অন্য-পুরুষের গল্প

অন্য-পুরুষের গল্প সমাজের সেইসব মানুষগুলির জন্য, যারা অন্যসব মানুষের মতই, তবে তথাকথিত কিছু মানুষ তাদের অন্য চোখে দেখে..!

[এই গল্প লেখা সমস্তকিছুই কাল্পনিক। কোন স্থান বস্তু বা কারো গল্পের সাথে মিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয় ।]  "স্মৃতিম...
10/07/2025

[এই গল্প লেখা সমস্তকিছুই কাল্পনিক। কোন স্থান বস্তু বা কারো গল্পের সাথে মিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয় ।]

"স্মৃতিময় ভালবাসা"
মাতাল ঋত্বিক



বাহিরে প্রচণ্ড বেগে বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে ।
কে থামাতে পারবে এই বৃষ্টি।
এটা যে প্রকৃতির নিয়ম।

টপটপ করে গাছের পাতায় পড়বে আর উদাসীনদের মন টেনে নেবে এটাই তো বৃষ্টির কাজ।

মনে মনে ভাবছে আর বৃষ্টিকে বকে যাচ্ছে রাজু। রাজুর মা নিষেধাজ্ঞা জারি।
যে বৃষ্টিতে কখনোই ভেজা যাবেনা।

কিন্তু এই দুরন্ত রাজু।
সে কি মানবে কারো নিয়ম।
মানবে কোন বিধান ?
চলুন রাজু সম্পর্কে কিছু জেনে নিই।

গ্রামের একটি দস্যি ছেলে রাজু।
বাবা মার একমাত্র সন্তান ।
দেখতে অসম্ভব সুন্দর ।
কন্ঠে বিধাতার এক অপরিসীম দান রয়েছে ।
যা পৃথিবীর মানুষকে বোধহীন করে দিতে পারে ।
লেখাপড়ায় খুব ভালো। তবে চাঞ্চল্যতা তার অসম্ভব প্রতিভাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
তার বাবা মার স্বপ্ন । রাজু বড় হয়ে অনেক সম্মানী একজন ব্যক্তি হবে।
লোকমুখে যেন শুধু রাজুর নামই শোনা যায় ।
কিন্তু রাজু তার স্বপ্ন পূরনে ব্যাস্ত ।
তার স্বপ্নগুলো হলো ,
গাছে গাছে , পাড়ায় পাড়ায় যা কিছু আছে তা তার হাতের মুষ্ঠিতে রাখা।
পাকা পেপে, গাছের কাচা আম,পাকা কলা ,খেজুরের রস ভরা কলস ছিদ্র করার মত কতযে কান্ড তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা আছে , তার অন্ত নেই।
কিন্তু দুষ্ট আর খারাপ এক নয়।
রাজুর ভিতরে একটা মনুষত্ব বোধ আছে।
যা মানব লোকে বিরাট প্রভাব ফেলে।
কিন্তু তার এই দস্যিপনার জন্যে কতরকমের শালিশী বৈঠক যে বসে,তার হিসেব নেই।

আর এই কারনেই রাজুর মা শিরিন আর তার বাবা সুরুজ মিয়া কত যে তার পিঠ চাপড়েন তারও হিসেব নেই।

রাজুর বাবা সব পেশাতেই কাজ করেন। কখনো নদী থেকে মাছ ধরে সংসার চালান।
আবার কখনো শাপলা লতা কুড়িয়ে আনেন।
আবার কখনো কখনো জমিতে ফসলও ফলান। তাদের জমি জমার বলেই সংসারটা চলে যায় ।



আজ রাজুর বাবার শরীরটা অসুস্থ।
তাই রাজুকেই তাদের ভাত যোগার করতে হবে।
তাই সকাল না হতেই রাজুর মা তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলছে।

শিরিনঃ এই রাজু, উঠ গুম থেইক্কা।
দেহচ্চা তোর বাপের শইলে কেইমনে কাফনি দিয়া জ্বর আইতাছে।
যা বাপ। আইজ তুই কয়ডা হালুক তুইল্লা আন।
রাজঃ যামু তো। আরেকটু ঘুমাইতে দেওনা মা। এরুম করতাছো ক্যান,?
খেতাটা (কাঁথা ) দেও।
শিরিনঃ না। অহন যদি তুই না যাস তাইলে আমিই যামু কইতাছি।
আর এই সক্কাইল সক্কাইল পানিত নামলে আমার কি অইব তুই তো বালা কইরাই জানস।
রাজুঃ তুমি খুব খারাপ।
আমারে একটু ঘুমাইতেও দিলানা।
বলেই কাঁথাটা গা থেকে সরিয়ে
একটা গামছা কোমরে বেঁধে রাজু ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল ।

গ্রামে কর্মহীন লোকদের এমনিতেই চলতে হয়।

রাজু বিলের ধারে আসতেই দেখে তাদের প্রতিবেশি সুবোধ আর নুরু।
রাজুঃ আরে সুবোদ, কহন আইছত? এত্ত সহালে?
সুবোধঃ এইতো ৫/১০ মিনিট অইব ।
সুবোধও গ্রামের সাধারণ একজন ছেলে।
বাবা নেই। মা বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে ।
আর সুবোধ রাজুর সমানে স্কুলে পড়ে।

টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে।

বৃষ্টিটা এখন অনেকটাই কমে এসেছে।

রাজু পানিতে নেমে কিছু শালুক আর শাপলা লতা তুলে পানির উপরে এসে দাড়িয়ে রইল।
সুবোধ আর নুরুরও তোলা শেষ প্রায় ।

ততক্ষণে ভোরের পাখির কিচিরমিচির শব্দে পরিবেশ মুখরিত হচ্ছে ।
ভোরের সূর্য তার রক্তে রাঙা রং দিয়ে উকি দিয়ে সবাইকে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ।

সবাই এখন বাজারের পথে রওয়ানা দিচ্ছে ।
রাজু,সুবোধ ও নুরুও তাদের পণ্য নিয়ে বাজারের পথে হাঁটা ধরল।
বিক্রি করা হয়ে গেলে রাজু কিছু চাল আর ডাল আর বাকি টাকাটা দিয়ে রাজু তার বাবার জন্য কিছু ওষুধ কিনে নেয়।

বাড়ি ফেরার পর রাজু তার মাকে বলে
রাজুঃ মা ,ওমা। ভাত বসাইছ? আমার পেডে খোব খিদা লাগছে।
তাড়াতাড়ি ভাত দেও।
শিরিন বেগমঃ রাজু বাপ তুই পইর (পুকুর) থেইক্কা ডুবডা দিয়া আয়। আমি ভাত বাড়তাছি।

রাজু পুকুরে যায় গোসল সারতে ।
পুকুরটা মোটামুটি অনেকটা বড়ই।
দিঘি বললেও চলে।।
গোসল করতে একসময় রাজুর চোখ আটকে যায় পুকুরের দক্ষিন পাড়ের দিকে।
ঐ পাড় দিয়ে সদর রোডের রাস্তাটা।
রাজু দেখে একটা ছেলে পড়ে আছে পানির উপরে। পা গুলো পাড় ঘেঁষে পড়ে আছে।
রাজু তো ভয় পাবার মত অবস্থা ।
চারদিকে সাহায্যের জন্য চোখ ঘুরাচ্ছে কিন্তু কেউ নেই।
রাজু পানি থেকে লাফিয়ে উঠে ছেলেটার কাছে যায় । গিয়ে দেখে পাড়ের উপর একটা ব্যাগ পড়ে আছে। রাজু ছেলেটাকে ধরে টেনে তুলতে যায় । ছেলেটার বয়স ১৯ কি ২০ হবে।
ছেলেটার মুখে রক্ত । মনে হচ্ছে কেউ কিল ঘুসি মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। রাজু ছেলেটাকে টানতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছে ।

রাজু তার মাকে ডাকার জন্য ছুটতে ছুটতে বাড়িতে যায় । রাজুর মা রান্না করছিল।

রাজুঃ মা,মা।
শিরিন বেগমঃ কি হইছে?
রাজুঃ মা পইরের পাড় একটা পুলা পইরা রইছে। মনে হইতাছে কেউ মারছে।
মা যলদি আইয়ো।
শিরিন বেগমঃ চল চল।
রাজুর বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
সুরুজ মিয়াঃ কি হইছে?
রাজুঃ আব্বা পইরের পাড় যাইতাছি । তুমি যলদি আইয়ো।

