পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব

  • Hem
  • Sverige
  • Huddinge
  • পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব Bengali Poems Collection. Like: https://www.facebook.com/pagli13

কবিতা ও দেবতা সুন্দরের প্রতীক বলেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম, আমরা কবিতা পছন্দ করি; আমাদের আছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ট ভাষা বাংলা, আমরা গর্বিত। শত ব্যস্ততার মাঝে, একটু একটু করে পড়া হোক, শোনা হোক, জানা হোক, কি আছে আমাদের বাংলা সাহিত্যে…?

হুমায়ুন আজাদ আমাদের অন্যতম পছন্দের কবি, উনার কবিতা গুলোর প্রতি আমাদের মুগ্ধতার কোন সীমা নেই, আমরা আমাদের সবার প্রিয় হুমায়ুন আজাদ স্যারের কবিতা গুলো সব এই ব্লগে সংগ্রহ

করে রাখবো; সাথে সাথে অনেক উঠতি লেখকের কবিতা রাখার চেষ্টা করবো; আমরা আপনাদের কে, যারা এই ব্লগে এসে কবিতা পড়বেন তাদের কে নিজেদের কবিতা পাঠানোর অনুরোধ করি।

আমরা কবিতা পড়ি, পড়ে আনন্দ পাই, নির্মল আনন্দ। আপনাদের প্রিয় কবিতা গুলো আমাদের কে পাঠাতে পারেন, আশাকরি আমাদের সংগ্রহ শালা আরো বেশী সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।

কবিতা পাঠানোর জন্য আমাদের ফেইসবুক পেইজ ‘পাগলী তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব‘ তে ম্যাসেজ করতে পারেন।

ধন্যবাদ,
ভূবন ডাঙ্গার কবিতা।

22/02/2024

থুনি, হুফা, কুথি, ধাইর, ছুংগা, খরিল, ঝুংগি, ছিংলা, হুজা, ঘাইল-ছিয়া।

এই শব্দগুলো আমার এলাকা বিয়ানীবাজার এর আঞ্চলিক ভাষায় আছে, আমি এই শব্দ বলে এবং শুনে বড় হয়েছি। সিলেটি ভাষাই তবে জানা মতে একেবারে বিয়ানীবাজার এলাকার আঞ্চলিক ভাষা। হয়তো অন্যান্য অঞ্চলেও এই শব্দগুলো থাকতে পারে।

সময়ের সাথে সাথে প্রথমে ছাড়লাম এলাকা, তারপর ছাড়লাম শহর তারপর দেশ সেই সাথে আঞ্চলিক সিলেটি থেকে শুদ্ধ বাংলা, শুদ্ধ বাংলা থেকে ভাঙা ভাঙা ইংরেজি এবং ফাইনালি ভাঙা ভাঙা সুইডিশ।

কিছু বুঝে উঠার আগেই জীবন কত বদলে গেছে! এর মাঝেই সব থেকে বড় ট্রাজেডি ঘটে গেছে! আম্মা-আব্বা দুইজনই চলে গেছেন।

একটা বড় প্রশ্নবোধক সামনে আসে প্রায়ই!

"কেন?"

এর উত্তর নাই, পাবো ও না তাই জীবন নিয়ে এখন আর কোন আশা নাই, এই জীবনের কোন ভবিষ্যৎ নাই একটা সময় থেমে যাবে! জাস্ট টাইম পাস!

আপনারে নিয়ে আমি কখনো কোন খারাপ চিন্তা করি না, কোন ভালো চিন্তাও করি না এমনকি আপনারে নিয়ে আমি কোন চিন্তাই করি না।

লিখা শুরু করেছিলাম আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে লিখতে লিখতে চলে আসলাম জীবনের সমাপ্তি তে! হাও ফানি 😜

গতকাল ফিজিও থেরাপিস্ট অদ্ভুত একটা থিওরি দিয়েছে, জিজ্ঞেস করলো জীবনে কি কোন কষ্ট আছে? বল্লাম তেমন কিছু না শুধু আম্মা-আব্বা কে মিস করি একটু বেশীই!
বল্লো এইজন্যই। মাথা থেকে কষ্ট সরাতে হবে নাহলে একসময় শরীরে ইফেক্ট করবে!
বল্লাম কীভাবে?
বল্লো কান্না আসলে বেশ করে কাদিও। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

