20/10/2023
< ইতালি 🇮🇹 🇪🇺 ইউরোপের সর্ববৃহৎ মসজিদ কমপ্লেক্স কি ভাবে তৈরি হল তার ইতিহাস >
💚আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে এই মসজিদ এ পরিবার সহ নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেছেন💚
মুসলিম দেশে মসজিদ নির্মাণ যতটা সহজ, খ্রিস্টান জন-অধ্যুষিত কোনো দেশে মসজিদ নির্মাণ ততটা কঠিন। গোটা পৃথিবীর ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের তীর্থভূমিতে মসজিদ! চিন্তা করতেও গা শিউরে ওঠে। রোম খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। রোমের মধ্যে ভ্যাটিকান সিটি হলো মাত্র ১১০ একরের আলাদা একটি দেশ, যা পোপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
তাই রোম বলতে রোমান ক্যাথলিকদের তীর্থস্থান, ভ্যাটিকান সিটি, পোপ, সেন্ট পিটার ও সান্তা মারিয়া গির্জা, খ্রিস্টানদের গৌরব ইত্যাদির কথা মনে করা হয়। সেই রোমেই তৈরি হয়েছে পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ। ইতালীয় ভাষায় এটা Moschea di Roma নামে সমধিক পরিচিত। প্রায় ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই মসজিদের বাইরে-ভেতরে ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে।
১৯৬৯ সালে ২৪টি মুসলিম দেশ ইতালি সরকারের কাছে রোমে একটি ইসলামিক কালচারাল সেন্টার খোলার আহ্বান জানায়, তখন অনুমতি পাওয়া যায়নি। সে সময় রোমে এত মুসলিম ছিল না। বর্তমানে ইতালিতে ১.৫ মিলিয়ন বা প্রায় ১৫ লাখ মুসলিম বসবাস করে, তাই সময়ের কথা বিবেচনা করে ইতালি সরকার এই মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেয় এবং ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বৃহত্তম মসজিদ এখন রোমে অবস্থিত।
রোম নগরীর উত্তরাঞ্চলের Acqua Acestosa নামক এলাকায় সারিবদ্ধ বৃক্ষের সবুজ বেষ্টনীতে অবস্থিত এই মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে প্রশস্ত নামাজের জায়গা, অজুখানা, শৌচাগার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মিলনায়তন, পাঠদান কক্ষ, উন্মুক্ত মাঠ, লাশ ধৌতকরণ ও জানাজার ব্যবস্থা।
মসজিদ কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে ১০ বছর। রোমান সিটি কাউন্সিল ১৯৭৪ সালে কমপ্লেক্সের জন্য ভূমি দান করেন। ১৯৯৫ সালের ২১ জানুয়ারি ইতালীয় প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট Sandro Pertini-র উপস্থিতিতে মসজিদ উদ্বোধন করা হয়। কমপ্লেক্সটি নির্মাণের উল্লেখযোগ্য ব্যয়ভার বহন করেন সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আবদুল আজিজ, আফগানিস্তানের প্রিন্স মুহাম্মদ হাসান ও তাঁর স্ত্রী প্রিন্সেস রাজিয়া বেগম।
ইরাকি স্থপতি সামি মুসাভি ও ইতালীয় স্থপতি Paolo Portoghesi কর্তৃক ডিজাইনকৃত নকশা অনুযায়ী মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ চূড়ান্ত হয়।
খ্যাতনামা ৪০ জন স্থপতির মধ্যে এ দুজনের লে-আউট শ্রেষ্ঠতার বিচারে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাভ করে। মসজিদ স্থাপত্যের অন্যতম অনুষঙ্গ ১২৮ ফুট উঁচু মিনারটিও বেশ দৃষ্টিনন্দন। সেন্ট পিটার্স গির্জার গম্বুজের চেয়ে এর উচ্চতা দুই ফুট কম। ইসলামী ঐতিহ্য ও আধুনিক ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় সাধনের একটি আন্তরিক প্রয়াস লক্ষণীয়। অভ্যন্তরীণ স্তম্ভগুলো উত্তর আফ্রিকার (মাগরিব) পাম বৃক্ষের আদলে তৈরি। মসজিদের বাইরে-ভেতরে এমনভাবে আলোক প্রক্ষেপণের ব্যবস্থা করা হয়েছে যে রাতের বেলা মনে হয় যেন মসজিদের চারপাশে প্রস্রবণের ফল্গুধারা প্রবাহিত।
খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে ইসলামের আগমন ইতালিতে। অষ্টম শতাব্দীতে ইতালির বিভিন্ন দ্বীপ, বিশেষত পেন্টেলেরিয়া, সিসিলি, আপুলিয়া, সারদিনিয়ায় মুসলমানদের অভিযানের ফলে ইতালিতে ইসলাম প্রচার সহজতর হয়। ১৫ শতাব্দীতে ভূমধ্যসাগরীয় বিভিন্ন দ্বীপে উসমানীয় তুুর্কিদের অভিযানের ফলে বহু মুসলিম পরিবার ইতালিতে বসতি স্থাপন করে। মূলত মরক্কো, তিউনিশিয়া ও মিসর থেকে আগত মুসলমানরা রোমসহ ইতালিতে বসবাস করতে থাকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না দিলেও ক্যাথলিসিজমের পর ইসলাম হচ্ছে ইতালিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।
২০০১ সালে সৌদি আরবে নিযুক্ত রোমের রাষ্ট্রদূত Torquato Cardilli আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এর আগে ১৯৯৪-৯৫ সালে সৌদি আরবে নিযুক্ত Mario Scialoja নামের আরেকজন ইতালীয় রাষ্ট্রদূত ইসলাম কবুল করে সরকারি চাকরি পরিত্যাগ করেন। দুজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার ইসলাম গ্রহণের কারণে ইতালিতে ইসলামের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাঁচ হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কালেমা তাইয়্যেবার ছায়াতলে আসেন।