30/08/2025
সমুদ্র সৈকতে রিপ (Rip ) কারেন্টে ভেসে গিয়ে কত কাছের ও দূরের মানুষের মৃত্যুর খবর শুনি প্রায়ই।
সম্প্রতি মারা গেছেন বিখ্যাত ★ বিল কসবি শো (Bill Cosby show ) এর *** থিও হাক্সটেবল চরিত্রে অভিনয় করা ****★ ম্যালকম-জামাল ওয়ার্নার।
2024 সালের ডিসেম্বর এ, মারা গিয়েছিলেন বাংলাদেশী দম্পতি **★ শাহাদুল হাসান স্বপন ও **★ সাবরিনা আহমেদ পাপড়ি, **★ অস্ট্রেলিয়ার পার্থে, **★ ওয়ালপোল নামের এক বীচে রিপ কারেন্ট থেকে ওনাদের মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে। এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত।
বহু মানুষের জীবন নাশকারী এই রিপ কারেন্ট কে আমি বলি ' Rest In Peace (RIP )' কারেন্ট।
কারণ ছলনাময়ী এই কারেন্টের ধরণ না চিনতে পারলে আর এর থেকে বের হবার কৌশল না জানলে মৃত্যুর ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা আছে যে কারো, এমন কি ভালো সাঁতারুদেরও।
এই লেখার উদ্দেশ্য এই page/group এর অন্তত একজন কে সচেতন করা, এমন কেউ যদি থাকে যিনি আগে রিপ কারেন্ট সমন্ধে জানতেন না।
সমুদ্র সৈকতে ঢেউয়ের যে এনার্জি তা পানির পটেনশিয়াল এনার্জি তে কনভার্ট হয়, আর কোনো স্থানে বালির অসম আস্তরণ থাকলে পানির সেই পটেনশিয়াল এনার্জি কাইনেটিক এনার্জি তে কনভার্ট হয়ে সমুদ্রের দিকে প্রচন্ড স্রোত তৈরী করে, যাকে আমরা রিপ কারেন্ট বলি।
এমন নামের কারণ সম্ভবত 'রিপ' এর অর্থ ড্র্যাগ অথবা পূল। ছবিগুলোতে A , B , ও C জোন হচ্ছে রিপ কারেন্ট।
খেয়াল করলে দেখা যাবে A , B , ও C জোনে কোনো ঢেউ ব্রেক হচ্ছে না, কারণ সমুদ্রের দিকের স্রোত ঢেউ ব্রেক করতে বাঁধা দেয়।
পাসের জোন D ও E ঢেউ হচ্ছে, সেই ঢেউ এর পানি কিনারে আছড়ে পড়ছে।
এই D ও E জোনে তুলনামূলক ভাবে একটু উঁচু বালুস্তর থাকে, যে বালুস্তরই রিপ কারেন্ট হওয়ার আসল কারণ।
জোন A , B , ও C তে এই উঁচু বালুস্তর থাকে না।
পানি D ও E জোন দিয়ে সমুদ্র পারে আছড়ে পড়ে, আর A , B , ও C জোন দিয়ে হাই স্পীডে ফিরে যেতে থাকে।
যেহেতু জোন A , B , ও C বরাবর উঁচু বালুস্তরটা থাকে না ... তাই পানি সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার জন্য এই সহজ রাস্তাটা বেছে নেয়।
**★ সহজে রিপ কারেন্ট চেনার উপায় :
১. রিপ কারেন্ট হলে ওই জায়গায় ঢেউ হবে না (A , B , ও C)। মনে রাখা দরকার জোন অনেক সময় খুব সরু হয়, ভালো করে খেয়াল না করলে দ্বিধান্বিত হবার হবার সম্ভাবনা আছে।
২. রিপ কারেন্ট জোনে ঢেউয়ের ফোম বা ময়লা সমুদ্রের দিকে যেতে থাকবে।
৩. পানি তুলনামূলক ডার্ক কালার এর মনে হবে.
৪. অল্প পানি তে নামলে দেখা যাবে পানি সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার সময় যে পথে ঢেউ আসছে সেই পথে ফিরে না গিয়ে পাশের দিকে যাচ্ছে (যে দিকে রিপ কারেন্ট হচ্ছে).
৫. একটা কথা মনে রাখা দরকার,একটা জায়গায় রিপ কারেন্ট আগে ছিল না তার মানে এই না যে ঐ জায়গায় ভবিষ্যতে হবে না. সময়ের সাথে যদি বালুস্তর ফরমেশন অসম হতে পারে , নতুন নতুন জায়গায় রিপ কারেন্ট এর কন্ডিশন তৈরী হতে পারে। সতর্কতামূলক নোটিশ না থাকলে রিপ কারেন্ট নাই এমনটা ভাবা উচিত না.
**★ রিপ কারেন্টএ পড়লে বাঁচার উপায়:
১. রিপ কার্রেন্টে পড়লে কখনই পারের দিকে ভার্টিক্যালি সাঁতরাতে হয় না। মানে C, B টু A দিকে সাঁতরাতে হয় না. সাঁতরাতে হয় সমুদ্র পারের সমান্তরালে। মানে C , B , অথবা A থেকে D ও E এর দিকে। মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব হচ্ছে সমুদ্র পারে দিকে আসার চেষ্টা , অনেকটা বিপদ সরাসরি মোকাবেলা করার টেন্ডেন্সি। কিন্তু এক্ষেত্রে বিপদ সরাসরি মোকাবেলা না করে বিপদ এড়িয়ে যাওয়া উত্তম। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি ফাইট না করে পাশকাটিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের। মানে সরাসরি পারের দিকে না সাঁতরিয়ে, পাশের দিকে সাঁতরিয়ে যাওয়াই নিরাপদ।
২. মনে রাখা দরকার পানির স্পিড কিন্তু কিছুদূর গেলেই কমে যায় (কারণ ফ্লো এরিয়া বেড়ে যায়) । ভয় না পেয়ে , স্রোতের সাথে ফাইট না করে, ভেসে একটু সমুদ্রের দিকে গিয়ে, যেখানে পানির বেগ কমে যায়, সাঁতরিয়ে C জোন থেকে D অথবা E এর দিকে একটু ঘুরা পথে ফিরে আসা সহজ। সাঁতরাতে গিয়ে ক্লান্ত হলে, শুধু ভেসে থেকে শক্তি সঞ্চয় করে নেওয়া ভালো।
---- আলিম দেওয়ান*