহাতে আমার সম্পূর্ণ বাহু টাইট করে জড়িয়ে ধরে বললো, আরে বোকা ছেলে। ছেলে মানুষদের এত ভয় পেতে হয় নাকি? ভূতটুত বলে আদৌ কিছু আছে নাকি? তুমি দেখি একেবারে ভীতু। ভয় পেয়ে একেবারে ঘেমে নেয়ে ওঠেছো। এদিকে আসো দেখি, থুথু দিয়ে দেই বুকে।।
বলেই সে আমার শার্ট টেনে বোতাম খুলে ভেতরে তলপেটের উপর থুথু ছিটিয়ে দিলো। তারপর বুকের বামপাশে হার্ট বরাবর হাত রেখে ধীরে ধীরে পুশ করতে করতে বললো, এবার ধীরে ধীরে শ্বাস নাও। ধুকপুকানি কমে যাবে। তুমি যে এমন দুর্বল হৃদয়ের পুরুষ আগে কি জানতাম আমি? তাহলে কি আর এমনটা করতাম??

আচ্ছা, চলো ওপাশটাতে গিয়ে বসি। অতঃপর সে আমায় টেনে তুলে পাশের রেলিংয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে নিজেও রেলিং এ চড়ে বসলো। আমার বুকটা তখনও ধপধপ করে কাঁপছিলো। তবুও দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। পরিবেশও যেন আমার সঙ্গ দিলো। চারিপাশ হতে মৃদু হাওয়া বইতে শুরু করলো, রেলিংএর পাশেই ঝুলে থাকা বাগান বিলাশের ফুলের গোছা কেমন মিটিমিটি হাসতে লাগলো যেন আমায় দেখে। ইমন আমায় স্বাভাবিক করার জন্য প্রথমত একটা গান ধরলো। আমি মনোযোগ ঢেলে শুনলাম, তার গলার আওয়াজ সুনিপুন এবং মাধুর্যপূর্ণ। শুনে যেন আমার কান আর মস্তিষ্ক প্রশান্তি পেলো। তবে তার গানের গীতিমাল্য শুনে না হেসে পারলাম না, বুঝি আমায় হাসাতেই সে ভুল করে বললো কি না। দেবের সেই পাগলু সিনেমার গানখানা, মন বেবাগী, মন বেবাগী.....
তবে সে গায়তে লাগলো, মন দে মা*গী, মন দে মা*গী!!
আমার ভয় কমে গেলো, তবে মনটা স্বাভাবিক হতে পারলো না। বরং হাসিতে হাসিতে পুনরায় উত্তেজিত হয়ে ওঠলো। হাসি শুনে সে গান থামিয়ে বললো, কি ব্যাপার, হাসছো যে?? আমার গলায় বুঝি খুব বাজে লাগছে গানটা? কি আর করি বলো তো৷ আল্লাহ যেমন কন্ঠ দিয়েছেন, তেমনই তো গায়বো তাই নয় কি??

আমি থাকে থামিয়ে বললাম, আরে। কে বললো আপনার গলা মন্দ? বরং আমার তো ইচ্ছে হলো, রাতভর আপনার গলায় গান শুনতে থাকি। এত কোমল কন্ঠ যে মানুষের কি করে হয়? তবে, আমি হাসছিলাম, কারণ আপনি ভুল লিরিক্স গায়ছিলেন। ওটা মন দে-মাগী হবে না ভাইসাহেব, মন বিবাগী হবে!!

সে মুচকি হেসে মুখ ভেচকি কেটে বললো, তাইনি! আমরা তো এভাবেই গেয়ে আসছি আদ্দিকাল থেকে। যাই হোক, নতুন জিনিস শিখলাম। (একটু থেমে ফের বললেন) যাই হোক, এবার কি ভয় কমেছে??

