Dreamful Life

 #সন্তান #শ্রেষ্ঠসম্পদ 'আমার ছেলে এমনটা হতেই পারে না ',... ' আমার ছেলে এমনটা ভাবতেই পারে না ' ..' আমার ছেলে একাজ করতেই প...
30/08/2025

#সন্তান
#শ্রেষ্ঠসম্পদ

'আমার ছেলে এমনটা হতেই পারে না ',... ' আমার ছেলে এমনটা ভাবতেই পারে না ' ..' আমার ছেলে একাজ করতেই পারে না ' এই ধরনের ভাবনাগুলো বোধহয় এবার ছাড়ার সময় এসেছে। চারপাশের পরিবেশ, পরিস্থিতি,ঘটনা গুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে শেখাচ্ছে। একটি শিশু জন্ম থেকেই অপরাধ প্রবণ মন নিয়ে জন্মায় না। পারিবারিক গন্ডীর বাইরেও পড়াশোনা, খেলাধূলা, আঁকা,গান,নাচ, আবৃত্তি শিখতে তাকে নানা জায়গায় যেতে হচ্ছে,নানা ধরনের বাচ্চার সঙ্গে সে মিশছে।
স্কুলেও সে অনেকটা সময় বন্ধুদের সঙ্গে কাটাচ্ছে; একটু বড়ো হচ্ছে যখন, সেই কিশোর বয়স অর্থাৎ বয়: সন্ধিক্ষণ তার কাছে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। অনেক কিছুই সে জানছে, শারীরিক ভাবে তার পরিবর্তন হচ্ছে,একটা স্বাভাবিক যৌনচেতনা ও চাহিদা তার মধ্যে বিকশিত হচ্ছে। খুব স্বাভাবিক নিয়মেই সে বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীর প্রতি আকর্ষিত হয়,তার কাছে যাওয়ার,তার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। কখনও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সকলের অগোচরে,তার যৌন চাহিদা চরিতার্থ তার সমবয়সী নাবালিকা বান্ধবীটি,তার ফলশ্রুতি একেবারেই ভালো হয় না দুজনের জন্য। স্বাভাবিক জীবন, পড়াশোনা ও আনুসঙ্গিক কাজে ছন্দ ব্যাহত হয়,এটা শুধু মাত্র দুটো ছেলেমেয়ের এবং তাদের পারিবারিক সমস্য নয়,একটা বৃহত্তর সামাজিক সমস্যাও বটে।
আরেকটি গুরূত্ব পূর্ব সমস্যা হলো বান্ধবী বা সঙ্গিনী প্রত্যাখ্যান করলে তাকে জবরদস্তি করা, সুযোগের অপেক্ষায় থেকে শারীরিক অত্যাচার, ধর্ষণ এবং সরিয়ে ফেলার চেষ্টা। এটি অতীত থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের গুরুতর সামাজিক সমস্যা,যেটি নিয়ে অবিলম্বে আমাদের সকলেরই ভাবা প্রয়োজন
আমাদের প্রত্যেকের ঘরেই ছেলে, মেয়ে আছে... পবিবারের অন্যান্য আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীদের ও আছে। একদম ছোট বয়স থেকেই ছেলে বা মেয়েকে সাবলীল ভাবে পারিবারিক আত্মীয় স্বজনের,পাড়ার সমবয়সী ছেলে মেয়ের সঙ্গে খেলাধূলা,গল্প করতে দিন... আমার ছেলে বা মেয়ে স্পেশাল,এই মনোভাব রাখবেন না।
আপনি যতই কর্মব্যস্ত হন না কেন, দিনশেষে বাড়িতে ফিরেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে না পরে,কিছুটা সময় তার সঙ্গে কাটান,সঙ্গ দিন... স্কুলে কোন টিচারের পড়ানো সবথেকে ভালো লাগলো,কোন কোন বন্ধুর সঙ্গে টিফিন শেয়ার করে খেলো,কি নিয়ে গল্প হোলো, তাদের নাম কি... গল্পের মতো করেই জানুন।
সমস্যা জটিল হতে শুরু করে কিশোর কিশোরী এবং ও সদ্য যৌবনে পা রাখা তরুণ প্রজন্মেকে নিয়ে। ভুল পথে পা বাড়ানোর এটি আদর্শ সময়।
বাইকে পিছনে/ গাড়ীর পাশের সিটে একজন সুন্দরী বান্ধবী নিয়ে ঘোরা এখনকার ট্রেন্ড, স্ট্যাটাস সিম্বল। ফেসবুক/ ইনস্টাগ্রাম এ Single দেখালে মান ইজ্জত আর কিছুই রইল না, এরকম একটা ব্যাপার। শুধু মাত্র ছেলেকে নিয়ে নয়টি, আপনার মেয়েটি ও যদি একটি ভুলভাল ছেলের পাল্লায় পড়ে যায়,তাহলে সেই ভুলের চোরাবালিতে তার সায়াটা জীবন তলিয়ে যায়, ফিরতে পারে কেউ কেউ,সকলে পারে না, সেই মনের জোর সকলের থাকে না।
আপনাদের সময় মতোই ছেলে/ মেয়েকে নিয়ে বসে গল্পগুজব করুন,কি ধরনের মুভি/ গান এখন জোর ব্যাবসা করেছে এবং কেনো ভালো লেগেছে,জানুন,কোনো রবিবারে বিকেলের স্ন্যাকস টা ছেলে/ মেয়েকে বানাতে বলুন, আপনি সঙ্গে থাকুন সহকারী হিসেবে... আপনার ঝকঝকে কিচেন নোংরা হবে? আপনাকেই পরিস্কার করতে হবে? একদিন না হয় একটু বেশিই খাটলেন, কিন্তু ছেলের হাতের গন্ধরাজ মোমো বা মেয়ের হাতের ইনস্ট্যান্ট চকো মাফিন/ হানি চিলি সয়া বলস খেতে খেতে ওইটুকু খাটনি নিমেষেই ভুলে যাবেন। খেতে খেতেই কলেজে কোন নতুন বন্ধু/ বান্ধবী হয়েছে কিনা, তাদের নামধাম কায়দা করে জেনে নিন। ছেলে/ মেয়ে কোন কোন বন্ধু/ বান্ধবীদের বাড়ি মাঝেমধ্যেই যাচ্ছে, খেয়াল করুন। আপনার ছুটি খাটায় তাদের কয়েকজন কে বাড়িতে ডাকুন, নিজের হাতেই কিছু বানিয়ে খাওয়ান। মায়ের হাতের খাবার খেয়ে বন্ধু/ বান্ধবীরা প্রশংসা করছে,এটা আপনার সন্তানের কাছে খুবই আনন্দের,গর্বের। আপনিও যোগ দিন ওদের গল্পে,গান বাজনা, আবৃত্তি,গল্পপাঠ এসব ও চলুক... ওদের রুচি সম্পর্কে একটা ধারণা হবে আপনার।
স্কুলের PTM ( Parents Teacher Meeting)এ অবশ্যই যাবেন আপনি বা আপনার হাসব্যান্ড... সম্ভব হলে দুজনেই। আপনাদের দুজনের কাছেই যে ও কতটা গুরুত্বপূর্ণ.. সেটা বোঝা ওর জন্য খুবই দরকারি। ছেলে বা মেয়ে সম্পর্কে অনেক তথ্য আপনি ওর টিচার দের থেকেই জানতে পারবেন। Weekly/ Monthly test গুলোর কোনোটাতে কম নম্বর হতেই পারে,কারণটা না জেনে অযথা বকাবকি/ মারধর করবেন না এমন কিছু বলবেন না,যেটা ওর ট্রমার কারণ হতে পারে। ধৈর্য ধরে ওর পাশে থাকুন একজন বন্ধুর মতো। বাবা ও মায়ের মতো করে সন্তান কে কেউই বোঝে না,একথা সর্বৈব সত্য।
একজন বাবা ও মা বড়ো হতে থাকা সন্তানের প্রথম রোল মডেল.. যাদের সামনে থেকে দেখে সে বড়ো হচ্ছে... আপনাদের ব্যক্তিগত সমস্যা/ মনোমালিন্য এবং অনিয়মিত লাইফ স্টাইল ওর উপরে সুদীর্ঘ খারাপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সেগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে মা ও বাবাকে। সন্তানের সামনে তার মায়ের গায়ে হাত তোলা বা অহেতুক সন্দেহপ্রবণতা সেই সন্তানের সঙ্গে অনেকটা দূরত্ব তৈরি করে একটা অপরাধ প্রবণতার জন্ম দেয়। তাই যা করবেন ভেবে করবেন।
আরেকটি সমস্যা হোলো এখনকার ছোট্ট নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। ঠাকুমা,দিদার বা অন্যান্য গুরুজনদের সান্নিধ্য না পাওয়া। এঁদের সাহচর্য একটি শিশুর মানসিক বিকাশে অনেক খানি সাহায্য করে। আমি নিজে বড়ো হয়েছি দাদু বাড়িতে, বিরাট এক সংসারে, সেখানে অনেক মানুষের উপস্থিতি আমাকে ভরিয়ে রেখেছে বরাবর। যদি দিদা - দাদু/ ঠাকুমা - দাদু শহরতলী/ গ্রামে/ অন্য জায়গায় থাকেন,তাদের কাছে আপনারা যান সন্তান সহ। দেখবেন ওদের মনের সব জমানো কথা প্রাণোচ্ছল ঝর্ণার স্রোতের মতো বেরিয়ে আসছে, অনেক কথা আপনিও জানেন না,সেকথা দিদুন/ ঠাম ঠিক জেনে নিয়েছে। আর ওই মানুষগুলোর খুশি... আনন্দ এযে উপরি পাওনা!
স্কুলে তো সেভাবে যৌন শিক্ষার পাঠ দেওয়া হয় না... ওরা সে বিষয় পড়তে পড়তেই অনেকটা জেনে ফেলে। আপনি আপনার ক্লাস এইট/ নাইনের ছেলে বা মেয়েটির সঙ্গে গল্পের মতো করে বোঝান,যতটা পারেন। কিভাবে বয়: সন্ধিতে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন হয়, ছেলেদের কি ধরনের পরিবর্তন হয়... গলার স্বর ভঙ্গ হয়,সবটাই বলুন। মেয়ের পিরিয়ড হলে এটা ছুঁবি না,ওটা করবি না বা ভাই/ দাদাকে দিয়ে কখনো স্যানিটারি ন্যাপকিন আনাবি না এই ধরনের ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসুন। এটা স্বাভাবিক একটা বিষয় যেটাকে অযথা আমরা জটিল করে ফেলি।
সাপ্তাহিক বাজার টা আপনার কিশোর ছেলে/ মেয়েকে দিয়ে করান,আপনি ফর্দ করে দিন... দেখুন একদিনে না হলেও ও ঠিক লাউ - চালকুমড়োর পার্থক্য বুঝতে পারবে, পুঁইশাক - কলমি শাককে আলাদা করতে পারবে, আপনার পছন্দের বাজার ও ঠিকমতোই করে আনবে... রেস্টুরেন্টে গিয়ে মাঝেমধ্যে ওদের মেনু পছন্দ করার দায়িত্ব দিন... কে বলতে পারে যেগুলো আপনি ভাবছিলেন সেগুলোই ওরা অর্ডার দিলো। লং ট্যুর/ শর্ট ট্যুরে যাবেন ঠিক করেছেন? আপনার কিশোর/ কিশোরী ছেলে/ মেয়েকে আপনার সম্ভাব্য বাজেট আর ক' দিনের জন্য যাচ্ছেন জানান আর অবাক হয়ে দেখুন কি চমৎকার প্ল্যান ওরা বানায়।
আসলে আমরা ছোট থেকেই সন্তানদের একটা টার্গেট দেখিয়ে দিই... আমরা স্বপ্ন দেখি ক্লাসে প্রথম হবে, আঁকা,খেলা,গান, আবৃত্তি, সাঁতারে তুখোড় হবে... দুর্দান্ত সপ্রতিভ হবে... সবকিছুতে তার এক নম্বর জায়গা পাকা করতে গিয়ে আত্মীয় পরিজন, পরিচিত প্রতিবেশী সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ বিছিন্ন করে একটা আলাদা দ্বীপের বাসিন্দা করে ফেলি,প্রকৃত জীবনের বাস্তব শিক্ষাটা দিতেই ভুলে যাই, কখনও কখনও পরিবার সমাজের চোখে তাকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে তার অপরাধ গুলো স্নেহবশত গোপন করতে করতে তাকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধী বানিয়ে ফেলি। তাই আসুন,যা হয়ে গেছে সেগুলো হয়তো আর ফিরে আসবে না... আপনি আমিই পারবো, আমাদের সন্তানকে অপরাধী না বানিয়ে একজন মানবিক ' মান ও হুঁশ ' সম্পন্ন মানুষ করে গড়ে তুলতে।
এখন ও সময় আছে...
আসুন সবাই বিষয়টিকে গভীর ভাবে ভেবে দেখি।
প্রতিটি মানুষের কাছে তার সন্তানই শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
একজন মায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে...
©নীতা