রাজু আর তার বাবা মায়ের প্রচেষ্টায় ছেলেটাকে তারা বাড়িতে আনে।
রাজুর মা ছেলেটার মাথায় গরম সেকঁ দিতে থাকে। একসময় ছেলেটা চোখ খুলে।
শিরিন বেগমঃ অহন কেমন লাগতাছে বাজান?
ছেলেটা বলল আমি এখানে কেন?
রাজুর বাবা বলল আফনেরে ঐ পইরের পাড় থেইক্কা আমরা তুইল্লা আনছি।
রাজু আফনেরে দেহে আপনি পইড়া রইছেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে
ছেলেটি বলল , আমার নাম আবির।
মহসীন সাহেবকে চিনেন তো।
ওনি আমার নানা।
সুরুজ মিয়াঃ মাতবর সাহেব আপনের নানা। কন কি? আফনেরে মারনের সাহস কার অইল?
আবিরঃ জানিনা। আর আমার সাথেই বা ওদের শত্রুতা কিসের। আমার ক্যমেরাটাই ওদের লোভ
শিরিন বেগমঃ অহনের যুগে কেউ কেউরে মারতে দ্বিধা করেনা। টেহা পইসাই সব।

আবিরঃ আপনাদের ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই। আপনারা আমাকে ওখান থেকে না আনলে আমি হয়তো এতক্ষণে মরেই যেতাম।
আর আপনার ছেলেটাই তো আজ আমার প্রাণদাতা। ওর কাছে আমি সারাজীবন ঋণি থাকব।
কিসে পড় তুমি?
রাজুঃ এইটে।
আবির ছেলেটার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়েই আছে। ছেলেটার চেহারায় কোথায় যেন একটা অসম্ভব সুন্দর বস্তু লুকিয়ে আছে।
যা বার বার আবিরকে ছেলেটির দিকে আকর্ষিত করে তুলছে।
আবিরঃৎআংকেল আমাকে এখন বাড়িতে যেতে হবে ।
নানা নানু টেনশন করছে।
বলেই আবির উঠে গেলো।

আর ওদিকে আবিরের নানা তার লোকজনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে কোন সকালেই। আবির বাড়ি ফিরতেই তার নানু তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয়। কোথায় ছিল সে সারারাত জিজ্ঞেস করতে থাকে ।আবির সব খুলে বলার পর আবিরের নানা তেলেবেগুনে জলে উঠল। তিনি সভার আয়োজন করতে বলল। লোকগুলোকে তাদেরকে ধরতেই হবে।
কিন্তু আবির তাদেরকে এসব ঝামেলায় জড়াতে নিষেধ করে।



আবির ঘুমোতে যাওয়ার আগে রাজুর কথাই ভেবে যাচ্ছে।গ্রামের একটা সাধারণ ছেলে। কিন্তু আবির তার মধ্যে একটা অসাধারণ কিছু খুজে পাচ্ছে। যা আবিরকে বার বার রাজুর দিকে টানছে।

সকালে আবির ঘুম থেকে উঠার পর রাজুদের বাড়িতে যায় ।
রাজুর মা আবিরকে দেখে রাজুকে ডাকতে শুরু করে।
রাজুঃ আরে। আবির ভাই আফনে। কহন আইলেন?
শিরিন বেগম আবিরকে বসার জন্য একটা চেয়ার এনে দেয়।
আবিরঃ আন্টি আমি একটু রাজুকে নিয়ে যেতে এসেছি।
শিরিনঃ কই যাইবেন রাজুরে লইয়া ?
আবিরঃ এই এখানেই। পাশের গ্রামে নদীর কাছে যাবো।
রাজুঃ যাই মা?
শিরিন বেগমঃ যা বাবা ।

আবির রাজুকে নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে রাজুর অনেক ছবি তুলে নেয়। আবিরের হৃদয়ে আরো বেশি জায়গা জুড়ে নেয় রাজু।
রাজুর এই চাঞ্চল্যতা, বেশি কথা বলা, রাজুর দুরন্তপনা গুলো আবিরের কাছে শুধু ভালোই লেগে যাচ্ছে ।
কিন্তু এই ভালো লাগা গুলোর মানে কি , আবির বুঝতে পারছেনা।

এভাবে আবির প্রত্যেক দিন রাজুকে নিয়ে ঘুরতে বেরোত।
আবিরের রাজুর প্রতি ভালো লাগা দিন দিন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আবিরের ভালো লাগা কখন যে একটা অভিশপ্ত ভালোবাসায় জন্ম নিয়েছে আবির তা টেরই পায়নি।
যখন আবির শহরে যাবার প্রশ্ন উঠল তখনই রাজুর প্রতি আবিরের ভালবাসা প্রকাশ পেল।
আবির মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল। রাজুকে আবিরের মনের কথাটা বলবে। তার হৃদয়ে রাজু কতটুকু রাজ্য জুড়ে আছে।
কিন্তু এই দুরন্ত রাজু ,
না বুঝে ভালবাসার মানে, না বুঝে প্রেম কি জিনিস।
আবিরের ভালবাসা রাজু হেসেই উড়িয়ে দিল। কিন্তু আবির তার হৃদয়ের কথাটুকু না বললে আর কোনদিন নাও বলতে পারে। তার বিবেকের কাছে সে দায়ী থাকবে। তাই সে রাজুকে যতটুকু সম্ভব তার আবেদনটুকু রাজুর কাছে নিবেদিন করেছে।
আবির তার একবুক ভালবাসা আর কষ্ট নিয়েই শহরে ফিরে যায়।


৪বছর পর

রাজু এখন অনেক বড়। শুদ্ধ করে কথা বলতে শিখেছে। আবিরের বলা ভালবাসা কি জিনিস সেটা বুঝতে শিখেছে। কতরজনী রাজু তার ভুলের জন্য চোখের পানি ফেলে বালিশ ভিজিয়েছে তার হিসেব রাখা কঠিন।
জানালা দিয়ে সেই সেই সদর পথের দিকে কতযে তাকিয়ে ছিল সেটা শুধু শিশিরে ভেজা ঘাসগুলো, জানালার শার্সিতে পড়া বৃষ্টির ফোটা গুলোই সাক্ষী । এখনোও রাজু আবিরের অপেক্ষায় থাকে। আবির ফিরবে তার বিশ্বাস । তার চোখ , তার ঠোট, তার কন্ঠে উচ্চারিত ধ্বনি, বাগ-প্রত্যঙ্গ সবকিছু আবিরের ভালবাসার সত্যতা প্রমাণ করছিল।

কিন্তু রাজুর কথা কি মনে পড়ে আবিরের?
সেই প্রশ্নটা রাজুর মনে থেকেই যায় ।
রাজু এখন ঢাকার একটি কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। এসএসসি তে ভালো ফলাফলই রাজুকে এতদূর আসতে সাহায্য করেছে। দেখিয়েছে নতুন পথের দিশা।
কিন্তু এই যান্ত্রিক কৃত্রিমত্তার শহরে হাজারো লোকের ভিড়ে রাজু একদিন চেনা দুটি চোখ খুজে পায়।
যেই চোখ গুলো রাজুকে ভালবাসার কথার নিদর্শন হয়েছিল।
রাজু আবিরকে দেখতে পায় তার পাশের একটি ফ্লাটে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।
আবিরকে দেখার পর রাজুর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।

যা ছাড়া রাজুর জীবন মূল্যহীন ।
রাজুর গালবেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।
কিন্তু আবির কি রাজুকে এখনো সেই আগের মত ভালবাসে,
নাকি অন্য কারোর হৃদয়ের মনিকা সে ?
এই প্রশ্ন গুলোই রাজুকে আবিরের সামনে দাড় করিয়ে দেয়।
পরদিন রাতে রাজু আবিরের বাসায় গিয়ে উঠে। বাসায় ঢুকার পর রাজু দেখতে পেল বাসায় কেউ নেই। কিন্তু সবগুলো রুমের দরজা গুলো খুলা।
রাজু আস্তে আস্তে সবগুলো রুম ঘুরে ঘুরে আবিরকে ডাকতে থাকে।
কিন্তু আবির কোথায়।কোন সারাশব্দ না পেয়ে রাজু ছাদে উঠে।
ছাদের একপাশে আবির দাড়িয়ে আছে। রাজুকে দেখার পর আবির রাজুর দিকে এগিয়ে আসে।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবির রাজুকে চিনতে পারে।
আবিরঃ রাজু! তুমি?
রাজুঃ চিনতে পারছো আমাকে?
আবিরঃ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তুমি? এখানে?
আমার বাসার ঠিকানা তুমি কোথায় পেলে? আর এখানেই বা আসলে কি করে?
রাজুঃ তুমি একদিন বলেছিলে তুমি আমাকে ভালবাসো। কিন্তু আমি সেদিন ছিলাম একটা বোধশূন্য বালক।
যার হৃদয়ে ভালবাসা নামক বস্তুটা ছিলনা।
কিন্তু তুমি সেই ভালবাসার বীজটা আমার বুকে বপন করে দিয়ে চলে আসো। আর একবারো পিছন ফিরে তাকাওনি। জানতেও চাওনি তোমার ভালবাসার মানুষটি কেমন আছে তোমাকে ছাড়া।
আমি কি তোমার আগের সেই ভালবাসার মানুষটি রয়েছি। নাকি অন্যকোন একজন সেই জায়গা দখল করে আছে , তা জানার জন্যই আজ আমি তোমার সামনে।
আবিরঃ আমি জানতাম রাজু। তুমি ঠিক একদিন আমার ভালবাসা বুঝবে। আর তুমি আমারই হবে। আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষায় থাকবো। আজ সে অপেক্ষার সমাপ্তি হলো।
আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি রাজু।
আজ আমি আমার বাবা মার কাছ থেকে দূরে সরে রয়েছি শুধু তোমার জন্য ।
বাবা আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি বাবার কথায় কোনভাবেই রাজি ছিলাম না। আমি বাবাকে বলেছিলাম আমার সব সত্যিটা।
চেপে রাখিনি। আমার বাবা খুব অর্থ পিপাসু আর জেদী।
আর তাই বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আর আমি কিভাবে আমার ভালবাসার মানুষ নিয়ে সুখে থাকি সেটাও বাবা দেখে নিবে বলে দিয়েছে।
কিন্তু মায়ের মতো আপন কে হতে পারে?
মা বাবাকে না ছাড়তে পারুক আমাকে ছাড়েনি।
আমাকে মা এখানে এসে দেখে যায় ।
আর রাজু তুমি বলছ এই আবির এখন কার?

