11/12/2025
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে গভীর আশঙ্কা: সাংবিধানিক বাধা ও আইনি জটিলতা;
আ ক ম আজাদ
বাংলাদেশে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পথে যে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ এবং আশঙ্কাগুলো বিদ্যমান, তা নিম্নোক্তভাবে জোরালোভাবে তুলে ধরা হলো:
১. :৭২ সাংবিধানিক শর্তের বাধা: "বাসিন্দা" হওয়ার বাধ্যবাধকতা:
বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২২ অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার "বাসিন্দা" হতে হবে।
যেহেতু প্রবাসীরা সাধারণত দেশের বাইরে থাকেন, সেহেতু সংবিধানের এই শর্তটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, অর্থাৎ ভোটাধিকার কার্যকর করার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক সাংবিধানিক বাধা সৃষ্টি করে। এটি প্রবাসীদের জন্য তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগে সরাসরি প্রতিবন্ধকতা।
২. এনআইডি বাধ্যতামূলক করার আইনি জটিলতা:
সাংবিধানিক বাধা 'বাসিন্দা' তুলতে গিয়েভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এবং ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২-এর মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের বিধান রাখা হলেও, সেখানে ভোটার নিবন্ধনে প্রবাসীদের পাসপোর্ট অগ্রাহ্য করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করার কারণে এনআইডি পাওয়া সহজলভ্য নয়। দূতাবাসে আবেদন করেও আইনি জটিলতা ও বাস্তব অসুবিধার ফলে অনেকেই দেশে না এসে এনআইডি সংগ্রহ করতে পারেন না। ফলে এই আইনি বাধ্যবাধকতাটি প্রকৃতপক্ষে প্রবাসীদের পুনরায় নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন থাকা সত্ত্বেও কার্যকরভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ কঠিন।
৩. "পোস্টাল ব্যালট বিডি" অ্যাপস ও সীমিত অংশগ্রহণের ভয়-
প্রবাসীদের কৃতজ্ঞতায় ডক্টর ইউনুস সরকারের সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশন "পোস্টাল ব্যালট বিডি" অ্যাপসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের ব্যবস্থা নিয়েছে, উক্ত অ্যাপসে ভোট গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি। তাই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধিত ভোটাররা ডাকযোগে ব্যালট পেপার সংগ্রহ ও প্রেরণের মাধ্যমে ভোটে অংশ নিতে পারবেন।
প্রবাসীদের প্রধান আশঙ্কা: নির্বাচন কমিশন এনআইডির পাশাপাশি পাসপোর্ট দ্বারা নিবন্ধনের ব্যবস্থা করেনি এবং অ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করেনি। ফলে প্রবাসীরা গভীরভাবে আশঙ্কা করছেন যে:
এনআইডি জটিলতার কারণে বেশিরভাগ প্রবাসী নিবন্ধন করতে পারবেন না।
ডাকযোগে ব্যালট সংগ্রহ ও প্রেরণের পদ্ধতিটি সময়সাপেক্ষ, অনিরাপদ এবং বিভিন্ন দেশের ডাক ব্যবস্থার জটিলতার কারণে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর জন্য কার্যকর হবে না।
এই পোস্টাল ব্যালটের সীমিত পদ্ধতির কারণে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসীর মধ্যে মাত্র ৫ লক্ষ প্রবাসীও সফলভাবে ভোট দিতে ব্যর্থ হবেন এবং বাংলাদেশের ১০ শতাংশ প্রবাসী নাগরিক তাদের ভোটাধিকার থেকে কার্যত বঞ্চিত হবেন।
প্রবাসীদের হতাশ ও বঞ্চনার চিত্র:
প্রবাসীদের ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত জোরালো। সচেতন প্রবাসীদের মতে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন একদিকে আইনি ও ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করলেও, সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা দূর না করা, এনআইডি বাধ্যতামূলক রাখা এবং সহজলভ্য (পাসপোর্ট ভিত্তিক) নিবন্ধন ও ভোট (অ্যাপস ভিত্তিক) গ্রহণের ব্যবস্থা না করায় এই উদ্যোগটি দেড় কোটি প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পরিবর্তে একটি নামমাত্র উদ্যোগে পরিণত হবে। এটি প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মধ্যে যুক্তিক গভীর হতাশা ও নাগরিক অধিকার বঞ্চনার অনুভূতি সৃষ্টি করছে।