20/07/2025
হারানো অঙ্গ ফিরে পাওয়ার গোপন সূত্র কি টিকটিকির লেজে লুকিয়ে আছে?
আপনি কি জানেন, টিকটিকির লেজ কেটে গেলেও সেটা আবার নতুন করে গজিয়ে ওঠে? এটা কিন্তু কোনো জাদুবিদ্যা নয়, বরং একেবারে খাঁটি বিজ্ঞান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিশেষ ক্ষমতা যদি মানুষের শরীরে কাজে লাগানো যায়! তাহলে কি ভবিষ্যতে কাটা হাত বা পা আবার গজাবে?
প্রথমেই জানা দরকার, টিকটিকির লেজ কীভাবে পুনরায় গজায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মূল রহস্য লুকিয়ে আছে কিছু নির্দিষ্ট কোষের মধ্যে। এগুলোকে বলা হয় স্টেম সেল এবং প্রোলিফারেটিভ সেল। যখন টিকটিকির লেজ ভেঙে যায়, তখন এই বিশেষ কোষগুলো খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে নতুন টিস্যু তৈরি করে। শুধু লেজ নয়, হাড়, স্নায়ু, রক্তনালী সবকিছুই ধাপে ধাপে তৈরি হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষের দেহে এমন কিছু করা সম্ভব কি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই অনেক দেশের বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর গবেষণা চালাচ্ছেন। আপনি হয়তো শুনেছেন, মানুষের শরীরেও স্টেম সেল রয়েছে। এগুলো এক ধরণের অলরাউন্ডার কোষ, যেগুলো থেকে নতুন কোষ তৈরি করা যায়। সমস্যাটা হচ্ছে, মানুষের শরীরে এই ক্ষমতা সীমিত। ছোটখাটো কাটা বা ক্ষত মেরামত হলেও বড় অঙ্গ যেমন হাত, পা কিংবা হার্ট গজানো একেবারে অসম্ভব।
তবে বিজ্ঞান এখানে থেমে নেই। ২০২২ সালের দিকে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, টিকটিকির লেজ গজানোর পিছনে Wnt নামের এক বিশেষ জিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই Wnt সিগনালিং পাথওয়ে যদি মানুষের কোষে সক্রিয় করা যায়, তাহলে হয়তো কোষগুলো অনেক বেশি কর্মক্ষম হয়ে উঠবে। আবার কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, টিকটিকির লেজে microRNA নামের ছোট জিনগত উপাদানও কোষের পুনরায় গঠন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো মানুষের কোষে কৃত্রিমভাবে ব্যবহার করার কাজও শুরু হয়েছে।
আমেরিকার একদল গবেষক ইঁদুরের শরীরে টিকটিকির এই কোষ ও জিনগত প্রক্রিয়া কৃত্রিমভাবে প্রয়োগ করেছেন। সেখানে আংশিক সফলতাও মিলেছে। কিছু ক্ষেত্রে ইঁদুরের ছোটো আঙ্গুল আংশিকভাবে পুনর্গঠিত হয়েছে। তবে পুরোপুরি হাত বা পা গজানোর মতো বড় সাফল্য এখনও আসেনি।
এখনও পর্যন্ত মানুষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে lab-grown organs বা ল্যাবরেটরিতে অঙ্গ তৈরি করার চেষ্টা। এই প্রযুক্তিতে স্টেম সেলের সাহায্যে ছোট ছোট টিস্যু বা অঙ্গাংশ তৈরি করা হচ্ছে। তবে পুরো অঙ্গপুনর্গঠন মানে হাত-পা গজানো, এই জায়গায় বিজ্ঞান এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।
সংক্ষেপে বললে টিকটিকির লেজ মানুষের জন্য একপ্রকার আশা জাগানিয়া সূত্র। এই ধারণা থেকে বিজ্ঞানীরা শিখছেন কীভাবে কোষকে আরও বেশি মেরামতক্ষম করা যায়, কীভাবে জিনগত স্তরে পুনরায় গজানোর ক্ষমতা বাড়ানো যায়। তবে বাস্তবে মানুষের শরীরে হাত-পা নতুন করে গজানোর দিন এখনো অনেক দূরে। তবে যে গতিতে গবেষণা এগোচ্ছে, হয়তো আগামী কয়েক দশকে আমরা অঙ্গপুনর্গঠনের নতুন যুগ দেখতে পাবো।
fans