#সংগৃহীত





#অনুগল্প

সংগৃহীত

বাংলার শ্রাদ্ধ সন্দীপের নাতনি  ঝিঙ্কাই লাফাতে লাফাতে এসে বললে দাদু ,দাদু আমি  কপাল কুণ্ডলা পড়েছি।সন্দীপ অবাক হয়ে জিজ্ঞ...
30/08/2025

বাংলার শ্রাদ্ধ

সন্দীপের নাতনি ঝিঙ্কাই লাফাতে লাফাতে এসে বললে দাদু ,দাদু আমি কপাল কুণ্ডলা পড়েছি।
সন্দীপ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলে কই? তুই তো লং ফ্রক পরেই আছিস। তার তীক্ষ্ণ অমায়িক গলা ওপরে ওঠে ওহ, নো , নো,কপাল কুন্ডলা স্টোরি বুক পড়েছি।
এবার বিস্ময়ের পালা, কি করে ? তুই বইটা পড়েছিস? সেতো খটমট বঙ্কিম ভাষা, তাহলে তো বাংলা ভালই পড়তে শিখে গেছিস।
ওহ, নো, এই দেখো।
সন্দীপ দেখলে ছবিতে ও ইংরাজি তে কপালকুণ্ডলা।
হাতে একটা বই নিয়ে তিরিংবিড়িং করে নাচতে থাকে । ডোনট আন্ডার এস্টিমেট স্ট্রেংথ ওফ কমন ম্যান। বলে খিলখিল করে হাসে। তুমি কত গল্প শুনিয়েছো পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল।
এবার গলপো গুছ ধরব। শুনেছি ইন্টারেস্টিং বেশ । একটু থেমে বললে বাই দা ওয়ে তোমার কাছে আছে ওটা ?
সন্দীপ দীর্ঘশ্বাস ফেলে না দাদুভাই ওটা হারিয়ে গেছে। তুমি লাইব্রেরী তে পেতে পারো।
ওকে।
বলে লাফাতে লাফাতে চলে গেল ।