আমি মাথা নাড়লাম। এরপর সে নিজে থেকেই একেক করে নিজের জীবনচরিত সবিস্তারে বর্ণনা করতে লাগলো। কোন কলেজ কোন ডিপার্টমেন্ট কোন ইয়ার, এরপর বন্ধুদের নাম, শত্রুদের নাম, টিচারদের নাম৷ কার কার সাথে ঝামেলা হয়েছে সেই কাহিনী। কোথায় কোথায় সে ক্রিকেট খেলেছে, কোথায় জিতেছে কোথায় হেরেছে তার গল্প। গল্প যেন আর ফুরোয় না। তবে আমার গল্পগুলো যেন আমার জীবনটার মতোই ক্ষুদ্র আর গুরুত্বহীন, অতএব তার কথার মাঝে মাঝে আমার গল্পগুলো পারদের মতোই কোনো এক ছিদ্র টপকে কোথায় যে বেড়িয়ে গেলো সেদিকে কারো কোনো ভ্রুক্ষেপই হলো না। যাই হোক, তবুও তার সবিস্তর আর আমার সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় এটা জানতে পারলাম আর জানতে পেরে আমরা দুজনেই এতটা আশ্চর্য হলাম যে কতক্ষণ দুজন দুজনার মুখপানে চাওয়াচাওয়ি করে স্তব্ধ রইলাম, আমরা এতদিন একই কলেজে পড়েছি, পাশাপাশি থেকেছি, অথচ কেউ কাউকে চিনতাম না জানতাম না।

এরইমাঝে আমি হঠাৎ কথার ফাঁদে জড়িয়ে তাকে গত দুই রাতের অনুপস্থিতির কথা জিজ্ঞেস করতেই সে হাস্যমুখে জবাব দিলো, ডে- নাইটের সিক্সার সাইট টুর্নামেন্ট ছিলো একটা। সারারাত সারাদিন খেলাধুলার পর এতটাই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে ওখানেই এক বন্ধুর বাসায় আরও একদিন বেশি থেকে এলাম। তবে দূর্ভাগ্যবশত এবারের ম্যাচে আমরা গোহারা হেরেছি।

বলেই তিনি কাতর হাসি হাসলেন। তার করুণ চোখের চাওনিতে আমার হৃদয় যেন মোমের মতো গলে গেলো। তবুও আমি কন্ঠের শঠতা বজায় রেখে তাকে আরও কিছু বললাম, আসলে জানি না আমার এসব বলার অধিকার আছে কি না। তবুও আপনাদের আমি এখন নিজের পরিবার নিজের সংসারের লোক বলেই মনে করি তো। তাই বলার সাহস করছি, শুনুন। আমি জানি আপনার আম্মা মারা গেছেন বহু বৎসর আগেই। আপনার কোনো ভাই বোনও নেই আর। তার মানে আপনি আপনাদের পরিবারের অন্যতম একজন সদস্য। আপনার আব্বার বয়স হয়েছে। আপনি যেমন আপনার মায়ের ভালোবাসা থেকে এতদিন বঞ্চিত থেকেছেন, আপনার আব্বাও একইভাবে তার স্ত্রীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। আপনার এখন যেমন একটু কেয়ার একটু ভালোবাসা দরকার, তারও কিন্তু সেটাই দরকার। অথচ আপনি যেন ভূতের গলির ভূতের মতোই এই উদয় হয়ে আবার নিমিষেই গায়েব হয়ে যান। আপনার আব্বা কেমন আছেন, কি করছেন, কি খেয়েছেন, তার কি কোনো খোঁজ খবর রেখেছেন আপনি? জানেন, প্রতি রাতে আপনার চিন্তায় ঘুমুতে পারেন না তিনি! গভীর রাত পর্যন্ত আপনার জন্য দরজার পানে চেয়ে নির্ঘুম রাত কাটান। আমিও তো এই গত রাত আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আপনি আসেননি। কবে আসবেন সেটাও কারো জানা ছিলো না। এবার আপনিই বলুন তো, এইভাবে কি একটা স্বচ্ছ পরিবার গঠিত হয়? একটা সংসার সুন্দর সুশৃঙ্খল থাকে? সেই পরিবারে কোনো আনন্দ কোনো হাসিখুশি থাকে? আর এখন তো আমিও এই পরিবারের সদস্য। ইলেনিয়ার পরিবার এমন একটা অসুখী অসম্পূর্ণ পরিবার এটা কি মেনে নেওয়া যায়?

