19/08/2025
আজকে যেখানে মায়াপুর ইসকন অবস্থিত, সেই মায়াপুরের ইতিহাস কিন্তু বাংলার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১২০৪ সালে এই নবদ্বীপেই হয় তূর্কী হামলা। যে হামলায় বাংলার সেন বংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছিল। বখতিয়ার খলজি লক্ষণ সেনকে হারিয়ে, নবদ্বীপ দখল করেন। এবং তখন থেকেই বাংলায় শুরু হয় ইসলামিক শাসন।। একদিকে মুসলিম শাসন, অন্যদিকে হিন্দু সমাজের প্রবল জাতপাত— এই দুইয়ের মাঝে বাঙালি হিন্দুকে পথ দেখিয়েছিলেন নিমাই। তাঁর পিতা জগন্নাথ মিশ্রের ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। পিতার গুণ যে, পুত্রের মধ্যেও ভরে ভরে ছিল তা বোঝা গেছিল অল্প বয়সেই। যখন তিনি তখনকার দিগ্বিজয়ী তার্কিক পণ্ডিত কেশব কাশ্মিরীকে তর্কশাস্ত্রে হারিয়ে দিয়েছিলেন। তবে নিমাই কেবল পণ্ডিত-ই ছিলেন না। ছিলেন দূর্ধর্ষ লাঠিয়ালও। শত্রুকে পরাজিত করতে হাতে অস্ত্র তুলে নিতেও দুবার ভাবতেন না।। নবদ্বীপের শাসক চাঁদ কাজীর-ও ক্ষমতা হয়নি নিমাইকে আটকানোর।
শোনা যায়, একবার কাজী নাম সংকীর্তনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু মহাপ্রভু থোড়াই পাত্তা দেন ? নবাবের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, তিনি সংকীর্তন চালিয়ে যেতে থাকেন দিনের পর দিন। সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভারতে প্রথম আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা এখান থেকেই হয়েছিল। সেদিন কাজীর আইন অমান্য করে লক্ষ লক্ষ ভক্তের এক বিরাট শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু। নবদ্বীপের রাজপথে হরিনাম সংকীর্তন করতে করতে সেই শোভাযাত্রা এগিয়ে গেছিল কাজীর বাড়ির দিকে।। এটিই পরবর্তী সময়ে নগর কীর্তন নামে পরিচিত হয়।।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বুঝতে পেরেছিলেন, সনাতন ধর্মকে রক্ষা করতে হলে দরকার একটা সার্বিক ধর্মীয়-সামাজিক আন্দোলন। যেটা সমস্ত জাতিভেদ নষ্ট করে, এক করে দেবে হিন্দুদের। আজকের বৈষ্ণব দর্শন তো তার সেই ভাবনারই ফসল। তিনি যে সময়ে, সমস্ত বেড়াজাল ভেঙে এই কথা বলেছিলেন, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে তা ছিল রীতিমতো বৈপ্লবিক। সমস্ত জাতিভেদ উপেক্ষা করে সমাজের তথাকথিত নিন্ম বর্গের মানুষদের বুকে জড়িয়ে ধরে আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। শ্রীচৈতন্যের ভক্তি ডোরে বাঁধা পড়ে বাঙালি জাতি যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। তার আবির্ভাব নবদ্বীপকে সারা ভারতের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় মানবতাবাদ চর্চার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। নতুন করে জেগে উঠেছিল বাংলার সাহিত্য ও ধর্ম। এই মানুষটাকে বিপ্লবী বলবনা তো কাকে বলব বলুন!