03/06/2024
আনোয়ারুল হত্যাকাণ্ড
বিতর্কিতদের নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আওয়ামী লীগে
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের (আনার) কলকাতায় খুন হওয়ার পর প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। দেশের ইতিহাসে চলমান সংসদের একজন সদস্যের ভিন দেশে খুন হওয়া এবং মরদেহ খুঁজে না পাওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। তবে ঝিনাইদহের টানা তিনবারের এই সংসদ সদস্যের খুনের ঘটনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আলোচিত হচ্ছে তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এই ঘটনায় বিব্রত আওয়ামী লীগ দলগতভাবে কোনো অবস্থান নিতে পারছে না।
তবে আনোয়ারুল আজীম ছাড়াও বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের এমন বিতর্কিত অনেক সদস্য রয়েছেন বলে দলের মধ্যেও আলোচনা আছে। কিন্তু সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য দলে নানা প্রক্রিয়া থাকলেও বিতর্কিত ব্যক্তিরা কীভাবে মনোনয়ন পান, দলটির ভেতরেই এই প্রশ্ন উঠছে। বিতর্কিতদের ব্যাপারে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ বলছেন। তবে এসব বিষয় শেষ পর্যন্ত দল কতটা গুরুত্ব দেবে, এই সন্দেহও রয়েছে তাঁদের। গত কয়েক দিনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। কেউ কেউ আনোয়ারুলের খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অনেকেই বলছেন, তাঁরা বিব্রত। কারণ, সংসদ সদস্যের খুনের চেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সোনা চোরাচালান, হুন্ডি ব্যবসা, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগই বেশি আলোচিত হচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে এখন পর্যন্ত এই সংসদ সদস্যের খুনের সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত চেয়ে আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয় সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেয়নি। দলটির সূত্র জানায়, এই খুনের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কোনো বৈঠক করেনি। ১৪-দলীয় জোটের একটি বৈঠক হলেও সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। জাতীয় সংসদের অধিবেশন এখন নেই। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির একাধিক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকেও আনোয়ারুল আজীমের বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। দলটির নেতাদের অনেকে বলছেন, আনোয়ারুল আজীম ছাড়াও বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের এমন অনেক সদস্য রয়েছেন, যাঁদের অতীত-বর্তমান কোনোটাই সুখকর নয়। বিশেষ করে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে দুই ডজনের বেশি বিতর্কিত ব্যক্তি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন। তাঁদের কেউ কেউ পরে বাদ পড়েছেন। কেউ কেউ এখনো রয়ে গেছেন। আর ২০১৮ ও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে নানা দুর্নীতি ও অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বেশি প্রাধান্য পেয়েছেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথমবার সংসদে আসা আলোচিতদের মধ্যে আরও ছিলেন ফেনীর নিজাম উদ্দিন হাজারী, নাটোরের শফিকুল ইসলাম (শিমুল), খুলনার মিজানুর রহমান, বরিশালের পঙ্কজ নাথ। এর আগের সংসদে আলোচিত হন কক্সবাজারের আবদুর রহমান ওরফে বদি, পিরোজপুরে এ কে এম এ আউয়াল, টাঙ্গাইলের আমানুর রহমান খান (রানা), ভোলার নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), ঢাকার আসলামুল হক (মারা গেছেন), ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ প্রমুখ।