07/04/2025
এক নজরে পুরো গল্প।।
চাকরীর বিজ্ঞপ্তি হয়েছিল। পরীক্ষা দিয়েছিল ২২ লক্ষ। নিয়োগ হল ২৬ হাজারের কাছাকাছি। ২২ লক্ষের মধ্যে ২৬ হাজার বাদে বাকীরা দেখলো নিয়োগে স্বচ্ছতা নেই। তারা বঞ্চিত বলে কোর্টে গেল৷ তাদের উকিল হলেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
বাগ কমিটি তৈরি হল, তারা রিপোর্ট দিল ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে নিয়োগে। সিবিআই তদন্তের আদেশ হল। সিবিআই শিক্ষামন্ত্রীর বান্ধবীর খাটের তলা থেকে ৫০ কোটি উদ্ধার করল। শিক্ষামন্ত্রী সহ গোটা শিক্ষা দপ্তর জেলে গেল।
সিঙ্গেল বেঞ্চ বল্লো ৬ হাজারের কাছাকাছি টাকা দিয়ে চাকরী কিনেছে, তাদের চাকরী বাতিল করে দেওয়া হল। বাকিরা যোগ্য। রাজ্য সরকার মানল না। তারা সুপ্রিম কোর্টে গেল৷ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা ফেরালো। ডিভিশন বেঞ্জ প্যানেল বাতিল করে দিল।
এবার মামলা গেল সুপ্রিম কোর্টে। ওই ২২ লক্ষ বঞ্চিত চাকরীপ্রার্থীদের উকিল হিসেব দিল ১০ হাজারের কিছু বেশি টাকা দিয়ে চাকরী পেয়েছে, এস এস সি মেনে নিল টাকা নিয়ে চাকরী বিক্রি হয়েছে কিন্তু তাদের স্বীকৃত টাকা দিয়ে চাকরী প্রাপকের সংখ্যা বল্লো ৫ হাজারের কিছু বেশি। সিবিআই তদন্ত করে হিসেব দিল ৮ হাজারের কিছু বেশি টাকা দিয়ে চাকরী কিনেছে।
হাই কোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চ হয়ে সুপ্রিম কোর্ট সবাই এস এস সি কে বল্লো আপনারা পরীক্ষা নিয়েছেন। নিয়োগ করেছেন, সঠিক তথ্য দিন কত জন টাকা দিয়ে চাকরী পেয়েছেন আর কত জন্ টাকা না দিয়ে পেয়েছেন। এস এস সি জানালো সঠিক লিস্ট দেওয়া অসম্ভব কারন ও এম আর শিট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এমনকি স্ক্যান কপিও সংরক্ষন করা নেই।
সুপ্রিম কোর্ট উপায়ন্তর না দেখে প্যানেল বাতিল করলো।
গল্প টা ২৬ হাজারের চাকরী যাবার না৷ গল্প টা ২২ লক্ষের। এই ২২ লক্ষের মধ্যে যে কেউ যোগ্য হতে পারে যারা চাকরী পায়নি। আবার এই ২৬ হাজারের মধ্যে যে কেউ হতে পারে যে টাকা দিয়ে চাকরী পেয়েছে।
যারা নিয়োগ করেছে সেই এস এস সি, একমাত্র জানে ২২ লক্ষের মধ্যে কারা চাকরী পেতে পারত, কারা টাকা দিয়ে পেয়েছে আর কারা টাকা দিয়ে পায়নি।
গল্পটা ২২ লক্ষের বঞ্চিত হওয়ার। ২৬ হাজারের ( যার মধ্যে টাকা দিয়ে চাকরী কেনা লোকজনও আছে) চাকরী যাবার না।
কাঁই কাঁই না করে ভাবুন। না না ভাবা প্র্যাক্টিশ করার দরকার নেই। সেই কোয়ালিটি আর নেই বাঙালির। শুধু এই ব্যাপারটা ভাবুন।
SSC সংক্রান্ত কয়েকটি পরিসংখ্যান একনজরে:
২০১৬ সালের এসএসসি-র
মোট নিয়োগপত্র = ২৫,৮৪৪
তার মধ্যে, মোট নিয়োগ = ২৫,৭৫৩
ইনসার্ভিস = ৪২৫ (এঁরা আগের কর্মস্থলে যোগদান করতে পারবেন)
ইনসার্ভিস বাদে মোট নিয়োগ = ২৫,৭৫৩ - ৪২৫ = ২৫,৩২৮
ক্যানসার রোগী সোমা দাস বাদ দিলে থাকছে = ২৫,৩২৭
∴ সর্বমোট চাকরি বাতিল = ২৫,৩২৭
এই ২৫,৩২৭ জনের মধ্যে নিম্নোক্ত ক্যাটাগরিতে অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন যাঁরা:
(ক) ওএমআর কারচুপি এবং র্যাঙ্কজাম্প করে চাকরি পেয়েছেন
= ৪,৩২৭
(খ) SSC-র সুপারিশ ছাড়াই চাকরি পেয়েছেন = ২,৮২৩
(গ) প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও চাকরি পেয়েছিলেন = ১,১৭৪
(ক) + (খ) + (গ) = ৮,৩২৪
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই অযোগ্য চাকরিপ্রাপ্তদের বেতন ফেরত দিতে হবে বাৎসরিক ১২% সুদ সমেত।
মনে রাখবেন, ২৫,৩২৭ এর মধ্যে ৮,৩২৪ জন অযোগ্য কথাটার মানে এই নয় যে বাকি ১৭,০০৩ জন যোগ্য। এই ১৭,০০৩ জন যোগ্য না অযোগ্য এটা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। সংবিধানের আর্টিকল ১৪ এবং ১৬ অনুযায়ী এঁদের নিয়োগপ্রক্রিয়া না হওয়ার দরুণ এঁদের চাকরি খোয়াতে হচ্ছে।