08/08/2025
🌸 শ্রদ্ধাঞ্জলী 🌸
শ্রাবণ মাসের শেষভাগ।বৃষ্টির ধারা যেন থেমে থেমে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে একান্ত কিছু স্মৃতি।
তৃষা চুপ করে বসে, জানালার পাশে, হাতে ধরা একটি চিঠি।
চিঠির প্রথম লাইনে লেখা —
“হে বন্ধু, বিদায়…”
তারপর আর কিছু নয়।
তৃষা জানে, কিছু শব্দ না বলেও অনেক কিছু বোঝানো যায়।
কিছু ভালোবাসা বলার নয়— শুধুই অনুভবের।
এক বছর আগেও এই দিনেই অর্ণব বলেছিল—
“তুমি যে আমার, এ জানি
তবু যেন কেন বলিতে ভয় পাই…”
তাদের প্রেমটা ছিল অদ্ভুত এক সুরেলা ভাসা,
যেন রবীন্দ্র-গীতের মতো— গভীর অথচ অপ্রকাশ্য।
তৃষা ভাবত, “তোমার সাথে আমার হৃদয় বাঁধা আছে সেই সুতোয়—যা ছিঁড়ে না, শুধু চোখে দেখা যায় না।”
একদিন তারা হাঁটছিল শান্তিনিকেতন-এর পথে।
চারপাশে বৃক্ষ, ঘাসে জল, আর বাতাসে রবির গান ভেসে আসছিল— “আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ,
যদিও পাইনি তোমারে…”
সেদিনই তৃষা চুপ করে বলেছিল—
“আমরা দুজন ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের প্রতি অনাদিকালের হৃদয় উৎস হতে…”
অর্ণব শুধু তাকিয়েছিল।কোনো উত্তর দেয়নি।
কিন্তু সেই চোখেই ছিল প্রতিশ্রুতির মতো এক নীরবতা।
তবে প্রতিশ্রুতি সবসময় পূরণ হয় না।একদিন অর্ণব চলে গেল।না রাগ, না অভিমান— শুধু দূরত্ব।
রবীন্দ্রনাথ যেভাবে বলেন—
"সে যে আমারে ফেলিয়া চলে গেছে,
আমি তাকে ভুলিতে পারি না…"
তৃষা জানে, সে আর ফিরবে না।
তবু তৃষা প্রতিদিন সেই গান শোনে— “তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম…”
সে জানে, “তুমি নেই।তবু রয়ে গেছো—
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে।”
আজকের শ্রাবণ যেন আরও ভারী লাগে।
চোখের জলে ভেজে যায় ডায়েরির পাতা।
তৃষা লেখে—“বিদায়ে যদি থাকে ভালোবাসা,
তবে দেখা না হোক আর কখনো…”
সে মনে মনে ভাবে—“তুমি যে হৃদয়ের একান্ত গোপন কথা,
প্রকাশ নয়— উপলব্ধি।”
সেই শেষ মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠ ভেসে আসে তার কানে—
“স্মরণে রেখো যদি দূরে চলে যাই…”
বৃষ্টি থেমে যায়,কিন্তু শ্রাবণ তার মনের ভিতরে রয়ে যায় চিরকাল।
ভালোবাসা ভাঙে, মানুষ দূরে সরে যায়,
তবু কিছু অনুভব থাকে—
রবীন্দ্রনাথের গান হয়ে, কবিতার ছায়া হয়ে—
একখণ্ড শ্রাবণ হয়ে হৃদয়ে।
লেখায় - কোয়েল।
কারুকার্যে - চন্দন।
#আবেগী_পেন্সিল