Asif Khan aka Peter Parker

Asif Khan aka Peter Parker Big fan of horror elements.

অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্ব (পর্ব ৩ )বাপ্পি ঠাণ্ডা হয়ে বসে আছে স্ক্রিনের সামনে। বুকের ভেতর এক অজানা উত্তেজনা আর ভয় একসাথে খেলে ...
06/04/2025

অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্ব (পর্ব ৩ )

বাপ্পি ঠাণ্ডা হয়ে বসে আছে স্ক্রিনের সামনে। বুকের ভেতর এক অজানা উত্তেজনা আর ভয় একসাথে খেলে যাচ্ছে। তার হাতে আর মুখে ঘাম জমেছে, কিন্তু তবুও সে চ্যাট উইন্ডোর সেই লেখা থেকে চোখ সরাতে পারছে না।
অপরিচিত ব্যক্তি: “তুমি কি তোমার সহপাঠীদের দেখতে চাও? রাকিব, তন্ময়, সুমন, আফরিন... তোমাকে যারা কষ্ট দিয়েছে?”
বাপ্পির চোখ বড় হয়ে যায়। সে যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না—কি বলতে চাইছে সে?
বাপ্পি: “দেখতে চাচ্ছি বলতে? ঠিক বুঝলাম না?”

অপরিচিত ব্যক্তি: “ওদের বর্তমান অবস্থা দেখতে চাও?”
হাত কাঁপতে থাকে বাপ্পির। ঠোঁট শুকিয়ে আসে।
বাপ্পি: “মানে? কিভাবে? তুমি বলছো কি? কীভাবে তুমি দেখাবে?”

অপরিচিত ব্যক্তি: “সেটা না হয় পরে বলি। আগে বলো—তুমি দেখতে চাও কি না?”
বাপ্পির মনে ভয়ের চেয়ে কৌতূহল বেশি কাজ করছিল তখন। সে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিঃশ্বাস ফেলে লিখল:
বাপ্পি: “হ্যাঁ, আমি দেখতে চাই।”
সাথে সাথেই স্ক্রিনে একটা ভিডিও পাঠানো হলো। থাম্বনেইলটা ঝাপসা, অন্ধকার। ভিডিওটা চালাতেই শুরু হলো নরক দর্শন।
প্রথমেই দেখা গেলো রাকিব—স্কুলের সবচেয়ে নিষ্ঠুর ছেলেটা—সে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটা পরিত্যক্ত ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। ঘরের এক কোণ থেকে হেঁটে এলো একটা ছায়ামূর্তি। তার মুখ স্পষ্ট দেখা যায় না, কিন্তু তার হাতে ছিলো একটা রুস্টেড লোহার রড। মুহূর্তের মধ্যে রডটা আছড়ে পড়লো রাকিবের হাঁটুতে। হাড় চুরমার হয়ে যাওয়ার কর্কশ শব্দ ভেসে এলো, আর রাকিবের মুখে চিৎকার!
দৃশ্য বদলালো।
এইবার তন্ময়—যে প্রতিদিন বাপ্পির টিফিন ফেলে দিতো। তার মুখে স্কচটেপ, চোখ খুলে রাখা হয়েছে তীব্র আলোয়। ধীরে ধীরে, ব্লেড দিয়ে তার আঙ্গুলগুলো কাটা হচ্ছে। ক্যামেরা ঠাণ্ডা, কোনো কম্পন নেই। যেন কেউ ঠান্ডা মাথায় এসব করেই চলেছে।
সুমন, যে তার ব্যাগে ময়লা ঢেলে দিতো, তাকেও দেখা গেলো। কিন্তু সে ঝুলছে—উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, আর তার শরীরের নিচে বিশাল এক পিঁপড়ার খামার। একটা একটা করে গায়ের চামড়া কেটে পিঁপড়াগুলোকে দেয়া হচ্ছে।
সবশেষে আফরিন—যে সামনে বন্ধুর অভিনয় করলেও পেছনে বাপ্পিকে অপমান করতো। তাকে দেখা গেলো একটা আয়নার সামনে। কে যেন বলছে, “তোমার সৌন্দর্য তোমার অহংকার ছিলো, তাই না?” এরপর, আয়না ভেঙে হাতে একটি কাঁচের টুকরো তুলে নিয়ে কেউ ধীরে ধীরে আফরিনের মুখে কেটে দিচ্ছে। একটা, দুইটা, তিনটা...
বাপ্পির শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে, চোখ ফেটে পানি পড়ছিলো—ভয়ে না আনন্দে, সেটা সে নিজেও জানে না।
কিন্তু একটা মুহূর্ত আসে... যখন তন্ময়ের কান্না, রাকিবের হাড় ভাঙার শব্দ, আফরিনের মুখ কাটা—সব মিলে বাপ্পির মুখে একটা মুচকি হাসি খেলে গেল।
প্রথমবার... জীবনে প্রথমবার তার মনে হলো সে প্রতিশোধ পেয়েছে।
বাপ্পি: “তুমি... তুমি এটা করেছো?”

