23/10/2025
TNT Colony মসজিদের সম্মানিত খতিব ও স্কলার মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজি জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর ISKCON হতে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ক যে বিবরণ দিয়েছেন, তা চরম অশুভ ও বীভৎস। আর তাঁর বিবরণ থেকে পরিস্থিতির সাথে Hostile Intelligence Service এর জড়িত থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিষ্কার।
(০১)
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজি ২২/১০/২০২৫ সাল তারিখ, তথা গতকাল ফজর নামাজের পর সকাল ০৭:০০ ঘটিকায় তাঁর নিয়মিত রূটিন অনুসারে মর্নিং ওয়াকের জন্য রাস্তায় বের হন। হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর যাওয়ার পর তিনি যখন একটি সেতু অতিক্রম করছিলেন, তখন প্রচণ্ড গতির একটি অ্যাম্বুলেন্স আচমকা তাঁর ঠিক পাশে এসে থেমে দাঁড়ায়! সাথে সাথে সুদক্ষ হাতে পার্ক করা অ্যাম্বুলেন্সটির ফ্রন্ট প্যাসেঞ্জার ডোর খুলে গেলে মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজির সামনে যাওয়ার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক সামনের সিটে বসে থাকা অপারেটিভ নেমে এসে তাঁর নাকের সামনে নক আঊট ড্রাগ মেশানো রূমাল চেপে ধরে। অপরদিকে অ্যাম্বুলেন্সের রিয়ার ডোর ওপেন করে আরেক অপারেটিভ তাঁর ঘাড়ের ওপরে হাত দিয়ে সজোরে আঘাত করতে থাকে। তাঁর ঘাড়ের যেখানে আঘাত করা হয়, সেখানে তাঁর আগে মস্তিষ্কের টিঊমার অপারেশন হয়েছিল। প্রচণ্ড আঘাতে তাঁর ঘাড় অবশ হয়ে যায়, কানের শ্রবণশক্তি লোপ পায়। তখন তাঁকে ওরা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে নিয়ে তাঁর চোখ ব্লাইণ্ডফোল্ড দিয়ে বেঁধে দেয়। ব্লাইণ্ডফোল্ড হলো কালোরঙা বিশেষ কাপড়, যা দিয়ে চোখ বাঁধা হয়।
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজিকে আমরা এখন এখানে রেখে যাচ্ছি। এতক্ষণ তাঁর সাথে যা হলো, আমাদের এখন তা বিশ্লেষণ করতে হবে।
(০২)
বিবরণীর শুরুতে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বলেছেন যে, তিনি নিয়মিত মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে থাকেন। সুতরাং, তাঁকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি আচমকা হয়নি। স্রেফ অনলাইন হতে শখের বশে চরমপন্থী সন্ত্রাসবাদী দলে রূপান্তর হওয়া কারো দ্বারাও কাজটি সংঘটিত হয়নি। বিষয়টি কেন পেশাদার ও অভিজ্ঞ কোনো আঊটফিটের কাজ, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এটি অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ।
একটি কভার্ট আঊটফিট যখন কারো ওপরে অ্যাকশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা সবার আগে তার Pattern of Life বিল্ড করে। তার ওপর দীর্ঘসময় নজরদারি করা হয়। তার দৈনিক রূটিন, সাপ্তাহিক রূটিন, দরকার হলে মাসিক রূটিন প্রস্তুত করা হয়। সেখান হতে তারপর অপারেশনের দায়িত্বে থাকা টিম তাকে কিল অথবা তুলে নেওয়ার মোক্ষম সময় নির্বাচন করে। মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজি যেখানে একজন সহজ লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। মর্নিং ওয়াকে একলা বের হওয়া টার্গেট সবসময় খুব বেশি দূর্বল থাকে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ভোর ০৬:০০ ঘটিকায় রাশান নেভির ফরমার সাবমেরিন কমাণ্ডার স্তানিস্লাভ রিঝতস্কি রাশিয়ার মাটিতে তাঁর মর্নিং রানে বের হন। তখন পূর্ব হতে অপেক্ষমান একটি ইঊক্রেনিয়ান কিল টিম ক্লোজ রেঞ্জ হতে তার ওপর ০৭টি বুলেট ফায়ার করে। তিনি সাথে সাথে মারা গিয়েছিলেন।
মর্নিং ওয়াকের সময় বেছে নেওয়া থেকে আমরা নিশ্চিত হলাম যে, তার Pattern of Life তৈরি করা হয়েছিল। এখন আমরা ওদের অপারেশনে ব্যবহৃত গাড়ির দিকে যাব।