আইটি কোম্পানির দয়ায় কয়েকমাস বিদেশে কাটিয়ে ফিরে এসে তখন সন্দীপ আর মন্দিরা স্বপ্ন দেখছে এরপর এইসব ছেড়ে ফেরে বিদেশে একটা চাকরি জোগাড় করে বাইরেই থিতু হবে। এ দেশ তেমন আর টানছে না। প্রতিপদে এত নোংরা, এত ঝামেলা।
এমন সময় চিলড্রেন প্লে স্কুল ছেড়ে একমাত্র মেয়ে গুবলি কে বড় স্কুলে দেবার সময় এল। কখনও সন্দীপ, কখনও মন্দিরা ফরম তুলেছে। বড় বড় ভালো ভালো স্কুলের । চার পাঁচটা চেষ্টা করতে করতে একটা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে
গুবলি চান্স পেয়ে গেল। গড়গড় করে টুয়েলভ পেরিয়ে যাবে। সন্দীপ আর মন্দিরার বাড়িতে খুশির হাওয়া । আর চিন্তা নেই।
প্রথমদিন স্কুলে গিয়ে ফরম ফিল আপ করতে গিয়ে এক দুশ্চিন্তা গ্রাস করল । প্রথম ল্যাঙ্গুয়েজ তো ইংরাজি কিন্তু দ্বিতীয় কি হবে ?
সন্দীপ নিজে বাংলা মিডিয়ামে পড়েছে , বললে বাংলাই থাক কি বল? মন্দিরা বললে দেখো, আমরা বাইরে চলে গেলে ওর হিন্দিই বেশি লাগবে। বাংলা তো ঘরেই আছে । রোজ শুনছে বাংলা। ওটা অসুবিধা হবে না। আর তুমি যদি অন্য প্রদেশেও যাও তাহলে হিন্দি তাতেই বেশি পারদর্শী হওয়া দরকার।
তাহলে বাংলা?
ওটা থার্ড ই থাক।
তাই হল। মন্দিরা ভাবলে কলকাতার বাইরে থাকলে বাংলা তো কোনো কাজেই লাগবে না। বাড়িতে তো বাংলা শুনে শুনেই শিখবে ।
তাই গুবলি ইংরাজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হল বাংলা থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে ।
পড়াশুনা মন্দিরাই দেখত। সন্দীপ নিজের কাজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। শুধু মনে মধ্যে খচখচ করত বাইরে তো সাংসারিক নানা কারণে এখুনি যাওয়া হচ্ছে না । তাই কলকাতায় থেকে বাংলা তৃতীয় ভাষা টা কি ঠিক হল? প্রথম ধাক্কাটা খেয়েছিল ক্লাস সিক্স এ গুবলি র হাফ ইয়ারলি র সময়।

ক্লাস সিক্সের পরীক্ষা শুরু হয়েছে কয়েকদিন।
সন্দীপ কাগজ টা দেখতে দেখতে জিজ্ঞাসা করলে কাল কি পরীক্ষা রে ?
গুবলি বললে বাংলা ।
হঠাৎ মনে হল কি ওদের পড়ায় দেখি তো।
এই তোর বইটা একটু দে তো ।
দিচ্ছি, দুর থেকে ভেসে এলো।
এরপর চা খেলো, কাগজ পড়ল। বেশ দুয়েকটা ফোন এলো । সন্দীপকে কাল তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে ।তাই রাত্রে তাড়াতাড়ি খাওয়া দরকার।সাড়ে নটা নাগাদ হঠাৎ মনে হল
গুবলি কে বাংলা বইটা আনতে বলেছিল তিন ঘণ্টা আগে তার কি হল? ওতো এলো না। বসার ঘরে বসে আবার চিৎকার করলে । গুবলি, কি রে কোথায় ? বই নিয়ে এলি না?
কিছুক্ষণ বাদে ধীর পায়ে গুবলি ঢুকলে। কোনো উত্তর নেই । মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
বই?
পাচ্ছি না । খুঁচ্ছিলাম , পেলাম না কোথাও।
তাহলে ? আকাশ ভেঙে পড়ল যেন হঠাৎ । এখন সাড়ে নটা বাজে । এখন বলছিস বইটা পাচ্ছিনা ? আমারই গলা শুকিয়ে আসছে ভয়ে। আর তুই নির্বিকার ? তুই মানুষ না পাথর?
মন্দিরা ঠাকুর ঘরে থেকে গলার স্বর শুনে দৌড়ে এল। ও শুনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লে । এতক্ষণ বলিস নি কেন?
গুবলি র কিন্তু তেমন চিন্তা আছে বলে মনে হচ্ছে না । প্রচণ্ড গম্ভীর মুখে বললে খুঁজলাম তো।
এখন তো বইয়ের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে ।বন্ধুদের কাছ থেকে এনে দেখবে তারও সময় নেই। কাল সকাল নয়টায় পরীক্ষা। বাস আসবে সাড়ে আটটায়। তাহলে ?
হঠাৎ এমন বিপদ সারা চাকরি জীবনেই দেখে নি সন্দীপ। মন্দিরা হাত তুলতে যাচ্ছিল। সন্দীপ থামালে আচ্ছা ঠিক আছে এখানে বস। গুবলি এখন ভাজা মাছ টিও উল্টে খেতে জানে না। সন্দীপ কে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। বললে কি পড়িয়েছে সেটাই বল।
মিনমিন করে উত্তর এল একটা গল্প ছিল।
কিসের গল্প?
এক সাপুড়ের ।
বলে যা।
গুবলি শুরু করলে একজন সাপুড়ে ছিল ।তার নাম ছিল কংশীলাল।
কংশীলাল? শুরুতেই বেদম এক হোঁচট। এরকম কারুর নাম হয় নাকি ?
গুবলি র অনায়াস উত্তর
বই তে তাই আছে।
তারপর?
সে খেলা দেখাতো আর একটা থাকতো একটা ভাঙ্গা রাজ বাড়িতে .......।
মন্দিরা বলেই যাচ্ছে এরকম জীবনে শুনিনি ।

সন্দীপ ঠান্ডা মাথায় বললে ঠিক আছে যা জানিস লিখে ফেল ।
লিখেই আমায় দেখাবি। সময় নষ্ট করবি না । খাতা নিয়ে পড়ার টেবিলে সে বসে গেল। মন্দিরা হতাশ হয়ে বললে একে নিয়ে আমরা কি করব? নিজের পরীক্ষার কোনো চিন্তাই নেই ? জীবনে শুনিনি পরীক্ষার আগের দিন বই পাওয়া যাচ্ছে না। এটা স্বপ্ন দেখেছি পরীক্ষার আগে। তুই তো করে দেখালি। চমৎকার ।

