
26/07/2025
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ভূমিকা
আ ক ম আজাদ
আলহামদুলিল্লাহ। শুকরিয়া মহান আল্লাহর দরবারে, তিনি প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে আওয়ামী দুঃশাসনের হাত থেকে স্বাধীন করেছেন। ২০২৪ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্রনায়ক বাংলার ছাত্র-জনতা। ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করছে স্বৈরাচার ও খুনি হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরশাসন থেকে। কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার প্রধান "রাজাকারের বাচ্চা" গালি দিয়ে আগুনে ঘি ডালেন। সংস্রাধিক ছাত্রেকে পাখির মত গুলি করে শহীদ করা হয়েছে, ১১০০০+ নিখোঁজ ও ৩৩০০০+ বিভিন্ন হসপিটালে চিকিৎসাধীন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবশেষে এক দফায় রূপান্তরিত হয়ে অগ্নি স্পোলিঙ্গের ন্যায় সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পুলিশের দেওয়ার এক ভাস্যমতে "গুলি করি, মরে একটা; একটাই যায়, স্যার। বাকিডি যায় না। এটাই স্যার সবচে বড় আতঙ্কের।"এটা কোনো উপন্যাসের গল্প নয় , ছাত্র-জনতা মারার গল্প ২০২৪। অবশেষে ৫ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশ পুনরায় হাসিনা সরকার গণ আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যাওয়ায় স্বাধীন হয়, এর একক কৃতিত্ব ছাত্র-শিক্ষক ও জনতার, কোন রাজনৈতিক দলের কৃতিত্ব নেই।
এই ছাত্র আন্দোলন বিশ্বের সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, এই ছাত্র-জনতা প্রবাসীদের সন্তান, ভাই আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী। এছাড়াও হাসিনার দখলদার সরকার যখন ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে প্রবাসীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়, তখন প্রবাসীরা দেশের জন্য, প্রিয়জনদের জন্য অসহ্য উৎকন্ঠায় মধ্যে পড়ে সরকারের প্রতি বিমুখ হয়ে যায়। নিরীহ ছাত্র হত্যা বন্ধ করার দাবিতে বিশ্বের সকল প্রবাসী ছাত্র আন্দোলনের ন্যায়-সঙ্গত দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রেমিট্যান্স শাটডাউনের আহবান করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মানবিক কারণে ছাত্রদের পক্ষে জেগে ওঠে। প্রবাসীদের মধ্যে ঝড়ের বেগে সরকার বিরোধী প্রচার প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রবাসীরাও নামার ফলে তাদের মধ্যে আটক হন অনেক প্রবাসী। প্রবাসের দূতাবাসগুলো রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের স্থানীয় আইনে মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে সাজা প্রদান করেন। অতঃপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ডক্টর ইউনুসের হস্তক্ষেপে অবশেষে প্রবাসীরা বাংলাদেশ ফেরত আসেন এবং সরকার তাদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেন। যে সকল দূতাবাস ও হাই কমিশন প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিপক্ষে কাজ করেছেন এমন আটজন রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে ফেরত নিয়েছেন।
প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাগণ শাটডাউন করার ফলেই দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে এবং আইটিসি মন্ত্রীর ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে প্রায় এক সপ্তাহ বাংলাদেশের কোন ব্যাংকেই রেমিট্যান্স প্রবেশ করে নাই। বাংলাদেশ ব্যাংক সহ সকল ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ, অফিস আদালত, কল কারখানা, বাণিজ্যিক কার্যক্রম, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়ে। সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত কারণে দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীবর্গগণ প্রবাসীদের অনুরোধ করতে থাকে, ব্যাংকিং চ্যানেল প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স পাঠানোর নির্দেশ ও প্রার্থনায়। ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশে না ঘটলে, প্রবাসীরা জানতেই পারত না প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থেই বাংলাদেশ সচল থাকে। সরকারের রক্তচোখ উপেক্ষা করে প্রবাসীদের শাটডাউন অব্যাহত থাকার ফলে সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে। অবশেষে ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতায় পতিত হয়ে হাসিনা সরকার দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ২০২৪ সালের স্বাধীনতার ইতিহাসে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি প্রবাসীদের আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কুয়েতের সোশ্যাল মিডিয়ায় সহায়ক প্রচারণা শুরু হয়, নিজের জীবনের প্রতি ঝুঁকি নিয়ে প্রবাস বাংলা মিডিয়া সহ সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জামাত-শিবির ও দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে কতিপয় দলকানা ব্যক্তি জুলুম কারীর পক্ষে অবস্থান নিতে দূতাবাসকে অনুরোধ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কুয়েত প্রবাসীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়ান। নালিশ কার্যকর করার পূর্বেই সরকার নিজের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে কুয়েত প্রবাসীদের জোর দাবি- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে, প্রবাস থেকে যে সকল কলম যোদ্ধাগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধ করে লড়েছেন, তাদের প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি প্রবাসীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়,অধিকার ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা সম্মাননার আহ্বান জানাই।