13/08/2025
School Open-Book Assessment: এখন থেকে বই দেখে পরীক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি চালু করল শিক্ষা দপ্তর বর্তমান যুগে ভারতবর্ষে শিক্ষা ব্যবস্থায় এলো এক আমুল পরিবর্তন। ২০২০ সালের শিক্ষানীতি অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থায় একের পর এক বড় বড় পরিবর্তন ঘটছে। বর্তমান দিনে মুখস্ত বিদ্যার উপর গুরুত্ব অনেকটাই কমিয়ে দিতে চাইছে CBSC বোর্ড তাই শিক্ষাব্যবস্থায় এর পরিবর্তন নিয়ে এলো। এক সময় পরীক্ষা মানেই ছিল মুখস্ত করে উত্তর লেখা, তবে এটি মানুষের চিন্তন ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতো না এখন এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা আনার কথা এবং পরীক্ষা ব্যবস্থা আনার কথা পরিকল্পনা করা হচ্ছে যেখানে বিশ্লেষণ, প্রয়োগ এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা বৃদ্ধি। এই পরিবর্তনের অন্যতম বড় উদাহরণ হলো Open-Book Assessment বা ওপেন-বুক পরীক্ষা অর্থাৎ বই খুলে দেখে দেখে পরীক্ষা। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র বই নয় তারা নোটস কিমবা যেকোন শিক্ষা অনুমোদিত ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুখস্ত করার প্রবণতা কমে যাবে এবং এর মাধ্যমে তথ্য প্রয়োগ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যাচাই করা হবে।Open-Book Assessment কী?
এই ওপেন বুক অ্যাসেসমেন্ট ভারতবর্ষে চালু না থাকলেও বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে চালু রয়েছে। এই ওপেন-বুক অ্যাসেসমেন্ট হলো এমন এক পরীক্ষা পদ্ধতি যেখানে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থী নিজের বই, নোটস কিংবা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ডিজিটাল রিসোর্স ব্যবহার করতে পারে, এক্ষেত্রে মুখস্ত করে লিখতে হবে না বরং তারা দেখে দেখে লিখতে পারবে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের মুখস্তের উপর জোর কমানো এবং তারা কতটা প্রয়োগ দক্ষতা দেখাতে পারে তার উপর জোর দেওয়া। এই ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্নগুলো সাধারণত মুখস্ত ভিত্তিক উত্তর হয় না এখানে প্রশ্নগুলো সাধারণত বিশ্লেষণমূলক ও বাস্তব পরিস্থিতিভিত্তিক হয়, যাতে শিক্ষার্থীকে যুক্তি, কনসেপ্ট ও উদাহরণের মাধ্যমে উত্তর দিতে হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের চিন্তোন ক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায় এবং তারা রেফারেন্স হিসেবে বই বা অন্য তথ্য থেকে ডাটা কালেক্ট করে লিখতে পারে।কিভাবে এই পরীক্ষা পদ্ধতি পরিচালনা করা হবে?
