01/09/2025
ইসলামী আন্দোলনে নেতারা টক'শোয় নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেন না কেনো?
জিপিএম নিউজ প্রতিবেদক:
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, তিন দশকের আলোচিত রাজনৈতিক দল। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো টেলিভিশন টকশোতে দলটির নেতাদের অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। তবে এই আলোচকদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে একটি ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে ওঠে- তাদের মধ্যে বাকপটু আলোচকের অভাব রয়েছে। তারা প্রায় কেউই দলীয় ন্যারেটিভ বা দলীয় অবস্থান তুলে ধরতে পারেন না। দলের অর্জন, সংগ্রাম, কিংবা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হোচট খান, ভুলে যান, বিভ্রান্তি তৈরি করেন। এতে স্পষ্ট হয়, তাদের হাতে যথাযথ তথ্য উপাত্ত থাকেনা বা তারা সেগুলোকে শাণিত ভাবে উপস্থাপনের কৌশল জানেন না।
বাংলাদেশে অনেক ধর্মীয় বক্তা রয়েছেন, যারা গভীরভাবে কোরআন-হাদীসের আলোচনা করতে পারেন না। ওয়াজের স্টেজে আগডুম বাগডুম কথা পেঁচিয়ে সময় পার করেন। ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের মধ্যেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তারা রাষ্ট্র, অর্থনীতি, বিদেশনীতি বা সমসাময়িক ঘটনাবলি নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করতে পারেন না। এমনকি তারা নিজ দলের অবস্থানকে জনগণের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হন। এই ঘাটতি দলটির ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্যতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ইসলামী আন্দোলনের উচিত, যেসব নেতারা টকশোয়, মিডিয়ায় বা মঞ্চে কথা বলেন, তাদের জন্য সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক ও দলীয় কমন বার্তাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এই প্রশিক্ষণে নেতাদের বুঝিয়ে দিতে হবে, দলের নির্দিষ্ট কিছু কমন বার্তা ও অর্জন আছে- যা যেকোনো আলোচনার মাঝে স্বাভাবিকভাবে তুলে ধরতে হবে। বারবার বলতে হবে, প্রতিদিন বলতে হবে, সবাই একযোগে বলতে হবে। যেমন, ২৪শে ইসলামী আন্দোলনের ঐতিহাসিক ভূমিকা, যেখানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন না হলে একমাত্র এই দলটিকে নিষিদ্ধ করা হতো। ছাত্র নেতাদের সাথে এই দলের প্রধান দুই নেতাকে ফাঁসি দেয়া হতো।
গত ১৫ বছরে দলটি কোথায়, কখন, কী প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তা তুলে ধরতে হবে। কতজন নেতাকর্মী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গ্রেপ্তার, আহত বা নিহত হয়েছে, তা তুলে ধরতে হবে। দলের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরতে হবে। দলের নারীচিন্তা তুলে ধরতে হবে। ইসলামী আন্দোলন ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ ধারণ করে রাজনীতি করে, এ কথা বারবার বলতে হবে।
কোন জেলায়, কী ধরনের জনসেবামূলক কাজ করেছে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা, তা তুলে ধরতে হবে। এসব তথ্য যদি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে জনগণের মধ্যে একটি বাস্তবভিত্তিক দলীয় চিত্র তৈরি হবে। যা একটি রাজনৈতিক দলের জন্য খুব প্রয়োজন।
প্রতিটি আলোচনায় কৌশলগতভাবে এসব বার্তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বক্তা যেকোনো প্রসঙ্গে কথা বলুক, তার মধ্যে দলের অবস্থান ও ইতিহাসের প্রতিফলন থাকতে হবে। এর জন্য দলীয়ভাবে কিছু কমন বিষয় নির্ধারণ করে নিতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- জাতীয় রাজনীতি থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রাখা যাবে না। সকল জাতীয় নেতার ভাষায় জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি থাকতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের নেতারা যেনো রাষ্ট্র, শাসনব্যবস্থা, দুর্নীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে ওজনদার বক্তব্য রাখতে পারেন- প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হলেও সে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
তিন দশকের একটি সংগঠন হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এখন রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। গণমাধ্যমে কথা বলার সুযোগ যেমন বেড়েছে, দলটির উপর জনগণের প্রত্যাশাও বেড়েছে। এই মুহূর্তে দলটির প্রয়োজন- সাংগঠনিক বার্তার প্যাকেজ, তথ্যভিত্তিক বক্তব্য এবং রাজনৈতিক পরিণতির জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা। বিরোধীপক্ষের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পড়তে শেখা।
একটি আদর্শিক দল হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের উচিত হবে, জনমানসে নিজেদের অবস্থান আরও সুস্পষ্ট, গ্রহণযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক করে তোলা। তাহলে আদর্শ, নেতৃত্ব ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে দলটি আগামীতে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে আরও দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিতে পারবে, প্রাসঙ্গিক থাকবে।