
21/04/2025
মাতৃত্ব কোনো ছুটি নয় – এটা একটা পূর্ণকালীন, নিঃশ্বাসহীন দায়িত্ব
আমার চারটা সন্তান। সবচেয়ে ছোটটা এখনও দুই হয়নি। তার থেকেও বড়রা আছে—বয়সে একটু একটু করে বড় হলেও, মা হিসেবে আমার দায়িত্ব একটুও কমে না। তবুও বলি—আমার সেই ‘টিপিক্যাল’ সংসার জীবনের চাপগুলো নাই। জামাই ভালো, মানুষজন তেমন চাপ দেয় না, রান্না নিয়ে কেউ কথা বলে না, জামা-কাপড় নিয়ে মাথা ঘামায় না, আমি যা ইচ্ছা করি।
বাচ্চারা কাঁদে, চেঁচায়, মারামারি করে, কিন্তু তার মধ্যেও আমি বেশ কিছু ‘লাক্সারি’ পাই—যেমন ঘরে কেউ ঢুকে বলে না “এটা এইভাবে রানলি কেন?” বা “এই কাজটা করলি কেন?”কেউ বলে না কী রান্না করতে হবে, জামা-কাপড় কেমন পরতে হবে, সাজগোজে কার কেমন আপত্তি আছে। স্বামীর খিটখিটে আচরণ, সংসারে অন্যদের কথা মাথায় রেখে চলার বাধ্যবাধকতা, কিংবা যেখানে-সেখানে যেতে না পারার আফসোস—এসব আমার জীবনে নেই। তাও আমার মাথার তাপমাত্রা গরম থাকে। সকালটা শুরুই হয় যুদ্ধ দিয়ে। একজন মা হিসেবে আমার ছুটি নাই। আপনি যে কাজই করেন না কেন, সেটার একটা শুরু আর শেষ থাকে। মা হওয়ার কাজের শুরু আছে, শেষ নাই।
আমি গোসল করতে গেলেও মনে হয় বাচ্চা কাঁদছে। চুলে শ্যাম্পু লাগিয়েছি, তখনই কেউ “মা! মা!” বলে দরজা ধাক্কায়। ছোটটা “মা” ছাড়া বাঁচে না—এইসব সামলাতে সামলাতে সকাল দুপুর সন্ধ্যা কেটে যায়। মাঝে মাঝে বড়টাকে বলি,সবাই কে নিয়ে বাইরে একটু হাঁটাহাঁটি করে আসো ।মনে হয় এই বুঝি একটু me time পাব।
কিন্তু সে বের হওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে আমি রান্নাঘরে ঢুকে পড়ি। খেলনা গুছাই, ঝাড়ু দিই, ফ্রিজে কী কী শেষ হয়ে গেছে চেক করি—মানে কিছু না কিছু একটা করে ফেলি।
আর ওরা? ঠিক তখনই ফিরে আসে। যেন ওরা টের পায়—মা একটু নিঃশ্বাস নিচ্ছে, যাই গিয়ে বাতাস বন্ধ করি!
এই মা হওয়া আসলে একটা ফুলটাইম, no-break, no-vacation, no-privacy, no-snack-finished-in-peace টাইপ জব। আমি মাঝেমধ্যে সত্যি ভাবি, যাদের যমজ বাচ্চা আছে, বা স্পেশাল কেয়ারের দরকার হয় এমন বাচ্চা—তারা কিভাবে বাঁচে? আমি মনে মনে তাদের সালাম দেই।
আর এই সমাজ? স্ত্রী একদিন রাগ করে মাছ ছুঁড়ে মারলে বলে, “স্ত্রী কত রেগে যায়!” কিন্তু কেউ ভাবে না—সে কেন রেগে গেছে?
পুরুষদের রাগ নাকি স্বাভাবিক। মেয়েরা রাগ করলে বলে—“ভদ্র মেয়েরা এমন করে?”কিন্তু আশেপাশের সমাজ? তারা শুধু দেখে, স্ত্রী একদিন মাছ ছুঁড়ে মারছে—এইটুকুই হেডলাইন। কেউ দেখবে না, তার রাগটা কতদিন ধরে জমে ছিল। আমরা ছেলেদের শেখাই না কীভাবে না বলতে হয়, কীভাবে ‘একটু ভাবো’ বলতে হয়। আবার মেয়েদের শেখাই না কীভাবে নিজের চাওয়া পছন্দকে সম্মান করতে হয়।
এই কারণেই এত সম্পর্ক ভেঙে যায়, টিকলেও খুঁড়িয়ে চলে।
আমি চাই, আমার চারটা বাচ্চা যেন শেখে—তুমি ছেলে হও বা মেয়ে, আবেগ কিভাবে বুঝতে হয়, কিভাবে বলো “না”, কিভাবে বোঝো “এই মানুষটাও ক্লান্ত হতে পারে”—এই শেখাটা।
আমার চারটা সন্তান—আমি চাচ্ছি ওরা যেন মানুষ হয়। শুধু ভালো রেজাল্ট না, শুধু স্মার্ট না—ভালো মানুষ। যেন বুঝতে শেখে, পাশে থাকা কাকে বলে, না বলতে শেখে, হ্যাঁ বলার আগে ভাবতে শেখে।
কারণ, মা হওয়া কঠিন—তবে মানুষ গড়া তার চেয়েও বড় দায়িত্ব।
゚viralfbreelsfypシ゚viral-
Kamy
21.04.2025