ওপেন-বুক পরীক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো —
প্রথমত, এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে মুখস্তের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় না কারণ এখানে মূলত কনসেপ্ট বোঝা এবং বাস্তব উদাহরণের প্রয়োগ করতে বলা হয়। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের রেফারেন্স হিসেবে যেকোনো বই অথবা তাদের শিক্ষাগত ম্যাটেরিয়ালস বা নোটস ব্যবহার করতে পারে এবং সেটা থেকে দেখে দেখে লিখতে পারবে শিক্ষকেরা এর জন্য কিছু বলবে না। দ্বিতীয়ত, প্রশ্নের ধরন হয় তথ্য-ভিত্তিক নয় অর্থাৎ বয়ে যেটা দেওয়া আছে সেটাই উত্তরের লিখতে হবে এমন কথা নয় তারা শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে বই ব্যবহার করতে পারে এবং এখানে বিশ্লেষণমূলক, যা শিক্ষার্থীর উচ্চস্তরের চিন্তাশক্তি (Higher Order Thinking Skills) যাচাই করে। তৃতীয়ত, শুধুমাত্র হাতের কাছে বই থাকলেই সে যে লিখে পাস করবে তা নয় কারণ তাকে লিখতে গেলে আগে বইয়ের কোন চ্যাপ্টারের কোন টপিক রয়েছে এবং কোথা থেকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে ব্যাপারে সম্মুখ ধারণা থাকতে হবে এজন্য তাকে ভালোভাবে বই পড়তে হবে ও যেকোনো প্রশ্নের জটিল ও গভীর বিশ্লেষণ করতে হবে। এবং চতুর্থত, এখানে প্রশ্নগুলো হবে অনেকটা বাস্তব জীবনের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং যাতে শিক্ষার্থী ভবিষ্যতের পেশাগত পরিস্থিতিতে সমস্যার সমাধান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।
এই পরীক্ষা পদ্ধতির উদ্দেশ্য
ওপেন-বুক পরীক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের মুখস্ত বিদ্যার উপর চাপ কমানো এবং শিক্ষার্থীদের গভীরভাবে পড়াশোনা ও অনুধাবনের দিকে উৎসাহিত করা। কোন একটি তথ্যকে শুধুমাত্র মুখস্ত করে পড়া নয় সেই তথ্যকে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে এবং প্রয়োগ দক্ষতার মাধ্যমে বিচার বিবেচনা করে শিখতে হবে। এছাড়া এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীর বিশ্লেষণ, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং যৌক্তিক যুক্তি প্রদর্শনের দক্ষতা বৃদ্ধি করে, এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থা আরো উন্নত এবং প্রাণবন্ত হয়। এছাড়াও শিক্ষাজীবনে যে সমস্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেগুলো ভবিষ্যতে চাকরি ও পেশাগত জীবনে দ্রুত তথ্য খুঁজে বের করা থেকে শুরু করে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করার ক্ষমতাও এই পরীক্ষার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়।
CBSE ও অন্যান্য বোর্ডে প্রয়োগ
এর আগেও এই শিক্ষাব্যবস্থা একবার এনেছিল ২০১৪ সালে। অর্থাৎ CBSC বোর্ড ভারতে সিবিএসই (CBSE) বোর্ড এই প্রথম নয় এর আগেও পরীক্ষামূলকভাবে ওপেন-বুক অ্যাসেসমেন্ট চালু করেছে। এর আগে যে ভাবে পরীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছিল সেটি হল প্রথমেই নির্বাচিত বিষয় বা অধ্যায়ের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের আগে থেকেই একটি কেস স্টাডি দেওয়া হয় এবং পরীক্ষায় সেই বিষয়ের উপর বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন করা হয়। এই পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শুধু তথ্য খুঁজে পাওয়া নয়, বরং সেই তথ্য প্রয়োগ করে সঠিক সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। এর ফলে একটি শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে যাচাই করা যায়। এ ধরনের পরীক্ষা এখন ধীরে ধীরে অন্যান্য শিক্ষাবোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়েও জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই বর্তমান আবারও ভারতবর্ষের এই শিক্ষা পদ্ধতির প্রচলন এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই পরীক্ষা পদ্ধতির ধরন
ওপেন-বুক পরীক্ষার বেশ কয়েকটি ধরন আছে।
প্রথমত, Traditional Open-Book Exam, যেখানে শুধু প্রিন্টেড বই ও নোটস ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ এখানে সরাসরি বই বা নোটস নিয়ে এসে সেটি দেখে দেখে পরীক্ষায় লেখা যায়।
দ্বিতীয়ত, Take-Home Exam, এখানে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রশ্নপত্র দিয়ে দেওয়া হয় এবং সময় বেধে দেওয়া হয় ফলে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর প্রস্তুত করে জমা দেয়।