19/02/2024

মৃত্যু ছাড়া মানুষের একান্ত নিজের কিছু নেই,
জীবন অন্যরা ভাগ করে নেয়—খুব প্রকাশ্যেই।
- ইমতিয়াজ মাহমুদ

31/07/2023

ঘরভর্তি তোমার ছবি,
ওরা হাসে, গুনগুন করে, কথা বলে –
টেবলের ওপর কৌঠা বন্দী হয়ে পড়ে থাকা জীবন হাহাকার করে।
আমাদের ইশ্বর এই কৌঠা থেকে ঐ কৌঠা, এ জীবন থেকে ও জীবন।
- binti shorobor

28/05/2023

"সে-কথা তো জানি তোমাতে আমার মুক্তি নেই;
তবু বারে বারে তোমারই উঠানে যাওয়া-আসা।"
- বিষ্ণু দে

তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিলতাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল।তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেনঅরণ্য এবং শ্বাপদের কথা বলতে...
07/03/2022

তাঁর করতলে
পলিমাটির সৌরভ ছিল
তাঁর পিঠে
রক্তজবার মত
ক্ষত ছিল।
তিনি
অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন
অরণ্য এবং শ্বাপদের
কথা বলতেন
পতিত জমি
আবাদের
কথা বলতেন
তিনি
কবি
এবং
কবিতার
কথা বলতেন।

আমরা কি
তা’র মতো
কবিতার
কথা বলতে পারবো?
আমরা কি তা’র মতো
স্বাধীনতার
কথা বলতে পারবো?

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
কবিঃ আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

Painting: Shahabuddin

01/10/2021

' দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই।
মানুষ যখন প্রেমে পড়ে,
তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।'

___ হুমায়ূন আজাদ

মানুষের সঙ্গ ছাড়া - হুমায়ুন আজাদ মানুষের সঙ্গ ছাড়া আর সব ভাল লাগে, আমের শাখায়কালো কাক, বারান্দায় ছোট্ট চড়াই, শালিখের ঝাঁ...
21/09/2021

মানুষের সঙ্গ ছাড়া - হুমায়ুন আজাদ মানুষের সঙ্গ ছাড়া আর সব ভাল লাগে, আমের শাখায়কালো কাক, বারান্দায় ছোট্ট চড়াই, শালিখের ঝাঁকআফ্রিকার অদ্ভুত গন্ডার, নেকড়ে, হায়েনা, রাস্তার কোণায়মলপরিতৃপ্ত নোংরা কুকুর, বহু দূরে ডাহুকের ডাকসুখী করে, এইসব সুখ আছে ব’লে আজো বেঁচে আছি, এবং এখনোবাঁচতে ইচ্ছে করে, তাই হয়তো আত্মহত্যায় যাবো না কখনো।মানুষ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না; শুধু ভাবি।...

https://vubondanga.wordpress.com/2021/09/22/281/

মানুষের সঙ্গ ছাড়া – হুমায়ুন আজাদ মানুষের সঙ্গ ছাড়া আর সব ভাল লাগে, আমের শাখায়কালো কাক, বারান্দায় ছোট্ট চড়াই, শালিখ.....

শুভ জন্মদিন  আম্মা। শহীদ জননী কিংবদন্তি জাহানারা ইমাম।🙏মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি পর্যায়ে যিনি ছিলেন প্রেরণা, নিজের সন্তানকে...
04/05/2021

