22/07/2025
সৎ আচরণেই বাড়বে আপনার আয়ু ও জীবনের বরকত!
সৎ উপদেশ: জীবনকে বরকতময় করার সহজ পথ।
আমরা সবাই দীর্ঘ, সুস্থ ও বরকতময় জীবন কামনা করি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি সৎকর্ম এবং সুন্দর আচরণই আমাদের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমে এবং তাঁর রাসূল (সা.) অসংখ্য হাদিসে এর প্রমাণ দিয়েছেন।
আসুন, এই মূল্যবান নির্দেশনাগুলো আমরা আমাদের জীবনে ধারণ করি:
* আত্মীয়তার বন্ধন মজবুত রাখুন: আপনার পরিবারের সদস্য, রক্তসম্পর্কের মানুষ – তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন, খোঁজখবর নিন, বিপদে পাশে দাঁড়ান। ছোট ছোট উপহার বা একটি ফোন কলও সম্পর্ককে মজবুত করে। মনে রাখবেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে রিজিক প্রশস্ত হয় এবং আয়ু বাড়ে।
* মাতা-পিতার প্রতি বিনয়ী হন: তাঁদের প্রতি সব সময় বিনয়ী থাকুন, তাঁদের খেদমত করুন এবং তাঁদের দোয়া নিন। তাঁদের সন্তুষ্টি আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার চাবিকাঠি। মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার ছাড়া অন্য কোনো কিছু হায়াত বাড়াতে পারে না।
* প্রতিবেশী ও সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হন: আপনার প্রতিবেশী ভালো থাকুক, এটা আপনি যেমন চান, তেমনি তাদের প্রতি আপনারও দায়িত্ব আছে। হাসিমুখে কথা বলুন, বিপদে সাহায্য করুন। পথেঘাটে বা কর্মক্ষেত্রে সবার সাথে সুন্দর আচরণ করুন। আপনার একটি ভালো আচরণ হয়তো কারো দিনের সেরা মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার রাখলে দেশ আবাদ থাকে এবং আয়ু বৃদ্ধি পায়।
* সৎ নিয়ত ও সৎ আমল: প্রতিটি কাজের আগে আপনার নিয়ত (উদ্দেশ্য) ঠিক করুন। সৎ নিয়ত থাকলে ছোট কাজও ইবাদতে পরিণত হয়। কারো উপকার করার সুযোগ পেলে হাত বাড়ান, কারো মুখে হাসি ফোটাতে পারলে সেটাই আপনার জন্য এক বড় সওয়াব। কেবল সৎকর্মই আয়ু বৃদ্ধি করে।
* নিয়মিত দোয়া করুন: আল্লাহ তায়ালার কাছে বিনয়ের সাথে আপনার প্রয়োজন জানান। দোয়ার মাধ্যমে তাকদির পরিবর্তন হয়, রিজিক প্রশস্ত হয় এবং মনের শান্তি আসে।
আসুন, আমরা সকলে এই সৎগুণগুলো চর্চা করি। আমাদের আচরণে শালীনতা, বিনয় এবং ভালোবাসা প্রকাশ করি। কারণ, এই কাজগুলোই আমাদের হায়াতে বরকত এনে দেবে এবং আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে তুলবে, ইনশাআল্লাহ।
কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা: সৎ আচরণের অকাট্য প্রমাণ
উপরোক্ত সৎ উপদেশগুলো কেবল আমার কথা নয়, বরং পবিত্র কুরআন ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। নিচে তার কিছু অকাট্য প্রমাণ পেশ করা হলো:
কুরআনের নির্দেশনা:
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পারস্পরিক সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলেন:
> "আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং কোনো কিছুকে তাঁর সাথে শরীক করো না; এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো; আর আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্বস্থ সঙ্গী, মুসাফির এবং তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে তাদের সাথেও সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।"
> (সূরা আন-নিসা, ৪: ৩৬)
>
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি তাঁর ইবাদতের পরই মানুষের সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন, যা এর গুরুত্ব প্রমাণ করে।
হাদিসের নির্দেশনা:
নবী কারীম (সা.) তাঁর অসংখ্য হাদিসে সদ্ব্যবহার ও সৎকর্মের ফলস্বরূপ আয়ু ও রিজিকের বরকতের কথা উল্লেখ করেছেন:
* রিজিক ও আয়ু বৃদ্ধির মাধ্যম আত্মীয়তার বন্ধন:
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"যে ব্যক্তি চায় যে, তার জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে।"
(সহীহ বুখারী, হাদিস: ৫৯৮৬, ৫৫৬০)
* মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের অনন্য প্রভাব:
হযরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন:
"দোয়া ছাড়া অন্য কোনো কিছু ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার ছাড়া অন্য কোনো কিছু হায়াত বাড়াতে পারে না।"
(সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ২১৩৯)
* প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহারের সুফল:
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন:
"আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা, চরিত্র সুন্দর করা এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার রাখায় দেশ আবাদ থাকে এবং আয়ু বৃদ্ধি পায়।"
(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ২৫২৫৯)
* সৎকর্মের মাধ্যমে আয়ু বৃদ্ধি এবং দোয়ার ক্ষমতা:
সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন:
"কেবল সৎকর্মই আয়ু বৃদ্ধি করে এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষের অসৎকর্মই তাকে রিজিক-বঞ্চিত করে।"
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৯০)
এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় যে, 'হায়াত বৃদ্ধি' বলতে শুধু দীর্ঘ জীবনকেই বোঝায় না, বরং জীবনের বরকত, কাজের সফলতা, এবং গুণগত মান বৃদ্ধিকেও বোঝায়। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই সৎকর্মগুলো করার তাওফিক দান করুন আমীন।