02/05/2025
রাত যতই গভীর হয়, প্রবাসীর চোখ ততই ভিজে ওঠে। দেয়ালে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলে, কিন্তু তার সময় থেমে থাকে দেশের এক কোনায়—মায়ের অসুস্থ মুখ, বাবার নীরব দৃষ্টি, স্ত্রীর অভিমানী চোখ, সন্তানের ফেলে রাখা ছোট জুতোজোড়া। হাজার হাজার মাইল দূরে বসে সে শুধু একটাই প্রশ্ন করে নিজেকে—“এই জীবন কি শুধুই টাকার জন্য?”
একটা প্রবাসীর দিন শুরু হয় ভোরবেলা, ঠান্ডা বা উত্তপ্ত আবহাওয়ায় ক্লান্ত দেহ টেনে নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে সে। সারাদিন কাজ, ঝাড়পোঁছ, নির্মাণ, হোটেল, কিংবা কারখানার শব্দে কানে তালা লাগে। কেউ গা*লি দেয়, কেউ হুকুম দেয়। কিন্তু সে চুপচাপ সহ্য করে, শুধু পরিবারের কথা মনে করে।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় তার চারপাশে ভিড় থাকে—অচেনা মুখের, অচেনা ভাষার। অথচ তার নিজের মনের চারপাশে থাকে নিঃসঙ্গতা, হাহাকার আর অনাহূত কান্না। দেশে ফোন করে যখন মায়ের কাঁপা গলা শোনে—“তুই খেয়েছিস রে বাবা?”—তখন বুকটা হুহু করে ওঠে। সন্তানের কণ্ঠে যখন শোনা যায়—“আব্বু, তুমি কবে আসবে?”—তখন নিজের চোখের জল লুকিয়ে বলে—“খুব তাড়াতাড়ি, বাবা!”
রাত হলেই শুরু হয় আসল যু*দ্ধ। চারদিকে নিস্তব্ধতা, কিন্তু তার ভেতরটা তখন যেন ঝড়। খালি বিছানায় শুয়ে সে ঘুমাতে পারে না—কারণ ঘুম তার কাছে বিলাসিতা। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে পরিবারের অভাব, মা’র অসুস্থতা, সন্তানের স্কুল ফি, কিংবা স্ত্রীর দুঃখী মুখ। একসময় চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে চুপচাপ একটা অশ্রু। কেউ দেখে না, কেউ জানেও না।
লোকেরা ভাবে প্রবাসীরা রাজা—ডলার-পাউন্ডে ভাসে তারা। কেউ জানে না, তারা কতটা না-পাওয়া নিয়ে বাঁচে। জীবনের সোনালি সময়টা অন্যের মাটিতে ফেলে আসতে হয় তাদের। নিজ জন্মভূমিতে ম*রে পড়ে থাকে শিকড়, আর তারা বেঁচে থাকে একটা অচেনা ভূখণ্ডে—চোখে নির্ঘুম রাত আর বুকে চাপা কান্না নিয়ে।
তবুও সে বাঁচে—পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর আশায়। হয়তো নিজের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিনগুলো সে খরচ করে দেয় নিঃশব্দে, অন্ধকারের গহীনে। কেউ না জানুক, প্রতিটি প্রবাসী জানে—এই পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ রাতগুলোর নাম নির্ঘুম প্রবাসজীবন।
লেখা- আরিফুল হাসান
#জীবন_চক্র
#আমিরা
#কাতার #প্রবাসী #নতুনপোষ্ট #ভাইরালভিডিওシভিডিও