এই হৃদয়টা শুধু তোমার জন্য বরাদ্দ রাজু।
আর কেউ আবিরের হৃদয়ে নেই।
আমার সবটুকু জুড়েই তুমি।
রাজুঃ আমিও তোমাকে পাগলের মত ভালবাসি আবির। কিন্তু সেটা বুঝতে আমার অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু যেই ভুলটা আমি একবার করেছি তা আর করতে চাইনা। আমাকে তোমার বাহুডোরে বেঁধে ফেল আবির।
কখনো ছেড়োনা।
আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না আবির। কখনোই না।

রাজু আবিরকে জড়িয়ে ধরে।
শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রমশ ভারী হচ্ছে।
ভালবাসায় কাতর দুটি ঠোট জড়িয়ে যায় একে অপরের সাথে।

সপে দেয় রাজুর জমিয়ে রাখা সবটুকু ভালবাসা ।
আবিরও উজাড় করে দেয় তার হৃদয়ের সমস্ত ভালবাসা ।
রাজুর অস্তিত্বের প্রতিটা কোষ আবির তার ভালবাসার উষ্ণ ছোঁয়ায় ভিজিয়ে দেয়।
একে দেয় ভালবাসার আল্পনা।
দুটি হৃদয় দুটি দেহ এক হয়ে যায় এই অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে।



সকালে আবিরের বুক থেকে ঘুম ভাঙে রাজুর । উঠে গোসল সেরে চা বসিয়ে আবিরকে চা দেয় রাজু।
আবির ঘুম ভেঙে রাজুর দিকে অপলক চাহনিতে তাকিয়ে থাকে ।
কত সুন্দর আমার ভালবাসার মানুষটি।
ভেজা চুলে রাজুকে দেবদূতের মত লাগছে।
আবির রাজুকে জড়িয়ে ধরে।
আবিরঃ রাজু , আমাকে কোনওদিনও ছেড়ে যাবে না তো। কেন জানিনা ভয় হচ্ছে । এতসুখ আমার কপালে সইবে তো রাজু?
রাজুঃ এসব কি বলছ আবির।
আমি তোমাকে ছেড়ে যাব মানে।
কোনদিনও রাজু তোমাকে ছেড়ে যাবেনা। মৃত্যু ছাড়া আমাকে তোমার কাছ থেকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা।

কলিং বেলের শব্দে রাজু দরজা খুলে দেয়।
হাতে একটি টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে এক ভদ্র মহিলা ভিতরে ঢুকে ।
আবিরঃ মা। তুমি।
এত সকাল সকাল।
রাজুঃ ইনি তোমার মা?
স্লামুআলাইকুম আন্টি।
ওয়ালাইকুমুস্সালাম।
তুমি নিশ্চয়ই রাজু।
রাজুঃ হ্যা আন্টি।
এদিকে এসো বাবা। তোমাকে একটু দুচোখ ভরে দেখি।
তোমার ভালবাসা পাবার জন্যই আমার ছেলেটা আজ আমার থেকে বিচ্ছিন্ন । কি আছে তোমার মধ্যে জানিনা। আবিরের বাবা শহরের সবথেকে সুন্দরী প্রভাশালী লোকদের মেয়ে আবিরকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু আবির তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে তার পাশে দেখতে চায়না।
সুখী হও তোমরা। আমার আশীর্বাদ সবসময় তোমাদের পাশে থাকবে।

রাজু আবিরের দিকে ছলছল চোখ নিয়ে তাকায়।আমাকে এত ভালবাসে একটা মানুষ। যা আমার ধারণা গন্ডির বাহিরে।

আবির নে। তুই না পায়েস পছন্দ করিস। আমি তোর জন্য বানিয়ে এনেছি।
আবির: কই দেখি দেখি। মা তুমি আবার এসব কষ্ট করে বানাতে গেলে।

আমি তো তোর কাছে থাকিনা বাবা।
তুই কি খাস না খাস? তাও জানি না।
এই এটুকুই তো করতে পারি।
আমার ছেলেটাকে তুমি দেখে রেখ বাবা।
আমার ছেলেটা এখন তোমার দায়িত্বে।
আবির তুই খেয়ে নিস। আমি এখন যাই।
আবিরের মা চলে গেল।



রিকশায় করে আবির রাজুকে নিয়ে একটি শপিং মলে ঢুকে কিছু শপিং করে বেরিয়ে আসে।
আসার পথে আবিরের বাবা ইশমাম চৌধুরী আবিরের সাথে রাজুকে দেখতে পায়।
গাড়ির গ্লাস নামিয়ে কিছুক্ষণ দেখার পর ইশমাম চৌধুরী গাড়ি চালাতে বলেন ড্রাইভারকে।

পরদিন রাজুকে কলেজের সামনে নামিয়ে আবির ভার্সিটিতে চলে যায়।
রাজুর কলেজ থেকে আবিরর ভার্সিটিতে যেতে পাঁচমিনিট সময় লাগে।
আবিরঃ রাজু কলেজ ছুটি হওয়ার পর তুমি ঠিক এখানেই দাড়িয়ে থাকবে।
আমি তোমাকে নিয়ে যাব।
ঠিক আছে।
রাজু মাথা নেড়ে সায় দেয়।

কলেজ ছুটি হওয়ার পর রাজু অপেক্ষা করতে থাকে আবিরের জন্য ।
পাঁচ মিনিটের স্থলে পনেরো মিনিট হয়ে গেল। কিন্তু আবিরের দেখা নেই।
রাজু আবিরের মোবাইলে ফোন দেয়।
আবিরঃ হ্যালো রাজু, আমি একটি কাজে আটকে গেছি।
তুমি একটু কষ্ট করে বাসায় চলে যাও প্লীজ।
রাজুঃ ঠিক আছে।
কখন ফিরবে তুমি?
আবিরঃ ঠিক বলতে পারছিনা।
তবে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ফিরে যাবো সোনা।
বাই।

রাজু ফোন রাখার পর একটি রিকশা ডেকে উঠে পড়ে।
রিকশা তার গতিতে চলছে। হঠাৎ করে পিছন থেকে একটি ট্রাক এসে রাজুর রিকশাটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। রাজু ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তার একপাশে পড়ে যায়। লোকজন জড়ো হয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যে।



ফোন পাবার পর আবির হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে ছুটে আসে।
ডাক্তারের কথা শুনার পর আবির তার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
রাজুর বাম পায়ে প্রচণ্ড আঘাতের কারণে পা টা অকেজো হয়ে গেছে। কোন কাজ করবেনা রাজুর দেহের এই অঙ্গ।
আবির রাজুর কেবিনে যাওয়ার পর আবির রাজুর পাশে বসে। রাজু আবিরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাজুঃ আবির ডাক্তার কি বলল?
আবিরঃ তেমন কিছুই না।
বলেছে তোমার পায়ে আঘাত খেয়েছ। কিছুদিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে।
রাজুঃ কেন মিথ্যে বলছ আবির। আমি জানি। আমার এই পা দিয়ে আমি আর কিছুই করতে পারবনা।
আমি যে পঙ্গু হয়ে গেলাম আবির।
বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে রাজু।

আবির রাজুকে বুকে জড়িয়ে রাখে। আর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে

হাসপাতাল থেকে রিলিজ করার পর আবির রাজুকে বাসায় নিয়ে আসে।
রাজু এখন আর আগের মতো হাটঁতে পারেনা।
একটি হুইল চেয়ারে বসে থাকা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকেনা।

রাজুকে সুপ খাওয়াচ্ছিল আবির। তখন একটি ভদ্রলোক এসে বলে যায় আবিরকে তার বাবা নিচে ডেকেছে। তার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।
আবির তার বাবার সাথে কথা বলার জন্য নিচে যায় ।কথা বলা শেষ হলে ফিরে আসে।
রাজু আবিরকে জিজ্ঞেস করে কে ডেকেছিলো।
আবিরঃ মা। আর কে আসবে? মা-ই তো আমাকে দেখতে আসে।



