31/03/2025
শরতের দুপুর।বাইরে প্রচণ্ড রোদ।আমি আর অবনী নদীর পাড়ে বসে পাঁচ টাকা দামের রঙ চা খাচ্ছি।শরতের মেঘ গুলো কেমন তুলোর মতো ভেসে যাচ্ছে।
চা খেতে খেতে অবনীকে বললাম,আচ্ছা অবনী তুমি আমার কাছে কখনো কিছু চাইলেনা কেন বলোতো?এবারের জন্মদিনেও তো কিছু দিতে পারলাম না তোমাকে। তোমার কি রাগ হয়না আমার উপর? একটুও মন খারাপ হয়না?
অবনী চোখ ভর্তি মন খারাপ নিয়ে আমায় বলে- আমাকে এক মুঠো আকাশের নীল এনে দিতে পারবে?
আমি বিরক্ত হয়ে অবনী কে বললাম-ন্যাকামো করোনা তো।পৃথিবী তে এতো কিছু থাকতে তুমি শুধু আকাশের নীল চাইছো কেন?
অবনী খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে।কিছুই বললোনা।এখানে আসার পর থেকেই ওর মন খারাপ।
অবনীর বুকের ভেতর এই হাহাকার টুকু আমি বুঝি। শুভ্রর সাথে ব্রেকাপের পর অবনী খুবি ভেংগে পড়েছিলো। দীর্ঘ তিন বছরের প্রেম তো। আমি অবনীর দ্বিতীয় প্রেমিক। আর অবনী আমার তৃতীয়। আমরা পুরাতন প্রেম নিয়ে কারো কাছে কিছুই লুকোইনি। অতীতের সবকিছু আমাদের কাছে পরিষ্কার। স্বচ্ছ জলের মতো।
কেন জানিনা,আজকাল এই বিষণ্ণ অবনীটাকে আমার আর ভালো লাগছেনা। আমি এখন যে অবনীকে দেখি সে আগের অবনী নয়। গত ক'মাস আগেও তাকে দেখেছিলাম উচ্ছল,প্রাণবন্ত আর স্বাধীনচেতা একটা মেয়ে।সেই অবনী হঠাৎ করে কেমন চুপসে গেলো!এমন তো হবার কথা নয়।
আমি হুট করে অবনী কে বললাম,তুমি বোধহয় অন্য কারো প্রেমে পড়েছো? তাইতো?
অবনী রেগে গিয়ে বলে- পড়লে কি?কি হবে প্রেমে পড়লে?ছেড়ে চলে যাবে?যাও....আটকে তো রাখিনি। যেদিকে খুশি,যার কাছে খুশি চলে যেতে পারো।
অবনী রাগে কাঁপছে।
দুজনে এবার চুপ করে রইলাম।কোনো কথা নেই।কেউ কারোর দিকে তাকাচ্ছিনা।সময়ের কাধে চেপে খোলা আকাশের বুকে ভেসে যাচ্ছে আমাদের রৌদ্দুর...
অবনীর চোখের কোনে যে জল জমছে তা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।আমার ক্ষমা চাওয়া দরকার। এভাবে বলাটা বোধহয় উচিত হয়নি।আমার হাতটা ওর হাতে রাখতেই হাত সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
আচ্ছা,তুমি কি আমার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছো?
দেখো,ভালোবেসে নির্ভর করেছো ঠিক আছে,কিন্তু নির্ভরশীল হয়ে পড়বেনা একদম। এখন এই আমার মধ্যে তুমি যে পৃথিবীটা দেখছো,আমি চলে যাওয়ার পর এমন এক নতুন পৃথিবী খুঁজে নিও।অন্তত আমি যেন বুঝি যে তুমি আমাকে ছাড়াও ভালো থাকতে পারো।একটাই তো জীবন,তাইনা?পারলে তার যত্ন করো। নিজের মতো বাঁচো।
-তোমাকে ছাড়া কোন পৃথিবী ভাববো আমি?কি বলছো এসব?
-"যে পৃথিবীতে আমার অস্তিত্ব নেই,যেখানে অবনী বলে কেউ নেই সেই পৃথিবীর কথা ভেবো" এইটুকু বলেই চোখের জল মুছে ফেললো অবনী।
ওর চোখেমুখে তখনো রাজ্যের বিষণ্ণতা। শ্যাওলা পড়া ওই বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে বলি-আমিতো অমন তুমিহীন কোনো পৃথিবী চাইনি অবনী। আমি তো তোমার সাথে বাঁচতে চেয়েছিলাম।
অবনী আমার দিকে তাকিয়ে বলে,পৃথিবী তে কিছু বিষয় আছে যা না চাইলেও ছেড়ে দিতে হয়। ভালো থাকার জন্য,ভালো রাখার জন্য।আমাদের কাছে ভালো থাকাটা ভীষন জরুরী। ভালোবাসার মতন।জানো!জীবনে ভালোবাসার অনেক সমীকরণ থাকে, কিন্তু ছেড়ে যাওয়ার কোনো সমীকরণ থাকেনা।
আমি আর কোনো প্রশ্ন করিনি।করলেও যে উত্তর পেতাম হয়তো তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।এরপর দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলো,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা।সময় খুব দ্রুত ফুরোচ্ছে আমাদের।আমাদের এবার ফেরার পালা। যে যার পথে। অবনী কে রিক্সায় তুলে দিয়ে আমি দাঁড়িয়ে থাকি রাস্তার এক চোরাগলির কোণায়।যেখানে ল্যাম্পপোস্টের আলো পৌঁছোয় না। ভাবছি,আজকের পর অবনী কেমন থাকবে?কার সাথে থাকবে?হয়তো অন্য কারোর প্রেমে পড়বে।শুভ্র তো আবার ফিরেও আসতে পারে।তার সাথে বোধহয় দারুণ একটা সংসার পাতবে।পাতলে পাতুক।ও যেভাবে খুশী থাকতে চায় সেভাবেই থাকুক।সে যদি কাউকে বিয়ে করতে চায় করুক।আমার এই বিচ্ছেদ টা না হয় ওর বিয়ের উপহার হিসেবে রইলো।
কিন্তু এই বিয়ে নামক বিষয়টা কি সত্যিই কাউকে আপন করতে পারে?অথবা বিচ্ছেদগুলো কি সত্যিই কাউকে পর করে দেয়???আজো জানা হলোনা।
বিচ্ছেদ/মিহির বিশ্বাস
১১/০৯/২০১৮