13/06/2025
🏵️❤️🩹🥏 জানাযার পর দুআ 🥏❤️🩹🏵️
সম্মানিত সুধী! জানাযা নামাজ যদিও একটি দুআ তথাপি জানাযার পর পূনরায় মৃতের মাগফিরাতের জন্য দুআ করা একটি জায়েয, মুস্তাহাব ও মৃতের জন্য লাভজনক কর্ম। এটাকে না-জায়েয ও বিদআত বলা সঠিক হবেনা। কারণ ইসলাম শরীয়ত দুআর জন্য কোন সময়কে নির্দিষ্ট করেনি। আর না প্রকাশ্যভাবে জানাযার পর দুআ করাকে নিষিদ্ধ করেছে। বরং দুআ কে স্বাধিন রেখেছে এবং বেশি বেশি দুআ করার নির্দেশ দিয়েছে।
আল্লাহ তা'লা বলেনঃ
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْؕ اِنَّ الَّذِیْنَ یَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِیْ سَیَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیْنَ
অর্থাৎ- এবং তোমাদের রব বলেছেন, আমার নিকট দুআ করো, আমি তোমাদের দুআ গ্রহণ করবো। নিশ্চয় ওই সব লোক, যারা আমার ইবাদত থেকে অহঙ্কারে বিমুখ হয়, তারা অবিলম্বে জাহান্নামে যাবে লাঞ্ছিত হয়ে।
{{ সূরাহ মুমিন-৪০ আয়াত নং-৬০ }}
উক্ত আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, মানুষ আল্লাহ তা'লার কাছে যখনই দুআ করবে আল্লাহ তা'লা তা কবুল করবেন, বার বার দুআ করার কারণে তা ফিরিয়ে দিবেন না। অতএব জানাজার পর দুআ করার বৈধতা উপরোক্ত স্বাধীন ও মুতলাক আয়াত থেকেই স্পষ্টত প্রমাণিত হয়।
ﻋﻦ اﻟﺤﺴﻦ، ﺃﻥ ﺃﺑﺎ اﻟﺪﺭﺩاء، ﻛﺎﻥ ﻳﻘﻮﻝ: ﺃﻛﺜﺮﻭا اﻟﺪﻋﺎء
অর্থাৎ- হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ তোমরা বেশি বেশি দুআ করো।
{{ শুয়াবুল ঈমান বায়হাক্বী ২/৩৮৪ হাদিস নং-১১০৩ }}
সাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু তা'লা আনহুর উক্ত বক্তব্য থেকে বারবার ও বেশি বেশি দুআ করার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ، ﻗﺎﻝ: ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: ﻳﻘﻮﻝ: ﺇﺫا ﺻﻠﻴﺘﻢ ﻋﻠﻰ اﻟﻤﻴﺖ ﻓﺄﺧﻠﺼﻮا ﻟﻪ اﻟﺪﻋﺎء
অর্থাৎ- আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা কোনো মৃতের জানাযা পড়লে তার জন্য নিষ্ঠার সাথে দু’আ করবে।
{{ সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং-৩২০১,,
সম্মানিত সুধী! উপরোক্ত হাদীসটি থেকে দুই ধরনের অর্থ প্রমাণিত হয়। এক যখন জানাযার নামাজ আদায় করবে তখন মৃতের জন্য দুআ করো, দ্বিতীয় জানাযার সমাপ্ত হলে মৃতের র জন্য নিষ্ঠার সাথে দুআ কর।
কারণ ব্যাকরণ অনুযায়ী উক্ত হাদিসে ব্যবহৃত ফা (فاء) বর্ণটি তার পূর্বের কর্মের সমাপ্তি ও অবিলম্বে পরের কর্মের শুরু করাকে বোঝায়। অতএব হাদীসের অর্থ হবে, তোমরা যখন জানাযার নামাজ সমাপ্ত করে নিবে সঙ্গে সঙ্গে মৃতের জন্য নিষ্ঠার সাথে দুআতে লেগে যাও।
এছাড়া জানাজার পর দুয়ার বৈধতা নিম্নোক্ত হাদিস ও আসার থেকেও প্রমাণিত। যেমন-
ﺃﻥ اﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻓﻠﻤﺎ ﻓﺮﻍ ﺟﺎء ﻋﻤﺮ ﻭﻣﻌﻪ ﻗﻮﻡ ﻓﺄﺭاﺩ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﻲ ﺛﺎﻧﻴﺎ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ اﻟﻨﺒﻲﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ اﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ اﻟﺠﻨﺎﺯﺓ ﻻ ﺗﻌﺎﺩ، ﻭﻟﻜﻦ اﺩﻉ ﻟﻠﻤﻴﺖ ﻭاﺳﺘﻐﻔﺮ ﻟﻪ
অর্থাৎ- নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ব্যক্তির জানাযার নামাজ আদায় করলেন। যখন তিনি নামাজ হতে ফারেগ হলেন তখন হযরত উমার ও তাঁর সঙ্গে কিছু মানুষ আসলেন। তারা দ্বীতিয়বার জানাযার নামাজ আদায় করতে চাইলে নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেনঃ জানাযার নামাজ দ্বীতিয়বার হয়না। তবে এখন তোমরা মৃতের জন্য দুআ ও ইস্তিগফার করো।
{{ বাদায়েউস সানায়ে ১/৩১১,, আল-মুহীতুল বুরহানী ২/২০১}}