আবির তার ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ কয়েকদিনে রাজুর থেকে বেশি অসুস্থ মনে হচ্ছে আবীরকে। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে রাজুর সেবা ব্যস্ত রাখে নিজকে।
রাজু শুধু অঝোরে দুচোখের জল ঝরিয়ে যায় তার কিই বা করার আছে।
একজনের জীবনে এসে তার জীবনটাকে দুর্বিষহ করে তুলছে। অভিশপ্ত করে তুলছে রাজু আবিরের জীবনটাকে।
তাই রাজু সিদ্ধান্ত নিল গ্রামে ফিরে যাবে।

রাজুঃ আবির ,তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।
আবিরঃ আমারও ছিল রাজু।
রাজুঃ কি কথা ।
ঠিক আছে বলো।
আবিরঃ রাজু, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি বাবা-মার কাছে ফিরে যাবো।
বাবা-মাই সন্তানের স্বর্গ । আর আমি স্বর্গ ছেড়ে নড়কে পড়ে আছি। আমার এসব আর মোটেও ভাল লাগছেনা।
তুমি আমাকে মুক্তি দাও।

রাজু স্তব্ধ হয়ে আবিরের কথাগুলো শুনছিল। ভিতর থেকে একরাশ কষ্ট বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজু তো এটাই চেয়েছিল। তাই ভিতরটাকে পাথর করে রেখে আবিরের কথাগুলো হাসিমুখে গ্রহন করল।
আবিরের এতদিনের ভালবাসা কি তাহলে নাটক ছিল?
আবিরের চোখ তো মিথ্যে বলতনা। আবিরের শ্বাস-প্রশ্বাসে রাজু তার প্রতি আবিরের ভালবাসার প্রমাণ পেত।
আবিরের চোখের জল, তার দেওয়া সবকথা। সবকিছুই কি মিথ্যে ছিল ?সব?

রাজুই চেয়েছিল আবিরকে মুক্তি দেবে। কিন্তু এটা চায়নি। তার ভালবাসার মানুষটি তার কাছ থেকেই মুক্তি চাইবে।
রাজুর দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

রাজুঃ ঠিক আছে আবির।
আমিও চাই তুমি আমার বন্ধন থেকে মুক্ত হও। অবশ্য বন্ধন নয়। কারাগার বলতে পারি।

রাজু আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে খুজতে লাগলো।
এই সেই আবির।
কিন্তু আবির রাজুর চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলতে পারলনা কেন?
আর আবিরের চোখের কোনে জল দেখা যাচ্ছে যে।



আবির রাজুকে তার মা-বাবার হাতে দিয়ে ফিরে যায়।
রাজুর মা-বাবা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাদের একমাত্র ছেলে।
তার জীবন এরকম অন্ধকারে ছেয়ে যাবে তারা কখনোই ভাবেনি। তাদের আশার আলো ছিল একমাত্র রাজুই। আজ সেই প্রদীপটুকু নিভে যাচ্ছে।

আজ অনেকদিন হয়ে গেল।

রাজু নিজেকে যতটা সম্ভব গুছিয়ে নিয়েছে।
কিন্তু আবির কি গুছিয়ে নিয়েছে। নিবেই বা না কেন?
হয়তো কোন ধনীর দুলালীকে বিয়ে করে সুখেই আছে।

হঠাত মনে পড়ে আবিরের বাবার কথা।
আবিরের বাবা রাজুর আর আবিরের ভালবাসার একটা বাধাঁ ছিল।ৎতিনি কখনো চাইতনা আমাকে নিয়ে আবির সুখে থাকুক।

হয়তো বা ওনার নির্দেশেই ট্রাকটা তাকে ধাক্কা মেরেছিল। যার ফলে আজ রাজু পঙ্গু।
কে জানে, হয়তো বা আবির তার বাবার হুমকিতেই আমাকে তার জীবন থেকে তাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।

থাকুক না। কিছু কথা অজানা।
তবে আবির কতটা সুখে আছে রাজুকে ছাড়া তা দেখতে রাজুর বড় সাধ জাগে।
একটি গানই তখন রাজুর হৃদয়ে বেজে উঠে
"বড় সাধ জাগে,
একবার তোমায়দেখি।
কতকাল দেখিনি তোমায়,
একবার তোমায় দেখি।"

আবির সুখে থাকুক এটাই তো রাজু চাইতো। হাসিমাখা ঐ মুখটা আবিরের সারাজীবন অম্লান থাকুক। আজীবন এটাই চাইবে। হোক না , তা রাজুকে ছাড়া।
তবে কিছু প্রশ্ন এখনো রাজুকে নাড়া দেয়।
জানালা দিয়ে এখনো রাজু সদর রাস্তার দিয়ে তাকিয়ে থাকে। হারিয়ে যায় তার কৈশর জীবনে।

শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে রাজুর।
কতইনা সুন্দর ছিল।
কতইনা মধুর ছিল রাজুর অতীত।
হেসেখেলে কাটিয়ে দিত বেদনাহীন জীবন। সারাগ্রাম ঘুরে বেড়াতো। কেউ ছিলনা ভালবাসার পরম সুখ বা বিষাদময় কষ্ট দেওয়ার জন্য।
তখনই তো রাজু সুখে ছিল।
আবির তার জীবনে একটা স্মৃতিময় ভালবাসা হয়ে এসেছিল।
যা রাজুকে বাঁচতে শেখাবে।

তবে আজীবন এই প্রশ্নগুলো রয়েই যাবে।

কেন এলে আবির?
কেন এলে একমুঠো ভালবাসা নিয়ে ?...
~সমাপ্ত ~

*অন্যাভিসার* লেখক: ইফাত ইসলাম ইব্রাহিম আমি কখনোই বিশ্বাস করিনি যে ভালোবাসা বলে আদতে কিছু আছে। এই শব্দটা বরাবরই আমার কাছে...
09/07/2025

*অন্যাভিসার*
লেখক: ইফাত ইসলাম ইব্রাহিম

আমি কখনোই বিশ্বাস করিনি যে ভালোবাসা বলে আদতে কিছু আছে। এই শব্দটা বরাবরই আমার কাছে ছিল একধরনের বিলাসিতার নাম, কিশোর আবেগের ছেলেমানুষি প্রকাশ, কিংবা তার চেয়েও বেশি কিছু নয়!!একটা সামাজিক সংক্রামণ, যা কেবল দুর্বল হৃদয়কে সংবেদনশীলতার অতলে ঠেলে দেয়। আমি বলতাম, "আমি কারো প্রেমে পড়ব না।" বলতাম, " বাজে ছেলেরা ঐসব প্রেমে ট্রেমে পড়ে, যাদের জীবনে কাজের অভাব, যাদের নিজেকে গড়ার মতো কোনো জরুরি দায়িত্ব নেই।"
তাই তো নিজেকে গড়ে তুলতে জীবনে অর্ধেক সময় ব্যয় করলাম।
কিন্তু মানুষের বোধ আর অবচেতনের পরতগুলো অনেক বেশি দুর্বোধ্য, অনেক বেশি পরস্পরবিরোধী। কবে যেন অচেনা কারো লেখার ভেতর দিয়ে এক অদ্ভুত আলো প্রবেশ করেছিল আমার জীবনে। সে আলো কোনো প্রকট সূর্যকিরণ ছিল না, বরং সন্ধ্যার নরম, ক্ষীণ, প্রায় দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকা আলো, যেটা সরাসরি দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায় প্রতিটি নিঃশ্বাসের ফাঁকে। তার শব্দের গঠন, তার বাক্য নির্মাণ, তার চিন্তার নীলিমা আমাকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। অজান্তেই তাকে আমি আমার অনুভূতির প্রাঙ্গণে প্রবেশাধিকার দিয়ে ফেলেছি।প্রথমে অনিচ্ছায়, পরে অস্ফুট মুগ্ধতায়, এবং সবশেষে, পরম আদর ও গোপন অভিমানে।

অথচ, তার দিক থেকে কোনো স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া কখনোই আসেনি। যেন সে স্বচ্ছ এক কাচের আড়াল থেকে আমাকে দেখেছে, চিনেছে, কিন্তু ছুঁয়েছে??নাহ!! কখনোই না। আমি তবু লিখেছি তাকে। মেসেজ পাঠিয়েছি। কখনো কোনো শ্লীল বিনয়ে, কখনো অভিমানের সূক্ষ্ম বিষণ্নতায়। সে পড়েছে, নিশ্চয়ই পড়েছে। মাঝে মাঝে উত্তরও দিয়েছে। তবে সে উত্তরের মধ্যে যে উত্তাপ আমি খুঁজেছি, তা কখনোই ছিল না। তবু, দেরিতে হলেও রিপ্লাই এসেছে, আর আমি নির্বোধের মতো তাতেই নিজেকে প্রবোধ দিয়েছি,“রিপ্লাই তো দিয়েছে। আমার কথা সে পড়েছে তো।” এই ‘তো’-র উপর কত শত রাত জেগে থেকেছি আমি, সে জানে না।তবুও বেশ খুশি হতাম আমি তার মেসেজের উত্তর পেয়ে।