শুভ জন্মদিন আম্মা।
শহীদ জননী কিংবদন্তি জাহানারা ইমাম।🙏
মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি পর্যায়ে যিনি ছিলেন প্রেরণা, নিজের সন্তানকে দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন, পিছু হটতে শিখেননি এক জীবনে। নিজের স্বামীকে হারালেন সেই বছরই। কিন্তু কি যেন এক অদ্ভুত শক্তি ছিলো আম্মার মাঝে। যিনি অগ্রদুত।
মশাল হাতে দেখিয়েছেন পথ। জানতেন এই পথ সহজ নয়, কিন্তু জানতেন একবার থামলেই পিছিয়ে যাবেন অনেকটা পথ।
ক্র্যাক প্লাটুন কে তিনি ঢাকায় কোলে পিঠে করে রেখেছিলেন। তার পরিনাম দিতে হয়েছিলো ছেলেকে হারিয়ে, কিন্তু তিনি তো দমে থাকার পাত্র নন, সব সয়ে বেড়িয়েছেন বাকি জীবন জুড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক সরকার এলে বহুদলীয় গনতন্ত্রের সুযোগ পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো জামায়াতে ইসলাম। ওরা চেয়েছিলো বাংলাদেশ আবার ফিরে যাক পাকিস্তানী চেতনায়।
বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন আম্মা। জীবনে কম আঘাত তো সহ্য করেন নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছেন নিজের চোখে সামনে থেকে, ছেলেদের সাহস জুগিয়েছেন ব্যথা ভুলে তবুও এগিয়েছেন অনেকটুকু পথে।
নব্বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে যখন গণ আন্দোলন গড়ে তুলেন প্রতিটি পদক্ষেপে ছিলো ভয়। কিন্তু তিনি তো ভীতু নন। পথ দেখিয়েছেন প্রজন্মকে। গণ আদালত নিয়ে খালেদা সরকার করলো মামলা, হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আম্মা সহ যোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পুনরায়।
দেশ থেকে বিদেশে ছড়িয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
তিনি জানতেন সুফল আসবে, আসবে সুদিন। এবং সুদিন এসেছে। তিনি দেখে যেতে পারেননি সঠিক কিন্তু জান্নাত থেকে ঠিকই দেখেছেন।
২৮ মার্চ ১৯৯৩ সালে পুলিশ হামলা চালালো আম্মার উপর। ভর্তি হলেন পিজি হাসপাতালে। সেই শুরু, কিন্তু প্রেরণায় ছিলেন প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি স্পন্দনে। বাক শক্তি হারিয়েছেন ক্যান্সারে, কিন্তু হেরে জাননি কোনো পথে। মৃত্যু হয়তো গ্রাস করেছিলো আম্মাকে কিন্তু তিনি তো অপরাজিত। যার ফল আমরা দেখেছি যুদ্ধাপরাধীদের রায়ে। আম্মা জাতিকে প্রেরণা, শক্তি জুগিয়েছেন প্রতিটি মুহূর্তে।
জাহানারা ইমামের সাহিত্য ভান্ডার ও অসামান্য। শিশুদের জন্য তাঁর রচিত গজকচ্ছপ, সাতটি তারার ঝিকিমিকি ,বিদায় দে মা ঘুরে আসি কি অপূর্ব।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর লেখা একাত্তরের দিনগুলি তো মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ। আরেকটা হলো বীরশ্রেষ্ঠ। তাঁর লেখা অন্য জীবন, জীবন মৃত্যু, শেক্সপীয়রের ট্রাজেডি, নিঃসঙ্গ পাইন, বুকের ভিতরে আগুন কি অসামান্য রচনা। কিংবা নাটকের অবসান ও দুই মেরু। তিনি অসম্ভব শক্তিমান প্রাবন্ধিক ছিলেন।
আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন আম্মা।বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো শহীদ জননীর প্রতি।🙏💞
ছবি- শহীদুল আলম।

তিনি / হুমায়ূন আহমেদরাত ন’টার মত বাজে।আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মা...
02/05/2021

তিনি / হুমায়ূন আহমেদ

রাত ন’টার মত বাজে।

আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন। আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায় চকচক করছে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না। বিখ্যাত মানুষরা যে আমাকে একেবারেই টেলিফোন করেন না তাতো না। মেয়ে এত উত্তেজিত কেন?

