14/03/2024
-ডেয়ার দিয়ে সে'ক্স করতে চাইলে কি সে'ক্স করতে হবে নাকি! আমার তো মনে হয় তুমি সেটাতেও রাজি হয়ে যেতে।
অরুণা বিরক্ত হয়ে বলল,
-আজব! কিসের সাথে তুমি কী মিলাচ্ছ! তুমি ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে শুধু শুধু এত ঝগড়া করছ।
আবির বলল,
-এটা কোনো ছোট ব্যাপার নয়। একটা অপরিচিত ছেলে তোমাকে তার সাথে কফি ডেটে যাওয়ার জন্য ডেয়ার দিলো, আর তুমি নাচতে নাচতে চলে গেলে! তার সাথে বসে কফি খেলে, এটা ছোট ব্যাপার নয়। এমনিতে দেখা করলে বা কফি খেলে কিছু মনে করতাম না। ডেয়ার দিয়েছে দেখে করেছ এটা আমার ভালো লাগেনি। এরপরে তো রুম ডেট করার ডেয়ার দিবে।
-ছিঃ আবির! মুখে যা আসছে তা-ই বলে যাচ্ছ। তুমি যেভাবে ব্যাপারটা তুলে ধরছ, ব্যাপারটা এমন না। এটা জাস্ট ফান ছিল। এর বেশি কিছু না।
-এগুলো ফান না, এগুলো নষ্টামি।
অরুণা এবার রেগে গিয়ে বলল,
-আমি নষ্ট মেয়ে তাই তো বলতে চাচ্ছ? তোমার মতো এত নিচু মনমানসিকতার ছেলের সাথে রিলেশন কনটিনিউ করা সম্ভব নয়। আমি কী করবো, না করবো, সব তোমার থেকে পারমিশন নিয়ে করতে হবে নাকি! আমার নিজের কি কোনো স্বাধীনতা নাই! তোমার হাতের পুতুল মনে করো নাকি আমাকে!
নারীদের সেই চিরাচরিত স্বাধীনতার বুলির কাছে পরাস্ত হলো আবির। সে আর কোনো তর্কে না গিয়ে বলল,
-আচ্ছা সরি। তোমার লাইফ, তোমার যা ভালো মনে হয় সেটাই করো। সরি। আমি চলে যাচ্ছি তোমার জীবন থেকে।
-যাও। তোমার মতো এত টক্সিক মানুষের সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।
এই ঘটনার পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। সেইদিনই ছিল তাদের শেষ কথোপকথন। এর ছয়মাসের মধ্যেই আবির বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল পড়ালেখার উদ্দেশ্যে। বেশ কিছুদিন হলো সে দেশে ফিরেছে। আজ ঢাকা শহরটা ঘুরে দেখতে বের হয়েছে। নিউ মার্কেটের সামনে এক পাগলীকে দেখে থমকে গেল সে। হঠাৎ চোখে ভেসে উঠল অরুণার সাথে কাটানোর স্মৃতির ঝলক। মেয়েটিকে অবিকল অরুণার মতো দেখতে। তবে এটাই কি অরুণা? এই অবস্থা হলো কী করে তার! এটা আবির কল্পনাও করতে পারেনি। অরুণার যেসব বান্ধবীর সাথে আবিরের পরিচয় ছিল, ব্রেকাপের পরে সবাইকে ব্লক করে রেখেছিল সে। নুসরাত নামে অরুণার একজন ক্লোজফ্রেন্ড ছিল। নুসরাতকে আনব্লক করে ম্যাসেজ দিলো আবির। ঘন্টাখানেক পরে ম্যাসেজের রিপ্লাইও পেল। এরপরে কল দিয়ে অরুণার ব্যাপারে জানতে চাইলো। নুসরাত বলল,
-আপনার সাথে ব্রেকাপের পরে অরুণা ছেলেদের সাথে বেশি মিশতে শুরু করে। এক একদিন এক এক ছেলের সাথে ঘুরতে যায়। আর এত পরিমাণ গিফট পেত ছেলেদের কাছ থেকে, বলার বাইরে। বেশ ভালোই কাটছিল ওর দিন।
আবির প্রশ্ন করলো,
-আমার কথা কখনো বলতো না?
-না।
-পরে কী হলো?
-আমাদের থেকেও দূর যাওয়া শুরু করলো। আমাদের সাথে তেমন মিশতো না, আগের মতো কথা বলতো না। অনেক রাত করে বাসায় ফিরতো। আঙ্কেল, আন্টি আমাদেরকে কল করতো ও কোথায় জানার জন্য। কিন্তু আমরা তো কিছু জানতাম না ওর ব্যাপারে। এরপরে শুনলাম মদ খেয়ে বসায় ফিরতো। কিছু বললে ভাঙচুর করতো। একদম বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল।
বলে চুপ করে রইলো নুসরাত। আবির প্রশ্ন করলো,
-এরপরে কী হলো?