আমি তাকে একবারও বলিনি, "তোমাকে ভালোবাসি।" এমনকি নিজের কাছেও বলিনি, কারণ ওই স্বীকারোক্তি আমাকে ভীত করতো। কিন্তু আমি অনুভব করেছি তার লেখা পড়ে, তার নিরাসক্ত উত্তর পেয়ে, তার অনুপস্থিতিতেও সে আমার ভেতর এমন এক প্রগাঢ় প্রতিধ্বনি তোলে, যা আমি কখনো কল্পনাও করিনি অনুভব করবো। অদ্ভুত এক ভালো লাগা জন্মেছিল আমার ভেতর, তার জন্যে। হয়তো সে জানে না?? জানলেও অবজ্ঞা করেছে।

এই অনুভব, যা আজীবন অস্বীকার করেছি, তা-ই আমাকে আজ শাস্তি দিচ্ছে নিজের ভেতরেই। সে আজ ধমক দিয়ে কথা বলেছে। বুঝতে পারেনি আমার মৌন অভিমানকে, যা আমি শব্দে ব্যক্ত করতে সাহস পাইনি। তার ওই ধমকের পর আমার চোখের কোণ বেয়ে ঝরে পড়ে একটুকরো জল। খুব সামান্য, কিন্তু এতটাই বাস্তব, যে নিজের ভেতর নিজেই চমকে উঠলাম যে আমি কাঁদছি? কেন? একজন অপরিচিত মানুষের জন্য? যে আমাকে ভালোবাসে না? যে আমাকে চেনেও না পাঠক ছাড়া? হ্যাঁ আমি তো শুধুমাত্র পাঠক। হুম সেটাই হবে।

এই প্রশ্নগুলো আমাকে আজ পুড়িয়ে মারছে। আমি নিজের চিন্তার গলিপথে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থমকে যাই। কী এমন আছে তার লেখায়, তার চোখে, তার অবজ্ঞার ঠান্ডা শীতলতায়, যে আমি বারবার ফিরি? আমার মন বলে, সে হয়তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। আর আমি? আমি হয়তো শুধুই তার শত পাঠকের ভিড়ে এক ক্ষুদ্র নামবিহীন অস্তিত্ব। অথচ তাকেই আমি নিজের ভাবনার রাজ্যে রাজাসম আসন দিয়েছি।

ভালোবাসা বড়ই আজব। এটি যেমন আকর্ষণ করে, তেমনই অপমান করে। যেমন কাছে ডাকে, তেমনই পর করে ফেলে। আমি যদি কোনো এক দুর্বল মুহূর্তে তাকে ভালোবেসে ফেলি, সে হয়তো তা জানবে না। জানলেও ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু আমি কী করে বোঝাই এই মনের দখলদারি তার হাতে তুলে দিতে গিয়ে আমি নিজেই নিজের ভিতর থেকে ফুরিয়ে গেছি?

তবুও বলি,ভালো থাকুক ভালোবাসা। থাকুক সে দূরে, অলক্ষ্যে, অননুমতিপ্রাপ্ত এক অনুভব হয়ে। আমি না হয় দূর থেকে এই অনুভূতির জ্বালায় জ্বলতে থাকলাম। আমার খারাপ লাগুক, চোখ ভিজুক, হৃদয় চুপ করে বসে থাকুক কোনো বৃষ্টিভেজা জানালার পাশে। আমি না হয় খারাপই থাকলাম।কারণ কোনো কোনো ভালোবাসা বোঝার জন্য নয়, কেবল একতরফা নিবেদনের স্তবক হয়ে থেকে যায় কোনো এক নিভৃত করুণার ঘ্রাণ নিয়ে। ভালোবাসার তাতে কীই বা এসে যায়? সে তো নিজের মতো করেই অলঙ্ঘনীয়, অপরিবর্তনীয়, এবং, শেষ পর্যন্ত, অব্যক্ত।

তবুও দিন ফুরোয় না। মন ভুলতে চায় না। কাঁধের উপরে পড়ে থাকে সেই অনুচ্চারিত ভালোবাসার ভার, যা আমি নিজেই নিজের ওপর চাপিয়ে নিয়েছি। কেউ আমায় বাধ্য করেনি, কেউ কোনো ইঙ্গিতও দেয়নি। তবু কেন যেন এই ভার ফেলে দিতে পারি না। প্রতিবার তার ঠান্ডা উত্তর পাওয়ার পর নিজেকে বলি—“এটাই তো স্বাভাবিক। সে তো আমাকে ভালোবাসেনি, কখনোই না। আমি কে তার জীবনে?” কিন্তু এই যুক্তির থরে থরে সাজানো আত্মপ্রবঞ্চনার পাহাড় মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে, যখন সে হঠাৎ কোনো দিন একটা লাইন লিখে—“হুম।” ব্যস, সেই একটুকরো দয়ার শব্দ নিয়েই আমি আবার গড়ে তুলি এক অনর্থক প্রাসাদ। শুধু "হুম" দ্বারাও যে মানুষ নামক আজব জীব এতো খুশি হতে পারে আমাকে না দেখলে কেউ তা টের ও পাবে না। আমার গড়ে তোলা অনর্থক প্রসাদ যেটা জানি ভেঙে পড়বে, তবু গড়ে তুলি।ভালো লাগে মিথ্যে আশা বুনতে।

তাকে হারানোর ভয় নেই, কারণ সে কোনোদিন আমার ছিল না। বরং ছিল না বলেই, তার হারিয়ে যাওয়া আমার চেতনায় এত প্রবলভাবে দাগ কেটে যায়। সে প্রতিদিন হারায়, প্রতিদিন ফিরে আসে।কখনো এক লাইনে, কখনো এক পোস্টে, কখনো এক নিঃশব্দ ঘরে, যেখানে আমি একা বসে থাকি তার নামটি উচ্চারণ না করেও বারবার তার উপস্থিতিকে অনুভব করি।

সে কি অন্য কাউকে ভালোবাসে?যদি সত্যিই ভালোবাসে!! হুম হয়তো ভালোবাসে।তবুও কেন এ কথা আমার মন বিশ্বাস করে নিতে চায় না? আমি এই প্রত্যয়বিহীন আকাঙ্ক্ষাকে বুকে আগলে বসে আছি।যেন কোনো শীতার্ত মানুষ নিঃসঙ্গ আগুনের পাশে বসে থেকেও জানে, আগুন তাকে উষ্ণতা দেবে না, তবুও সে আগুনটাকেই নিজের সর্বশেষ আশ্রয় ভাবে।

তার ধমক আমার হৃদয়ে যে রেখা কেটে দেয়, সেটি আর কারো বলা ‘ভালোবাসি’ শব্দ দিয়েও মুছে ফেলা যাবে না। সে চাইলেও না, আমিও না। কী আজব সমীকরণ! সে আমার কিছুই নয়, অথচ তার প্রতিটি শব্দ আমার হৃদয়ের ভূমিকম্পের মতো কাঁপন তোলে। সে জানেও না, আমি কতবার তার নাম মনে মনে উচ্চারণ করে ঘুমিয়েছি, কতবার তার ইনবক্সের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি, কতবার নিজেকে বোঝাতে চেয়েছি—“থেমে যা।” কিন্তু থামিনি।

,,,,,,কেন?

কারণ ভালোবাসা যখন আসে, তা তো যুক্তির দরজায় কড়া নেড়ে আসে না। আসে দরজা ভেঙে, ছাদ ফুঁড়ে, জানালা দিয়ে ধেয়ে আসে প্রবল বৃষ্টির মতো। আমি জানতাম না সে আসবে। আমি তো বরাবরই প্রেমকে অপমান করেছি, ভালোবাসার গালগল্পকে অবজ্ঞা করেছি, তাদের দূর্বলতা জ্ঞান মনে করে মুখ ফিরিয়ে থেকেছি। অথচ আজ, সেই আমি একজন অনুভবশূন্য আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি ,একজন নীরব, নির্মম, দূরত্বে থাকা মানুষের অভিমানে চুপচাপ চোখের জল ফেলি।

আজকাল তার কথাগুলোও কেমন ঠান্ডা লাগে। আগের মতো উষ্ণ নয়। হয়তো সে বুঝে গেছে আমার কিছু!হয়তো অস্বস্তি বোধ করে! হয়তো বিরক্ত হয়! অথবা, হয়তো কিচ্ছু বোঝেনি, কিচ্ছু টের পায় না,,,,,ঠিক যেমন অন্ধ কেউ কখনো সূর্যের আলো স্পর্শ করেও বুঝতে পারে না, সে আলো স্পর্শ করছে। আমি কিছু বলিও না। বলব কীভাবে? কোনো দাবির অধিকার তো আমার নেই। এমনকি অভিমানেরও নয়। তবু অভিমান করি,,,নিভৃত এক মঞ্চে, একক অভিনয়ে, যেখানে দর্শক নেই, আলো নেই, শুধু আমার নিঃশব্দ কণ্ঠস্বরে একের পর এক সংলাপ উচ্চারিত হয় তারই উদ্দেশ্যে, কিন্তু আজব কি জানো?সে কখনো সেই মঞ্চে উপস্থিত হবে না।

ভালোবাসা বড়ই অদ্ভুত। একতরফা হলে সেটা যেন আরও প্রকট হয়। কারণ তখন তা প্রশ্নহীন, নিঃশর্ত, অপরিকল্পিত। আমি না হয় সেই অন্ধ ভালোবাসার দায় নিয়েই বেঁচে থাকি। তাকে চাওয়ার চেয়ে তার কথা মনে রেখে, তার জন্য শোক করা যেন বেশি আপন হয়ে উঠেছে। ভালোবাসার তাতে কী এসে যায়? সে তো আসেনি, তবুও আমায় বদলে দিয়ে গেছে।

আমি ধীরে ধীরে নিজের ভেতরেই গুটিয়ে যাচ্ছি। নিজের শব্দ, নিজের চিন্তা, নিজের রাতের নিঃশব্দতা।সব কেমন করে যেন তার সাথে জড়িয়ে গেছে। তার ধমক দিয়ে লেখা মেসেজ পড়ে আজ প্রচুর কেঁদেছি, চুপচাপ তার ইনবক্স থেকে বেড়িয়ে এসেছি।নাহ! সেখানে আমার কাজ নেই।যদিও জানি, আমি জাস্ট ছিলাম এক পাঠক। শুধু পাঠক।তার থেকে বেশি কিছু না।

তবুও বলি, ভালো থাকুক সে। তার হাসি ঝলমল করুক অন্য কারো জীবনে। আর আমি? আমি তো তার ছায়া হিসেবেই ভালো ছিলাম। ছায়া কখনো আলো হয় না, তবু আলো ছাড়া ছায়াও হয় না। হয়তো আমার অস্তিত্ব শুধুই এই ছায়া হবার জন্য ছিল। ভালোবাসা তাতে থেমে যায় না, বদলায় না।শুধু নিঃশব্দ হয়ে যায়। যেমন আমি হয়ে যাচ্ছি।
প্রেমে আলো, লোভে ছায়া, হিংসায় খুঁইয়ে যাও মায়া,
মিথ্যে আশায় বাঁধো নৌকা, তবু ডুবে যাও চুপচাপ কায়া।
সবশেষে তুমি খুঁজো দোষ, আর নিজেকেই করো বিসর্জন,
কারণ, ছলনায় নয়, নিজের মনেই হয় সর্বনাশের সঞ্চারন।

***অসমাপ্ত******

‎গল্প হলেও সত্যি ‎লেখা: মেঘকুমার‎উৎসর্গ: লেখাটা আমার কল্পনাপ্রসূত নয়। আমাদের মাঝেই থাকা একজনের জীবনের চরম বাস্তব। গল্পে...
08/07/2025

‎গল্প হলেও সত্যি
‎লেখা: মেঘকুমার
‎উৎসর্গ: লেখাটা আমার কল্পনাপ্রসূত নয়। আমাদের মাঝেই থাকা একজনের জীবনের চরম বাস্তব। গল্পের নামগুলো কেবল পাল্টে দিয়েছি। তার অনুরোধেই লেখা। পুরো গল্পটা সেই মানুষটাকেই উৎসর্গ করলাম।

‎পার্থর বয়স তখন কতই আর হবে? এই খুব বেশি হলে সাত কি আট। একটা ছোট্ট বীজ যেভাবে ধরিত্রীর মাতৃক্রোড়ে পরম যত্নে নিজের শাখা প্রশাখা বিস্তার করে বৃক্ষে রূপান্তরিত হয়, বাবা-মায়ের স্নেহ ছায়ায় পার্থর মনের ডালপালা গুলোও বিকশিত হচ্ছিল ঠিক একই ভাবে। আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতোই তার জীবন ছিল সর্ষে ফুলের মতো উজ্জ্বল হলুদ আলোতে ভরা। স্কুল যেতে তার ভালোলাগতো, বন্ধুবান্ধবদের সাথে খেলতে ভালো লাগতো, আর সবশেষে সে অপেক্ষায় থাকতো, কখন ছুটি হলে মায়ের কোলে মুখ গুঁজে আবার আদর খেতে পারবে। তার আট বছরের এই ছোট্ট জীবনে দুঃখ নামক শব্দটা খুব কৌশলে ও নিপুণ হস্তে মুছে দিয়েছিল কেউ। কিন্তু অদৃষ্টের বোধহয় তাকে নিয়ে অন্য কোনো পরিকল্পনা ছিল। তাই এই কটা দিনের সুখের মাশুল তাকে গুনতে হয়েছে বছরের পর বছর।

‎প্রত্যেকদিনের মতোই একটা রোদ ঝলমলে সকাল। সূর্য তখন গাছে গাছে আলো ছড়াচ্ছে। পাখিরা কলরব থামিয়ে উড়ে গেছে খাবারের খোঁজে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো পার্থর। বিছানার উল্টো দিকে বড় ঘড়িতে তখন সময় দেখাচ্ছে সকাল আটটা বেজে দশ মিনিট। মাত্র কিছুদিন হলো সে বাবার কাছে ঘড়ি দেখতে শিখেছে। নিয়মিত ভোর ছটায় সে উঠে পড়ে স্কুল যাওয়ার জন্য। আজ সোমবার। ছুটির দিন নয়। অর্থাৎ মা তাকে ডাকতে আসেনি। মনে মনে সে খুব মজা পেলো। মা-ও ঘুমাচ্ছে ভেবে সে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল পাশের ঘরে। চোখের সামনে ভেসে উঠল এক নতুন দৃশ্য, যা এ পর্যন্ত সে কখনও দেখেনি। সারা ঘর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে জিনিসপত্র। যেন একটু আগেই কালবৈশাখী ঝড় এসে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে সবকিছু। একদম মধ্যিখানে মা বসে আছে, পাথরের মতো...নিশ্চল, আলুথালু। তারপর বেশ কিছুদিনের মধ্যে এগুলো গা সওয়া হয়ে এলো পার্থর কাছে। সে বুঝল ঝড় আসলে সেদিন কোথা দিয়ে বয়ে গেছে। এরপর হঠাৎ একদিন সে আবিষ্কার করলো বাবা নামক পরম ভরসার হাতটা ফুড়ুৎ করে সরে পড়েছে মাথার ওপর থেকে। বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা আদর্শ পরিবারটা আজ হঠাৎ করেই অসম্পূর্ণ।

‎দিন কেটে যায়, বছরও। বাড়ির পাশের মজা পুকুরের কচুরিপানা বেড়ে ওঠে, বাড়ির পেছনের আমগাছে কচি আম ধরে, আবার ঝরে যায়। পার্থ ধীরে ধীরে বড় হয়। হৃদয়ের ক্ষত গুলোতে প্রলেপ পড়তে সময় লাগে ঠিক পাক্কা দুটো বছর। পার্থ গুনেছে, বাবা চলে যাওয়ার ঠিক দুই বছর পরেই 'বাবা' নামক আরেকটা নতুন মানুষ নিয়ে হাজির হয়েছে মা। পুরাতন ত্রিভুজের সমস্ত দিক আবার অনেকদিন পর নতুন ভাবে জোড়া লেগেছে। তবু পার্থর মনে সুখ নেই। সুখ যে কেন নেই সে বুঝতে পারে না। আচ্ছা মা এত ভালো আছে কি করে? মাঝে মাঝে তার মনে প্রশ্ন জাগে, তবে কি বাবার প্রতি একটুও ভালোবাসা মায়ের ছিল না! দিন যায়, বছর যায়...পার্থর মনের দুঃখ গুলো আস্তে আস্তে রূপান্তরিত হয় ঘৃণায়। প্রতিদিন রাত গভীর হলে নিষ্ফল আক্রোশে ছটফট করতে থাকে সে। কিছু একটা করতে হবে, এত বিষ চারিদিকে, এই বিষ নিয়ে সে বাঁচবে কেমন করে? মুহূর্তেই তার মাথায় চিন্তাটা পাক দেয়। ড্রয়ার থেকে নতুন ব্লেডটা বের করে চালিয়ে দেয় হাতের ওপর। গা শিরশির করা একটা শব্দ ওঠে। জানলা দিয়ে ভেসে আসা নরম চাঁদের আলোটা একটু নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে, যেন ভয় পেয়ে মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়েছে। একটা লাল গাঢ় তরল পার্থের হাত বেয়ে টুপটাপ ঝরে পড়তে থাকে মেঝেতে। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ঘন অন্ধকার এসে বুকে আগলে নেয় তাকে।