আমার কথাগুলো যেন পরিবেশে একটা গুমোট নিম্নচাপের সৃষ্টি করে ফেললো। সবকিছু হঠাৎ করেই এতটা নিশ্চুপ হয়ে গেলো যে আমি কিছুটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। তারপর ধপ করেই তিনি ওঠে দাড়ালেন, আর কোনোকিছু না বলেই হনহন করে কি জানি কোথায় মিলিয়ে গেলেন।
_______________

৩. আজ সকালে ততটা তাড়া ছিলো না। তাই চুলায় ভাত চড়িয়ে কষা করে মুরগির ঝাল, লাউশাক আর মুগডাল রাঁধলাম। এরপর সবার ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার দেওয়ার পর কিচেনে ঢুকতেই দেখি ইমন ভাই হাসি হাসি মুখ করে দাড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখতেই তিনি মুখটাকে বিষন্ন করে বলে ওঠলেন, কি ব্যাপার বাকি সবাই কোথায়?? ভাবলাম এখন থেকে রোজ সবার সাথে বসে সকালের ব্রেক ফাস্ট আর রাতের ডিনার করবো। কিন্তু কান্ডটা হলো কি? কেউ দেখছি নেই। তার মানে আজও কি আমায় একা একাই খেতে হবে??

তার মুখের কথা যেন আমার কান বিশ্বাস করতে পারলো না। তবুও তাকে কিচেনের পাশের ডাইনিং রুমে বসিয়ে রেখে আমি চললাম সবাইকে নিচে ডাকতে। কেউ যেন বিশ্বাস করতে পারলো না, তবুও সবাই একবার পরখ করতে সবার থালা সমেতই নিচে আসলো। আর এতদিন পর সাক্ষাৎ ইমনকে দেখে অবাক কিংবা আবেগাপ্লুত হয়েও পড়লো। জালাল চাচাও যেন আনন্দে কেঁদে ফেললেন প্রায়। তারপর সবাই অর্থাৎ জালাল চাচা, মোনায়েম চাচা, হাসু আপা, তোরাব ভাই সবাই ইমনের সাথে হেসে খেলে গল্প করতে করতে সকালের নাস্তা করতে লাগলো। অবশ্য আমি বাদ পড়লাম, কারণ একজনকে তো খাবার সার্ভ করতেই হবে। খাওয়া শেষে আজ সবাই বহুক্ষণ টেবিলেই বসে রইলো, বহু ধরনের গল্পগুজব করলো।
সবশেষে জালাল চাচা আমায় ডেকে বললেন, কি ব্যাপার বাপ? এই আশ্চর্য কান্ডটা হয়লো কেমন কইরা?

সেদিন ইমন ভাই সারাদিনই বাড়ি রইলো। কি জানি কি কারণে সারাটা সময়ই সে আমার সাথে বিড়ালের মতোই গা ঘেঁষে ঘেঁষে রইলো আর তার জীবনচরিত থেকে বাকি পড়া সমস্ত অনুচ্ছেদগুলো আমায় পুনরায় বিশ্লেষন করে শুনাতে লাগলো৷ আমি একটু চোখের আড়াল হয়েছি কি ওমনি তার ডাকাডাকি শুরু। বহুদিন পর আমার মতো এমন একজন নিরীহ নিরব শ্রোতা পেয়ে সে যেন অমূল্য কোনো রতন পেয়েছে বলেই মনে হলো। এদিকে তার বকরবকর শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা আর মাথা ব্যাথায় চিনচিন করতে লাগলো। রাতে ভাবলাম একটু বিশ্রাম নিবো, কিন্তু তা আর হলো কই? তিনি আমায় ডেকে তার শয়নকক্ষে নিয়ে গেলো। আর যেন আদেশের মতোই বললো বসলো, সারাক্ষণ বন্ধু বান্ধবের সাথে থাকি তো, একা একা থাকতে আর ভালো লাগে না। শুনো তোমার কথায় যেমন আমি বাড়িতে থাকার মতে সম্মত হয়েছি, তবে আজ হতে কিন্তু তোমাকেও আমার একটা কথা রাখতে হবে। আজ হতে তুমিও আমার রুমে আমার সাথেই থাকবে। রাতেও থাকবে আর দিনেও থাকবে। আর তাহলেই কিন্তু বাড়িতে আমার মন বসবে, নতুবা আমার দ্বারা সম্ভব না। এখন তুমি কি বলো? থাকবে? যদি রাজি হও তাহলে চলো, এক্ষুণি তোমার সব জিনিসপত্র এ রুমে চালান করতে থাকি। আর রাজি না হলে চলে যাও, যদি মন বসে তাহলে বাড়িতেই থাকার চেষ্টা করবো।

