22/04/2025
**বিডা ও পুলিশ শীর্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতে আশ্বস্ত করলো; বিনিয়োগকারীদের জন্য পুলিশ জরুরি হেল্পলাইন চালু করবে**
**ঢাকা, ২১ এপ্রিল:** বাংলাদেশ পুলিশ সোমবার ঘোষণা করেছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ জরুরি যোগাযোগ নম্বর চালু করা হবে, যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো যেকোনো ঘটনা সরাসরি জানাতে পারবে এবং তাৎক্ষণিক সহায়তা পাবে।
পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কার্যালয় থেকে এ ঘোষণা আসে, যখন পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন সম্প্রতি গাজা হামলার প্রতিবাদে হওয়া আন্দোলনের সময় ভাঙচুরের শিকার ছয়টি বিদেশি কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আইজিপি ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নেসলে বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ, রেকিট বেঙ্কিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো এবং জুবিল্যান্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশসহ শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শহরে এসব প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ডজনখানেক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “আইজিপি, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এবং আমাদের বিডা টিমের উপস্থিতি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একই ছাদের নিচে ছিল কেবল সময়োপযোগী নয়, বরং নজিরবিহীন।”
“এটি নিছক একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়—এটি একটি বার্তা। বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকার ব্যাপারে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেটাই এতে ফুটে উঠেছে,” তিনি বলেন।
তিনি আরও বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কর্মী ও তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহে প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখে। আমরা প্রতিবাদের অধিকারকে সম্মান করি, তবে যে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়।”
বিডা প্রধান পুলিশের “দ্রুত পদক্ষেপ ও দোষীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে অঙ্গীকারের” প্রশংসা করেন।
অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙচুর, ক্ষয়ক্ষতি এবং কার্যক্রমে বিঘ্নের বিষয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
জবাবে পুলিশ মহাপরিদর্শকের দপ্তর জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি বিশেষ জরুরি যোগাযোগ নম্বর চালু করা হবে। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এই হেল্পলাইন নম্বরের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো যেকোনো ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারবে এবং জরুরি সহায়তা পাবে।
আইজিপি বাহারুল আলম বিনিয়োগকারীদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, “আমরা শুধু সাড়া দিতে এখানে নেই, আমরা আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে এবং নিশ্চিত করতে এসেছি যে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা আর না ঘটে।”
এই সংলাপের মাধ্যমে বিডা, পুলিশ ও ব্যবসায়িক সংগঠনসমূহ যৌথভাবে একটি প্রতিরোধমূলক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, র্যাপিড রেসপন্স ইউনিট এবং উন্নত সংকট যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এই উদ্যোগ বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদি আস্থা ও স্থিতিশীলতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে বলে জানানো হয়।
“এই সংলাপ প্রতিক্রিয়ার চেয়ে প্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়,” বলেন বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান।
“সবচেয়ে বড় কথা, এটি সরকারের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে—আমরা আমাদের বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকি শুধু সমৃদ্ধির সময় নয়, দুর্যোগের সময়ও,” বলেন আশিক চৌধুরী।
কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিডা ও বাংলাদেশ পুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে আশাবাদ প্রকাশ করেন।
এই উদ্যোগ বিডার বৃহত্তর মিশনের অংশ, যাতে বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ, টেকসই এবং বিনিয়োগবান্ধব গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলা যায়, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।