21/07/2025
স্মরণীয় এক দিনের গল্প | ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
১৯ জুলাই সকালে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছিলাম। মতিঝিলে গাড়ি থেকে নামার পর প্রথম অনুভূতিটাই ছিল, এটা আর সাধারণ কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ না। চারদিকে জনসমুদ্র। একের পর এক রাস্তা মানুষের ভিড়ে পূর্ণ। বড় বড় স্ক্রিনে বক্তৃতা চলছে। মানুষ শুধু দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে।
আমরা মৎস্য ভবন পর্যন্ত গিয়েই থেমে গেলাম। সামনে এগোনোর কোনো উপায় নেই। প্রচণ্ড ভিড়। অনেকেই আগের রাতেই চলে এসসোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্কে পলিথিন পেতে রাত কাটিয়েছেন। সকালবেলা নিজের খাবার বের করে খাচ্ছেন। কেউ গরমে কষ্ট পেয়ে লেকে নেমে ফ্রেশ হচ্ছেন।
হাজার হাজার মানুষ, কিন্তু কোথাও পুলিশের প্রয়োজন হয়নি। শুধু স্বেচ্ছাসেবকরাই সবকিছু সামলাচ্ছিলো।
খুব কষ্ট করে উদ্যানে প্রবেশ করলাম। সেখানে গিয়েই চোখ আটকে গেলো, শুধু প্রধান মঞ্চেই নয়, উদ্যানে ১২টা জায়ান্ট স্ক্রিন! খাবার পানি, ওযুর পানি, অস্থায়ী ওয়াশরুম, মেডিকেল বুথ সহ সবকিছুর সুব্যবস্থা।
আরেকটা জিনিস চোখে পড়লো—এতো বিশাল জমায়েতে কারও হাতে কোনো নেতার ছবি নেই, কোনো পোস্টার নেই। মাথায় দেশের পতাকা বেঁধে লাখো তরুণ এসেছে। আমিও তাদেরই একজন ছিলাম। হাজার হাজার মুখে শুধু দেশের কথা, ইসলামের কথা।
বক্তৃতার ধরণই ছিলো অন্যরকম
বক্তাদের মঞ্চ ছিল আলাদা, তারা একা বক্তব্য দিচ্ছেন। কেউ গা ঘেঁষে দাঁড়ায়নি, সেলফি তুলেনি। একের পর এক নেতা কথা বলছেন, কিন্তু কোথাও কোনো ঔদ্ধত্য নেই। কাউকে খাটো করার ভাষা নেই।
সবচেয়ে অবাক হলাম গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক কে দেখে। একদম সরলভাষায় তিনি কথা বললেন। লাখো মুসলমান তাকে সম্মান দিলেন, তাকিয়ে থাকলেন অনুপ্রেরণায়। আমার মনে হচ্ছিল, এই হলো বাংলাদেশের প্রকৃত চেহারা।
শেষ মুহূর্তটা ছিলো ইতিহাস
সবশেষে বক্তব্য দিতে এলেন আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান। বক্তব্যের দেওয়া অবস্থায় পড়ে গেলেন। নেতাকর্মীরা ধরাধরি করে তাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো। এরপর তিনি বসেই বক্তব্য দিলেন।
বিশ্বাস করুন, সামনে দাঁড়িয়ে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। বসা অবস্থায় তিনি বললেন, “আমার আশেপাশে কেউ দাঁড়াবে না। সবাই আমার পাশে বসে পড়ো।” নেতাকর্মীরা মঞ্চে বসে গেলো। এমনকি ডাক্তার যিনি প্রেসার মেপে দেখছিলেন তিনিও।
লাখ লাখ মানুষ নীরব বক্তার কথাগুলো শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় সেই বক্তব্য বারবার দেখানো হবে ঠিকই, কিন্তু সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আলাদা।
শেষ দৃশ্যটা ছিলো অনন্য
প্রোগ্রাম শেষে আমরা আবার হাঁটতে শুরু করলাম। চারদিকের লোকজন কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছেন। কেউ চেঁচামেচি করছে না, কেউ হৈ-হুল্লোড় করছে না। সবাই যেন নিজ নিজ দায়িত্ববোধ নিয়ে এসেছিলো এবং ফেরত যাচ্ছে।
আমার উপলব্ধি
এই দিনটার পর মনে হলো, বাংলাদেশ বদলাচ্ছে। রাজনীতির ধরনটা বদলাচ্ছে। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার ভাষা বদলাচ্ছে।
এই পরিবর্তন হবে বিপ্লবের মতো, কিন্তু নীরব বিপ্লব।
কোনো আগুন নয়, গোলাগুলি নয়—শৃঙ্খলার, নীতির, ঐক্যের বিপ্লব।
আমি বিশ্বাস করি এই বিপ্লব হবে দাঁড়িপাল্লার বিপ্লব।
ইনশাআল্লাহ।
প্রত্যাশায়-
লায়েক ইবনে ফাজেল