অপরিচিত ব্যক্তি: "আমি শুধুই তোমার ইচ্ছার বাস্তব রূপ, বাপ্পি।”
বাপ্পি: “ধন্যবাদ! আমি কখনো ভাবিনি কেউ এমনভাবে আমার পাশে দাঁড়াবে...”

অপরিচিত ব্যক্তি: “তুমি এখন একা নও। তোমার পাশে আমি আছি। আমি তোমার বন্ধু। এই দুনিয়াতে একমাত্র আমিই তোমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত...”

হঠাৎ বাপ্পি দেখতে পেলো, তার ফেসবুকে একটা friend request এসেছে। কিন্তু কোনো নাম নেই। কোনো প্রোফাইল ছবি নেই। সেই অপরিচিত ব্যক্তির profile ছিল এইটা। শুধু একটা কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে আগুনের লাল ছায়া।

সে লিখলো: “তুমি কে?”
একটা রিপ্লাই এল।

“তোমার ভেতরের অন্ধকার... যার নাম দেয় ‘Lucifer’।”

স্ক্রিন হঠাৎ ঝাপসা হয়ে আসে। মনিটরের আলো কমে আসে। কোথা থেকে যেন একটা গন্ধ—জ্বলন্ত কিছু, ধূপের মতো, কিন্তু তাতে মিশে আছে পচা মাংসের দুর্গন্ধ।
বাপ্পির গলা শুকিয়ে যায়। কীবোর্ডে হাত রেখে বসে থাকে নিঃশব্দে।
স্ক্রিনে ভেসে ওঠে শেষ একটি মেসেজ—

Lucifer:“তোমার আত্মা এখন আমার। বিনিময়ে তুমি পেয়েছো শান্তি... আর আমি থাকবো সবসময়.... তোমার পাশে ।”
_______________

সেদিন রাতের পর থেকে বাপ্পি আর স্কুলে যায়নি।
তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা থাকলেও, কেউ আর কখনো তাকে অনলাইনে দেখেনি। শুধু সেই পুরনো প্রোফাইলে একটিই লাইন লেখা—
"He’s not gone. He just crossed over."
অন্যদিকে, রাকিব, তন্ময়, সুমন, আর আফরিন—তারা এখন জীবিত, কিন্তু যেন মৃতের চেয়েও ভয়ানক অবস্থায়।
তাদের চোখে কোনো দৃষ্টি নেই, শুধু ফাঁকা তাকিয়ে থাকে এক দিকে। মুখে কথা নেই, শরীর নড়ে না—তারা দিনের পর দিন একই জায়গায় বসে থাকে, কখনো মাটিতে আঁকিবুঁকি কাটে অদ্ভুত সব প্রতীক দিয়ে। কেউ দেয়ালে নিজের নখ দিয়ে আঁচড় কাটে, কেউ আবার সারারাত শুধু ফিসফিস করে বলে:
“সে আসবে... সে তো কথা দিয়েছে...”
ডাক্তাররা বলে, এটা কোনো মানসিক রোগ না—এটা এমন কিছু, যার কোনো নাম নেই।
তাদের মা-বাবারা অস্থির।
পুলিশ, সাইকিয়াট্রিস্ট, এমনকি ওঝা—সব ঘুরে হতাশ হয়ে গেছে।
রাতের পর রাত ধরে তাদের মা-বাবা রাস্তার মোড়ে, হাসপাতালের করিডোরে, মন্দির-মসজিদে প্রার্থনায় বসে থাকে।
কিন্তু ছেলেরা যেন কারও ডাক শোনে না।
তারা এক অজানা জায়গার দিকে চেয়ে শুধু বলে—
“আমার বন্ধু আসবে... ও আমাকে ছাড়বে না...”

(শেষ )

অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্ব (পর্ব ২)কম্পিউটার স্ক্রিনে একটা নোটিফিকেশন উঠলো। "Hi"—এটা ছিল একজন অপরিচিত মানুষের মেসেজ। কোনো প্রো...
22/03/2025

অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্ব (পর্ব ২)