‎গভীর এক অন্ধকারের মহাসমুদ্রে হাতড়ে বেড়াচ্ছিল পার্থ। চারিদিকে ঘন অন্ধকার ছাড়া আর কিচ্ছু নেই, যেন তমশার নির্জন রাজ্যের সে একাকী, নিঃসঙ্গ বাসিন্দা। এরকম করে কত কাল বুঝি কেটে গেল, সময়ের গুনতি হারিয়ে ফেললো সে। তারপর যেন এক ছোট্ট আলোর বিন্দু ক্রমশ বড়ো হতে হতে পুরো অন্ধকারটাকে গ্রাস করে নিল। অতর্কিতে চোখ খুলেই পার্থ কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। তারপর ধীরে ধীরে তার সমস্তটা মনে পড়ল। মাথায় একটা আলতো স্নেহস্পর্শে সে চোখ তুলে দেখলো ছোটমামা দাঁড়িয়ে আছেন, মামা তার মাথায় হাত রেখে বললেন, "তুই এবার সেরে উঠলে আমার সঙ্গে গ্রামে চলে আয় পার্থ। সব ঠিক হয়ে যাবে।"
‎পার্থ কিছু বললো না। পাশে মা বসে আছে, চোখে জল। হয়তো এই প্রথম মায়ের সেই চিরচেনা মুখটা সে এমন করে দেখল। মায়ের মুখটা ক্লান্ত, ভেঙে পড়েছে, তবু কোথাও গিয়ে যেন ভালোবাসার একটা ছোঁয়া রয়েছে তাতে। সে চোখ বুজলো। অবশেষে সেই দমবন্ধ করা পরিবেশ থেকে ছুটি হয়েছে তার।
‎____________

‎শহরের কোলাহল পেরিয়ে, রেলগাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে একদিন ছোটমামার হাত ধরে পার্থ এসে পৌঁছাল গ্রামে। চারদিকে ধানক্ষেত। দুপুরে কদমগাছের ছায়া এসে পড়ে পুকুরঘাটে, সাঁঝবেলায় মাটির রাস্তায় গরুর গাড়ি ঘরে ফেরে কাদামাটি মেখে। ছোট মামা মানুষটি নিষ্ঠাবান, নীতিপরায়ণ। মাঝে মাঝেই পার্থকে বলতেন, "তোকে পড়াশোনার দিকে মন দিতে হবে। মানুষকে শক্ত হতে হয় বুঝেছিস।"

‎প্রথম প্রথম পার্থর ভালোই লাগত। সকালবেলা মাঠে হাঁটতে যাওয়া, ছুটির দিনে দুপুরে জানলা গলে বিছানায় এসে পড়া আমগাছের ছায়ায় বসে বই পড়া, আর সন্ধে নামলেই সমস্ত আলো নিভিয়ে কেরোসিনের বাতি উস্কে দিয়ে গম্ভীর মুখে মামার ছেলেবেলার গল্প শোনা। এগুলো একরকম শান্তির মতো এসে বসেছিল ওর জীবনে। কিন্তু ওই শান্তির গায়েও ছিল কঠোরতার এক অদৃশ্য বেড়াজাল। মামা ওর ফোন চুপিচুপি খুলে দেখতেন। নতুন কারো সঙ্গে বেশি কথা বললে মুখ ভার করে রাখতেন। তাঁর চোখে ঝিলিক দিত কেমন এক আশঙ্কার রেখা। পার্থর বোধ হতো, যেন সে একটা পিঞ্জরের ভিতর, বাইরে তাকালে আলো দেখা যায় বটে, তবু বাতাস ছুঁয়ে দেখার অধিকার তার নেই। ক্রমে ক্রমে তার বুকের ভিতর জমে উঠতো কথা। অনেকটা বর্ষার জল যেমন আটকে থাকে মাঠের মধ্যে, বৃষ্টি থেমে গেলেও আর শুকায় না, তেমন। রাতে শুয়ে শুয়ে জানলার ফাঁক দিয়ে সে তারা গুনতো। কখনও কখনও একটা পেঁচা ডেকে উঠতো দূরে। সে বুঝতো এই পৃথিবীতে কেউ নেই, যার সামনে সে নিজের সমস্ত কথা নিঃশব্দে খুলে ধরতে পারে।

‎গ্রামে এসে নতুন স্কুলে পার্থর একটাই মাত্র বন্ধু হয়েছিল, বকুল। বকুল ফুলের মতোই মিষ্টি একটা মেয়ে। ক্লাসে তারা পাশাপাশি বসতো। খাতার পাতায় নিজের নামের পাশে বকুলের নামের অক্ষরের আঁকিবুঁকি, টিফিনে দুজনের ভাগ করে খাওয়ার সেই ছোট ছোট মুহূর্তে কী এক অদ্ভুত মাদকতা ছিল।

‎পৃথিবীতে যেভাবে ঋতুচক্রের পরিবর্তন হয়, সেভাবেই সেই সম্পর্ক একদিন চুপিসাড়ে হারিয়ে গেল। কোন ঝড় উঠল না, শব্দের ফোয়ারা ছুটলো না, দুটো মানুষ কথায় কথায় নিজেদের বিদ্ধ করলো না। কেবল দেখা গেল বকুল আর আগের মতো পার্থর কাছে আসে না। পরে জানাজানি হল, বকুল ফুল তার সুমিষ্ট গন্ধ ছড়িয়েছে অন্য কোনো বনে। সেই খবরটা পার্থর ভেতর পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিল। একটা ভার যেন বুকের ওপর জমে উঠল। বিশ্বাস ভাঙার যন্ত্রণা, একটা চাপা কষ্ট, এই সব মিলিয়ে সে অনুভব করল ভালোবাসা আসলে বড় ভয়ানক। কারো সঙ্গে মনের কথা ভাগ করে নেওয়া মানে নিজেকে ক্ষতের দিকে ঠেলে দেওয়া। এইসব ভাবনা তাকে টেনে নিয়ে এলো এক নিঃসঙ্গ গহ্বরে। একদিন সন্ধ্যার পর ঘরের সব আলো নিভিয়ে, দরজা বন্ধ করে বসে থাকল সে। মনে হল, এই যন্ত্রণার কোনও শেষ নেই। বাড়িতে ইঁদুর মারার বিষ একটুখানি পড়ে ছিল। সেটাই গলায় ঢেলে দিলো সে। কিন্তু পেটের সামান্য গোলমাল ছাড়া সে যাত্রায়ও মৃত্যু তার কপালে জোটেনি। পার্থ বেঁচে গেল, আর সেই সঙ্গে রয়ে গেল ভিতরের এক গাঢ় ক্ষত।

‎তার কিছুদিন পর আবার এক রাত। চারদিক নিস্তব্ধ, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। পার্থ চুপিচুপি উঠে দাঁড়াল, একটা দড়ি হাতে নিয়ে ঘরের এক কোণে চেয়ার টেনে নিল। তারপর সেটা গলায় পরিয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলো বহুক্ষণ। ফাঁস লাগানো দড়িটা প্রতি মুহূর্তে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ছুঁড়ে দিতে লাগলো তার দিকে। মৃত্যুও যেন তার কাছে আসতে চায় না, জীবন তাকে বারবার ফিরিয়ে দেয় সেই একঘেয়ে অন্ধকারে। এইভাবে থেকে থেকে পার্থর ভিতরটা শুকিয়ে যেতে থাকলো। সে কথা বলে, হাঁটে, খায়, নিঃশ্বাস নেয়, কিন্তু সেই প্রাণশক্তিটা কোথাও যেন আর নেই। মৃত হৃদয়ের ওপর একটা জীবিত শরীরের আবরণ মাত্র।

‎পার্থর ডাক্তার হওয়ার বড় স্বপ্ন ছিল। ছোটবেলা থেকেই সে মানুষের দুঃখ-কষ্টে সামিল হত, অসুখী কাউকে দেখলে চুপ করে থাকত না। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার যখন ফল এলো, তার নাম সেখানে নেই। তার সমস্ত পৃথিবী যেন হঠাৎ দুলে উঠলো। পার্থ বুঝলো বকুল তো গেছেই, সাথে নিংড়ে নিয়ে গেছে তার মেধা, পরিশ্রম আর লড়াই করবার ক্ষমতা। এক সময় সে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে চাইল। কিন্তু মায়ের এক কথায় আবার মন শক্ত করল। মা বলেছিল, "মানুষ সব সময় নিজের মতো করে জেতে না বাবা। কিছু হার মেনে নিয়ে সামনে এগোতে হয়। তখন সবে তোর তিনমাস বয়স। তোর বাবা নিজে হাতে তোকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। আমি তার পায়ে ধরা, ভিক্ষা চাওয়া কোনকিছুই বাদ রাখিনি। আজ তুই এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস। আমাদের সবার নিজস্ব অনেক লড়াই থাকে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কেবল লড়ে যেতে হয়।"

‎পার্থ নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারে না। এত দিন নিজের সবথেকে কাছের মানুষটাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল সে। একটা জঘন্য মানুষের জন্য নিজের মাকে দোষারোপ করেছিল। আর না, তাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। এইভাবেই সে নার্সিংয়ে ভর্তি হলো।
‎____________