-এরপরে আপনার আর না জানাই ভালো হবে। কিছু কিছু ব্যাপার অজানা থাকাই ভালো।
-না। বলো প্লিজ। আমি জানতে চাই।
-অন্য একদিন বলবো। আপনার কী খবর বলুন? বিয়ে সাদি করেছেন?
-না। তুমি পুরো ঘটনাটা বলো প্লিজ।
-আমি এখন বলতে পারবো না। আশেপাশে লোকজন আছে।
কল কেটে দিলো নুসরাত। এরপরে দীর্ঘদিন কেটে গেলেও নুসরাতের কাছ থেকে
ঘটনার বাকি অংশ শোনা সম্ভব হয়নি। নানা অজুহাতে সে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। আজ হঠাৎ লিমনের সাথে দেখা হলো আবিরের। লিমন, অরুণা এবং আবির একসাথেই পড়ালেখা করতো। একসাথে চা খেতে খেতে স্মৃতিরপাতাগুলো উল্টেপাল্টে আলোচনা করা হলো। একসময়ে আবির জিজ্ঞেস করলো সে অরুণার ব্যাপারে কিছু জানে কিনা? লিমন বলল,
-অরুণার কথা তো সবাই জানে। কয়েকটা পত্র-পত্রিকায়ও ওকে নিয়ে লেখালিখি হয়েছিল।
-কেন?
-কথাটা শুনলে তোর অনেক কষ্ট লাগবে বন্ধু। বাদ দে।
-বল না?
-গ্যাঙ রেপ হয়েছিল ওর। কোনো একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টতে গিয়েছিল। দুইদিন ধরে ওর বাবা-মা ওর কোনো খোঁজ পায়নি। পরে জানতে পারে ও হাসপাতালে ভর্তি এবং ওর অবস্থা খুব খারাপ। প্রায় ছয় মাসের মতো হাসপাতালে ছিল। শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
-দোষীদের কোনো শাস্তি হয়নি?
-দোষীরা সব ধনীর দুলাল। কী আর হবে? মামলা চলেছে কিছুদিন তারপরে এক একজন জামিনে বের হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর মেইন কথা হচ্ছে এর আগে অরুণার একবার গর্ভপাতও করা হয়েছে। বিয়েই আগেই গর্ভপাত, যেকারণে বিরোধীপক্ষ প্রমাণ করতে চেষ্টা করছে, অরুণা স্বেচ্ছায় কাজটি করেছে।
-ওর চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা হয়নি?
-কে করাবে? ওর মা-বাবা দুইজনই মারা গেছেন। এখন ওকে দেখার কেউ নেই। আত্মীয়-স্বজনরা কেউ এই পাগলীর দায়িত্ব নেয়নি।
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,
-এখন সে একদম স্বাধীন। নিজের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাগলের কোনো পরাধীনতা নেই। আমরা চাইলেই পোশাক খুলে হাঁটতে পারিনা। কারণ আমরা সমাজের নিয়মকানুনের কাছে দায়বদ্ধ। একজন পাগল চাইলে পোশাক খুলে হাঁটতে পারে। যা ইচ্ছা করতে পারে, তার কিছু ভাবতে হয়না। সে সমাজের সব দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত। এটাই তো ভালো।
মুখে এই কথা বললেও ওর ভিতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। অরুণাকে খুঁজতে সে বেরিয়ে পড়লো। নিউ মার্কেটের কাছেই তাকে খুঁজে পাওয়া গেল। আবির কাছে যেতেই লাঠি দিয়ে মারতে আসলো তাকে। বলল,
-তোর ফাঁসি চাই।
-কেন আমি কী করেছি?
-তুই ধর্ষক। তোরা সবাই ধর্ষক।
বলতে বলতে দৌঁড় দিলো সে। আবির একটি প্রাইভেট মানসিক হাসপাতালে যোগাযোগ করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলো। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে আবির ভাবতে লাগল, এইযে মেয়েদের অবাধ স্বাধীনতার বুলি আওড়ানো ছেলেগুলো, এরা নিজেরাও এমন মেয়ে বিয়ে করবে না যেসব মেয়ে তাদের সাথেই রাত-বেরাতে পার্টি করে বেড়ায়, একসাথে নেশা করে বা অবাধ শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। অথচ এরা নিজেরা ঠিকই মেয়েদেরকে স্বাধীনতার ব্যাপারে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা করবে। তাদের সাথে মেলামেশা করতে ইনফ্লুয়েন্স করবে। তাদের সুপ্ত উদ্দেশ্য একটাই ভোগ করা। দিনশেষে এই মেয়েগুলোই ভিক্টিম হয়। দিনশেষে তারা না পায় সেসব বন্ধুগুলোকে, না পায় স্বামী-সংসার।
-সংগৃহীত।