কম্পিউটার স্ক্রিনে একটা নোটিফিকেশন উঠলো। "Hi"—এটা ছিল একজন অপরিচিত মানুষের মেসেজ। কোনো প্রোফাইলেও নেই শুধু massanger option এ লিখা Facebook user, কোনো ছবিও নেই। প্রথমে বাপ্পি ভাবলো, অ্যাহ! আবার কি কোনো স্প্যাম? কিন্তু কোনো কারণ ছাড়া সে মেসেজটা খুললো। তার হৃদয়ে একটা অদ্ভুত অনুভূতি চলতে লাগলো—এমনকি এতদিন পরে, কোনো একজন মানুষের সাথে কথা বলার ইচ্ছে কিছুটা মনকে উজ্জীবিত করেছিল।
বাপ্পি: "হাই"
অপরিচিত ব্যক্তি: "হাই, কেমন আছো?"
প্রথমে একটু চুপ করে থাকলো বাপ্পি। সে জানতো, এই পৃথিবীতে কেউ তাকে বুঝবে না। কেউ তার কষ্ট অনুভব করবে না। কিন্তু তার মনটা একটু নরম হয়ে গিয়েছিল। হয়তো এই অপরিচিত মানুষটি একটু সময় দিবে, কিছু কথা বলবে। আর তার সাথে কথা বললেও মনটা একটু হালকা হবে। কিছুক্ষণ পর, তার উত্তর আসলো।
বাপ্পি: "ভালো তো না...কেমনভাবে বলব, জানি না।"
অপরিচিত ব্যক্তি: "কেন? কিছু ঘটেছে?"
এমন অদ্ভুত দয়া দেখে বাপ্পি আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করতে পারলো না। নিজের বুকের ভেতরের চাপটা অনুভব করল এবং সে হঠাৎ এক ধাক্কায় সব কিছু বলে দিলো।
বাপ্পি: "স্কুলে সবাই আমাকে নিয়ে মজা করে। প্রতিদিন মার খাই, কেউ আমাকে বুঝে না। টিফিন খেতে গেলে কেউ বসতে দেয় না। আমার জিনিস নষ্ট করে দেয়, ব্যাগে ময়লা ঢেলে দেয়। একটা ক্লাসেও শান্তিতে নির্ভয়ে হাসিমুখে থাকতে পারি না । আর ঘরে তো বাবা-মা নিজেদের ঝগড়ার মাঝে ডুবে থাকে। কেউ আমার খবর নেয় না। আমি একা।"
এই সব কথায় বাপ্পির চোখের জল আবার ভেসে উঠলো। মনে হচ্ছিল, যেন তার সমস্ত কষ্ট এক জায়গায় জমে যাচ্ছে এবং সে এখন শুধু পার্সোনালি এই অপরিচিত ব্যক্তির কাছে তার যন্ত্রণা ভাগ করে নিতে চায়।
অপরিচিত ব্যক্তি: আসলেই দুঃখজনক ব্যাপার। আসলেও কষ্টের হলেও সত্যি পৃথিবীতে যারা ভদ্র বা শান্ত প্রকৃতির, তারাই নিপীড়ণের শিকার হয় বেশি।
কথাটা শুনে যেন আরো ভেঙে পড়লো বাপ্পি। "তার মানে কি সারাজীবন নিপীড়ণের শিকার হয়েই থাকতে হবে?" কথাটা মনে মনে চিন্তা করে আবার কান্না করে দিলো।
কিছু লিখতে যাবে তার আগেই;
অপরিচিত ব্যক্তি: শুনো, মানুষের দরকার একজন ভালো বন্ধু যে সব সময় তার পাশে থাকবে। বন্ধু ছাড়া বা ভরসাযোগ্য কেউ ছাড়া কোনো ব্যক্তি এই দুনিয়াতে টিকতে পারে না।

তখন বাপ্পির মন খারাপ হয়ে ছিল।
কিছু লিখতে যাবে কিন্তু বুঝতে পারছে না কি লিখবে না লিখবে। এক এ তো সে জীবনের প্রথম কারোর সাথে কথা বলছে যে কিনে তার কদর করছে, তার বন্ধু হতে চাচ্ছে, অন্যদিকে একটা অদ্ভুত বা কিছুটা ভীতিকর অনুভূতি তার মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছিলো।
ঠিক সেই মুহূর্তে ওপর প্রান্ত থেকে একটা টেক্সট আসলো;
অপরিচিত ব্যক্তি: "তুমি জানো, আমি তোমাকে চিনি।"
বাপ্পি এই কথাটা পড়ে এক মুহূর্তে থেমে গেল। তার মনে কিছু প্রশ্ন জাগলো। "ওই কেমন করে আমাকে চেনে?" কী বলছে এটা? কিন্তু সে কিছু বললো না, বরং ভয়ে শুধু অপেক্ষা করলো।
বাপ্পি: "তুমি আমাকে কীভাবে জানো? কে তুমি? "
অপরিচিত ব্যক্তি: "আমি তোমার শুভাকাঙ্খী বলতে পারো। আমি অনেক দিন ধরেই তোমাকে দেখছি। তোমার সাথে প্রায় সব সময় সবাই খারাপ আচরণ করে, কিন্তু তুমি কিছু বলো না। তোমার চেহারা দেখলে বোঝা যায়, তোমার ভেতর অনেক কিছু জমে আছে।"