গুবলি বাধ্যের মত খাতা নিয়ে খাবার টেবিলেই
লিখতে বসে গেল। কাগজ শেষ করার আগেই খাতা নিয়ে আসে । নির্বিকার বক্তব্য, হয়ে গেছে বাবা।
দেখি বলে সন্দীপ বসে যায় লাল পেন নিয়ে। দেখতে দেখতে লালে লাল হয়ে যায় খাতার পাতা। গুবলি উদাসীন ওটাতো তৃতীয় ভাষা। সিক্সের পর থাকবে না । রাতের খাওয়া মাথায় উঠেছে। মন্দিরা ভয় পেয়ে বলে কি হবে ? একটাও ঠিক সেন্টেন্স নেই। এগারোটা বেজে গেছে। পরদিন সকাল নয়টায় বাস আসবে স্কুলের। সন্দীপের রোখ চেপে গেছে। বললে যেগুলো লাল করা বানান আছে সেগুলো তিনবার করে লিখে ফেল। সেটা শেষ হল বারোটা। তখনো বেশ করা ভুল বেরোলো। এসব করতে রাত কাবার হয়ে যাবে। মন্দিরা ভয় পেয়ে বলে আজ এখানেই থাক। খেয়ে শুয়ে পর যাক। সেকালে উঠে দেখা যাবে।
পরদিন গুবলি চলে গেল। যেন কিছুই হয় নি। মন্দিরা পইপই করে বলে দিলে স্কুলের ডেস্ক ভালো করে খুঁজে বই নিয়ে আসবি।
সন্দীপ পরদিন ট্যুরে ছিল। ফিরে জিজ্ঞাসা করলে কেমন হল রে? গুবলি সব সময়ে যেমন করে তেমনি নির্বিকার বলে দিলে ভালই। দুদিন বাদে ফিরে জানল স্কুলে বইটা পাওয়া যায় নি। অগত্যা আবার কিনতে হবে। বইয়ের দোকানের সামনে দাড়িয়ে ফোন করলে গুবলি কে। নাম বল বইয়ের। উত্তর এল পাঠ্য মঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ। গল্পের নাম ? কংশীলাল।
বইয়ের দোকান দ্বিতীয় ভাগ দিল। ভিড়ের মধ্যে উল্টে পাল্টে দেখলে নাহ, এমন কোনো গল্পই নেই। তাহলে বোধহয় তৃতীয় ভাগ। সেটা নিয়েও নেড়েচেড়ে কংশীলাল কে পাওয়া গেল না । হল টা কি? তাহলে কি প্রথম ভাগ? বিরক্ত হয়ে ভিড়ের মাঝেও ফোন করলে আবার। কোনো ভাগেই তো নেই। গুবলি বলে যাচ্ছে দ্বিতীয় ভাগ, ওতেই আছে। দোকানদার বিরক্ত হয়ে বললে বাড়ি গিয়ে ঠিক করে আসুন।
বিপদে মাথা গরম করলে চলবে না আবার দোকানদার কে বিরক্ত করে দ্বিতীয় ভাগ নেড়েচেড়ে দেখলে। সূচিপত্র তে কাছাকাছি একটা নাম আছে। বংশীলাল। এটা নাকি ? আবার ফোন লাগালে। ওরে কংশীলাল তো নেই বংশী লাল আছে। গুবলি লাফিয়ে উঠল ওইটাই বাবা, ওইটাই। এবার মাথাটা গরম না হয়ে বুকের মধ্যে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। হাত পা ঠাণ্ডা হবার জোগাড়। আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে দু মাইল রাস্তা পেরিয়ে চলে এল বাড়ি। আজ চেপে ধরতেই হবে কি পরীক্ষা দিল?
বাড়ি ফিরেই ঝাপিয়ে পড়ল সন্দীপ তাহলে তুই কি পরীক্ষা দিলি?
চেপে ধরতেই রাজনৈতিক নেতার মতন বললে প্রথম তো কংশীলাল দিয়েই লিখেছিলাম ।তারপর ম্যাম বোর্ডে লিখে দিল বংশীলাল সমন্ধে যা জান লেখ। তখন সব ক কে ব করে দিলাম একটা একার মুছে। ব্যস খেল খতম।

ঝিঙ্কাই হচ্ছে সন্দীপের একমাত্র নাতনি। ওর ওপরেই বাংলা ভাষার শ্রাদ্ধের ভারটা
চাপিয়েছে গুবলি। মন্দিরা ও সন্দীপ গুবলি কে বাংলায় আকৃষ্ট করতে পারেনি গল্প বলে, শুনিয়ে বা চর্চায় রেখে। সময় ছিল না। ইচ্ছেও ছিল না।
এরপর বাইরের ঘরে কারুর আলমারিতে বাংলা বইয়ের আর স্থান হবে না।

মন্দিরা সন্দীপ নিজেদের চাকরি, অবস্থান,ও ভাষার সমস্যা ভেবে গুবলি কে বাংলা থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ নিতে বাধ্য করেছিল। আজ গুবলি র মেয়ে ঝিঙ্কাই এর বাংলা বিদেশী ভাষা। ইংরাজি মিডিয়াম স্কুলে থার্ড লাগুয়েজ হিসেবে বাংলা কেমন পড়ানো হয় তার উদাহরণ গুবলি। ও আত্মীয় দের সঙ্গে ভাঙ্গা বাংলা, বাঙালি বন্ধুদের সঙ্গে ইংরাজি তে আর অফিসে হিন্দি আর ইংরাজি মিশিয়ে কথা বলে । কিছু সিরিয়ালে ও বিজ্ঞাপনে ভাঙ্গা বাংলা শোনে।ওরা ইংরাজি কি বাংলা, কোনো ভাষারই ইতিহাস জানে না, সাহিত্য পড়ে না। জানার দরকারও নেই।ওরা ইংরাজি অক্ষর দিয়ে বাংলা লেখে ও পড়ে। ভাষা না জানা সত্ত্বেও মাঙ্গা আর কমিকসের সুনামি হবে। যে ভাষাই হোক তার প্রতি ভালোবাসা যদি না হয় যদি তার ইতিহাস সে না জানে, তবে সে ভাষায় কল্পনা করবে কি ভাবে? নিজেকে সেই ভাষায় প্রকাশ করবে কি ভাবে? এ বঙ্গের বাঙালি ই বোধহয় এক মাত্র জাত যে নিজেদের মধ্যে গর্বের সঙ্গে হেসে গড়িয়ে অন্য ভাষায় কথা বলে। নিজের ভাষার কবর নিজেরাই খুঁড়ে চলে।
ঝিংকাই ই বোধহয় শেষ বাংলা ভাষার ধারক। এরপর হয়ত বাংলা থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজও আর থাকবে না পুরোপুরি বিদেশী ভাষা হয়ে যাবে। রাস্তায় ঘাটে দোকানে, বাসে, অফিসে কেউ আ বাংলা বলবে না । রামকৃষ্ণ মিশনের মত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু শেখানো হবে। কিছুদিন বাদে পুজো সংখ্যা আর রোজকার কাগজ শুধু ইংরাজিতে প্রকাশ পাবে। বাংলা প্রকাশন গুলোর, যারা ইংরাজি ভাষায় বই ছাপতে পারে তারা খানিক বাঁচবে অথবা মৃত্যু অনিবার্য। মানুষের কিছু কাজ বাড়বে যেমন উচ্চারণ করতে অসুবিধার জন্যে পাল্টাবে রাস্তার নাম, বাড়ির নাম, চোদ্দ পুরুষের নাম। বাংলায় কে আর গান ,কবিতা , নাটক , করবে না। বিবাহ শ্রাদ্ধ, অন্যান্য পুজো ও অন্য কোনো ভাষায় উচ্চারিত হবে। কেউ বাংলায় কথা বলছে শুনলে ভাববে এই গাঁইয়া টা কোথা থেকে এল? ভাবতে গায়ে কাঁটা দেয় যদি ভবিষ্যতে বিয়ে বাড়ি , উপনয়ন বাড়ি, শ্রাদ্ধ বাড়িতে সবাই কঠিন ইংরাজি তে গল্প গুজব আর আনন্দ ফূর্তি করে তখন কেমন লাগবে । শুধু কখনও বাংলা বা পূর্ব ভারতের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা কালে কারুর কারুর এই ভাষার দরকার হলেও হতে পারে। সেইদিন প্রায় সমাগত।

কল্যাণ
4।8।25






#সংগৃহীত





#অনুগল্প

সংগৃহীত

মালতীর সংসার যেন বাইরের চোখে একেবারে শান্তিপূর্ণ। স্বামী বিদেশে কাজ করে, মাসে মাসে টাকা পাঠায়। বড় ছেলে শহরে পড়াশোনার ...
29/08/2025

