10/12/2025
নিয়তের গুরুত্ব: কীভাবে আপনার দৈনন্দিন কাজ ইবাদতে পরিণত হয়?
ভূমিকা: নিয়তই কাজের মূল ভিত্তি
মানবজীবনে প্রতিটি কাজের পেছনে একটি উদ্দেশ্য বা প্রেরণা থাকে। ইসলামে এই উদ্দেশ্য বা ইচ্ছাকেই বলা হয় নিয়ত (Niyyah)। বাহ্যিকভাবে একই রকম দুটি কাজ—যেমন দান করা বা কঠোর পরিশ্রম করা—নিয়তের ভিন্নতার কারণে সম্পূর্ণ ভিন্ন ফলাফল বয়ে আনতে পারে। নিয়তই হলো একজন মুমিনের কর্মের ভিত্তি এবং সাফল্যের চাবিকাঠি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
"নিশ্চয়ই সমস্ত কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছে।" (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
এই হাদিসটি আমাদের শেখায় যে, আপনার কাজের বাহ্যিক রূপ নয়, বরং আপনার ভেতরের উদ্দেশ্যই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
১. নিয়তের বিশুদ্ধতা (ইখলাস): কাজের মূল প্রাণ
নিয়তের বিশুদ্ধতা বা 'ইখলাস' (Akhlaas) হলো এমন একটি অবস্থা যখন আপনার কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। ইখলাস ছাড়া কোনো কাজই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না।
ধরুন, আপনি কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করছেন। যদি আপনার নিয়ত হয়:
* অবিশুদ্ধ নিয়ত: মানুষকে দেখানোর জন্য বা প্রচুর সম্পদ জমানোর জন্য।
* বিশুদ্ধ নিয়ত (ইখলাস): হালাল রিজিক উপার্জন করে নিজের পরিবারকে কষ্ট থেকে রক্ষা করা এবং আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পালন করা।
বিশুদ্ধ নিয়ত আপনার সাধারণ উপার্জনকেও ইবাদতে পরিণত করে।
২. নিয়তের জাদুকরী ক্ষমতা: সাধারণ কাজ ইবাদত
নিয়তের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলোকেও সহজেই ইবাদতে রূপান্তরিত করতে পারেন। এটি মুসলিম জীবনের এক অসাধারণ সুযোগ।
* ঘুম: আপনি ঘুমাতে গেলেন শুধু আরামের জন্য—এটি একটি সাধারণ কাজ। কিন্তু যদি আপনি এই নিয়ত করেন যে, "আমি ঘুমিয়ে শক্তি সঞ্চয় করছি, যাতে ফজরের সালাতে ভালোভাবে দাঁড়াতে পারি এবং দিনের বেলা আল্লাহর ইবাদত ও কাজ ভালোভাবে করতে পারি,"—তাহলে এই ঘুমও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
* খাবার গ্রহণ: নিছক ক্ষুধা মেটানো নয়, যদি নিয়ত থাকে "আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা এবং ইবাদতের জন্য শক্তি অর্জন করা," তবে আপনার খাদ্য গ্রহণও সওয়াবের কাজ হবে।
* পেশাগত কাজ: আপনি যদি নিয়ত করেন, "আমি আমার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করছি, কারণ আল্লাহ কাজে সততা পছন্দ করেন," তবে আপনার অফিস বা ব্যবসার কাজও পরকালের সঞ্চয় হবে।
মোটিভেশনাল শিক্ষা: নিয়তের এই ক্ষমতা আমাদের শেখায় যে, ইবাদত শুধু মসজিদ বা জায়নামাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে ইবাদতের মাধ্যমে আলোকিত করা সম্ভব।
৩. নিয়তের মাধ্যমে ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপান্তর
নিয়ত শুধু কাজ শুরুর আগে নয়, বরং এটি আমাদের ব্যর্থতার সময়েও আশা যোগায়। ধরুন, আপনি কোনো ভালো কাজ করার দৃঢ় নিয়ত করলেন, কিন্তু কোনো কারণে কাজটি সম্পন্ন করতে পারলেন না।
ইসলাম শিক্ষা দেয় যে, কোনো মুসলিম যদি আন্তরিকতার সাথে কোনো ভালো কাজের নিয়ত করে কিন্তু তা করতে না পারে, তবুও আল্লাহ তার জন্য সওয়াব লেখেন। আর যদি সে নিয়ত করে কাজটি সম্পন্ন করতে পারে, তবে দশগুণ পর্যন্ত সওয়াব লাভ করে। অন্যদিকে, খারাপ কাজের শুধু নিয়ত করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন, যদি না সে কাজটি বাস্তবে করে।
উপসংহার: আপনার হৃদয়ের দিকে মনোযোগ দিন
অতএব, সফলতার জন্য শুধু কঠোর পরিশ্রমই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন হলো হৃদয়ের গহীনে লুকানো বিশুদ্ধ নিয়ত।
প্রতি সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি একটি নতুন করে শুরু করার সুযোগ পান। প্রতিটি কাজ শুরুর আগে কেবল এক সেকেন্ডের জন্য স্থির হয়ে ভাবুন: "আমি এই কাজটি কার জন্য করছি?"
নিয়তকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে পরিচালিত করুন। যখন আপনার নিয়ত বিশুদ্ধ হবে, তখন আপনার জীবনযাত্রার মান, আপনার সম্পর্ক, আপনার পেশা—সবকিছুই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠবে। আপনার জীবন এক অবিচ্ছিন্ন ইবাদতের ধারায় প্রবাহিত হবে।
আসুন, আজ থেকে আমাদের প্রতিটি কাজে নিয়তের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে অর্থবহ ও কল্যাণময় করে তুলি।
এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লাগলো? ভালো লাগলে শেয়ার করে দিয়ে।অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন।