05/09/2025
*হযরত মুহাম্মদ(সঃ) বিশ্বের অনন্য শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব:*
⭕ আরবী ভাষায় "আইয়ামে জাহেলিয়াহ" যা বাংলায় বললে 'অন্ধকার যুগ বা অজ্ঞতার যুগ'। একটু অন্যভাবে বললে, "আইয়্যামে জাহিলিয়া" বলতে বোঝায় মূর্খ লোকদের শাসনকালের সময়কে, যখন সামান্য কারণে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ লেগে যেত।ক্ষমতাশালীরা ইচ্ছেমত দূর্বলদেরকে শোষণ পীড়ন করত, কোন ন্যায় বিচার ছিলনা।"
এমনি মানবেতর জীবনাচার ও জুলুম- নিপীড়ন–নির্যাতন, সামাজিক অন্যায়–অবিচার ও অত্যাচারের কবল থেকে বিশ্ব মানবতাকে মুক্তির দিশা তথা সভ্যতার দিশা দিতে মুক্তির দূতরূপে, জ্ঞানের আলোকবর্তিকারূপে যিনি পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন তিনিই বিশ্ব মানবতার অগ্রদূত *"হজরত মুহাম্মদ (সঃ)"* (মহান সৃষ্টিকর্তা রব্বুল আ'লামিন তাঁর ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন)।
⭕ তিনি বাল্যকালেই মক্কা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় তাঁর নিজ বিশ্বস্ততা, সততা, সত্যবাদিতা ও প্রখর দূরদর্শিতার জন্য অনন্য খ্যাতি অর্জন করেন। যেজন্য মক্কাবাসিরা তাঁকে আল-আমীন(বিশ্বস্ত), আস্ব-স্বদিক (সত্যিবাদী) উপাধিতে ভূষিত করে ।
⭕ আজ অশান্ত বিশ্বে ক্ষমতার দ্বন্দ, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, জাতি গোত্রে হানা-হানি সব কিছুর মুলোৎপাটন করে বিশ্ব মানবতাকে শান্তির সুশীতল ছায়াতলে আনয়ন করতে নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণের কোন বিকল্প নেই। একটু ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে - মক্কা ও তার পার্শবর্তী এলাকায় দীর্ঘকালীন সময় ধরে চলে আসা এক গোত্রের সাথে ভিন্ন গোত্রের যুদ্ধ এবং সমসাময়িক নানান অবিচারকে রুখতে যুবক বয়সেই তিনি ‘হিলফুল ফুদ্বুল’ নামে 'শান্তি সংগঠন' গড়ে অসহায় ও দুর্গতদের সাহায্য সেবা ও সম্প্রীতি স্থাপনে সচেষ্ট হন। এমনকি তিনি পবিত্র কাবা গৃহের রক্ষনাবেক্ষনকে কেন্দ্র করে মক্কার কয়েকটি গোত্রের মধ্যে চলমান বিবাদেরও স্থায়ী মীমাংসা করেন। তাঁরই হাত ধরে মক্কায় দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধবিরতি সহ অকল্পনীয় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়।
⭕ বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সঃ) মধ্যে ছিল সমগ্র গুনের সমাহার; তিনি ছিলেন দূরদর্শী, সংস্কারক, বীর যোদ্ধা, সূনিপুণ সেনানায়ক, সফল ব্যবসায়ী, নিরপেক্ষ বিচারক, মহৎ রাজনীতিবিদ , প্রেমময় স্বামী, স্নেহময় পিতা, বিশ্বস্ত বন্ধু, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, অভিজ্ঞ কূটনৈতিবিদ ও বিচক্ষণ অর্থনীতিবিদ।
⭕ *তৎকালীন আরব সমাজে নারীদের দুর্বিসহ অবস্থান অবলোকন করে "কন্যা সন্তান জন্মানো পাপ"- মনে করে কন্যার পিতারা কন্যা সন্তানকে হত্যা, এমনকি জীবন্ত কবর দেয়ার মতো গর্হিত ঘৃণ্য কাজ করতো- এরই বিরুদ্ধে বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মদ (সঃ) দূর্বার সফল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তিনিই এই ঘৃণ্য কাজের মূলে কুঠারাঘাত হেনে নারীদেরকে মুক্তি দিয়ে ছিলেন। তিনি এমন সমাজ উপহার দিয়েছিলেন যেখানে নারীরা উচ্চ সম্মানাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল।*
*তিনি ঘোষণা করেছিলেন -*
⭕ *"ওহে ছেলেরা, তোমাদের মায়ের পদতলে তোমাদের জান্নাত।"*
⭕ *" সেই স্বামী উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।"*
⭕ *যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনজন বোন আছে। আর সে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেছে তাদেরকে নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করেনি সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। -জামে তিরমিযী,*
⭕ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি কাজ মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শত্রু, মিত্র নির্বিশেষে সবার সঙ্গে ন্যায় সংগত আচরণ করতেন। এমনকি শত্রুর প্রতিও তিনি কোনো অন্যায় আচরণ করতেন না। বরং তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করতেন।
⭕ হজরত সুফিয়ান ইবনে সালিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) বলেছেন, ‘মনে রেখো যদি কোনো মুসলমান অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকদের পক্ষাবলম্বন করব’।
⭕ হজরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেন, ‘শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দাও।’
মজুরির পক্ষে বিশ্বময় ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হওয়া তাঁর এই বাণী বাস্তবায়িত হলে এক দিনের জন্যও শ্রমিকদের কান্না শুনতে হতো না পৃথিবীবাসীকে।
⭕ হজরত মুহম্মদ সঃ এর কাছে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিলেন- "ইসলামের মধ্যে কোন কাজটি উত্তম? তিনি উত্তরে বলেছিলেন - *অন্য জনকে ( অভুক্তকে ) খাদ্য খাওয়ানো।*
এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম (অভিবাদন ) জানানো।
(অর্থাৎ সৌজন্যতা বিনিময় করা। )
⭕ ঐতিহাসিক গিবনের ভাষায় বলা যায়-"
"হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর পায়ের কাছে অবনত অবস্থায় সকল শত্রুকে পেয়েও তাদেরকে ক্ষমা করে ঐদার্য ও ক্ষমাশীলতার যে অনুপম আদর্শ প্রদর্শন করেন তার দ্বিতীয় কোন নযীর দুনিয়ার সুদীর্ঘ ইতিহাসে নেই।"
⭕ পবিত্র কুরআন কর্তৃক আখ্যায়িত মানবতার নবী ও বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) তার উম্মতকে সদা এই নির্দেশই দিয়েছেন যে, তারা যেন ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার সঙ্গে উত্তম আচরণ করে।
পরিশেষে, তাঁর আদর্শ অনুকরণ, অনুসরণ আমাদের কাম্য হোক।