মালতীর সংসার যেন বাইরের চোখে একেবারে শান্তিপূর্ণ। স্বামী বিদেশে কাজ করে, মাসে মাসে টাকা পাঠায়। বড় ছেলে শহরে পড়াশোনার জন্য হোস্টেলে থাকে। বাড়িতে আছে শুধু মালতী আর ছোট ছেলে অর্ণব।
কিন্তু ঘরের ভেতরে শান্তি নেই। মালতী সারাদিন ব্যস্ত থাকে সংসারের হিসেব-নিকেশে। বাজারের দাম, স্কুলের ফি, বড় ছেলের বইয়ের খরচ—সবসময় মাথায় ঘুরতে থাকে।
অর্ণব মাঝে মাঝে গল্প করতে চাইত, নতুন আঁকা ছবি দেখাতে চাইত, কিংবা স্কুলের দিনের কথা বলতে চাইত। কিন্তু মা তখনও রান্নাঘরে বা খাতার পাতা উল্টে হিসেব কষছে।
এক সন্ধ্যায়, বৃষ্টি ঝরছিল বাইরে। মালতী রান্নাঘরে বসে ভাত চাপাচ্ছিল। হঠাৎ অর্ণব রাগে বলে উঠল, "তুমি কি সব সময় শুধু টাকা নিয়েই ভাবো? আমি তো তোমার সামনে আছি, তবু তুমি খেয়াল করো না!"
মালতী থমকে গেল। হাতের খুন্তি নামিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। চোখ ভিজে এল তার।
ছোট ছেলেটা, যার জন্য এত কষ্ট, সেই-ই কি আজ ভাবছে মা শুধু টাকা বোঝে?
রাতটা কেটে গেল ভারী নীরবতায়। মালতী বিছানায় শুয়ে অর্ণবের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। দেখল ছেলেটার চোখে অদ্ভুত অভিমান জমে আছে।
ভোরে অর্ণব ঘুমিয়ে থাকতেই মালতী তার পাশে বসে মাথায় হাত রাখল। ধীরে ধীরে অর্ণব চোখ মেলে তাকাল।
মালতী কাঁপা গলায় বলল, "বাবা, আমি ভুল করি বোধহয়। সারাদিন খরচের হিসেব করি বলে মনে হয়, তোমার দিকে তাকানোর সময় পাই না। কিন্তু বিশ্বাস করো, সব চিন্তাই তোমাদের জন্য। তুমি হাসলে আমার মন ভরে যায়।"
অর্ণব মায়ের বুকে মুখ গুঁজে চুপ করে রইল। কয়েক ফোঁটা জল মিশে গেল মায়ের শাড়িতে।
সেদিনই প্রথম অর্ণব বুঝল—মায়ের নীরবতা আসলে ভালোবাসার আরেক রূপ। আর মালতীও শিখল, সংসারের খরচ যতই থাকুক, সন্তানের মন বোঝার সময়টা না হলে ঘরটা চুপচাপই থেকে যায়।
(সমাপ্ত)
ছোটগল্প :- মায়ের নীরবতা
কলমে :- বিকাশ মণ্ডল ©️ বিকাশ মণ্ডল






#সংগৃহীত





#অনুগল্প

সংগৃহীত

মাসের শেষ সপ্তাহ। কাজ যেন পাহাড় হয়ে জমেছে। হেড অফিসে রিপোর্ট পাঠাতে হবে আর তার সব দায়িত্ব এসে পড়েছে আমার কাঁধে। সদ্য বড়ব...
29/08/2025

মাসের শেষ সপ্তাহ। কাজ যেন পাহাড় হয়ে জমেছে। হেড অফিসে রিপোর্ট পাঠাতে হবে আর তার সব দায়িত্ব এসে পড়েছে আমার কাঁধে। সদ্য বড়বাবু হয়েছি, তাই সবার চোখে দায়িত্ব নেওয়াটা আমার কাছেই প্রত্যাশিত।
আজ রবিবার। অফিস বন্ধ থাকার কথা, অথচ আমি বসে আছি ফাইল আর কম্পিউটারের মাঝে। চারদিক নিস্তব্ধ, মনে হচ্ছিল টেবিল-চেয়ারগুলোও যেন আমাকে বন্দি করে রেখেছে। ড্রাইভারকে ডাকিনি আজ। ভেবেছিলাম, ছুটির দিনে ওর অন্তত ছুটি হোক। তাই নিজেই টোটো ভাড়া করে চলে এলাম অফিসে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল, খেয়ালই ছিল না। হঠাৎই পেটের ভেতর ইঁদুর দৌড় শুরু হলো। তখন বুঝলাম—দুপুর হয়ে গেছে, ক্যান্টিন বন্ধ। কী করব? মাথায় এল, “অনলাইনে অর্ডার করি।”
অর্ডার দিলাম। কিছুক্ষণ পর ফোন এল— “হ্যালো স্যার, ডেলিভারি আছে আপনার। আমি আপনার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”
“ওহহ, আসুন আসুন, দরজা খোলা আছে।”
একটা ছেলেকে ভেতরে ঢুকতে দেখলাম। আমি হাসিমুখে বললাম, “বসুন না।”
ছেলেটা হকচকিয়ে গেল। হয়তো ভেবেছে একজন সরকারি অফিসার তাকে বসতে বলছে, এটা সে কল্পনাও করেনি। দ্বিধা নিয়েই বসে পড়ল।
“স্যার, একটু জল খাব?”
“অবশ্যই, খান।”
চশমাটা খুলে রাখতেই ওর দিকে ভালো করে তাকালাম। মুখে ক্লান্তি, চোখে ক্ষুধার ছাপ। মনে হলো সকাল থেকে কিছুই খায়নি। আমি বললাম, “আপনি উপরে এলেন কেন? ফোন করলেই আমি নেমে নিতাম। এত রোদে ডেলিভারি, আবার সিঁড়ি বেয়ে উঠলেন কেন?”
ও উত্তর দিল, “না স্যার… সবাই তো উপরে আসতে বলে। অভ্যাস হয়ে গেছে।”
“ঠিক আছে। কত হলো?”
“৩৭৪ টাকা।”
আমি পকেট থেকে টাকা বের করতে গিয়েই থেমে গেলাম। মনে প্রশ্ন এল— ও কি খেয়েছে কিছু? আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী খেয়েছো তুমি?”
ও মৃদু হেসে বলল “না স্যার, এখনো খাইনি। আরেকটা ডেলিভারি দিয়ে খাব। মা বাড়ি থেকে খাবার পাঠিয়েছে।”
বুকের ভেতরটা হঠাৎ কেমন যেন হয়ে গেল। আমি পকেট থেকে ৫০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলাম— “বাকিটা রাখো ভাই। আর একটা অনুরোধ আছে তোমার কাছে।”
ছেলেটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি খাবারের প্যাকেট খুলে বললাম, “চলো, আজ আমরা একসাথে লাঞ্চ করি। অনেকদিন হলো মায়ের হাতের রান্না খাইনি। আজ না হয় তোমার মায়ের রান্না খেয়ে দেখি। দেবে তো?”
নিঃশব্দে টিফিন খুলল ও। ভেতরে মোটা চালের ভাত, আলু সেদ্ধ, পেঁয়াজ ভাজা আর মুসুরির ডাল। মুহূর্তে মনে পড়ে গেল আমার অতীত— রাজমিস্ত্রির কাজ করতে করতে পড়াশোনা চালানো, ঘামে ভিজে বাড়ি ফেরা আর মায়ের হাতের রান্না। মা নেই বহু বছর হলো। তবুও আজ, এই দুপুরে, ডেলিভারি বয়ের টিফিনে আমি যেন আবার ফিরে পেলাম মায়ের রান্নার স্বাদ। অফিসের সেই নীরব দুপুরে, আমরা দু’জন— এক সরকারি অফিসার আর এক ডেলিভারি বয়; এক প্লেট ভাগ করে খেয়ে খুঁজে পেলাম সত্যিকারের মানবতার স্বাদ।