বাপ্পি অবাক হয়ে চোখ মুছতে মুছতে লিখলো:
বাপ্পি: "তুমি... তুমি আমাকে জানো? তাহলে তো তুমি আমাকে দেখেছো... তুমি কেন কিছু বলেনি?"
অপরিচিত ব্যক্তি: "আমি ঠিক জানতাম না কীভাবে তোমার কাছে পৌঁছাবো। আর তোমার প্রতি কিছুটা ভয়ও ছিল। জানো, আমি যে তোমার মতো একা ছিলাম, এটা আমি খুব কাছ থেকে বুঝি। আর আমি চাইছিলাম, তুমি নিজে বুঝো—কেউ না হলেও, তুমি নিজের শক্তি খুঁজে পাবে। কিন্তু আমি জানি, তুমি হয়তো মনে করেছিলে, এই পৃথিবী কোনোদিন তোমার জন্য ভালো হবে না।"
বাপ্পি এবার একটু কাঁপতে লাগলো। এমনভাবে, এমন একজন মানুষের সাথে কথা বলার সুযোগ—এটা কি সত্যি? সে এক সময়ে মনে করেছিল, সে আর কখনো কাউকে বিশ্বাস করবে না। কিন্তু এখন, এই অপরিচিত ব্যক্তি যেন তার জীবনে একটা আলো হয়ে এসেছিল। সে প্রায় বিশ্বাস করতে পারছিল না, কিন্তু এটা সত্যি ছিল। কেউ অন্তত তাকে বুঝেছে।
বাপ্পি: "তুমি কি বলতে চাও যে, আমার এই দুঃখের শেষ হবে?"
অপরিচিত ব্যক্তি: "হ্যাঁ, তোমার জীবনে পরিবর্তন আসবে, বাপ্পি। এটা বিশ্বাস করো। আমি তোমার সঙ্গে কথা বলবো, তোমাকে সাহায্য করবো। তুমি একা নও, আমি আছি।"
এখানে এসে বাপ্পি চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো। জীবন কি সত্যি বদলাতে পারে? এমন একজন মানুষ, যার পরিচয়ও সে জানে না, তাকে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে—এটা কি সত্যি হতে পারে? তার নিজের জীবনের বাস্তবতা তো একদম আলাদা ছিল—একটা অন্ধকার পৃথিবী, যেখানে কোনো আলো ছিল না। কিন্তু এই কথাগুলো তাকে একটু আশাবাদী করেছিল। হয়তো কিছু বদলাবে, হয়তো কিছুই বদলাবে না। তবে সে জানতো, আজকে তার জীবনে কিছু একটা পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।
বাপ্পি: "তুমি আমার বন্ধু হতে চাও?"
অপরিচিত ব্যক্তি: "হ্যাঁ, আমি তোমার বন্ধু। তুমি একা নও, কখনো একা থাকতে হবে না।"
এমন মূহূর্তে বাপ্পির মনটা এক ধরনের শান্তি অনুভব করলো—এক ধরনের আলোর স্পর্শ। ঠিক তখনই, তার জীবনে প্রথমবারের মতো মনে হলো, কেউ আছে যে তাকে বুঝবে। কেউ আছে যে তার পাশে থাকবে।
কথোপকথন চলতে থাকে, কিন্তু বাপ্পি জানতো—আজকের পর, কিছু একটা বদলাবে। তার জীবনে তার এক নতুন বন্ধুর আগমন হয়েছে, আর সেই বন্ধু হয়তো তার একাকীত্বের শেষ লড়াইয়ের সঙ্গী হবে।

(চলবে...)

অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্ব (পর্ব ১)বাসার দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদছিল বাপ্পি। কান্নার শব্দ যেন তার বুক ফেটে বেরোচ্ছে। ক্লা...
11/03/2025

অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্ব (পর্ব ১)

