04/12/2025
"ভাই, আপনারা কি নামাজ পড়ে ফেলেছেন?"
এটি ইয়েমেনের একটি মসজিদে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। শায়খ আবু ইমাদ ঘটনাটি বর্ণনা করছিলেন এভাবে:
আমার এক বন্ধু বলল, 'গতকাল আমার পাশের গলির একজন মারা গেছেন। নাম আবু নাসের, বেশ বয়স্ক মানুষ ছিলেন। আল্লাহ ওনাকে জান্নাত নসিব করুন। তো, জানাজা আর দাফন শেষে খাটিয়াটা (মৃতদেহ বহনের খাট) যখন ফেরত আনা হলো, তখন বেশ রাত। এশার নামাজ শেষ, মসজিদও বন্ধ। তাই লোকেরা খাটিয়াটা মসজিদের দরজার বাইরের উঠোনে রেখে দিল, যাতে সকালে মুয়াজ্জিন বা খাদেম এসে সেটা জায়গামতো রেখে দেয়।
রাত তখন প্রায় সাড়ে ৩টা। এক লোক মসজিদে আসল। দেখল উঠোন খোলা কিন্তু মসজিদের মেইন দরজা তালাবদ্ধ। সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল, কিন্তু কেউ খুলল না। ওদিকে হাড় কাঁপানো শীত। হঠাৎ তার নজর পড়ল ওই খাটিয়াটার দিকে। ওটার ওপর আবার একটা চাদর বিছানো ছিল। ব্যাস! সে আর দেরি না করে খাটিয়ার ঢাকনা সরাল, ভেতরে মোটা কাপড় পাতা ছিল, আরামসে ওটার ভেতরে ঢুকে শুয়ে পড়ল। আর সাথে সাথেই গভীর ঘুম!
আধঘণ্টা পর মসজিদের খাদেম এলেন দরজা খুলতে। তিনি খাটিয়াটা দেখে ভাবলেন, হয়তো ফজরের পর জানাজা হবে, তাই লাশসহ কেউ রেখে গেছে। মুসল্লিরা আসতে শুরু করল, কেউ অজু করতে গেল, কেউ সালাম বিনিময় করল। খাদেম আর কয়েকজন মিলে খাটিয়াটা ধরাধরি করে একেবারে মেহরাবের পাশে নিয়ে রেখে দিল। সবাই ভাবছে ভেতরে লাশ আছে, তাই কেউ আর ওটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেনি। তাছাড়া ভোরের বেলা সবার চোখে তখনও ঘুমের রেশ।
ফজরের আজান হয়ে গেল। মসজিদে প্রায় ৫০ জনের মতো লোক। আমরা কাতার সোজা করে নামাজে দাঁড়ালাম। আমি ছিলাম একদম প্রথম কাতারে। দ্বিতীয় রাকাতেও সব ঠিক ছিল, হঠাৎ দেখলাম খাটিয়াটা নড়ছে! ভাবলাম, এ কী! চোখের ভুল নাকি? চোখ কচলে আবার তাকালাম। না! স্বপ্ন না! ইমাম সাহেবের ঠিক পেছনে রাখা খাটিয়াটা সবার চোখের সামনে সত্যিই নড়ছে! আমার তো ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেল, পুরো কাতারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল।
ঠিক তখনই খাটিয়ার ভেতর থেকে লোকটা ঘুম ভেঙে ঢাকনাটা সরাল। মাথা বের করে সোজা জিজ্ঞেস করল, 'ভাই, আপনারা কি নামাজ পড়ে ফেলেছেন?'
ওরে ভাই! এরপরের দৃশ্য আর কী বলব! আল্লাহর কসম, সেই দৃশ্য দেখার মতো ছিল। আমি জুতো ফুতোর কথা ভুলে জান নিয়ে দে দৌড়! এক দৌড়ে মনে হয় এক কিলোমিটার পার হয়ে গেছি, তাও খালি পায়ে! ওদিকে ইমাম সাহেব তো বেহুঁশ হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলেন। ভয়ে কেউ কেউ দেয়ালে গিয়ে মাথা ঠুকল। কেউ কেউ আমার মতো খালি পায়েই ভোঁ দৌড়। একজন তো ভয়ে অজুখানার হাউজেই পড়ে গেল। সোজা কথায়, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরো মসজিদ ফাঁকা!
কিন্তু হাসির ব্যাপার হলো, ওই খাটিয়ার লোকটাও আমাদের সাথে সাথে দৌড়াতে শুরু করল! সে দৌড়াচ্ছে আর সবার পিছু পিছু চিৎকার করছে:
'ও ভাই! কী হয়েছে? কেয়ামত হয়ে গেল নাকি? আপনারা দৌড়াচ্ছেন কেন?'
আর পেছনের লোকজন যতবার দেখছে যে 'লাশ' তাদের পেছনে দৌড়াচ্ছে, তাদের দৌড়ানোর গতি তত বাড়ছে! বেচারা লোকটা তখনও চিল্লাচ্ছে, 'আমাকে ফজরের জন্য ডাক দিলেন না কেন? আল্লাহ আপনাদের বিচার করবেন!' আসলে সে বুঝতেই পারছিল না যে এই লঙ্কাকাণ্ডের মূল হোতা আসলে সে নিজেই!
-আন নাহিয়ান
cp