27/10/2025
খালেদ মহিউদ্দিন, যিনি বিভিন্ন টকশোতে বসে বুক ফুলিয়ে ‘জুলাই আন্দোলন’ নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। হাসিনার স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি কথার ফুলঝুরি ছোটান, ছাত্রদের নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। ‘ঠিকানা’র ইউটিউব চ্যানেলে পর্যন্ত তিনি এই আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠান চালান। কিন্তু বাস্তবে, আন্দোলনের সময় তার ভূমিকা ছিল কী?
২২ জুলাই ২০২৪—বাংলাদেশে হাজার হাজার ছাত্র যখন রাজপথে প্রাণ দিচ্ছিল, তখন দেশে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের ফলে আমরা প্রবাসীরা ভীষণ উৎকণ্ঠায় ভুগছিলাম। এমন প্রেক্ষাপটে আমরা জার্মান প্রবাসী বাংলাদেশিরা Bonn শহরের Gronau এলাকায় একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করি। এটি এমন একটি জায়গা, যার ৫০০ মিটারের আশেপাশে অবস্থিত:
1. United Nations Regional Office
2. World Conference Center Bonn
3. DHL Headquarters
4. Deutsche Welle Headquarters
5. দুটি নামী জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস
এই গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থান বেছে নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা যে হাসিনা সরকার কি গণহত্যা বাংলাদেশে করছেন।
এটা ছিল এমন এক প্রতিবাদ, যেখানে জার্মানির ব্যস্ততম জীবনের মাঝে মানুষ জীবিকা, পরিবার, দায়িত্ব ফেলে এসেছিলেন। Cologne, Düsseldorf, Duisburg, Koblenz, এমনকি Frankfurt-এর মতো দূরবর্তী শহর থেকে প্রায় ২০০-৩০০ প্রবাসী ভাই ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এটি ছিল সাহস, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ।
আমরাই খালিদ মুহিউদ্দিনকে আমন্ত্রণ জানাই এই প্রতিবাদে উপস্থিত থাকার জন্য। আমরা মনে করেছিলাম, একজন অভিজ্ঞ ও কথিত ‘আন্দোলনপন্থী’ সাংবাদিক হিসেবে তার উপস্থিতি আমাদের প্রতিবাদকে আরও শক্তিশালী করবে।
কিন্তু আমরা হতবাক হয়ে লক্ষ্য করি—তিনি সরাসরি আমাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, তিনি আসবেন না। তার অফিস Deutsche Welle থেকে সমাবেশস্থল মাত্র ১ মিনিট হাঁটার পথ! তবু তিনি এলেন না! তিনি আসবেন না, এতে নাকি ‘সমস্যা’ হতে পারে। শত অনুরোধেও তাকে টলানো গেল না। তার অফিসের সামনেই আমাদের প্রতিবাদ—তবু তিনি অনুপস্থিত।
প্রশ্ন জাগে—২২ জুলাই কি তার ছুটি ছিল? সেদিন কি তিনি চাইলে এক মিনিটের পথ হেঁটে আসতে পারতেন না? সমাবেশস্থল কি তার কাছে চাঁদের দূরত্বে ছিল? আসলে আসল কারণটা ছিল অন্য জায়গায়—ভয়, সুবিধা হারানোর আতঙ্ক, এবং রাজনৈতিক চাপের কাছে নতজানু আত্মা।
তিনি পরে টকশোতে বলেন, তখন তিনি ‘ছুটিতে’ ছিলেন, ‘ক্রোয়েশিয়াতে’।হাস্যকর যুক্তি! অথচ সেইদিন চাইলেই সেখানে সে সমাবেশস্থলে আসতে পারতো।
তবে আজ যখন এই আন্দোলন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, তখন তিনি টকশোতে বসে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরি সাজিয়ে বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন। এটা নিতান্তই একধরনের ধৃষ্টতা ও ভণ্ডামি।এটা নিছক ভণ্ডামিও নয়, সুপরিকল্পিত সুবিধাবাদিতা, এবং নৈতিক দেউলিয়াপনা।
জুলাই রেভ্যুলেশনারী এলায়েন্স এর গনতান্ত্রিক এক কর্মসূচি কে তারা মব বলে আখ্যায়িত করছে। সাংবাদিকদের সবকিছু করার লাইসেন্স দিচ্ছেন। দিচ্ছেন এই কারনে যে দালালদের বিতাড়িত করতে তাদের পক্ষে ন্যারেটিভ তৈরি করার মত কেউ থাকবে।তার শেষ প্রোগ্রামটি দেখার পর তার উপর থেকে জুলাইয়ের পর যতটুকু সম্মানবোধ ছিলো সেটাও চলে গেছে।
আমি এই লেখাটি লিখছি, যাতে সবাই জানে—এই খালিদ মাহিউদ্দিনদের আসল চেহারা কী। তারা মুখে যতই মুক্তচিন্তা আর স্বাধীনতার কথা বলুক, বাস্তবে তারা সুবিধাবাদী, ভীতু, এবং আন্দোলনের সময় নিরব দর্শক হয়ে বসে থাকা সুশীল।
জার্মানি থেকে লিখেছেন :
শাহরিয়ার আলম পিয়াস