আমার কোনো যৌক্তিক কারণ দর্শানোর উপায় ছিলো না নিষেধ করার মতো। আর যেহেতু এখন হতে এটা আমারই পরিবার, আমার সংসার, অতএব টিকাতে হলে নিজের একটু কষ্ট স্বীকার করতেই হবে। অতএব আমি সারাদিন সারারাত তার বকরবকর শোনার আবদারে সম্মতি দিয়ে নিজের ঘরের সকল মাল সামানা এনে তার রুমেই তুললাম। সেও আমায় সাহায্য করলো সব রকমের। অতঃপর ক্লান্ত দেহে এলিয়ে পড়লাম তার খাটের উপর তার পিঠ ঘেঁষে। কি জানি কখন ঘুমে দুচোখ জোড়া লেগে গেলো আর হুশই রইলো না কোনো। পরে যখন গভীর রাতে চেতনা ফিরলো দেখলাম আমি তার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ। শুধু তাই নয়, লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেলো যখন দেখলাম আমি আর ইমন ভাই তার পরনের লুঙ্গিখানা গায়ে দিয়ে আছি শীত নিবারণের জন্য।

______________

আগে যেমন ইমন ভাইকে ঘরে আবদ্ধ করা যেতো বা, এখন বিষয়টা তার উল্টো হয়ে গেলো। সে এখন সারাদিনেও বাহিরে যেতে চায় না। সকালের অধিকাংশ সময়টুকু সে আমার পিছনে ব্যয় করে। আমি রান্না করি, আর সে আমার সাথে সবজি কেটে ধুয়ে দেয়, মাঝে মাঝে উনুনের তরকারিটুকুও দেখে। আর এরপর যখন আমি গোসলে যাই, সে তখন বাগানের ফুলগাছে পানি দেয়। আর সবশেষে সবাই মিলে খেয়ে ওঠার পর সে আমায় নিয়ে তার রুমে গিয়ে বসে। তারপর শুরু হয় নতুন কোনো এক জীবনলিপির গল্প, মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগলেও প্রায় সময়ই তার গল্পগুজব শুনতে আমার বেশ লাগে। শুয়ে বসে থাকতে থাকতে যখন দুপুর গড়ায় তখন সে আমার হাতের চা নিয়ে মোনায়েম চাচার রুমে ঢুকে গানের সাথে সাথে বাড়তি কিছু আলাপ-সালাপ করতে। এরপর যখন রাত নামে, সন্ধে হয় ওমনি সে আমায় ডেকে তার রুমে আনে। অতঃপর তেল দিয়ে মালিশ কিংবা আগুনের ছ্যাক নেয়। এভাবেই দিন গড়াচ্ছিলো।

তবে তার অনুপস্থিতি তার বন্ধু বান্ধবের মাঝে বেশ ভালোই প্রভাব ফেললো। একদিন সদলবলে তারা বাসায় এসে হাজির। এতগুলো দানবের মতো যুবক দেখে আমি খানিকটা ভয়ও পেয়েছিলাম বটে, তবে শেষে তাদের জন্য গরম লুচি আর সিংগারা, আর চা সেই আমাকেই করতে হলো।

সেসব নিয়ে আমি যখন ইমন ভাইয়ের শোবার ঘরে ঢুকছিলাম, ওমনি শুনলাম তার বন্ধুরা বলাবলি করছে, হুট করে যেভাবে গায়েব হয়ে গেলি ভেবেছিলাম কি না কি হলো। সাব্বির তো বললো, বিয়ে সাদি করে সংসারী হয়ে গেছিস বোধ হয় তাই ক্লাবে যাচ্ছিস না। ও মা, এখন দেখি সাব্বিরের কথাই সত্যি। তুই তো সত্যিই সংসারী হয়ে গেছিস। তফাৎ হলো এই বউয়ের বদলে একটা বর পেয়েছিস এই যা।। তবে, ওকে বউ বললেও ভুল হবে না। আংকেলের মুখে শুনলাম তোর যা যত্ন আত্তি করছে আর তুই যেভাবে ওর পিছু পড়ে আছিস সেটা বউয়ের চায়তে কম না।। তো, নতুন জীবনে স্বাগতম বন্ধু।