#সংগৃহীত





#অনুগল্প

সংগৃহীত

 #অনলাইন চ্যাটিং ©ঝুম্পা মন্ডল "বিকেলে ভোরের ফুল " এই ছদ্মবেশি নামে নিখিলবাবু ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে পছন্দ করেন। একটা ...
27/08/2025

#অনলাইন চ্যাটিং
©ঝুম্পা মন্ডল
"বিকেলে ভোরের ফুল " এই ছদ্মবেশি নামে নিখিলবাবু ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে পছন্দ করেন। একটা ডুবন্ত সূর্যের ছবি তার প্রোফাইল ছবিতে।
"সোনালী বিকেল", "আকাশের নীল পরি"
"মেঘে ঢাকা ভালোবাসা" , "শিশির ভেজা ফুল"..."ফুরফুরে বাতাস", "দিনের নির্মল আকাশ"...এদেরকে।
যাদের প্রোফাইল জুড়ে থাকে আকাশের ছবি, ফুলের ছবি, মেঘের ছবি, নীল পরীর ছবি।
নিখিলবাবু এদেরকে কল্পনায় এক এক রূপ বসিয়ে নিতে পারেন নিজের মনের মতো করে, এখানেই তিনি খুশি, গিন্নিকে লুকিয়ে এদের সাথে অনলাইনে চ্যাটিং এ কথা বলতে বলতে কল্পনায় গা ভাসিয়ে নিজেকে নায়ক ভেবে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ অনুভব করেন।
কথা বলতে বলতে এতো প্রেম আর লজ্জা যে নিখিলবাবুর ভিতরে ছিল সেটা তিনি নিজেও জানতেন না।
এ যেন এক নতুন করে প্রেমে পরার আনন্দ, সাংসারিক জীবনের হাঁসফাঁস থেকে এইভাবে একটু মুক্তি পেতে বেশ ভালোই লাগে তার। তারউপর সংসারের টুকটাক জিনিস নিয়ে গিন্নির দিন রাত খিটির মিটির আর বাক্যবানে প্রেম ভালোবাসা সবকিছু শুকিয়ে গিয়েছিলো তার।
ওদের সাথে কথা বললে গিন্নির খ্যাচখ্যাচানি এতেই ফিল্টারের মতো পরিশ্রুত হয়ে বাকিটা ঝরে পরলো কি না পরলো সেসব নিয়ে আর গায়ে লাগাননা বিশেষ, গিন্নির কাছে তিনি যাচ্ছেতাই একটা লোক হলে কি হবে!!
'সোনালী বিকেল ' গত পরশু যে বলেছে, "তার মধ্যে নাকি সে শ্রেষ্ঠ পুরুষকে খুঁজে পেয়েছে, " এই প্রাপ্তি কম কিসের!
সারারাত ঘুম হয়নি এই আনন্দে। গিন্নি ঘন চোখে তাকিয়ে তার ছটপটানি দেখে ভুরু কুঁচকেছে।
আজ সকালে 'আকাশের নীল পরী'লিখেছে, "মিস ইউ।"
উফফ আর নিতে পারছেন না নিখিল বাবু, আনন্দের আতিশয্যে দিশেহারা তিনি গিন্নি বাজারে পটল কিনতে বললে ঝিঙে কিনে আনেন, আলু কিনে আনতে বললে শাকালু এনে হাজির করেন। গিন্নি পড়েছেন মহা সমস্যায়। কত্তা আজকাল বড্ড অন্যমনস্ক, দিনরাত ফোন নিয়ে এই মুচকি হাসে তো ওই খিলখিলিয়ে হাসে, জিজ্ঞেস করলেই বলে, "অফিসের কলিগদের সাথে হোয়াটস্যাপ গ্রূপে গুরহ আলোচনা করছি।"
কিন্তু গিন্নির মন মানেনা, এতো ভুলো মন!! এতো বিচলিত ভাব কর্তার আগে তো দেখেনি তিনি, কম বয়সে কর্তার যে দোষ হয়নি, সেই দোষ এখন দেখা দিলো নাকি!!
গিন্নি পড়লেন মহা চিন্তায়, তাকে মেয়ে তাকেও স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছে, কিন্তু এইসব ফোন নিয়ে তিনি অতটা সড়গড় নন, শুধু ফোন এলে গোল সবুজে তর্জনী ঠেকিয়ে ঠেলে উপরে তুলে ধরতে পারলেই তিনি খুশি। কর্তা শেখাতেও চাননা বিশেষ। কর্তার ফোন ধরলেই বেজায় কাই কুই করেন, ফোনের মধ্যে এমন ভাবে ঢুকে থাকেন যে চারবার ডাকলে একবার "উউউউ" করে সাড়া পাওয়া যায়, কোনো কাজ বললে অর্ধেক সময় শুনতে পাননা, শুনতে পেলেও বিরক্ত হন।গিন্নির যেন কেমন কেমন ঠেকে, রেগে গিয়ে যা তা বলেন, "বুড়ো বয়সের ভীমরতি," "হুলো বেড়ালের মত ছোঁক ছুঁকুনি"... তবুও কাজ হয়না। কেমন যেন তচ্ছিল্য ভাব। মনের মধ্যে ভীষণ রাগের বাষ্প জমে গিন্নির। তিনিও তক্কে তক্কে থাকেন, অফিস থেকে দেরি করে ফিরলেই ধরবেন, কোনোদিন ফোনে কারোর সাথে কথা বললেই খপাৎ করে ধরবেন। কিন্তু নাহ, কত্তা দেরি করে ফেরেননা, কারোর সাথে ফোনে কথাও বলেননা, শুধু ফোনে ফট ফট করে লেখেন, কি লেখেন এতো!! অনেকবার উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সফল হননি। খুব সচেতন উনি। শুধু একদিন দেখেছেন একটা গোল মত ডুবন্ত সূর্যের ছবি, লেখা "বিকেলে ভোরের ফুল।"
কত্তা অফিস গেলে মেয়ের কাছে সব বলেন তিনি, কান্না কাটি করেন, আজকাল চারিদিকে যা হচ্ছে, বুড়ো বয়সে কত্তা আবার অন্যকারোর প্রেমে পড়লো নাকি!!