‎দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। বই, ক্লাস, হাসপাতালের ওয়ার্ড, সব কিছুতেই সে মন দিত, কিন্তু ভেতরের কোথাও একটা ফাঁক রয়ে যেত। পুরোনো স্বপ্ন, হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক বারংবার তার এই নতুন করে গড়ে তোলা জীবনকে তছনছ করে দিতে চাইতো। ঠিক সেই সময় ফেসবুকে এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় এই কমিউনিটির সঙ্গে। প্রথমটায় সে খুব ভয় পেয়েছিল। ধীরে ধীরে পার্থ বুঝতে পারছিল মেয়েদের প্রতি ঘৃণার এক তীব্র বীজ রোপিত হয়েছে তার মননে। বকুলকে আঁকড়ে ধরে সে যে শান্তি পেতে চেয়েছিল, হঠাৎ বুঝলো বকুল হয়তো তাকে কোনোদিনই সেই অমৃত সুধার সন্ধান দিতে পারতো না। মনের ভেতর তার একটাই চিন্তা ঘুরপাক খায় সারাদিন, "এই জীবন কি আমার মতো ছেলেদের জন্য?"
‎কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝতে শিখল, ভালোবাসা যেমন বাঁধা যায় না, তেমনই নিজের পরিচয়ও লুকিয়ে রাখা যায় না কখনোই।

‎এক বন্ধু বলেছিল, "তুই যেমন, তেমনটাই থাক। কাউকে কিছু প্রমাণ করার দরকার নেই।"
‎সেই কথাটাই যেন চুপচাপ পার্থর মনের মধ্যে আলো জ্বেলে দিল। সে বুঝে গেল, তার যে ভালোবাসার রঙ, সেটাও প্রকৃতিরই আর এক বৈচিত্র্য। প্রথম ভালোবাসা এলো সৃজন নামের এক বন্ধুর হাত ধরে। রাত জেগে ফোনে কথা, একসঙ্গে সিনেমা দেখা, রাস্তায় হাঁটা, পার্থর মনে হচ্ছিল, সে বুঝি একটা নতুন পৃথিবী খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু সেই পৃথিবীও বেশিদিন রইল না। সৃজন একদিন হঠাৎ দূরে সরে গেল, কোনও ব্যাখ্যা না দিয়েই।

‎তারপর এলো সাজিদ। সাজিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব থেকে ঘনিষ্ঠতা। কিন্তু ধীরে ধীরে পার্থ বুঝতে পারলো, ভালোবাসার নামে সে শুধু ব্যবহার হচ্ছে। প্রেম তার বাঁধা পড়েছে টাকা, উপহার আর পার্থিব লোভের ঘেরাটোপে। যেখানে নিজের সবটা উৎসর্গ করে তার প্রাপ্য ছিল কেবল অপমান আর লাঞ্ছনা।

‎পার্থ আবার একা হয়ে পড়ল। নিজেকে প্রশ্ন করল, "ভালোবাসি বলে কি এত বড় শাস্তি পেতে হয়?"
‎২০১৯ সালের কথা। সে তখন ফেসবুকে নিয়মিত কিছু লেখকের লেখা পড়ে। একদিন একটি গল্পে সে মন্তব্য করল। লেখকের নাম ছিল পিয়াস।
‎পরে পরিচয় হলো ঋদ্ধির সঙ্গে। ঋদ্ধির লেখায় ছিল একধরনের হৃদয় খননকারী আবেগ, যে আবেগ পার্থকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যেত। ধীরে ধীরে কথা বাড়তে লাগল ঋদ্ধির সাথে। সম্পর্ক তৈরি হলো হৃদয়ের অলক্ষ্য ধাপে ধাপে। ২০২৩ সালে সেই সম্পর্ক রূপ পেল ভালোবাসায়। পার্থ একদিন লিখেছিল, "তোমার লেখাগুলো পড়লে মনে হয় যেন তার প্রতিটা ছত্রে ছত্রে আমি লুকিয়ে আছি। যেটা আমি নিজেও বুঝি না, সেটাও তুমি বুঝে ফেলো।"
‎ঋদ্ধি উত্তর দিয়েছিল, "তুমিই আমার গল্পের একমাত্র বাস্তব চরিত্র। তোমাকে ছাড়া আমার সমস্ত গল্পই যে অর্থহীন!"

‎দুজনেই এক অপরের থেকে দূরে ছিল। তবু দূরত্ব মুছেছিল তাদের অনুভবে। ভিডিও কলে দেখা, রাতভর কথা বলা, অভিমানের মিষ্টি খুনশুটি, সব মিলিয়ে দশটা মাস কেটে গেল এক নিঃশব্দ ভালোবাসায়। তারপর চিকিৎসার জন্য পার্থকে যেতে হলো ভারতে, হরমোন ও স্পাইনাল কর্ডে গোলযোগ ধরা পড়ল তার।

‎ভারতে ছিলেন বড় ও মেজো মামা। তারা পার্থর এই আলাদা পরিচয় কিভাবে যেন জেনে ফেললেন। তারা কিছুতেই সেটা মানতে পারেননি। এক রাতে ঘরে আটকে তারা পার্থকে নির্মমভাবে মারধর করলেন। লাঠি, বেল্ট, সবকিছু ব্যবহার করে যেন তার শরীর থেকে আত্মাটাকে পৃথক করে দিতে চাইলেন। অবশেষে ঋদ্ধিকে ফোন করে হুমকি দিলেন, "পার্থকে ছেড়ে দে। নিজে তো জাহান্নামে যাবিই, সাথে ওকেও নিতে চাইছিস? দরকার হলে ওকে আমরা মেরে ফেলব, তবু তোর হাতে তুলে দেবো না।"

‎তারা পিয়াসকেও অপমান করলেন। বললেন, "এই ছেলেটা একটা কলঙ্ক, ওর সমাজে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। ওই সবাইকে এই নোংরা রাস্তায় টেনে এনেছে।"
‎পার্থ সেই রাতে জ্ঞান হারালো। হাসপাতালে ভর্তি হলো। পিঠের হাড় ভেঙে গেল। দুই মাস হাসপাতালে পড়েছিল সে। সেই সময় মা আর ছোটমামাকে একটাবার দেখার জন্য তার মন পুড়ে যেত। মামারা সবাইকে রটিয়ে বেড়ালেন, পার্থ চরিত্রহীন, প্রতারক, এমনকি সে মৃত!

‎অবশেষে বাংলাদেশ ফিরে পার্থ দেখল, সব বদলে গেছে। যাদের বন্ধু ভেবেছিল, তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যারা একসময় সম্মান করত, তারাও এখন পরিহাস করে। ঋদ্ধি আর বিশ্বাস করছে না। পিয়াস কথা বলছে না। পার্থ ভাবল, সে তো শুধু নিজের পরিচয় খুঁজে পেতে চেয়েছিলো। এটাই কি এত বড় দোষ? চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও সে বেঁচে গেল। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য নিজেকেই যেন ক্ষমা করতে পারছিল না।

‎তবু সবকিছু ছাপিয়ে একজন বন্ধু হয়ে থেকেছে সবসময়, ছোটমামা। সংসারে যারা আপন, তাদের অনেকেই সময়ের সঙ্গে বদলে যায়, দূরে সরে যায়, কিন্তু ছোটমামা ছিলেন এক আশ্রয়। কোনওদিন তিনি মুখ ফুটে কিছু বলেননি, শুধু পার্থর ছায়া হয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আছেন। পার্থ বুঝতে পারেনি, ছোটমামা তার জীবনে বাবার জায়গাটা কখন নিঃশব্দে নিয়ে নিয়েছেন। অথচ কোথাও কোনও জোর নেই, কোনও দাবি নেই। ছোটমামার কাঁধে হাত রেখে পার্থ আবার উঠে দাঁড়িয়েছে, কেঁদে উঠে ভরসা পেয়েছে, নিজের ভেতরের ঝড়টাকে সামলে নিয়েছে সহজভাবে।

‎এখনও সেইসব পুরোনো দিনের কথা মনে পড়লে পার্থর বুকের ভিতর কেমন একটা কৃতজ্ঞতা জমে ওঠে। আজও কখনও কখনও, কোনও এক নিঃশব্দ দুপুরে অথবা রাত্রি নামার ঠিক আগে, তার মনে হয়, বেঁচে থাকা মানে শুধুই যন্ত্রণা নয়। মানুষ ভালোবাসতে পারে আবার। হয়তো কোথাও কেউ এখনো তার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে। হয়তো কোনও এক অলক্ষ্যে ভালোবাসা আবার ফিরে আসবে, পলক ফেলে সে দরজায় কড়া নাড়বে। পার্থ আজও স্বপ্ন দেখে। রোজকার কষ্টের মধ্যেও সে জানে, জীবনের অন্ধকার কোনো এক বাঁকের শেষে আলোর রেখা ঠিক ভেসে উঠবে। আবার ভালোবাসা এসে ছুঁয়ে দেবে, কোনো একদিন!

‎(সমাপ্ত)

Address

Rajpur
700064

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অন্য-পুরুষের গল্প posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category