বলেই সবাই ইমনকে নিয়ে সেকি হাসাহাসি। যদিও ইমন হয়তো একটু লজ্জা পেলো, তবে তার মুখেও একটা হাসি ফুটে ওঠলো। এরপরেই আমি যখন খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলাম, একজন বলে ওঠলো, এই তো চা সিংগারা নিয়ে নতুন ভাবি চলে এসেছে।

কথাটা শুনে আমি একটু আশ্চর্য হলাম এবং আহত হলামও বটে। দেখলাম ইমন বিস্ময় নিয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে। যাক সে কথা। রাতে যখন তার সাথে ঘুমুতে গেলাম সে ফের ঐ প্রসঙ্গ তুলে বললো, ওদের কথায় কিছু মনে করো না ইলু। আরে ওরা হচ্ছে জাওরামির শিরোমনি। ভাগ্যিস তুমি নতুন বলে তোমায় বেশি কিছু বলেনি।

আমি গম্ভীর মুখে বললাম, আচ্ছা সত্যিই কি আমি যা যা করছি এসব আপনার বউয়ের মতো কাজ হয়ে যায়?

ইমন ভাই, আমার গালে আদর বুলিয়ে বললো, আরে পাগল। বললাম তো ওসব মনে নিও না। তুমি যা যা করছো, সেসব হয়তো আমার বউ এলেও করতো না বা করবে না। তুমি আমার বউয়ের চায়তেও বেশি কিছু, বুঝলে?

কথাটা বলেই সে আমায় জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। তবে আজকে তার ছোঁয়াতে কি যেন নতুন এক আবেশে শরীর শিউরে ওঠলো।
__________________

৪. সামনেই ইমন ভাইয়ের ফাইনাল খেলার ম্যাচ। এদিকে আমার ফাইনাল এক্সামও সন্নিকটে। তবুও পড়াশোনা শেষ করে যতটুকু সময় হাতে পাই ইমন ভাইয়ের শরীর মালিশে কাজে লাগাই। কারণ, এ সময় তার খুব পরিশ্রম যাচ্ছে। আগের মতো সারাদিন রাত খেলা নিয়ে পড়ে না থাকলেও দিনের অনেকটা সময়ই সে খেলা চর্চার পিছনে ব্যয় করতে লাগলো। আর এতে আঘাত আর ক্ষত যে হবেই, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

কিছুদিন পর তার সেই চূড়ান্ত পর্যায়ের দিন এসে উপস্থিত হলো। ইমন ভাই পুরোপুরি প্রস্তুত, তবে তার খেলা দেখবার মতো অবস্থা আমার ছিলো না। কয়েকদিন ঠিকঠাক মতো ঘুমুতে না পাড়ায়, আর পড়ার চাপে আমি বেশ ভালোই অসুস্থ হলাম। মাথা তুলে যেন ওঠতেই পারি না। ইমন ভাই এই নিয়ে খুব চিন্তা করতে লাগলেন, তবুও তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আমি খেলতে পাঠিয়ে দিলাম। সারারাত খেলাধুলা চললো। আমি শুধু অপেক্ষায় রইলাম কখন সকাল হবে, আর কখন দেখবো ইমন ভাই হাসি মুখে এসে বলবেন, হুররে আমরা জিতে গেছি৷ আমি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছি। আমার আর তর সইছিলো না।

সকাল নয়টা নাগাদ আমার ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলে দেখি পাশেই ইমন ভাই বসা, তবে তার চোখে স্পষ্ট নিরানন্দ। আমি বুঝলাম কিছু একটা খারাপ হয়েছে। আমি তাই খুব কথা না বাড়িয়ে সরাসরি বললাম, ইমন ভাই, হার জিত নিয়েই তো পৃথিবী। একদল না হারলে তো আরেকদল জিততে পারে না। তাই যা হবার হয়েছে, মেনে নেওয়াই ভালো।