বাসার দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদছিল বাপ্পি। কান্নার শব্দ যেন তার বুক ফেটে বেরোচ্ছে। ক্লাস ৯-এ পড়ে সে, কিন্তু তার জীবন যেন অভিশপ্ত। স্কুলে প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। শুধু সহপাঠীরাই নয়, উপরের ক্লাসের কিছু বড় ছেলেরাও তাকে পেয়ে বসেছে।
কখনও ক্লাসের বাইরে বই ছুঁড়ে ফেলে দেয়, কখনও বা বই খাতা ছিঁড়ে ফেলে। তার জিনিসপত্র লুকিয়ে রাখা তো সামান্য জিনিস, প্রতিনিয়ত তার জিনিসে ভোগদখল করা যেন নিত্যদিনের ব্যাপার। সে তাদের সামান্য বাধা দিতে গেলে জুটতো মাইর। টিফিনের সময় ক্যান্টিনে গেলে কেউ তাকে বসতে দেয় না। খাবার নিয়ে বসলেও সেটা নষ্ট করা তাদের প্রতিদিনের কাজ। কোনো জায়গা না পেলে হয় বাইরে নাহয় ময়লার ফেলার পাশে গিয়ে বসে পরে। একবার তো বাথরুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে রেখেছিল কয়েকজন, ঘণ্টাখানেক আটকা পড়ে ছিল সে। উল্টা টিচারের হাতে মাইর খেতে হলো কোনো কারণ ছাড়া। কেউ তাকে সাহায্য করেনি, কেউ তার কষ্ট বোঝেনি। আরও একদিন, তার স্কুল ব্যাগে ময়লা ঢেলে দিয়েছিল কয়েকজন। পুরো ব্যাগ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল, সেবারও টিচারের হাতে মার্ খেলো ব্যাগ আর শরীর নোংরা করার জন্য। আর সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাসছিল। ক্লাসরুমে ফিরে সে দেখল, তার বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। বাপ্পি কিছু বলতে পারছিল না, শুধু নির্বাক হয়ে সব সহ্য করছিল।
বাড়িতে বাবা-মা থেকেও নেই। সারাদিন তারা নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। বাবা-মার ঝগড়ার শব্দ বাড়ির প্রতিটি কোণায় প্রতিধ্বনিত হয়, কিন্তু বাপ্পির কান্না কেউ শুনতে পায় না। তার অনুভূতির কোনো মূল্য নেই।
বন্ধু বানানোর আশায় একসময় ফেসবুকে একাউন্ট খুলেছিল, কিন্তু কেউ তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়নি। সে নিজেও কাউকে পাঠায়নি, কারণ প্রত্যাখ্যানের ভয়ে। সোশ্যাল মিডিয়াতে থাকলেও সেখানেও সে একা।
সেই রাতে, সে বিছানায় বসে জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল। অন্ধকার আকাশে হাজারো তারা জ্বলজ্বল করছিল, কিন্তু তার জীবনের আকাশে কোনো আলো নেই। ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার বুক কেঁপে ওঠে। এভাবে আর কতো দিন? জীবনের কি কোনো মানে আছে? কোথাও কি একটু শান্তি নেই?
সে মনে মনে ভাবল, এই দুনিয়ায় কি কেউ নেই যে তাকে বুঝবে? কেউ নেই যে তার কষ্ট অনুভব করবে? আর যদি না থাকে, তাহলে এই জীবন রেখে লাভ কী?
কোনো কূলকিনারা না পেয়ে আবার কান্না শুরু করল সে। হঠাৎ কম্পিউটারের স্ক্রিনে একটা ফেসবুক নোটিফিকেশন এলো।
সেটার শব্দে কান্নাভেজা চোখেই চমকে উঠলো সে........
(চলবে...)

নদীর ওপারের আতঙ্করাত একটা বাজে। ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে, আর নীরবতার মাঝে শোনা যাচ্ছে পেঁচাদের ডাক। লোকজন জানাজা শেষ করে ...
03/03/2025

নদীর ওপারের আতঙ্ক

রাত একটা বাজে। ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে, আর নীরবতার মাঝে শোনা যাচ্ছে পেঁচাদের ডাক। লোকজন জানাজা শেষ করে মৃতদেহটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নদীর ঘাটে। লাশটি ওসমান শেখের, গ্রামের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, যিনি রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, লাশ দাফন করতে হলে নদী পার হতে হবে। ওপারের কবরস্থান ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই।

নৌকা তৈরি রাখা ছিল। সবাই অপেক্ষা করছিল মাঝির জন্য। কিছুক্ষণ পর এক লাঠি হাতে এসে দাঁড়াল মাঝি কালা রাজু। সাথে এলো গ্রামের মসজিদের হুজুর—মাওলানা কাশেম।

এদিকে, ঘাটে দাঁড়িয়ে ছিল একজন—সিরাজ। গ্রামে সে পরিচিত ছিল ‘অশুভ’ মানুষ হিসেবে। কেউ তাকে পছন্দ করত না। লোকে বলত, সে অভিশপ্ত, যার ছোঁয়ায় দুর্ভাগ্য নামে। আজও কেউ চায়নি সে তাদের সঙ্গে নৌকায় উঠুক। কিন্তু ওসমান শেখের এক আত্মীয়ের জোরাজুরিতে তাকে উঠতে দেওয়া হলো।

