17/02/2025
মনুসংহিতায় বর্ণিত জাতী
সম্প্রতি আমি মনুসংহিতায় “কারাবর” জাতী নিয়ে একটি পোস্ট করেছিলাম। মনুসংহিতায় কারাবর ছাড়াও আরো অনেক জাতীর নাম পাওয়া যায় যাকে পুরাণে বর্ণসংকর বলা হয়েছে, অর্থাৎ বেদে বর্ণিত ব্রাহ্মণ / ক্ষত্রিয় / বৈশ্য / শূদ্র এই জাতীর নিজ জাতী ভিন্ন অন্য জাতীতে সন্তান উৎপাদনের কারণ উৎপন্ন জাতী। আমি এখানে আরো কিছু জাতীর কথা উল্লেখ করলাম যদিও এখন আর এইসব জাতীর আর অস্তিত্ব নেই।
কুক্কুটক ১০.১৮ - শূদ্র পিতা ও নিষাদ (দ্রঃ) মাতার সন্তান। বৈশ্য পিতা ও নিষাদ মাতার সন্তান।
কুণ্ড ৩.১৫৬, ১৫৮, ১৭৪ - ব্রাহ্মণ পুরুষ ও কোন সধবা নারীর গোপনে মিলনজাত সন্তান।
কৈবর্ত ১০.৩৪ -নিষাদ পিতা ও আয়োগব (দ্রঃ) মাতার সন্তান।
ক্ষত্তা ১০.১২ - শূদ্র পিতা, ক্ষত্রিয় মাতা। -- এই কারণে বিদুরকে দুর্যোধন ক্ষত্তা বলে সম্বোধন করতেন।
গোলক ৩.১৫৬, ১৭৪ - ব্রাহ্মণ বিধবার সঙ্গে ব্রাহ্মণের গোপন মিলনে প্রসূত সন্তান।
চণ্ডাল ১০,১২, ১৬ ইত্যাদি - শূদ্র পিতা ও ব্রাহ্মণ মাতার সন্তান। ভাবা যায়, বেদের কালে শূদ্রের ঔরসে ব্রাহ্মণ কন্যার গর্ভে সন্তানের জন্ম! তাও এত বড় সংখ্যায় সেই সব সন্তানেরা জন্ম নিয়েছিল যে সেই সমুদায়ের জন্য আলাদা নাম রাখতে হয়েছিল।
দাস ৮.৪০৮, ৪০৯; ৯.১৪১, ১৪২ ইত্যাদি কৈবর্তের সঙ্গে অভিন্ন। মহাভারতের বিখ্যাতা সত্যবতীর পিতা দাসবংশীয় ছিলেন।
নিষাদ ১০.৮, ১৮ / পারশব ৯.৭৮, ১১.৮ ব্রাহ্মণ ও শূদ্রার বিবাহজাত সন্তান। মহাভারতের একলব্য নিষাদ ছিলেন। একজন নিষাদের তীর বিদ্ধ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ ইহলীলা ত্যাগ করেন।
ভূর্জকণ্টক ১০.২১ ব্রাত্য ব্রাহ্মণ পিতা, ব্রাহ্মণ মাতা। ব্রাত্য ব্রহ্মণ? বেদের কালেও তাহলে ব্রাহ্মণ্যদের পতিত করা হতো। এই কারণেই হয়তো শ্রীকৃষ্ণ বর্ণসংকরের নিন্দা করেছেন। প্রসঙ্গ ক্রমে আমাদের সকলের সকল রসের ধারা প্রনম্য শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরাও কিন্তু ব্রাত্য ব্রাহ্মণ ছিলেন। শোনা যায় যে তাদের পূর্ব পদবী ছিল কুশারি।
ম্লেচ্ছ ২.২৩ - বর্ণাশ্রম বহির্ভূত জাতি। মনু বলেছেন, যে অঞ্চলে কৃষ্ণসার স্বভাবত: বিচরণ করে, তার বাইরের অঞ্চল ম্লেচ্ছদেশ নামে অভিহিত। অর্থাৎ কৃষ্ণসার হরিণ বেদের কাল থেকেই দুর্লভ এবং পূজনীয় ছিল।
রঞ্জক ৪.২১৬ - শূদ্র ও ক্ষত্রিয়ার অবৈধ মিলনের ফলে জাত সন্তান।
ঝল্ল, মল্ল, লিচ্ছিবি, নট, করণ, খস ও দ্রবিড়—এদের পিতা ব্রাত্য ক্ষত্রিয় এবং মাতাও তদ্রূপ (১০/২২)।
© সংগ্রহীত
==================
ছবি : ইন্টারনেট