
19/09/2025
স্বামী রামকৃষ্ণানন্দের অন্তরের একান্ত আকাঙ্ক্ষা ছিল শ্রীশ্রীমায়ের পাদস্পর্শে দক্ষিণ ভারত পবিত্র হবে এবং তাঁর দর্শন ও উপদেশে ঐ অঞ্চলে রামকৃষ্ণ-আন্দোলন অধিকতর শক্তিশালী হবে। তাঁর মনের সেই ঐকান্তিক বাসনা চরিতার্থ হওয়ায়
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তিনি বলেছিলেনঃ ‘এই আমার শেষ। বাস্তবিক শ্রীমা কলকাতায় ফিরে আসার কিঞ্চিদধিক চার মাস পরেই শশী মহারাজ কলকাতায় উদ্বোধনে দেহরক্ষা করেন। শ্রীমা তখন জয়রামবাটীতে। মহাসমাধির কিছুদিন আগে
একদিন কবিরাজ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন: 'আপনি স্বপ্নে শ্মশান, তুলসীকানন প্রভৃতি দেখেন কি?' স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ উত্তর দিলেনঃ ‘ওসব দেখি না ; তবে ঠাকুর, মা, স্বামীজী, দক্ষিণেশ্বর প্রভৃতি দেখি। শরীর ত্যাগের দু-তিন দিন আগে একদিন সকালে তিনি হঠাৎ ব্যস্তসমস্তভাবে সেবককে বললেনঃ 'ঠাকুর, মা, স্বামীজী এসেছেন : আসন পেতে দে।' প্রথমে সেবক কিছুই বুঝতে পারেন না, পরে শশী মহারাজ আবার
তাঁকে আদেশ করলে সেবক সে আদেশ পালন করলেন। সেবক দেখলেন শশী মহারাজ কোন অদৃশ্য দৃশ্যের দিকে পলকহীন চোখে চেয়ে তিনবার প্রণাম করলেন এবং প্রণামান্তে বললেন: 'তাঁরা চলে গেছেন। এই সময় শ্রীমাকে দেখার জন্যে তিনি অত্যন্ত ব্যাকুল হয়েছিলেন। তাই স্বামী ধীরানন্দ শ্রীমাকে আনতে জয়রামবাটী যান। কিন্তু শ্রীমা আসতে চাননি। মাত্র কিছুদিন আগে তাঁর এই সন্তান তাঁর যে আপ্রাণ সেবা করেছিলেন সেই স্মৃতির সঙ্গে তাঁর এই প্রাণঘাতী পীড়ার খবর তাঁকে নিয়ত যন্ত্রণাবিক্ষত করছিল। প্রাণপ্রিয় সন্তানের রোগজীর্ণ পান্ডুর মুখ এবং
অমানুষিক রোগযন্ত্রণা জননী হয়ে তিনি কি করে স্বচক্ষে দেখবেন ? আর যদি তাঁর সামনেই সন্তানের দেহত্যাগ হয় তাই বা তিনি সহ্য করবেন কিভাবে? তাছাড়া ‘উদ্বোধনে'র মতো স্বল্প পরিসর বাড়িতে তাঁর ও তাঁর সঙ্গের লোকজনের উপস্থিতি রোগীর অসুবিধারই সৃষ্টি করবে। এইসব অনেক ভেবে শ্রীমা স্বামী ধীরানন্দকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিলেন ।