28/04/2025
পুরী জগন্নাথ মন্দির ভারতের ওড়িশা রাজ্যের পুরী শহরে অবস্থিত একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির। এই মন্দিরটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার জগন্নাথ, তাঁর ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রা-র উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত।
ইতিহাস:
মন্দিরটি ১২শ শতকে গঙ্গ বংশের রাজা অনন্তবর্মণ চোড়গঙ্গদেব নির্মাণ করেন।
এটি চতুর্ধাম তীর্থের একটি, যা হিন্দুদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র স্থান (অন্য তিনটি হলো দ্বারকা, বদরীনাথ ও রামেশ্বরম)।
স্থাপত্যশৈলী:
মন্দিরটি ক্লাসিকাল কল্পবতী কাঠ ওড়িশা স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত।
প্রধান মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৬৫ মিটার, এবং এর উপরে একটি বিশাল চূড়া রয়েছে।
মন্দিরটি চারটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত: ভীম চুড়া (শিখর), জগমোহন (প্রবেশদ্বার), নাতমন্দির এবং ভোগমন্ডপ।
দেবতা ও রথযাত্রা:
জগন্নাথ দেবকে এখানে কাঠের মূর্তি হিসেবে পূজা করা হয়, যা প্রতি ১২-১৯ বছরে একবার নবকলেবর অনুষ্ঠানে পরিবর্তন করা হয়।
সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসব হলো রথযাত্রা, যেখানে তিন দেবতাকে বিশাল রথে করে গুণ্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই উৎসবে অংশ নেন।
অদ্ভুত বিষয়:
মন্দিরের উপরে পতাকা সবসময় বাতাসের বিপরীত দিকে ওড়ে।
মন্দিরের ছায়া মধ্যাহ্নে মন্দির চত্বরে পড়ে না।
প্রতিদিন ভোগ রান্না হয় এবং সেই ভোগ কখনও কম পড়ে না বা বেশি থাকে না – এটিকে এক অলৌকিক ঘটনা হিসেবে ধরা হয়।
আরও কিছু চমকপ্রদ ও আধ্যাত্মিক তথ্য দিই পুরী জগন্নাথ মন্দির সম্পর্কে:
১. দ্বার সব সময় বন্ধ থাকে না – কিন্তু কেউ রাতের পর ঢুকতে পারে না
প্রতিদিন রাত ৮টার পরে মন্দিরের প্রধান দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং ভোর ৫টার আগে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। বিশ্বাস করা হয়, এই সময়ে দেবতারা বিশ্রাম নেন।
২. সুদর্শন চক্র
মন্দিরের উপরে একটি সুবিশাল ধাতব চক্র (নীলচক্র) স্থাপন করা হয়েছে, যার উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। এটি যেদিক থেকে দেখা হোক না কেন, দেখা যায় যেন চক্রটি দর্শনার চোখের দিকে মুখ করে রয়েছে। এটা অপটিক্যাল ইলিউশন হলেও অনেকের কাছে এটি এক অলৌকিক বিষয়।
৩. সাগরের শব্দ মন্দির চত্বরে ঢোকে না
আপনি যদি সিংহদ্বার (প্রধান প্রবেশপথ) অতিক্রম করেন, তাহলে সমুদ্রের গর্জন হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যাবে। আবার মন্দিরের বাইরে বেরোলেই সেই শব্দ আবার ফিরে আসে।
৪. ভোগ রান্না পদ্ধতি
ভোগ ৭টি হাঁড়িতে একটার উপর আরেকটা রেখে রান্না করা হয়। বিস্ময়করভাবে, উপরের হাঁড়ির খাবার আগে সিদ্ধ হয়, তারপর নিচেরগুলো। এই বিজ্ঞানবিরুদ্ধ ব্যাপার এখনও ব্যাখ্যার বাইরে।
৫. রথযাত্রার দিন দেবতারা জ্বরগ্রস্ত হন!
রথযাত্রার আগে ‘স্নানযাত্রা’ নামক উৎসবে দেবতাদের জলস্নান করানো হয়। এরপর দেবতারা “জ্বর” পান এবং ১৫ দিনের জন্য ‘অলভ্য’ হন – এ সময় মন্দিরে তাঁদের দর্শন পাওয়া যায় না।
৬. বিদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ
অহিন্দু বা বিদেশি পর্যটকরা এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না। তবে তারা বাইরে থেকে দর্শন করতে পারেন এবং জগন্নাথ দর্শনের জন্য “রঘুনন্দন গ্রন্থি” নামক স্থানটি ব্যবহার করতে পারেন।