10/07/2025
এক ব্যতিক্রমী আদিবাসী যুবকের লড়াই--
অযোধ্যা পাহাড়ের বুকে সামান্য কিছু সামর্থ্য নিয়ে এক লড়াইয়ে নেমেছেন।কতো না পাওয়ার মাঝেও লড়াই থামেনি। একসময় খড়ের ছাউনি ছিল আচমকা ঘূর্ণিঝড়ে তা তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু দমাতে পারেনি তাকে, সেখান থেকেই আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করলেন।
তিনি মদন হাঁসদা।সুর্জনডি,সাহারজুড়ি,অযোধ্যা পাহাড়ে বাড়ি। পিছিয়ে থাকা পরিবাররর শিশুদের পড়াশোনার আঙিনায় নিয়ে আসার জন্য শুরু করলেন-- সিধু কানু শিক্ষা নিকেতন। যাত্রা শুরু হয়েছিল 2022 সালের শেষের দিকে মাঝে একবার কালবৈশাখীর ঝড়ে সম্পূর্ণ ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই মনের জেদ যেন তাকে আরও চেপে বসে। কোনোমতে চালের ব্যবস্থা করে দুটো বালকবাস এবং শ্রেণিকক্ষ তৈরি করেছেন।
আবাসিকের সংখ্যাও কম নয় ১২০ জন । শিক্ষক আছেন 6 জন, রান্নার জন্য রয়েছেন একজন। সকালে প্রাতরাশের পর আটটা থেকে শুরু হয়ে যায় বিদ্যালয়। দুপুর বারোটা পর্যন্ত চলে এদের পঠন পাঠন। মধ্যাহ্ন ভোজের পর আড়াইটার থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত আবার পড়াশোনা হয়। তারপর খেলার ছুটি ,সন্ধ্যা বেলা হালকা টিফিন করে আবার পড়াশুনা। রাতে 9 টায় খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রাম। প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করানো হয়। পড়াশোনার সাথে চলে সাংস্কৃতিক চর্চা ।সাঁওতালি ঐতিহ্য মেনে তাদের সাঁওতালি নাচ, গান, বাদ্যযন্ত্রের সাথে পরিচয় করানো হয়।
এদের শ্রেণিকক্ষ চোখে পড়ার মতো ,বড়ো বড়ো জানালা, কোথাও কোনো গ্রিল বা পাল্লা নেই, দুপাশ খোলা, যেদিকে তাকাবেন গাছপালা এবং প্রকৃতির সান্নিধ্য। মাটির দেওয়াল ,মাটির মেঝে এবং সেখানে একেবারে স্থানীয় লাল মাটি দিয়ে রং করা।
আমার চোখ টেনে ছিল, এদের পড়ার ব্যবস্থা দেখে। দুপুর বেলা মানুষ যখন ফ্যানের তলায়, এসি চালিয়ে নানাভাবে বিশ্রাম করছেন ।এরা গাছ তলাতে বসে নিখাদ প্রকৃতির কোলে পড়াশোনায় নিজেরদের ব্যস্ত রেখেছে। আর মদন বাবুকে দেখলাম সেই গাছতলাতেই একটা সবুজ বোর্ড করে, সেখানে অপেক্ষা করে আছেন ।শিশুরা নিজেদের প্রয়োজন মতো তার কাছে যাচ্ছেন এবং তিনি কখনো বোর্ডে কখনো খাতায় নানাভাবে তাদের সাহায্য করে যাচ্ছেন। পাশে একটা খাটিয়াতে বসেছিলেন তাঁর স্ত্রী ,কথাসূত্রে জানা গেল তিনি এই বিদ্যালয়ের রান্নাবান্নার বিভাগটি দেখেন ।নিজের ছোট ছেলে মেয়েদের সামলান এবং সেই সঙ্গে এই শিশুদের জন্য রান্না করে দেন।
কোথাও গাছে দোলনা বাঁধা। পাশেই খেলার মাঠ। একটু দূরে ছোট নদী ।গাছপালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে, সবুজের প্রভাব এদের প্রাঙ্গনে যথেষ্ট। সবুজ প্রাঙ্গণের বুকে এই কচিকাঁচাদের উপস্থিতি জায়গাটিকে এক ঝলকে দেখে মনে হবে যেন শান্তিনিকেতনের কোন দৃশ্য আমরা দেখছি।
