
31/05/2025
দুঃখ কাকে বলে তা প্রায় সবই পেয়েছিলেন কবিগুরু এক জীবনে । স্ত্রী মারা গেলেন কবির ৪১ বছর বয়সে। কবির ছিল তিন মেয়ে দুই ছেলে। রথীন্দ্রনাথ,শমীন্দ্রনাথ, বেলা,রানী, অতসী। স্ত্রীর পর অসুস্থ হয়ে মারা গেল রানী । এরপর ছোট ছেলে শমী কলেরায় মারা গেল। পুত্র শোকে কবি লিখলেন “আজ জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে।”কবির মনে হল এই জ্যোৎস্না রাতে বনে গেলে তার চলবে না। বরং তাকে জেগে থাকতে হবে যদি বাবার কথা মনে পড়ে শমীর। যদি সে ফিরে এসে বাবাকে দেখতে না পায়। তাই কবি লিখলেন “আমারে যে জাগতে হবে, কি জানি সে আসবে কবে, যদি আমায় পড়ে তাহার মনে”।। রানীর জামাই কে পাঠিয়েছিলেন বিলেতে ডাক্তারি পড়তে কিন্তু তিনি না পড়েই ফিরে আসেন। বড় মেয়ের জামাইকে পাঠিয়েছিলেন বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে। তিনিও না পড়েই ফিরে আসেন। ছোট মেয়ের জামাই কেউ পাঠিয়েছিলেন আমেরিকার কৃষিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতে। লোভী জামাই কবিকে বারবার টাকা চেয়ে চিঠি দিতেন। কবি লিখলেন “জমিদারি থেকে যে টাকা পাই সবটাই তোমাকে পাঠাই”। দেশে ফেরার কিছুদিন পর ছোট মেয়েটাও মারা গেল। সবচাইতে কষ্টের মৃত্যু হয় বড় মেয়ের। বড় জামাই বিলেত থেকে ফেরার পর ছোট জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। মেয়ে বেলা হয়ে পড়েন অসুস্থ। অসুস্থ মেয়েকে দেখতে কবিগুরু প্রতিদিন গাড়ি করে মেয়ের বাড়ি যেতেন। তখন কবিকে যতরকম ভাবে অপমান করা যায় বড় জামাই তা করতেন। কবির সামনেই টেবিলে পা তুলে বসে সিগারেট খেতেন। তবুও কবি প্রতিদিনই মেয়েকে দেখতে যেতেন। একদিন কবি যাচ্ছেন মাঝপথে শুনলেন বেলা মারা গেছে। কবি শেষ দেখা দেখতে আর গেলেন না, মাঝপথ থেকেই ফিরে এলেন বাড়ি। হৈমন্তীর গল্প যেন কবির মেয়েরই গল্প। এই শোক কতটা গভীর ছিল তা কবির কলম থেকে বের হল। তিনি লিখলেন “আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে, তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।।” কবির মৃত্যু হল অতিমাত্রায় কষ্ট সহ্য করে। প্রস্রাবের প্রদাহে। কি কারনে যেন কবি বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথের কাছ থেকে শেষ বিদায়টাও পাননি। দূর সম্পর্কের এক নাতনি ছিল কবির শেষ বিদায়ের ক্ষণে। কবি জমিদার ছিলেন সেই গল্প সকলেই জানে। কিন্তু কবির জীবনের এই দুঃখের কথা ক’জন জানেন ? প্রথম যৌবনে যে গান লিখলেন এটাই যেন কবির শেষ জীবনের সত্যি হয়ে গেল। “আমিই শুধু রইনু
বাকি। যা ছিল তা গেল চলে, রইল যা তা কেবল ফাঁকি”।।
লেখা : সংগৃহীত