এরই মধ্যে গিন্নির অনেকদিন পরে সেদিন হঠাৎ দুপুরে খেতে বসে ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিল চিলি চিকেন আর ফ্রাইড রায়েস খাওয়ার, সঙ্গে সঙ্গে কর্তাকে ফোন করে অফিস ফেরৎ আনতেও বলেছিলেন। রাতে সেদিন রান্না করেননি যথারীতি।যথা সময়ে কর্তা ফিরলেন, দরজা খুলে গিন্নি হাসিমুখে কর্তার দিকে তাকিয়ে দেখলেন ডান হাতে যথারীতি ফোন আর বাম হাত ফাঁকা। ফ্রাইড রাইসটা তাহলে কাঁধের ব্যাগে ঢুকিয়েছে নিশ্চই, কর্তার কাঁধ থেকে ব্যাগ নিতে কর্তা খুব খুশি, বাওয়া সেই বিয়ের প্রথম প্রথম যেমন অফিস থেকে ফিরলেই গিন্নি ব্যাগ নিয়ে নিত কাঁধে থেকে, সেইরকম ভাব।
গিন্নি ব্যাগের চেনগুলো খুলে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে হতাশগ্রস্ত কান্না গলায় বললো, "আনোনি!!"
নিখিল বাবু ফোনটা বুকের কাছে ধরে ভীষণ অবাক হয়ে ভুরু কুঁচকে বললো "কি...??"
গিন্নির ততক্ষণে দুই চোখে জল টলমল, এমনিতেই মনের মধ্যে বিগত কয়েকদিনের অশান্তি, তারউপর আজ সারাদিন সাগ্রহে অপেক্ষা করেছেন। চিলি চিকেন খাওয়ার থেকে বড়ো কথা তার এই আবদার টুকুও মনে রাখতে পারলোনা!! এই অভিমানে নিখিল বাবুর ব্যাগ ছুঁড়ে ফেললেন সোফার উপরে ।
নিখিলবাবুর ঠোঁট গেলো ঝুলে, কি হলো রে আবার, কি আনার কথা ছিল, কিছুতেই মনে করতে পারলেন না তিনি, এদিকে টুং টাং মেসেজ আস্তে শুরু করেছে, ওদিকে গিন্নি দুমদাম পায়ে গিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা দিলো, আরে খেতে দেবেনা নাকি!!
নিখিল বাবু পড়লেন মহা আতান্তরে, ফ্রেস হয়ে টেবিলে গিয়ে দেখলেন কিচ্ছু রান্না নেই, ফ্রিজ ও ফাঁকা, উফফ একি জ্বালা, "আনোনি!!!" গিন্নিরএই কথাটা বারবার মনে হতে হতে হঠাৎ মাথায় খেয়াল এলো চিলি চিকেন.... ইয়েস চিলি চিকেন আর ফ্রাই ডায়েস আনার কথা ছিলো, তিনি একদম ভুলে মেরে দিয়েছেন। বাড়ি ফেরার সময় যদি বাসে বসে মনোযোগ সহকারে 'শিশির ভেজা ফুল'এরসাথে কথা না বলতেন, হয়তো মনে থাকতো, আরে মন তো ওদিকেই পড়ে ছিলো সারাক্ষণ।
গিন্নিকে ডেকে কিছু বলতে তার আর সাহস হলোনা, ঠিক আছে আগামী কাল এনে খাওয়াবো ভেবে অবশেষে শুকনো মুড়ি আর জল খেয়ে পেটে কিল মেরে শুয়ে পড়লেন পাশের ঘরে, একসাথে শোয়া এড়ালেন পাছে রাতে ঝগড়া শুরু হয় এই ভয়ে। নিখিল বাবুর এ হেন শীতল আচরণ গিন্নি সহ্য করতে না পেরে পরেরদিন সকালে ভীষণ অভিমানে ব্যাগ গুছিয়ে হাঁটা দিলেন মেয়ের বাড়ি।

সকালে উঠে গিন্নিকে না দেখতে পেয়ে বুঝলেন মেয়ের বাড়ি গিয়েছেন, মনে মনে ভাবলেন, ভালোই হলো, সামনাসামনি হতে হলোনা বলে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন যেন। তবে অন্যান্য বারের মতো আর বিচলিত হলোনা গিন্নির এ হেনো আচরণে। বিয়ের প্রথম প্রথম কিছু হলেই মেজাজ দেখিয়ে আগে যেত বাপের বাড়ি, এখন যায় মেয়ের বাড়ি।
যাকগে, যাক, কদিন থেকে আসুক। গেছে যেমন, ফিরেও আসবে ঠিক তেমন। নিজের ভুলের সাপোর্টে যুক্তি খাড়া করলেন নিজেই...আচ্ছা মানুষ মাত্রই ভুল হয়, এই সামান্য একটা ভুল, ফ্রায়েড রাইস আনেনি বলে...তাই এইভাবে না বলে...রাগ তারও তো আছে, ভেবে ভীষণ রেগে গেলেন তিনি।
ঠিক করলেন এবারে দেখিয়ে দেবেন গিন্নি ছাড়াও কত্তা চলতে পারে। মনের মধ্যে বেজায় জোড় আসে তার, এই জোর তার মনের প্রফুল্লতার। এই জোর তার মনের উৎফুল্লতার। সারাদিন ঘরে একা, কোনো চোরাচোখের চাউনি নেই, ডাকাডাকি নেই, নিশ্চিন্তে চ্যাটিং করা যাবে অনলাইনে।
সকালে পাঠানো ' রজনীগন্ধা 'র ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে ভীষণ খুশি তিনি। প্রোফাইল পিক এ দেখলেন একটা দারুন সুন্দর ফুলদানির মধ্যে রজনীগন্ধা ফুল, গোধূলির সময়ে তোলা ছবি। রজনীগন্ধা নিখিলবাবুর ভীষণ প্রিয়।
এর পর থেকে রোজ মেসেজ আসে রজনীগন্ধার কাছে থেকে এটা সেটা, কেমন আছো কি করছো, ঘুম থেকে উঠেছো, চা খেয়েছো!!! সবসময় প্রতি মুহূর্তে, কেউ এতো খোঁজ নিচ্ছে দেখে ভীষণ ভালো লাগে নিখিল বাবুর।
এদিকে গিন্নি পাঁচ দিন হলো নেই, নিখিল বাবুর অনলাইন চ্যাটিং রমরমিয়ে চললেও প্রতিদিনের রুটিন গন্ডগোল হয়ে গেছে, রোজ বাইরের খাবার খেয়ে খেয়ে তার পটি ক্লিয়ার হচ্ছে না। গিন্নির হাতে সেদ্ধ জলের নরম রুটিই একমাত্র এর ওষুধ। অ্যাসিড ও হচ্ছে আজকাল।
এমন সময় মেসেজ আসে রজনীগন্ধার থেকে, "কেমন আছো! "
..."এই আছি কোনোরকমে বেঁচে" ভীষণ দুঃখের ইমোজি দিয়ে উত্তর দেয় নিখিলবাবু।

"কেন এমন বলছো! কি হয়েছে! আমায় বলবেনা!"

"বৌ ছেড়ে চলে গেলে যা হয়, কয়দিন ধরে আমি নিঃসঙ্গ, আমি একা।"
"ইসসস আহা, চলে গেলো কেন! বৌএর সাথে ঝগড়া হয়েছে?"

"দূর... দিনরাত ফ্যাচ ফ্যাচ কানের ধারে, জীবনটাকে একেবারে যা তা করে দিলো, তাই সেদিন এমন ধমক দিয়েছি কাঁদতে কাঁদতে মেয়ের বাড়ি। " নিজের ইমেজ বজায় রাখার চেষ্টা করলেন তিনি।

"ধমকেছো?? বাবাহ তুমিতো দেখি পুরুষ সিংহ!"