মদন বাবুর মুখ থেকেই শুনছিলাম বিদ্যালয় পরিচালনাতে অনেক অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। শিশুদের কাছ থেকে মাত্র এক হাজার টাকা নেন। তার মধ্য থেকেই চার বেলা খাওয়া ,তারপরে যেটুকু থাকে সেটা নিজেদের(6 জন) মধ্যে ভাগ করেন ।সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ের চালানোর জন্য কিছু খরচ রাখতে হয়।
এদের বালকাবাসে গিয়ে মন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। একটা বড়ো হলঘর, চারদিকে সারি দিয়ে বাক্স রাখা ।তক্তা বা খাটিয়ার কোন ব্যবস্থা নেই ।শিশুরা মেঝেতে শুয়ে থাকে। দারিদ্র্যের সাথে লড়াই, এখনো কোনো শয্যার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। ভাবতেই খুবই কষ্ট হয়েছিল। শীতের দিন বা বর্ষার দিন পোকামাকড় বা সাপ খোপের উপদ্রব হতেই পারে ।মদন বাবু শুধু এটুকুই জানালেন বর্ষাকালে চারিদিকে কার্বলিক এসিড দেন কিন্তু তাতেও এই শিশুরা কতটা নিরাপদ থাকবে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।
প্রতিবন্ধকতা যতই থাকুক ,মদন বাবু তার প্রয়াসে তার মিশনে অটল থেকেছেন।
অযোধ্যা পাহাড়, সেখানকার শিশুরা পড়াশুনার আঙিনায় আরো বেশি করে আসুক ।অন্ধকার মুছে তারা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠুক।মদন বাবুর প্রয়াস,উদ্যোগ,স্বপ্ন ডানা মেলে শিশুদের ভবিষ্যতের দিশারী হয়ে উঠুক।
আপনাদের এই প্রতিবেদন এবং মদনবাবুর এই প্রয়াস ভালো লেগে থাকলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন তার যোগাযোগ নাম্বার দিলাম আপনারা সরাসরি তার সাথে যোগাযোগ করে এই কর্মকান্ডের সহযোগী হতে পারেন।
***লেখাটি যতটা সম্ভব শেয়ার করবেন যাতে আরো বেশি শিক্ষা অনুরাগী ,সমাজ সচেতন মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং অনেকেই এগিয়ে এসে এই প্রয়াসকে সাফল্যের পথে পৌঁছে দিতে পারে।
সিধু কানু শিক্ষা নিকেতন
মদন হাঁসদা
6297607940
✍️ছবি ও লেখা-জনার্দন মাহাত
ভিডিও দেখুন---
https://www.facebook.com/share/v/18yubvadpd/
https://youtu.be/fYBtb2v0WoM?feature=shared
🚶♂️🌿যাবেন কি ভাবে-- Ajodhya Hill Top to Murguma road 7 kms.সাহারজুড়ি গ্রাম পার হয়ে বাঁ দিকে রাস্তা ঘুরে গেছে।সোজা গেলেই পৌঁছে যাবেন।
আবার রাঙা মোড়-- মার্বেল লেক-- টাঁড়পানিয়া-- ভুঁইঘোরা গ্রাম। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাস্তা দুদিকে ভাগ হয়েছে বাঁদিকে রাস্তা গেছে তেলিয়াভাসার দিকে, সেদিকে না গিয়ে গ্রামের মধ্য দিয়ে সোজা রাস্তা নিতে হবে। সেটা সোজা সূর্যনন্ডি গ্রামে যাবে।