“যাইতে দিবা না মানে? ওও, আমি কি মানুষ না? আমি কি অপয়া?” সিরাজ ক্ষীণ হেসে বলল।
এক এ তো সবার মন খারাপ তার উপর তার কথাটা সবাই আরো বিরক্ত হয়ে গেলো। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির জন্য কেউ উত্তর দিল না।
সিরাজ এই গ্রামেরই ঝাড়ুদার। আর মৃত ব্যক্তির বেশ কাছের মানুষ বলা চলে। মুখ কালো করে সবাই নৌকায় উঠল। সিরাজও এক কোণে বসল, মুখ নিচু করে। নৌকা ধীরে ধীরে নদীর বুকে এগিয়ে চলল।

সবাই নৌকাতে বিষন্ন মন সবার খুব। খুব কাছের একজনকে হারিয়ে সবার মন খারাপ। কারোর মুখে কথা নেই দুই একজন মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ছে কেবল।

নৌকা মাঝপথে পৌঁছাতেই হঠাৎ শুনতে পেল অদ্ভুত এক শব্দ—টক্... টক্... কট্... কট্...

একটা কিছু যেন ভেঙে যাচ্ছে। কেউ কেউ খেয়াল করলেও পাত্তা দিল না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার সেই শব্দ, এবার আরও জোরে—কট্... কট্... চড়মড়...

“কী ব্যাপার? কোথা থেকে আসছে এই শব্দ?” ফজল মিয়া কাঁপা গলায় বললেন।
"এই নৌকাটা তো বেশ পুরানো, কোথায় আবার ভেঙে যায় নাই তো?" একজন বলে উঠলো।

“মনে হয় বৈঠার সঙ্গে নৌকার ধাক্কা লাগাতে এমন শব্দ হচ্ছে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই,” কাশেম হুজুর শান্ত কণ্ঠে বললেন।

"হুম! সেটাই হইতে পারে।" মাঝি আশ্বাস দিলো

সবাই একটু বিরক্ত ও হলো। এক এ তো একটা দুঃখজনক পরিস্থিতি তার উপর ছোট্ট খাটো বিষয় নিয়ে কারণ ছাড়া সবাই ভয় পাচ্ছে। এর পর বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলো। তারপর হঠাৎ সেই আগের মতো শব্দ কিন্তু এইবার বেশ স্পষ্ট আর জোরালো। সবার কানে গেলো, আর সবাই যেন নড়ে ছোড়ে বসলো। একবার দু বার হতে পারে, কিন্তু বার বার এমন শব্দ শুনে, কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিল না!

হাবিব টর্চ দিয়ে প্রথমে পানির মধ্যে খুজার চেষ্টা করলো। কোনো কুল কিনার খুঁজে পেলো না।
"কথা থেকে শব্দ আসছে? আমরা তো নিদির মাঝে মাঝি প্রায়। কাঁচা কচি কোনো ঘাট ও নেই।" বিরক্তির সাথে সাথে ভয় ও প্রকাশ পেলো সবার মাঝে।
হাবিব টর্চ জ্বালিয়ে ক্ষরণ ঝুজ শুরু করলো।
বাকিরাও টর্চ জ্বালিয়ে খুঁজছে কিন্তু কিছুক্ষন পর নিরাশ হয়ে টর্চ তুলে নিলো এবং অন্য মনস্ক ভাবে টর্চের এল নৌকার ওপর প্রান্তে ফেলতেই চমকে উঠলো;

“ওই দেহি! হুজুর কী করতাছে?”

সবাই তাকিয়ে দেখল, কাশেম হুজুর নৌকার এক কোণে লাশের উপর ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু তার ভঙ্গিটা স্বাভাবিক নয়। তার হাত-পা কেমন অস্বাভাবিকভাবে বেঁকে আছে। মুখে ভয়ানক এক অভিব্যক্তি, যেন সে একটা কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে!

সিরাজ ফিসফিস করে বলল, “এ কাশেম হুজুর তো... হুজুর নাই!”

হঠাৎ টর্চের আলোতে স্পষ্ট দেখা গেল—লাশটা নড়ছে! না, লাশটা না, হুজুর নিজেই লাশটাকে আঁকড়ে ধরে আছে। মুখটা এত বিকৃত হয়ে গেছে যে তাকে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না। আর তার হাত! ওটা নখে ভরা, বড় বড় কালো নখ, যা দিয়ে লাশটার বুকের মাংস ছিঁড়ে নিচ্ছে!

পালাও!

“আল্লাহ্! এইডা হুজুর না!” কেউ একজন চিৎকার করে উঠল।

কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবাই নৌকা থেকে পানিতে ঝাঁপ দিল। বরফশীতল পানিতে ডুবতে ডুবতে তারা প্রাণপণে সাঁতার কাটতে থাকল। পেছনে শুধু একটা বিকট গলায় হাসির শব্দ শোনা গেল।

কোনোমতে সবাই প্রাণ বাঁচিয়ে নদীর পারে এসে হাজির হয়েছে। দলের অনেকেই পারে আসার পর অচেতন হয়ে পরে।

পরদিন সকালে সাহসী কয়েকজন সেই নৌকাটিকে খুঁজতে গেল। তারা যখন সেটাকে ঘাটের কাছে টেনে আনল, তখন যা দেখল তাতে বুক কেঁপে উঠল—

নৌকার মাঝখানে আধখাওয়া লাশ, যার বুকের মাংস ছেঁড়া। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, কাশেম হুজুরের কোনো চিহ্ন নেই! আর সিরাজ? সেও নেই!