ISKCON এর Sn**ch Team অপারেশনে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে। যার মানে হলো, টিমের কাছে অপশন ছিল। আর তারা স্ন্যাচ সমাপ্তির পর তাদের চূড়ান্ত গন্তব্যের পথে তল্লাশির আশঙ্কায় ছিল। এখানে অপশন থাকাটা শক্তিশালী ফাণ্ডিং বা সাংগঠনিক সক্ষমতা নির্দেশ করে। এমন সক্ষমতা, যার দ্বারা সাধারণ গাড়ির পরিবর্তে অ্যাম্বুলেন্স ফিল্ডে নামানো যায়। পাশাপাশি এটি আলোচ্য কর্মকাণ্ডে ওদের অভিজ্ঞতার চিহ্নও বটে।
অপারেশন শুরু হয়ে যাওয়ার পর থেকে ওদের যে অভিজ্ঞতার চিহ্ন পদে পদে স্পষ্ট হয়েছে। ওদের অ্যাম্বুলেন্সটি দারুণ দক্ষতার সাথে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে এসে আচমকা এমন অবস্থানে পার্ক করেছে যে, যেন গাড়ির দরজা খোলা সম্ভব হলেও সাবজেক্ট সরে যাওয়ার জায়গা না খুঁজে পায়। এটা অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ওরা বৃদ্ধ একজন মানুষের ওপর নক আঊট ড্রাগ প্রয়োগ করেছে। যার কোনো দরকার আসলে ছিল না। আমি যেখান হতে ধারণা করছি যে, তাঁকে স্বল্পমাত্রার ড্রাগ দেওয়া ছিল ওদের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দূরবর্তী অঞ্চলে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ। যেখানে বৃদ্ধ রোগীকে নিয়ে তাঁর স্বজনরা হাসপাতালে গমন করছে ধরনের কোনো গল্প হয়তো তারা সরকারি বাহিনীর অনাকাঙ্খিত তল্লাশির মুখোমুখি হলে ব্যবহার করতো। যার অংশ হিসাবে তাঁকে ওরা ড্রাগ দেয়। সবমিলিয়ে ওদের পুরো পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত ও অসাধারণ।
এখানে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো গাড়ির রিয়ার ডোর খুলে বেরিয়ে আসা অপারেটিভের মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজির টিঊমার অপারেশনের স্থানে আঘাত করা। যার একটি অর্থ হতে পারে এরকম যে, ওরা তাঁর মেডিকেল রেকর্ড হস্তগত করতে সমর্থ হয়েছিল। যদিও এটি স্রেফ আমার ধারণা।
এখান থেকে আমরা এবার মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজির দেওয়া নির্যাতনের যে বিবরণ, তার সর্বশেষ অংশের দিকে যাব।
(১.১)
অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর ওরা তাঁকে নিয়ে গতকাল সারাদিন রাস্তায় বিরতিহীন চলমান অবস্থায় ছিল। যেখানে গাড়ির ভেতরে তিনি তাঁর ব্লাইণ্ডফোল্ড নামাবার চেষ্টা করলে ওরা তাঁকে নিয়মিত বিরতিতে আঘাত করতে থাকে। লক্ষণীয় যে, ওরা তাঁর হাত বাঁধেনি।
অতঃপর শেষপর্যায়ে এসে গাড়ি যখন থেমে দাঁড়ায়, তখন ওরা তাঁকে অ্যাম্বুলেন্স হতে নামিয়ে গাড়ির আড়ালে নিয়ে যায়। তারপর কাঁচের বোতলে পানি ভর্তি করে তাঁর দুই বাহু, মুখের ওপর সজোরে আঘাত করতে শুরু করে। একইসাথে তাঁর পেটের ওপরে সজোরে লাথি মারা শুরু হয়। অতঃপর ওরা তাঁকে উপুড় করে ফেলে তাঁর কোমরের ওপরে পা দিয়ে মাড়াতে আরম্ভ করে। আর এসবের পরে আসে নির্যাতনের সবচেয়ে নৃশংস ও ভয়াবহ অংশ। আলোচ্য পর্যায়টিতে এসে ওরা মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজির পরণের পা'জামা খুলে ফেলে! তারপর তাঁর সাথে কি ঘটানো হয়েছে তা তিনি নিজ বিবরণে তুলে ধরতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
(২.২)
কাঁচের বোতল ব্যবহার করে নির্যাতনের রিপোর্ট আমরা অধিকৃত জম্মু-কাশ্মির অঞ্চল হতে পেয়ে থাকি। ওখানে Indian Army এর সাথে সংযুক্ত ইন্টারোগেটররা কাশ্মিরি নারীদের স্পর্শকাতর অঙ্গে কাঁচের বোতল দ্বারা নির্যাতন পরিচালনা করে থাকে। পুরুষ বন্দিদের ওপরেও ওরা অনুরূপ টর্চার পরিচালনা করে। ২০১৭ ও ২০২৩ সালে প্রকাশ হয়ে যাওয়া দু'টি ঘটনার বিবরণীতে আমরা যে বিষয়ক নমুনা পড়েছি।