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﻣﺴﻬﺮ، ﻋﻦ اﻟﺸﻴﺒﺎﻧﻲ، ﻋﻦ ﻋﻤﻴﺮ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ، ﻗﺎﻝ: ﺻﻠﻴﺖ ﻣﻊ ﻋﻠﻲ ﻋﻠﻰ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ اﻟﻤﻜﻔﻒ ﻓﻜﺒﺮ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﺛﻢ ﻣﺸﻰ ﺣﺘﻰ ﺃﺗﺎﻩ ﻓﻘﺎﻝ: اﻟﻠﻬﻢ ﻋﺒﺪﻙ ﻭاﺑﻦ ﻋﺒﺪﻙ ﻧﺰﻝ ﺑﻚ اﻟﻴﻮﻡ ﻓﺎﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﺫﻧﺒﻪ، ﻭﻭﺳﻊ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﺪﺧﻠﻪ، ﻓﺈﻧﺎ ﻻ ﻧﻌﻠﻢ ﻣﻨﻪ ﺇﻻ ﺧﻴﺮا ﻭﺃﻧﺖ ﺃﻋﻠﻢ ﺑﻪ
অর্থাৎ- উমাইর বিন সাঈদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সহিত ইয়াযিদ বিন মুকাফ্ফাফ এর জানাযার নামাজ আদায় করলাম। তিনি চার তাকবীরের সহিত নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর একটু হেঁটে মৃতের পাশে এসে দুআ করলেনঃ
اﻟﻠﻬﻢ ﻋﺒﺪﻙ ﻭاﺑﻦ ﻋﺒﺪﻙ ﻧﺰﻝ ﺑﻚ اﻟﻴﻮﻡ ﻓﺎﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﺫﻧﺒﻪ، ﻭﻭﺳﻊ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﺪﺧﻠﻪ، ﻓﺈﻧﺎ ﻻ ﻧﻌﻠﻢ ﻣﻨﻪ ﺇﻻ ﺧﻴﺮا ﻭﺃﻧﺖ ﺃﻋﻠﻢ ﺑﻪ
{{ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ ৩/২০ হাদিস নং-১১৭১০ }}
সম্মানিত সুধী! উপরোক্ত হাদিসদ্বয় হতে সুস্পষ্টভাবে জানাযার নামাজের পর দুআ ও ইস্তিগফারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন:- কিছু মানুষ প্রশ্ন করে, জানাযাই তো একটি দুআ অতএব জানাযার পর পূনরায় দুআ করার দরকার কি? অর্থাৎ বার বার দুআ করে লাভ কি?
উত্তর:- এটা আমিও স্বীকার করি যে, জানাযার আসল উদ্দেশ্য হলো মৃতের জন্য দুআয়ে মাগফেরাত করা। তবে জানাজার পর দুআ করলে লাভ হবে না অথবা বারবার দুআ করা শরীয়তে বৈধ নয়, এ কথা চরম মূর্খতার পরিচয়।
আমি আগেই প্রমাণ করেছি যে, ইসলাম শরীয়তে দুআর জন্য কোন সময়কে নির্দিষ্ট করা হয়নি বরং দুআকে স্বাধীন রাখা হয়েছে অতএব যখনই দুআ করবেন তা বৈধ ও শরীয়ত সম্মতই হবে। তাছাড়া বারবার দুআ করলে তা অবৈধ হয় না বরং বৈধ ও লাভজনক হয় তা সহীহ মুসলিমের নিম্নোক্ত হাদিস হতেও প্রমাণ হয়। যেমন-
حَتَّى جَاءَ الْبَقِيعَ فَقَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ
অর্থাৎ- হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ নবীজি ﷺ বাকীয় কবরস্থানে গিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়ালেন অতঃপর তিনবার হাত তুলে দুআ করলেন।
{{ সহীহ মুসলিম হাদিস নং-২৩০১,, মুসনাদ আহমাদ হাদিস নং-২৫৮৫৫ }}
বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাকীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম নবাবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এরশাদ করেনঃ
ﻓﻴﻪ اﺳﺘﺤﺒﺎﺏ ﺇﻃﺎﻟﺔ اﻟﺪﻋﺎء ﻭﺗﻜﺮﻳﺮﻩ
অর্থাৎ- উক্ত হাদিস থেকে লম্বা দুআ করা ও বারবার দুআ করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।
{{ শারহে মুসলিম ৭/৪৩ }}
সম্মানিত সুধী! বারবার দুআ করলে যদি লাভ না হত অথবা আল্লাহ তা'লা পূনরায় দুআ কে গ্রহন না করতেন তাহলে নবীজি ﷺ একই সময় একই স্থানে বারবার দুআ করতেননা। আর না ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ব্যাখ্যাটি সঠিক প্রমাণিত হত।
অতএব অযথা মনগড়া যুক্তি লাগিয়ে জানাজার পর দুআকে বন্ধ করার অপচেষ্টা করবেন না। যদি আপনার ইচ্ছা না করে তাহলে তা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু জানাযার পর দুআ করা শরীয়তে বৈধ ও মৃতের জন্য লাভজনক এতে কোন সন্দেহ নেই।
✍️ মুফতী আমজাদ হুসাইন সিমনানী সাহেব
(কুশমান্ডি,, জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর)