05/10/2025
আপনার সন্তানের বয়স কি ১৮+?
আপনার বাচ্চা আঠারো পার করেছে? অভিনন্দন। নিচের লেখাটি আপনার জন্য লিখলাম।
সে একটি নতুন জগতে পা দিচ্ছে। যে জগত আরেকটু বড়দের জগত। ও আরেকটু বড় হয়ে যাচ্ছে। স্পুন ফিডিংয়ের সময় শেষ। ওকে এখন বাইরের দুনিয়ার জন্য তৈরি করতে হবে।
১। দায়িত্ব দিন।
কিছু দায়িত্ব ওকে দিন। যেমন ছোটো ভাইবোনদের দেখাশুনা, পড়ানো, বাসার টুকটাক সমস্যা সমাধান করা। এতে যে দায়িত্ববোধ তৈরি হবে, তা সারাজীবনের অমূল্য শিক্ষা হয়ে ওকে আলো দেখাবে।
২। বাজারে পাঠান।
সপ্তাহে একদিন অন্তত বাজারে পাঠান। আমাদের পুরো জীবন নানারকম বোঝাপড়ার মধ্যে যেতে হয়।
:
নেগোসিয়েশন করতে হয়। বাজারে দরদাম করা হচ্ছে, সেই নেগোসিয়েশন শেখার প্রাইমারি স্কুল।
৩। অল্প রোজগার করুক।
সম্ভব হলে কিছু রোজগার করার দায়িত্ব দিন। যেমন টিউশনি।
টিউশনি না হলে অন্য কাজও করতে পারে। যেমন প্রোগ্রামিং, ফটোগ্রাফি ইত্যাদি। সংসারে হয়ত তার রোজগারের প্রয়োজন নেই, কিন্তু এটা তাকে স্বনির্ভরশীলতা শেখাবে। সবচে বড় কথা, নিজে আয় করলে
টাকার মূল্য বুঝবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক শিক্ষা।
৪। ওর উড়ু উড়ু মনকে বোঝান।
শুনতে ভালো না লাগলেও এটা সত্য যে, এসময় ওর মন
উড়ু উড়ু হবে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি রোমান্টিকতা তৈরি হবে। এটা এ বয়সের ধর্ম। তাই ওকে খোলাখুলি বুঝিয়ে বলুন, এর কারণে ওর কী কী সমস্যা হতে পারে। লজ্জা পাওয়ার কারণ নেই। পরে হাতির সমান সমস্যা মোকাবেলার চাইতে লজ্জা বাদ দিয়ে ওকে বোঝানো অনেক ভালো।
৫। মতামত দিন।
বিভিন্ন ব্যাপারে ওর মতামত নিন। বিশেষ করে পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। এতে ও সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। যা ওর জীবনে অনেক কাজে লাগবে।
৬। মহৎ মানুষের সান্নিধ্যে নিন।
:
প্রকৃত বড় মানুষের সান্নিধ্যে নিয়ে যান। মহৎ সান্নিধ্য খুব ভালো টনিক। সাধারণ একজন মানুষ, কিন্তু আপনি মনে করেন তিনি অসাধারণ। তাঁর কাছে নিয়ে যান। দেখবেন এটি বাচ্চার মধ্যে খুব ভালো প্রভাব ফেলবে। মনে রাখবেন, বিখ্যাত মানুষ মানেই বড় মানুষ নন। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মানুষগুলোর বেশির ভাগ বিখ্যাত ছিলেন না। সাধারণ ভালো মানুষ ছিলেন। এদের কাছেই আপনার বাচ্চা আলোকিত হোক।
৬। সেরা গল্পগুলো বলুন।
আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনাগুলো ওকে বলুন। সেরা মুহূর্তগুলোর গল্প শোনান। রিয়েল লাইফ স্টোরির মতো মোটিভেশান আর কিছু নেই।
৭। বন্ধু/আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ করুন।
আপনার সবচে বিশ্বস্ত বন্ধু বা আত্মীয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে ওকে সাহায্য করুন। কঠিন পৃথিবীতে এধরনের সম্পর্ক খুব দরকার। আপনার অকৃত্রিম বন্ধু
আত্মীয়দের সাথে পরিচয় থাকলে সে দরকারে তাদের কাছে যেতে পারবে। আমার- আপনার অবর্তমানে সে গার্ডিয়ান ফিগার খুঁজে পাবে।
৮। সমস্যা শেয়ার করুন।
এখন ওর সাথে সমস্যা শেয়ার করার সময়। আমরা সন্তানদের কাছ থেকে সমস্যা গোপন রাখি। আমার মতে, এটা ঠিক নয়। ওদের আমাদের সমস্যার কথাও বলা উচিত। যাতে তারা সেটা অনুধাবণ করে। এটা হলে তারা সহজে পথভ্রষ্ট হবে না। মা-বাবার দুঃখ যারা বোঝে তারা খারাপ হয় না। (তবে বলার মাত্রায় সীমা বজায় রাখতে হবে। সবকিছু বলবেন না, কিছু কিছু বলবেন। যাতে ও হতাশ না হয়ে পড়ে)
আপনার বাচ্চার চাইতে পাঁচ বছর কম বয়সে বাদশা আকবর মুঘল সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ওকে মুঘল সাম্রাজ্যের দায় নিতে হবে না। কিন্তু নিজের জীবনের দায়িত্ব নেওয়া শুরু করতে হবে। সেটা শুরু করার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।