কাঁচের বোতলটি এক্ষেত্রে মদের বোতল ছিল বলে ধরে নিচ্ছি আমি। কারণ, সাধারণত ওরা মদের বোতলকে আলোচ্য কাজে ব্যবহার করে থাকে। তবে, তার আগে তাঁকে দীর্ঘপথ নেওয়ার পরেও কেন ওরা ছেড়ে দিলো, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা দরকার।
গতকাল তাঁকে নেওয়ার তুলে নেওয়ার বিষয়টি সাধারণের থেকেও দ্রুততম সময়ে Facebook, Telegram সহ নানান কমিঊনিটির মাঝে ছড়াতে শুরু করে। সাধারণত গুপ্তচররা কাউকে তুলে নেওয়ার পর আলোচ্য ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট মাত্রার পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজি থাকে। যে মাত্রা যদি কোনোভাবে পেরিয়ে যায়, তখন তাঁকে নিজেদের হাতে রাখা আর ওরা লাভজনক মনে করে না। যা আমরা ইতিপূর্বে আরো কয়েকজনের সাথে ঘটতে দেখে থাকব।
যেহেতু মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজি ওদের কাছে হুমকি হলেও অতখানি হুমকি ছিলেন না যে, তাঁকে ঘিরে কোনো রাজপথের মুভমেন্ট বা অনাকাঙ্খিত জনরোষ সামাল দিতে ওরা আগ্রহী ছিল। সুতরাং, পরিস্থিতি সেদিকে গড়াতে শুরু করলে ও সেখান ISKCON এর নাম সরাসরি আচমকা জড়িয়ে পড়ছে দেখার পরে ওদের Sn**ch Team কে ওরা তাৎক্ষণিক অপারেশন বন্ধ করে ফিরে যাওয়ার আদেশ দেয়। সুতরাং, স্ট্যাণ্ড ডাঊনের আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে তাঁর ওপর নৃশংস শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। ফিরে যাচ্ছি সেখানের আলাপে।
মেজর জেনারেল আন্তোনিও তাগুবা U.S. Army এর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। ইরাকের আবু গারিব কারাগারে বন্দিদের ওপর নির্যাতন নিয়ে যার রিপোর্ট দারুণ খ্যাতি লাভ করে। তিনি সেখানে বলেছিলেন যে, ইন্টারগেটররা মুসলিম বন্দিদের সেখানে লাঠি দিয়ে ধর্ষণ করতো। মুসলিম বন্দিদের নগ্ন করা ও তাঁদের স্পর্শকাতর অঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে আঘাত করাকে Central Intelligence Agency (CIA) এর গবেষকেরা Enhanced Interrogation Technique (EIT) এর কার্যকরী একটি অংশ হিসাবে গণ্য করতো। যা ওরা পরবর্তীতে Indian Intelligence Community সহ দুনিয়ার নানান ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশনকে শিক্ষা দিয়েছে।
মুসলিমরা সতর তথা শরীরের সুনির্দিষ্ট অংশ আবৃত রাখতে পছন্দ করে। সুতরাং, ওরা আমাদের ওপর রিসার্চ করতে গিয়ে আবিষ্কার করে যে, আমাদের তড়িৎ ও তাৎক্ষণিকভাবে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত দেওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হলো আমাদের পোশাক ছিনিয়ে নিয়ে নগ্ন করে রাখা ও বিশেষ করে আমাদের নারী বন্দিদের ধর্ষণ করা। এটি EIT এর একটি পরীক্ষিত কৌশল।
কৌশলটির অমন আচমকা প্রয়োগ আমাদের সামনে আবারো তুলে ধরছে যে, ওরা প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ অপারেটিভ। যারা আগেও মানুষের ওপর অনুরূপ অপারেশন পরিচালনা করে এসেছে। ফলে কখন কার ওপর কোন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে, তার নির্বাচন ও বাস্তবায়ন ওরা তাৎক্ষণিক সমাপ্ত করেছে।
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজির সাথে যা করা হয়েছে, তা হলো শুরু। কারো বিবৃতি ও বিক্ষোভ ওদের মূল তৎপরতা বন্ধ করতে পারবে না। এমন দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার পুঁজি নিয়ে যারা অপারেশন পরিচালনায় সক্ষম, ওরা কারো সহনশীলতার পরওয়া করে না। ওরা স্রেফ একজন মুসলিম স্কলারকে অপহরণ করতে ফিল্ডে মোতায়েন হয়নি। ওদের নিজস্ব লক্ষ্যবস্তু রয়েছে। যা অর্জনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন যারা, তাঁদের সরিয়ে ফেলার দায়িত্ব ওদের। সেখানে নমনীয়তা যত দীর্ঘায়িত, ওদের ভয়াবহতা তত মারাত্মক।
ধন্যবাদ।