তৃতীয়ত, Online Open-Book Exam, যেখানে অনলাইন রিসোর্স ও ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার করা যায়, তবে সময় সীমিত থাকে। তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র জমা করতে হয়। এখানে তাদের টাইম ম্যানেজমেন্ট ও অনলাইন রিসোর্স সম্পর্কে ধারণা জন্মায়।এই পরীক্ষা পদ্ধতির সুবিধা
ওপেন-বুক পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো মুখস্থ করার চাপ কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা কোন বিষয় না বুঝেই মুখস্ত করে পরীক্ষায় লিখে আসে যার ফলে সেটা তারা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারেনা বা এখানে কি বলতে চাইছে সেটা শিক্ষার্থীরা শিখতে পারে না। ফলে এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনে কোনো কাজে লাগে না। তারা শিক্ষাজীবনে যে সমস্ত বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন হয় এগুলোর সমাধান করতে শেখে এবং ভবিষ্যতে যা সমগ্র জীবনে তাদের কাজে লাগে। এই পদ্ধতি সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও সৃজনশীল সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়। পরীক্ষার সময় বই ও নোটস ব্যবহার করার সুযোগ শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এর ফলে পরীক্ষার যে ভয় সঠিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকে না এবং তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে পারে।
এই পরীক্ষা পদ্ধতির অসুবিধা
যদিও এই পদ্ধতিতে অনেক সুবিধা আছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত এই পরীক্ষা পদ্ধতির সকল অভিভাবকদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না কারণ তারা মনে করবে শিক্ষার কোন গুণগত মান থাকবে না এই পদ্ধতি চালু করলে। কেউ পড়াশোনা করলেও যেই নাম্বার পাবে এবং কেউ না পড়াশোনা করেও সেই একই নাম্বার পেতে পারে এই পরীক্ষা পদ্ধতির ফলে। এছাড়াও সময় ব্যবস্থাপনা একটি বড় সমস্যা, কারণ বই থেকে উত্তর খুঁজে পেতে সময় লাগে। এছাড়াও বই দেখে দেখে লিখতেও অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি অনেকটাই আগ্রহ কমে যাবে কারণ অনেক শিক্ষার্থীরা মনে করবে বই দেখে লিখতে পারলে আর পড়াশোনা করার দরকার নেই যেটা শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটা নেগেটিভ প্রভাব ফেলবে। অনলাইন ওপেন-বুক পরীক্ষার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ ও ডিভাইসের প্রয়োজন হয়, যা সবার পক্ষে সহজলভ্য নয়। এর ফলে এই পদ্ধতির মাধ্যমে সবাই যে ইন্টারনেট বা উন্নত মানের রিসোর্স ব্যবহার করতে পারবে তা নয়।বিশ্বব্যাপী ব্যবহার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওপেন-বুক পরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে যেমন আমেরিকা ও ইউরোপে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এই পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত হয়। অস্ট্রেলিয়ায় পেশাগত কোর্সে বাস্তব সমস্যার সমাধানের জন্য এটি জনপ্রিয়। সিঙ্গাপুরে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ধীরে ধীরে এই পদ্ধতি চালু হচ্ছে। তাই উন্নত দেশগুলোর চিন্তা-ভাবনা এবং তাদের পরীক্ষা পদ্ধতি দেখে বর্তমানে ভারতবর্ষেও সেই পদ্ধতি প্রচলন করার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে CBSC বোর্ড।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বর্তমান ডিজিটাল যুগ, আর এই যুগে সমস্ত তথ্যই ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা যায়, তাই কোন একটি তথ্য দীর্ঘদিন ধরে মুখস্ত করে ব্রেনের উপর চাপ দিয়ে কোন লাভ নেই। এই ওপেন বুক পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার ফলে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে এবং কিভাবে ইন্টারনেট থেকে যে কোন উন্নত মানের রিচার্জ ব্যবহার করা যায় তার ধারণা জন্মাবে। এছাড়াও এই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মুখস্ত বিদ্যার উপর অনেকটাই নির্ভরতা কমিয়ে দেবে।
অবশেষে বলা যায় ওপেন-বুক অ্যাসেসমেন্ট শিক্ষা ব্যবস্থায় সমাজে এক ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতীক, এসব বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শুধু মুখস্থ বিদ্যার উপর নির্ভর না করে শিক্ষার্থীর যুক্তি, বিশ্লেষণ ও প্রয়োগের দক্ষতা যাচাই করে। আর এই শিক্ষা পদ্ধতি চালু হলে শিক্ষার্থীরা ওপেন রিসোর্স সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য আরও প্রস্তুত করে তুলতে সক্ষম। তবে সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরীক্ষা নকশা, যথাযথ প্রস্তুতি এবং উপযুক্ত অবকাঠামো।