হাবিবের তৎক্ষণাৎ মনে পড়লো। সে ঝাঁপ দেয়ার আগে এক ঝলক সিরাজের দিকে নজর দিয়েছিল। সে ঝাঁপ দেয়নি। সে স্থির হয়ে বসে ছিল ওই সময়ে, এক দৃষ্টিতে হুজুরের দিকে তাকিয়ে। তার মুখে ভয় ছিল না, ছিল যেন অদ্ভুত এক উপলব্ধির ছাপ।

কেউ সেই রাতের কথা বিশ্বাস করল না, কেউ বলল নদীতে কোনো অভিশপ্ত আত্মা ছিল। কিন্তু যারা সেই রাতে নৌকায় ছিল, তারা জানত—সিরাজ সত্যিটা আগে থেকেই জানত। আর সেই সত্য হয়তো সবার জানার দরকার ছিল না...

ফিরে আসা নীরবতাশীতল সন্ধ্যা নেমেছে শহরে। বইমেলার ভিড়ে মধুরা ঘুরছে একা। চারপাশে বইয়ের গন্ধ, আলো, মানুষের কোলাহল—সবকিছুই...
25/02/2025

ফিরে আসা নীরবতা

শীতল সন্ধ্যা নেমেছে শহরে। বইমেলার ভিড়ে মধুরা ঘুরছে একা। চারপাশে বইয়ের গন্ধ, আলো, মানুষের কোলাহল—সবকিছুই যেন তার মন ভালো করে দিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই মনের ভেতর অদ্ভুত এক অস্বস্তি দানা বাঁধল।

"গ্যাস আর লাইট ঠিকমতো বন্ধ করে এসেছি তো?"
মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠল। মধুরা সাধারণত এমন ভুল করে না, কিন্তু আজ সকাল থেকে মনটা কেমন বিক্ষিপ্ত।

এই অস্থিরতায় বইমেলার আনন্দও যেন ফিকে হয়ে গেল। সাথে থাকা মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছে। উপায় না দেখে মধুরা মেলার এক কোণে রাখা পে-ফোন থেকে বাসার ল্যান্ডলাইনে কল দিল।

"ট্রিং... ট্রিং... ট্রিং..."

দুইবার রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ হল। মধুরার মুখে একটু হাসি ফুটল। ওর বান্ধবী শ্রেয়া তো এই ক'দিন ওর বাসাতেই ছিল। নিশ্চয়ই সে ফোন ধরেছে।

— "শ্রেয়া? শোনো, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না—গ্যাস আর লাইট বন্ধ করে এসেছি তো?"

কিন্তু ওপাশে কোনো সাড়া নেই।

— "শ্রেয়া? হ্যালো?"

কেবল নিস্তব্ধতা। কোনো নিঃশ্বাসের শব্দও নেই।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর বিরক্ত হয়ে মধুরা ফোনটা কেটে দিল।

"অদ্ভুত! ধরল যখন, কথা বলল না কেন?"

মনকে বোঝাল, হয়তো শ্রেয়া অন্য ঘরে ছিল বা মজা করছিল। কিন্তু সেই অস্বস্তি মনের কোণে গেঁথেই রইল।

রাত প্রায় দশটা। মধুরা বাসার দরজায় চাবি ঢোকাল। ভেতরে ঢুকে বাতি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। ঘরটা কেমন যেন অচেনা ঠেকল। নিঃশব্দ, কিন্তু সেই নীরবতার মধ্যেও যেন কারও উপস্থিতির আভাস।

ধীরে ধীরে বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। হঠাৎই চোখ পড়ল ল্যান্ডলাইনের দিকে।

রিসিভারটা সামান্য আলগা অবস্থায় রাখা। যেন কেউ ফোনটা ধরেছিল কিন্তু পুরোপুরি জায়গায় রাখেনি।

মধুরার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল। গলা শুকিয়ে গেল ভয়ে। মনে পড়ল—

শ্রেয়া তো ঠিক একদিন আগেই তার বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে।
শ্রেয়া চলে যাওয়ার সময় মধুরা নিজেই ওকে দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল।

তাহলে... আজ সন্ধ্যায় ফোনটা কে ধরল?