ভেবেছিলাম কথাগুলো কাজে দিবে। কিন্তু সে দেখি ওঠে দাড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমায় বলে বসলো, তুমি প্লিজ আজ থেকে গেস্টরুমে থাকতে পারবে??
_____________

পরবর্তীতে জানতে পারলাম আমায় নিয়ে বিরাট ঝামেলা হয়ে গেছে। তারা তো এবারের ম্যাচ হেরেছেই। এরই সাথে তার বন্ধুরা তার এই হারের জন্য আমায় দায়ী করেছে। আমিই নাকি ইমনের মনোযোগ নষ্ট করে ফেলেছি। তার এত বৎসরের চর্চা শেষ করে দিয়েছি, আর তাই বাঁচতে হলে আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে। আমায় নিয়ে কে কে বললো সেটা ভাববার বিষয় ছিলো না, তবে ইমন ভাইয়ের হঠাৎ পরিবর্তন আমায় ভীষণ আহত করলো। সে আমায় সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যেতে লাগলো। আবারও গভীর রাতে বাসায় ফিরতে শুরু করলো, আর সেই ভোরে চলে যেতে লাগলো। তার সাথে সারাদিনেও আর দেখা সাক্ষাৎ নেই। এদিকে আমার ফাইনাল এক্সামও শেষ। অতএব একরাতে জালাল চাচাকে নীরবে ডেকে তাকে সব বুঝিয়ে শুনিয়ে তার হাতে এ সংসারের দায়িত্ব সপে দিয়ে আমি বিদেয় হলাম। এবার আর শহরের জীবন নয়, ডাইরেক্ট আমার সবুজ শ্যামল গ্রাম মায়ের কোল। যতটুকু পড়েছি যথেষ্ট, যদি চাকরি পাই ভালো, না পেলে আছে তো মধ্যপ্রাচ্যের ধূসর মরুভূমি। সেথায় না হয় গিয়ে খেজুর চাষ করবো।

চলে গেলো প্রায় দেড় মাসের মতো সময়কাল। এরইমধ্যে দেখি একদিন জালাল চাচা আর মোনায়েম চাচা খুঁজে খুঁজে আমার গ্রাম বের করেছেন। তারপর আমায় পেয়ে আনন্দে যেন আত্মহারা দুজন। আমি যথাসাধ্য তাদের আপ্যায়ন করলাম। তবে, তাতেও তাদের মন ভরলো না। তারা বলেই বসলো, এতদিন সে সংসার আমার দায়িত্বে ছিলো আমি গুছিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু যবে থেকে তার হাল তুমি ধরেছো ও সংসার সেদিন হতে তোমার হয়ে গেছে, আমি বাবা এখন আর কিছুই জানি না। তুমি সব কিছু আগের মতে করে দাও। ইমনকে তুমি আবারও ফিরিয়ে আনো বাবা। নয়লে আমি ওর চিন্তাতেই মারা যাবো।

আমি কিছু বলবো, তার আগেই আমার বাবা বললো, ও তো ছেলে মানুষ। ভাবছি ভিসা পার্সপোর্ট করে বিদেশ পাঠাবো। বয়স তো আর কম হলো না, বিয়ে করাতে হবে। তা আপনার ছেলেকে বিয়ে করাচ্ছেন না কেন?

ইমনের বাবা কি জানি কি ভেবে বললো, আমাদের সমাজ এমন এক নিয়মের জালে বাঁধা পড়ে আছে যে জাল হয়তো আমার পক্ষে ভাঙা সম্ভব নয়। নতুবা আমার ছেলেটাকে কবেই আমি আমার ঘরের লক্ষীটির সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম। কিন্তু কি আর করবো, সমাজ যে তা মেনে নেবে না।। ইলু বাবা, তোমার কাছে শেষ বার অনুরোধ করছি। পারলে একবার এসো।

বলেই তারা চলে গেলো। আমার তাদের সাথে যাবার তীব্র ইচ্ছে থাকলেও যেতে পারলাম না। বাবা অগ্নিশর্মা হয়ে চেয়ে রইলেন আমার দিকে।
_____________

