22/07/2025
মাইলস্টোন স্কুল & কলেজের ঘটনায়,
নিহতদের বেশির ভাগ কোমলমতি নিষ্পাপ শিশু। তাদের পিতামাতাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষায় জানা নেই। আমি নিজেও কয়েকবছর আগে এরকম একটা সময় পার করে এসেছি। পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম,কাছের মানুষজন জানে কিরূপ পাগলামি করেছি।সান্ত্বনা কানে বিষফোঁড়ার মতই লাগত।
তবু মহানবী (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণী থেকে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করেছি :
মৃত শিশুসন্তান মা-বাবার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকবে : মৃত্যুবরণকারী শিশুসন্তান মা-বাবার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকবে। কুররা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বসতেন, তখন সাহাবিদের অনেকে তাঁর কাছে এসে বসতেন।
তাঁদের মধ্যে একজন সাহাবির ছোট একটি শিশুপুত্র ছিল। তিনি তাঁর ছেলেকে পেছন দিক থেকে নিজের সামনে এনে বসাতেন।
একদিন সে ছেলেটি মৃত্যুবরণ করল। ফলে সে সাহাবি খুব বিষণ্ন হয়ে পড়লেন। ছেলের শোকে তিনি নবীজি (সা.)-এর মজলিসে উপস্থিত হতেন না। কয়েক দিন তাঁকে না দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘অমুক ব্যক্তিকে দেখছি না কেন?’ সাহাবিরা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তার যে ছোট ছেলেকে দেখেছিলেন সে মৃত্যুবরণ করেছে।
’ পরে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার সে ছেলেটির কী হয়েছে?’ তিনি বলেন, ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে। তখন নবীজি (সা.) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন। তারপর বলেন, ‘হে অমুক! তোমার কাছে কোনটা বেশি পছন্দনীয়, তার দ্বারা তোমার পার্থিব জীবন সুখময় করা, নাকি কাল কিয়ামতে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে তুমি প্রবেশ করতে চাইবে তাকে সেখানেই পাওয়া, যেখানে সে পৌঁছে তোমার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেবে?’ তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! বরং সে আমার জান্নাতের দরজায় গিয়ে আমার জন্য দরজা খুলে দেবে; এটাই আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। ’ তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘তাহলে তোমার জন্য তাই হবে। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ২০৯০)
ছোট বয়সে মৃত্যুবরণকারী শিশু জান্নাতের প্রজাপতির মতো : আবু হাসসান (রহ.) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললাম, আমার দুটি সন্তান মারা গেছে। আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর থেকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করবেন, যাতে আমরা অন্তরে সান্ত্বনা পেতে পারি? তখন আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হ্যাঁ, আমি নবীজি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ছোট বয়সে মৃত্যুবরণকারী সন্তানরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো। তাদের কেউ যখন পিতা কিংবা মাতা-পিতা উভয়ের সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তার পরিধানের কাপড় কিংবা হাত ধরবে, যেভাবে এখন আমি তোমার কাপড়ের আঁচল ধরেছি। এরপর সেই কাপড় কিংবা হাত আর ছাড়বে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে তার মা-বাবাসহ জান্নাতে প্রবেশ না করাবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৩৭০)
মা-বাবার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণের ঘোষণা : শিশুসন্তান হারানো মা-বাবার জন্য তৎক্ষণাৎ জান্নাতে ঘর নির্মাণের ঘোষণা এসেছে হাদিস শরিফে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দার কোনো সন্তান মারা গেলে তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে কি ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। আবার আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করেন, তোমরা তার হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। আবার তিনি প্রশ্ন করেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রতি প্রশংসা করেছে এবং ইন্না লিল্লাহ...পাঠ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরি করো এবং তার নাম রাখো বাইতুল হামদ বা প্রশংসালয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১০২১)
ইবরাহিম (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে প্রতিপালন : দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া শিশুসন্তানরা জান্নাতের পাহাড়ে অবস্থান করে। তাদের লালন-পালন করেন ইবরাহিম (আ.) ও সারা (আ.)। কিয়ামতের দিন তাদেরকে তাদের মা-বাবার কাছে ফেরত দেওয়া হবে। (সহিহুল জামে, হাদিস : ১০২৩)
আল্লাহর দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে তাহলেই ধৈর্য্য ধারণ করা আমাদের জন্য সহজ হবে। জান্নাতে আপনার হারানো কলিজার টুকরার সাথে আপনার দেখা হবে, সে আপনার সুপারিশকারী হবে,এটা আমাদের মুসলিম বান্দার জন্য কতবড় সুসংবাদ।
দিনদিন পৃথিবী ভীষণ ভয়ংকর হয়ে উঠছে, এর চেয়ে আমাদের পরকালের জন্য চিন্তা করাটাই বাঞ্চনীয়, শ্রেয়।