
31/10/2024
দীপাবলি উদযাপনের ইতিহাস
দীপাবলি, যাকে আলোর উৎসব বলা হয়, হিন্দুদের অন্যতম প্রধান উৎসব। এর উদযাপন প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। এই উৎসবটির ইতিহাস এবং উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত এবং কিংবদন্তি রয়েছে।
প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ এবং পুরাণ
রামায়ণ: দীপাবলির উদযাপন শুরু হয়েছিল ত্রেতা যুগে যখন ভগবান রাম তাঁর স্ত্রী সীতা এবং ভাই লক্ষ্মণের সঙ্গে ১৪ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। অযোধ্যার মানুষরা তাদের আগমনের আনন্দে পুরো শহরকে প্রদীপ দিয়ে আলোকিত করেছিল। সেই থেকে দীপাবলি আলোর উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
মহাভারত: আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, দীপাবলির উৎসব শুরু হয়েছিল যখন পাণ্ডবরা তাদের ১৩ বছরের বনবাস এবং অজ্ঞাতবাস শেষে ফিরে এসেছিল। তাদের প্রত্যাবর্তনের আনন্দে হস্তিনাপুরের মানুষজন প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসব পালন করেছিল।
শ্রীকৃষ্ণ ও নারকাসুর: আরেকটি প্রচলিত কাহিনী হলো, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দুষ্ট দানব নারকাসুরকে বধ করে প্রজাদের মুক্ত করেছিলেন। এই বিজয়ের আনন্দে প্রজারা প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং আনন্দ করে দীপাবলি উদযাপন শুরু করেছিল।
লক্ষ্মী পূজা: ভগবান বিষ্ণুর স্ত্রীরূপে দেবী লক্ষ্মীকে পূজা করার প্রথা রয়েছে। এই দিনে দেবী লক্ষ্মী সমুদ্র মন্থন থেকে উঠেছিলেন এবং দুনিয়ায় ধন-সম্পদ, সৌভাগ্য, এবং সমৃদ্ধি বিতরণ করেছিলেন। এই দিনটি তার আগমনকে স্মরণ করে পূজিত হয়।
জৈন ধর্ম: জৈন ধর্মের মতে, দীপাবলি হলো সেই দিন যেদিন মহাবীর স্বামী তাঁর নির্বাণ লাভ করেছিলেন। এই উপলক্ষে জৈন ধর্মাবলম্বীরা দীপাবলি উদযাপন করেন।
শিখ ধর্ম: শিখদের জন্যও দীপাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি হলো সেই দিন যখন ষষ্ঠ গুরু, গুরু হরগোবিন্দ সাহেব মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের বন্দী থেকে মুক্তি পান। এই ঘটনাটি উপলক্ষে শিখরা দীপাবলি উদযাপন করে।
দীপাবলি উদযাপনের সুনির্দিষ্ট শুরু সময়টি সঠিকভাবে জানা যায় না, তবে এটি স্পষ্ট যে এই উৎসবটি হাজার হাজার বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে, যেমন রামায়ণ এবং মহাভারতে দীপাবলি উদযাপনের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা প্রমাণ করে যে এই উৎসবটি প্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে রয়েছে।
দীপাবলি, প্রাচীন ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে জড়িত একটি বিশেষ দিন। এর উৎপত্তি এবং ইতিহাস বিভিন্ন ধর্মীয় কাহিনী এবং কিংবদন্তির সাথে সম্পৃক্ত। যুগ যুগ ধরে এই উৎসবটি আলোর মাধ্যমে অন্ধকারকে দূর করে আনন্দ এবং সুখের বার্তা নিয়ে আসে। বাংলায়ও দীপাবলি অত্যন্ত উৎসাহ ও আনন্দের সঙ্গে উদযাপিত হয়, যা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এক ঐতিহ্যবাহী উৎসব।