৫. প্রায় তিন মাস পর, বাড়ি থেকে কয়েক কিলো দূরের দোকানে গিয়েছিলাম কিছু সদাই করার জন্য। কিন্তু সেথায় গিয়ে আমি থ মেরে গেলাম। দেখি ইমন ভাই রুক্ষ মুখে বসে বসে সিগারেট টানছেন। আর আমায় দেখামাত্রই সেটা ফেলে দিয়ে সে যেন ঝড়ের বেগে ছুটে এসে আমায় তার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নিলো। আর এত শক্ত করেই ধরে রাখলো যেন ছুটাতে গেলে পনেরো- দশেক মানুষ লাগবে।

আমি কিছু বলবো, তার আগেই সে বলে ওঠলো, ইলু। তোমায় ছাড়া আমি এবার আর একা একা বাড়ি ফিরবো না। প্লিজ চলো আমার সাথে। আমি যে প্রতি রাতে ছটফট করতে করতে মরে যাচ্ছি। কেউ নেই আমার শরীরে একটু মালিশ ডলে দেবার। কেউ নেই, আমার লুঙ্গির তলে ঘুমিয়ে থাকার। কারো হাতের রান্নাই আমার মুখে রোচে না। প্লিজ চলো না, তোমায় ছাড়া যে আমি মরে যাচ্ছি ইলু।

আমি তাকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে করতে বললাম, শুধুমাত্র মালিশ ডলার জন্য আর মলম লাগানোর জন্য বুঝি আমায় নিতে এসেছেন? কেন আপনার এত বন্ধু বান্ধব তারা কি করে? আর একটা বিয়ে করে নিচ্ছেন না কেন? বউয়ের কোমল হাতের রান্না খেতে পারবেন আর মালিশও পাবেন।

সে বললো, এত কথা বলো না তো প্লিজ। আমি কিচ্ছু জানি না। তুমি আমার সাথে যাচ্ছো এই কথা ফাইনাল।

হঠাৎ দেখি পাশেই আমার বাবা দাঁড়িয়ে। আমাদের ওই অবস্থায় দেখে তার মুখের অবস্থা দেখার মতো। তবুও সে বিশেষ কিছু না বলে বললো, সদাই কিনতে এতক্ষণ লাগে বুঝি? আর এ বুঝি তোমার সেই ইমন ভাই? তাকে নিয়ে বাড়িতে আসো, আমি ভাত চড়াচ্ছি।
________________

রান্না শেষ হতে হতে বেলা গড়িয়ে গেলো। বাবা ডিম ভুনা করলেন, ছোট মুরগীর বাচ্চাটাকে কসালেন, পুইঁশাক রাঁধলেন, মাছ ভাজলেন আর ভাতের পরপর কিছু পোলাও চড়ালেন। রাতে ইমন ভাই খুব তৃপ্তি করে খেয়ে দেয়ে শেষে বললেন, চাচা, আমি কিন্তু আপনাদের নিয়ে যেতে এসেছি। কাল সকালেই ইলু আর আপনি আমার সাথে চলবেন আমাদের বাড়িতে। আপনাদের আর এ গ্রামে ফিরতে হবে না। আমি আপনাদের দেখে শুনে রাখবো সারাজীবন। কথা দিচ্ছি কখনই ইলুর কোনো কমতি আমার রাখবো না।

বাবা বিশেষ কিছু বললেন না, বললেন, ইলু। মশারী টাঙিয়ে ঘুমিয়ে পড়। আমি পাশের রুমে।
__________
সেই রাতে ইমন ভাইয়ের সাথে অনেক বাক্য বিনিময় হলো। তবে কি জানি কি ভেবে এক পর্যায়ে তিনি আমায় ফের জড়িয়ে ধরে গালে আর ঠোঁটে চুমু দিতে লাগলেন। দিনে তখন বাঁধা দিলেও এই রাতে তাকে বাঁধা দিতে ইচ্ছে হলো না, বরং নিজেকে তার কাছে সপে দিতে ইচ্ছে হলো। তবে সে বিশেষ কোনো জোরাজোরি না করে খুব কোমল ভাবেই আমার সারা শরীরে ভালোবাসা স্নেহ আদর সবকিছুর মিশেল পরশ বুলিয়ে দিতে লাগলো। তার আর আমার মাঝে কোনো গোপনীয়তা বলতে কিছু আর রইলো না। এক পর্যায়ে

Address

Rajpur
700064

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অন্য-পুরুষের গল্প posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category