29/06/2025
হুজুরদের আজকের সমাবেশে বিএনপিকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি কেবল একটা কারণে!
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি আনদোলন বাংলাদেশ-এর বিশাল মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া আজকের সমাবেশের লক্ষ্যই ছিল আগামী জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে।
তাদের এই সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিল বিচার, সংস্কার ও পিআর পদ্ধতিতে [সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব] জাতীয় নির্বাচনের দাবিকে মজবুত করার।
বিএনপি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিরোধী হওয়ায় দলটিকে আমন্ত্রণ জানায়নি ইসলামী আন্দোলন।
তবে জামাতের পর ইসলামি আন্দোলন, তারপর গণঅধিকার, আজকে আবার খেলাফত আন্দোলন, হিন্দু মহাজোট, বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্ত্র, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশ সহ ছোট ছোট অনেক দল একত্রিত হচ্ছে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সারাদিন অনেকগুলো কু-যুক্তি দেখলাম। বলা হচ্ছে সরকার শক্তিশালী হবে না, সরকার ভেঙে যাবে, জোট করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি জানিনা এদেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন আদৌও বাস্তবায়ন হবে কিনা। তবে আপনারা বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে পেশী শক্তির আস্ফালন দেখছেন, নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ করার যে মহোৎসব দেখছেন, নির্বাচনের আগে ও পরে যে সহিংসতা দেখছেন, নমিনেশন বাণিজ্য দেখছেন এসব কিছুই থাকবে না এই পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে।
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ভোটের অপচয় ঘটে না। যে দল যত পার্সেন্ট ভোট পাবে সংসদে সে তত পার্সেন্ট অনুসারেই আসন পাবে। যেকারণে প্রতিটি নাগরিকের ভোটই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।
ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট বক্স ছিনতাই করেও কেউ জিতে যেতে পারবে না। কারণ তার আসন নির্ভর করবে দলের মোট ভোটের উপর।
মাঠ পর্যায়ে রাজনীতি করছে একজন, কিন্তু নির্বাচনের আগে বিপুল টাকা দিয়ে নমিনেশন নিয়ে নিচ্ছে আরেকজন। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে এটা হয় না।
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে সবচেয়ে উপকারটা যেখানে হয় সেটা হচ্ছে, টাকা দিয়ে ভাড়া করে লোক নিয়ে আসা লাগে না, কতো বড় সমাবেশ করলাম সেটার গুরুত্ব থাকে না। রাস্তাঘাট বন্ধ করে মিছিল মিটিং করতে হয় না। রাজনীতিটা চোর, বাটপার, ভবঘুরে, ধান্দাবাজদের জন্য কঠিন হয়ে পরে।
কারণ এই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে মাঠের শক্তি প্রদর্শনের চেয়ে, পেশীশক্তির চেয়ে, মানি পলিটিক্সের চেয়ে আপনার দলের আদর্শ, মূলনীতি, দেশের জন্য অফার করা পলিসি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।
খেয়াল করে দেখেন এদেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের একদম ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যেভাবে হাজার হাজার বেকার রাজনৈতিক কর্মী, তাদের বেশিরভাগ মানুষের রুটি রুজির একমাত্র ব্যবস্থা এই রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা।
কিন্তু আপনি যখন সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে চলে যাবেন, তখন এগুলো কমে যাবে। রাজনীতিটা হয়ে যাবে ভদ্রলোকের।
ডিনার টেবিলে বসে টিভিতে দেখবেন আপনার বাচ্চার জন্য কোন দল সবচেয়ে ফ্রুটফুল শিক্ষা পলিসি অফার করতেসে। কোন দল ঝানজট নিরসনের সবচেয়ে প্রায়োগিক পদ্ধতি সাজেস্ট করতেসে, কোন দল প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে বেশি ফোকাস দিচ্ছে। সেখানে বসেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবেন এবার আপনি কাকে ভোট দিবেন।
অর্থাৎ রাজনীতিটা মাঠের চেয়েও, মানি এন্ড মাসলের চেয়েও পলিসি ভিত্তিক হয়ে উঠে। দেশে একটা ideal সিনারিও তৈরি হয়।
বিশ্বের প্রায় ৮০ টিরও বেশি দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে। বাংলাদেশেও এটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
মনে হয় না এদেশে এই পদ্ধতি ডিজার্ভ করে। কারণ এই পদ্ধতির মজা এই প্রজন্ম পেয়ে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে, বেকার ও ভবঘুরেদের জন্য রাজনীতি নাই হয়ে যাবে, অস্ত্র ও পেশীশক্তির আস্ফালন দেখিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করা বন্ধ হয়ে যাবে।
সবচেয়ে বড় কথা পিআর পদ্ধতি হলে এদেশটা সভ্য হওয়ার দিকে কিছুটা এগিয়ে যাবে। এদেশটা সভ্য হোক সেটা তো আবার রাজনীতিবিদরা চায় না। তার উপর আবার এই পদ্ধতি নিয়ে আওয়াজ তুলছে মোল্লারা। হুজুররা রাজনীতির কী বোঝে! বিশ্বের আশি দেশে এই পদ্ধতি থাকলেও এদেশে যেহেতু এই দাবি মোল্লারা তুলেছে সেদিকে তো দৃষ্টিই দেওয়া যাবে না!
স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র সংস্কারের একটা বিশাল সুযোগ আসলেও অসভ্য দেশে অসভ্য রাজনীতিই চলুক। দালালদের দালালী করে পেট চালানোর বন্দোবস্ত জারি থাকুক।
[নোট: সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নিয়ে এটি আমার একান্তই নিজস্ব বক্তব্য। ০৫ আগস্টের পর আমি আমার অনেকগুলো লেখা ও বক্তব্যে এই পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেছিলাম।]
By. Muhammad miraj Miya
#ইসলামিক #চরমোনাই #হাতপাখা #ফয়জুলকরীম #প্রবাসেরজীবন