বুকের ভেতর ধুকপুক আওয়াজ বাড়তে লাগল। হঠাৎ, শোবার ঘর থেকে আস্তে করে দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ শোনা গেল।

মধুরা আতঙ্কে জমে গেল। সেই মুহূর্তে তার মনে হল—ঘরটা একা নয়।

ভেতরে কেউ আছে।

নাকি... কিছু?

অপমৃত্যু রাত প্রায় ২টা। ঢাকা শহরের ব্যস্ত অফিসগুলো তখন নীরব নিস্তব্ধতায় ডুবে। ১৪ তলার কর্পোরেট অফিসের কাঁচের জানালায় রাত...
23/02/2025

অপমৃত্যু

রাত প্রায় ২টা। ঢাকা শহরের ব্যস্ত অফিসগুলো তখন নীরব নিস্তব্ধতায় ডুবে। ১৪ তলার কর্পোরেট অফিসের কাঁচের জানালায় রাতের অন্ধকার প্রতিফলিত হচ্ছে। শুভ অফিস থেকে বের হলো। অতিরিক্ত কাজের চাপে প্রতিদিনই তাকে এত রাতে বের হতে হয়। কিন্তু আজকের রাতটা কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো।

চারপাশে একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। করিডোর দিয়ে হাঁটার সময় শুভর মনে হচ্ছিলো, কেউ যেন পেছন পেছন হাঁটছে—নরম, ধীর পায়ে। কিন্তু ঘুরে তাকালে কেউ নেই। বাতাসে একটা শীতলতা, যা গায়ে কাঁটা ধরিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণ হাঁটার পর সে লিফটের সামনে পৌঁছাল। লিফটের সামনের হলঘরের বেশিরভাগ আলো নিভে আছে। সামান্য কয়েকটি বাতি ফ্লিকারের মতো জ্বলে উঠছে আবার নিভে যাচ্ছে। শুভর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। সে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল—কেউ নেই।

টিং।
লিফটের দরজা ধীরে ধীরে খুললো। ভিতরটা অন্ধকার। বুকের ভেতরটা কেমন ভারী হয়ে আসছে। কিন্তু আর কোনো উপায় নেই। সাহস সঞ্চয় করে সে লিফটে ঢুকলো।

হঠাৎ ঝড়াং শব্দে লিফটের লাইট নিভে গেলো। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুভ আতঙ্কে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। বুকের মধ্যে দম আটকে আসছিল।

তখন—
কান পাতলে মনে হলো, ঠিক তার পেছনে কোনো নিঃশ্বাসের শব্দ। ধীরে, ভারী নিঃশ্বাস।

"কে... কে আছো?" শুভ কাঁপা কণ্ঠে বললো। উত্তর নেই।

টিং
হঠাৎ করে আবার লাইট জ্বলে উঠলো। দরজা খুলে গেলো। শুভ দেরি না করে তাড়াহুড়ো করে লিফট থেকে বের হয়ে ছুটে নিচে নেমে এলো। অফিস বিল্ডিং থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে সে হাঁপাতে লাগলো। মনে হলো, বেঁচে গেছে।

কিন্তু...

শুভর মনে পড়লো—তার ব্যাগটা লিফটে রয়ে গেছে। অফিসের সব দরকারি জিনিসপত্র সেই ব্যাগে। সাহস করে আবার ভেতরে ঢুকতে হলো।

লিফটের সামনে এসে সে থমকে দাঁড়ালো।

দরজা তখনও খোলা।

শুভর চোখ ধীরে ধীরে লিফটের ভিতরের দিকে গেলো।

তার মুখ হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। শীতল ঘাম সারা গায়ে বয়ে গেলো।

কারণ লিফটের মেঝেতে, ঠিক তার ব্যাগের পাশে...
সে নিজেই পড়ে আছে।

নিস্তেজ।
নির্জীব।
মৃত।

তার নিজেরই চোখ খোলা—শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে। ঠোঁটের কোণে জমে থাকা রক্তের দাগ।

শুভ পেছনে সরে আসার চেষ্টা করলো। কিন্তু পা যেন পাথরের মতো ভারী হয়ে গেছে।

ঠিক তখনই—

লিফটের দরজা ধীরে ধীরে বন্ধ হতে শুরু করলো।
লাইট আবার নিভে গেলো।

শেষবারের মতো শুভ শুনতে পেলো, তার নিজের কণ্ঠে ফিসফিস করা এক কথা—

"তুমি তো বেরিয়ে এসেছিলে... তাহলে আমি কে?"

Adres

Rotterdam

Website

Meldingen

Wees de eerste die het weet en laat ons u een e-mail sturen wanneer Asif Khan aka Peter Parker nieuws en promoties plaatst. Uw e-mailadres wordt niet voor andere doeleinden gebruikt en u kunt zich op elk gewenst moment afmelden.

Delen