08/12/2025
ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে হঠাৎই চোখে পড়ল জাপানের ভূমিকম্পের খবর।
আজ যে ভূমিকম্পটি হয়েছে সেটার মাত্রা ছিল প্রায় ৭.৫ থেকে ৭.৬। এটা আন্তর্জাতিক মানে যেমন বড় তেমনি জাপানের নিজের স্কেলেও এটি সরাসরি বড় ভূমিকম্পের তালিকায় পড়ে।
তবুও ক্ষতিটা সীমিত থাকা সত্যিই বিস্ময়ের। ভূমিকম্পের উৎস ছিল সমুদ্রের নিচে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গভীরে, তাই প্রচুর শক্তি সেখানেই ছড়িয়ে গেছে। এই কারণে স্থলভাগে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ হয়নাই।
ভাবুন তো, এমন মাত্রার কম্পন যদি অল্প গভীরে কোনো বড় শহরের নিচে হতো তাহলে কী হতো? ভবন ধস, রাস্তা ভেঙে যাওয়া, আগুন ধরে যাওয়া সব মিলিয়ে ক্ষতি কয়েকগুণ বেশি হতো। এর তুলনায় আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল।
সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি মানুষকে ভাবিয়েছে সেটি হলো সুনামি। প্রথমে উপকূল এলাকায় তিন মিটার পর্যন্ত উচ্চতার ঢেউ আসতে পারে বলা হয়েছিল। পরে দেখা গেল বেশিরভাগ এলাকাতেই ঢেউ ছিল এক মিটারের কম এবং খুব দ্রুত সতর্কতাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
ক্ষতির দিক থেকে যা জানা গেছে, হাচিনোহে এবং হোক্কাইডোর কিছু অংশে কাঁচ ভেঙেছে, দোকানের জিনিসপত্র পড়েছে, কয়েকটি রাস্তা ফেটেছে, আর বেশ কিছু বাড়ির বিদ্যুৎ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন, কিন্তু বড় ধরনের প্রাণহানি নেই।
জাপানের কঠোর বিল্ডিং কোড, সেফটি সিস্টেম আর দ্রুত প্রতিক্রিয়া এই ক্ষতিটাকে অনেকটাই থামিয়ে দিয়েছে।
উপকূলীয় এলাকায় প্রায় নব্বই হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় যেতে বলা হয়েছিল। মানুষ রাতের অন্ধকারেও খুব শান্তভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে শেল্টারে গেছে। দোকান, স্কুল, কমিউনিটি সেন্টারে আগে থেকেই পানি, কম্বল, ইমার্জেন্সি খাবার রাখা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে এগুলোই বড় সহায়তা হয়। জাপানের মানুষ আতঙ্ক ছড়ায় না। তারা নিয়ম মেনে চলে, স্মার্টভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, আর এটাই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এমন বড় ভূমিকম্প কি প্রতিদিন হয়?
না, হয় না। জাপানে ছোট কম্পন নিয়মিত হলেও ৭.৫ বা এর বেশি মাত্রার ঘটনা কয়েক বছর পরপর ঘটে। এর আগের বড় ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে আছে ২০২৪ সালের নোটো, তার আগে কুমামতো, আর ২০১১ সালের তোহোকু যেটা পুরো জাপানকেই বদলে দিয়েছিল।
জাপান চারটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে থাকায় ছোট বড় কম্পন এখানে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
তবে কোনটি বড় হবে, কখন হবে, কোথায় হবে কেউ বলতে পারে না। বিজ্ঞানীরা শুধু সম্ভাবনার কথা বলেন। যেমন নানকাই ট্রফ, টোকাই অঞ্চল আর রাজধানীর আশপাশের কান্তো অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি রয়েছে। আর আজকের ভূমিকম্পের পরও JMA বলেছে, আগামী কয়েক দিনে একই মাত্রার বা একটু বেশি শক্ত আফটারশক আসতে পারে। তাই কিছুটা সতর্ক থাকা জরুরি, কিন্তু এর মানে এই না যে নিশ্চিতভাবে আরও বড় কম্পন আসছে।
জাপান এই সবকিছুর মধ্যেও যেভাবে জীবন চালিয়ে যায় সেটাই সবচেয়ে শিক্ষণীয়। ভবনগুলো শক্তভাবে তৈরি করা হয়, আগেই জরুরি রুট ঠিক থাকে, স্কুল অফিসে নিয়মিত ড্রিল চলে, মানুষের কাছে জরুরি ব্যাগ সবসময় প্রস্তুত থাকে। ভয় অবশ্যই থাকে, কিন্তু প্রস্তুতিই তাদের আত্মবিশ্বাস দেয়।
আজকের ভূমিকম্প আবারও মনে করিয়ে দিল প্রকৃতি কত শক্তিশালী আর প্রস্তুতি কতটা জীবন বাঁচাতে পারে। আপনাদের কেউ যদি ওই দিকের এলাকায় থাকেন জানাবেন কেমন আছেন। সবার জন্য দোয়া রইল, আল্লাহ সবাইকে নিরাপদে রাখুন।