পুরুষ সিংহ শুনলে কার না ভালো লাগে। নিখিল বাবুর একটা আলতো হাসির ইমোজি দিলেন।
"তা বেশ করেছো... বৌকে মাঝে মাঝে ধমকাতে হয়, নইলে মাথায় ওঠে।"
নিখিলবাবু একটু থমকালেন, আশা করেছিলেন ও প্রান্ত থেকে শুনবেন...."মোটেই ঠিক করেননি।" মনে হলো এটা শুনলে মনে হয় ভালো লাগতো তার, তা নয়, বলছে "বেশ করেছো!!"
আবার জিজ্ঞাসা ও প্রান্ত থেকে..."গিন্নি কি খুব ঝগড়ুটে!! "
"আরে আসলে ... দিনরাত খ্যাছর খ্যাছর, ভালো লাগেনা একদম।"
"দিনরাত খিটিমিটি সত্যিই বিরক্তিকর, কি করে সহ্য কোরো এইরকম খিটখিটে মহিলাকে ? "
নিখিল বাবু এবারে আবার একটু থমকালেন, তিনি গিন্নির উপরে রাগ করেন ঠিকই, কিন্তু অন্যরা এসে তাকে বোঝায়, মিল করে নেওয়ার কথা বলেন সেটা নিখিলবাবু উপভোগ করেন, কিন্তু ইনি এইভাবে সরাসরি গিন্নিকে নিয়ে এইভাবে বলছেন!! কেন??
নিখিলবাবুর কেন জানিনা ঠিক ভালো লাগলোনা।বিচিত্র মানুষের মন। গিন্নিকে যদি অপছন্দ করতে হয় সে শুধু মাত্র তিনিই করবেন, কিন্তু কেউ তার নামে খারাপ কিছু বলছে... এটা তার ঠিক ভালো অনুভূতি হলোনা, আসলে গিন্নি মানুষটা তো এমনিতে খারাপ নয়, শুধু একটু...পেট টা আজকাল বড্ড গোঁজ মেরে আছে, ভাবলেন রাতে অফিস ফেরৎ রুটি কিনে আনবেন। যদি কাল শরীরটা ঝরঝরে হয় একটু।
ওপাশ থেকে আবার মেসেজ এলো... " ভালো করেছেন গিন্নিকে এতো প্রশ্রয় দেননি !! এইসব মহিলারা জীবনে শান্তি দিতে পারেনা।"
নিখিলবাবুর এবারে ভুরু কুঁচকে গেলো। এ কি বলছে!! গিন্নি ওত টা খারাপ নয় তিনি জানেন।
"কি হলো কি ভাবছো!! গিন্নি যেমন গেছে যাক গে, ত্যাগ দাও, শান্তিতে থাকো। একাকিত্ব উপভোগ করো। "
সেকি এ বলে টা কি!! নিখিলবাবুর এবারে সত্যিই বেজায় খারাপ লাগলো, যতই গিন্নির উপরে রাগ অভিমান হোক, কিন্তু গিন্নিকে ত্যাগ করবেন তিনি!! এ কি বলছে!!!
কেন জানিনা এই প্রথম তার ভালো লাগলোনা মোবাইল এ চ্যাটিং করতে। হ্যাঁ একটা ইন্টারেস্ট ছিলো, এই বয়সে এসে নতুন করে কারোর কাছ থেকে প্রশংসা শুনতে তো খারাপ লাগেনা আর গিন্নি তো সেই কবেই প্রশংসা করা ছেড়ে দিয়েছিলো। ফোনে এইসব রাতের পরী, দিনের আকাশ, ফুরফুরে বাতাস, এরাই প্রশংসা করতো বলে ভালো লাগতো তার। গিন্নিকে পাত্তা দেননা সেটা বোঝানোর তাগিদে ঘরের কথা বাইরে বলে নিজেকে পুরুষ সিংহ প্রকাশ করতে চেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাই বলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ গিন্নিকে ছোট করুক তিনি এ কদাপি সহ্য করবেন না।
হঠাৎ করে আজ ঘরটা বড্ড শুন্য লাগলো। বড্ড অগোছালো...এলোমেলোও। গিন্নি কে কি তিনি সত্যি পাত্তা দেননা?? নাকি...
মনটা বেজায় খিঁচড়ে গেলো। ঘড়ির দিকে দেখলেন রাত সাড়ে আটটা, দ্রুত প্যান্ট আর পাঞ্জাবী পরে নিলেন। মোবাইলটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি।
©ঝুম্পা
রাত দশটায় দরজা খুলে গিন্নি দেখেন কত্তা মশাই। নিখিলবাবু এক গাল হেসে হাতে ধরা বাক্সটা এগিয়ে দিলো, "তোমার চিলি চিকেন আর ফ্রাইড রাইস।"
গিন্নি কয়েকদিন গুমরে ছিলো, মেয়ে আশস্ত করছিলো মাকে, আজ কত্তাকে সামনে দেখে গিন্নি রাগতে গিয়েও রাগতে পারলোনা। হাতের বাক্সটা না নিয়ে দ্রুত রান্না ঘরের দিকে ঢুকে গেলো। মেয়ে এসে হাসিমুখে বাবার হাত থেকে বাক্সটা নিলো।

রাতে সবাই মিলে চিলি চিকেন দিয়ে ফ্রাইড রাইস খেলেও গিন্নি গরম জলে সেদ্ধ করে চারটে রুটি করে দিয়েছিলো নিখিলবাবুকে। গিন্নির হাতের এই স্পেশাল রুটি খেলে নিখিল বাবুর আবার পটিটা ক্লিয়ার হয়ে শরীরটা ঝরঝরে হয় বেশ।
রাতে শুতে যাওয়ার আগে নিখিল বাবু দেখলেন গিন্নি আর মেয়ে রান্না ঘরে কি কাজ করছে। মেয়ে যেই একটু আড়াল হয়েছে কি উসখুস করতে করতে গিন্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে গদগদ হয়ে বললেন, "মিস ইউ গিন্নি।"
গিন্নি লজ্জা পেলেন ভীষণ। নিখিল বাবু হয়তো আরও কিছু বলতেন, মেয়েকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি শোবার ঘরের দিকে গেলেন। আজ আর ফোন ঘাঁটতে ইচ্ছে হলোনা নিখিলবাবুর, নিজের অন্যায় স্বীকার করেছেন তিনি, ভুল তারই, অন্যের কাছে গিন্নিকে ছোট আর কখনো করবেননা প্রতিজ্ঞা করলেন, তবে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওই রাজনীগন্ধাকে গিয়ে ভদ্র ভাবেই দুই চার কথা শুনিয়ে আসবেন। বুঝিয়ে দেবেন গিন্নিকে নিয়ে এইভাবে ভুলভাল বললে তিনি সহ্য করবেন না কিছুতেই, মোবাইলটা খুললেন, দেখলেন একটু আগেই রজনীগন্ধা লিখেছে "মিস ইউ টুউ..."
কত্তা ভাবলেন বাবাহ কি আদিখ্যেতা , উনি লিখলেন "কারোর দাম্পত্য জীবন নিয়ে এইরকম নেগেটিভ কথা লিখবেন না, পারলে পসিটিভ লিখুন।" বলে ফোন পাশে রেখে দিয়ে গিন্নির জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছেন জানেননা। ©ঝুম্পা
আজ রবিবার, সকালে ঠিক ঠাক প্রাতঃরাশ সেরে ফ্রেস মনে ফোনটা নিয়ে অনলাইন হতেই, টুং করে মেসেজটা এলো রজনীগন্ধার কাছ থেকে, "ভাগ্যিস ঐরকম লিখেছিলাম, সেইজন্য তো চিলি চিকেন আর ফ্রাইড রাইস নিয়ে কাল দৌড়ে এলে।"
মেসেজটা দেখে হাঁ হয়ে গেলেন নিখিল বাবু, রান্না ঘরের দিকে দৌড়ে গেলেন, ওনাকে মোবাইল হাতে দৌড়ে আসতে দেখে গিন্নি এক ভুরু নাচিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালেন সেই বিয়ের প্রথম প্রথমের মত সেই অপূর্ব ভঙ্গিমায়, মেয়ে মুচকি হেসে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেলো। নিখিলবাবু এক গাল হেসে গিন্নির কাছে এসে বললেন" তুমি কবে থেকে এসব শিখলে!!"
গিন্নি মুখ বেঁকালেন..."বারে তুমি একাই পারো নাকি!! এবার থেকে আমিও..."

নিখিলবাবু বুঝলেন কপালে দুঃখ আছে তার। এ দুঃখ তিনি নিজেই ডেকে এনেছেন। গিন্নিকে বোঝাতে বসলেন..."এই গিন্নি না, আমিও আর এসব করবোনা প্রমিস, আর তুমিও এইরকম আর কারোর সাথে চ্যাটিং কোরোনা, খুব বাজে অভ্যেস কিন্তু, সব ফেক, যা কিছু আসল, সবই আমি আর তুমি...।"
©ঝুম্পা মন্ডল






#সংগৃহীত





#অনুগল্প

সংগৃহীত

Address

Ranaghat Dhantala,Nadia
Ranaghat
741201

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dreamful Life posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category