22/08/2025
৮৫ বছরের পুরনো শিরিস গাছের প্রা*ণ*স*ঙ্ক*ট!
উন্নয়নের নামে কি শেষ হয়ে যাবে এক জীবন্ত ইতিহাস?
আলিপুরদুয়ার জেলার ২ নম্বর ব্লকের মহাকালগুড়ি অঞ্চলের বড়োচৌকিরবস গ্রামের আইটিডিপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় দাঁড়িয়ে আছে এক অমর সাক্ষী—প্রায় ৮৫ বছরের পুরনো এক শিরিস গাছ।
বিদ্যালয় তৈরির বহু আগেই জন্মেছিল সে। মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা ক্ষুদ্র চারাটি আজ পরিণত হয়েছে মহীরুহে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের ছাত্রছাত্রী তার ছায়ায় বসে পড়াশোনা করেছে, খেলেছে, স্বপ্ন দেখেছে। সূর্যের তাপ যখন অসহনীয়, তখন তারই বিশাল সবুজ পাতার আড়ালে শিশুরা শান্তি খুঁজে পেয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি-অতলান্ধকারেও এই গাছ যেন বুক চিতিয়ে বিদ্যালয়কে আগলে রেখেছে।
এটি শুধু একটি গাছ নয়—এটি বিদ্যালয়ের আত্মা, স্থানীয় মানুষের আবেগ, এবং ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী।
কিন্তু আজ সেই গাছ বিপদে!
সম্প্রতি দুই ব্যক্তি প্রস্তাব দিয়েছেন— গাছটি কেটে বিক্রি করে তার টাকায় মাঠ ভরাট করা হোক।
তাদের যুক্তি—বর্ষার দিনে মাঠে জল জমে থাকে।
এমন প্রস্তাবে শুরু হয়েছে তীব্র ক্ষোভ আর বিতর্ক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম সেন স্পষ্ট জানিয়েছেন “বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য ‘আমার পড়া আমার সমাধান’ প্রকল্পের ১০ লক্ষ টাকাই যথেষ্ট। উন্নয়নের নামে গাছ কেটে ফেলার কোনও দরকার নেই। বিদ্যালয়কে সাজানো যায় গাছ বাঁচিয়েই। তাছাড়া এই বিদ্যালয় একটি ভোটকেন্দ্র ও নেচার ক্লাবের অঙ্গীকার: গাছ বাঁচাতেই হবে!
আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাব ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে ।
সহ-সম্পাদক অরিজিৎ মালাকার বলেন
“আমরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। প্রশাসনকেও জানানো হবে। এই গাছ শুধু ১০০ নয়, ২০০ বছর বেঁচে থাকুক—সেটাই আমাদের লড়াই।”
আজ প্রশ্নটা সবার— যে গাছ ৮৫ বছর ধরে শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে অসংখ্য মানুষকে অক্সিজেন দিয়েছে, তাকে কি কেবল কিছু টাকার বিনিময়ে কেটে ফেলা হবে?
যে গাছ এতদিন ধরে বিদ্যালয়কে আঁচলের মতো আগলে রেখেছে, তার বুকে কি কুঠার পড়বে?
এই শিরিস গাছ শুধু কাঠ নয়, শুধু পাতা নয়—
👉 এটি শিশুদের হাসি,
👉 এটি শিক্ষকদের ভরসা,
👉 এটি মাটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা।
একটি গাছ কাটা মানে শুধু একটি কাণ্ড ফেলা নয়,
👉 মানে ইতিহাস মুছে দেওয়া,
👉 মানে ভবিষ্যৎকে অক্সিজেনবিহীন করে দেওয়া।
৮৫ বছরের এই শিরিস কি টিকে থাকবে? নাকি মানুষের লোভের কাছে হেরে যাবে প্রকৃতির মহীরুহ?
উত্তরটা আমাদেরই দিতে হবে—আজই, এখনই।