‘বাবা তুমি কিন্তু আবার বলতে বলবে না যে তুমি বাসায় নেই।
তোমার বিশ্রী অভ্যাস আছে বাসায় থেকেও বলো বাসায় নেই।’

আমি বললাম, টেলিফোন কে করেছে মা?
আমার মেয়ে ফিসফিস করে বলল, জাহানারা ইমাম।
এই নাম ফিসফিস করে বলছ কেন? ফিসফিস করে বলার কি হল?
‘বাবা উনি যখন বললেন, তার নাম জাহানারা ইমাম তখন আমি এতই নার্ভাস হয়ে গেছি যে, তাকে আসস্লামালাইকুম বলতে ভুলে গেছি।’
‘বিরাট ভুল হয়েছে। যাই হোক দেখা যাক কি করা যায়।’
আমি টেলিফোন ধরলাম এবং বললাম, ‘আমার মেয়ে আপনাকে সালাম দিতে ভুলে গেছে এই জন্যে সে খুব লজ্জিত। আপনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। সে আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।’
ওপাশ থেকে তার হাসির শব্দ শুনলাম। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘আমি কিন্তু আপনাকে টেলিফোন করেছি কিছু কঠিন কথা বলার জন্যে।’
‘বলুন।’
‘আপনি রাগ করুন বা না করুন কথাগুলো আমাকে বলতেই হবে।’
‘আমি শংকিত হয়ে আপনার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছি।’
‘আপনি স্বাধীনতাবিরোধীদের পত্রিকায় লেখেন কেন? আপনার মত আরো অনেকেই এই কাজটি করে । কিন্তু আপনি কেন করবেন?’
তিনি কথা বলছে নিচু গলায়, কিন্তু বলার ভঙ্গিতে কোন অস্পষ্টতা নেই। কোন আড়ষ্টতা নেই।’

আমি হকচকিয়ে গেলাম। আক্রমণ এইদিক থেকে আসবে ভাবিনি। তবে পত্রিকায় লেখা দেয়ার ব্যাপারে আমার কিছু যুক্তি আছে। খুব যে দুর্বল যুক্তি তাও না। যুক্তিগুলো তাকে শোনালাম। মনে হল এতে তিনি আরও রেগে গেলেন। কঠিন গলায় বললেন, ‘আপনার মিসির আলী বিষয়ক রচনা আমি কিছু কিছু পড়েছি, আপনি যুক্তি ভালো দেবেন তা জানি। কিন্তু আমি আপনার কাছ থেকে যুক্তি শুনতে চাচ্ছি না। আপনাকে কথা দিতে হবে ওদের পত্রিকায় লিখে ওদের হাত শক্তিশালী করবেন না। আপনি একজন শহীদ পিতার পুত্র। ‘তুই রাজাকার’ শ্লোগান আপনার কলম থেকে বের হয়েছে। বলুন আর লিখবেন না।’

আমি সহজে প্রভাবিত হই না। সে রাতে হলাম । বলতে বাধ্য হলাম, আপনাকে কথা দিচ্ছি আর লিখব না। এবার বলুন আপনার রাগ কি কমেছে? তিনি হেসে ফেললেন। বাচ্চা মেয়েদের এক ধরণের হাসি আছে – কুটকুট হাসি, বড়দের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে যে হাসি তারা হাসে সেই হাসি।

আমি বললাম, ‘আমি সবসময় লক্ষ্য করেছি আপনি আমাকে আপনি আপনি কবেন। নিজেকে খুব দূরের মানষ মনে হয়। দয়া করে আমাকে ‘তুমি’ করে বলবেন।’ তিনি বললেন, ‘আচ্ছা বলব। এখন থেকে বলব।’

তিনি কিন্তু আমাকে ‘তুমি’ কখনই বলেননি। যতবারই মনে করিয়ে দিয়েছি ততবারই বলেছেন, ‘হ্যাঁ এখন থেকে বলব।’ কিন্তু বলার সময় বলেছেন ‘আপনি’। হয়তো তিনি আমাকে কখনোই কাছের মানুষ মনে করেননি।

তার অনেক কাছের মানুষ ছিলো আমার মা। আমার ছোট ভাই জাফর ইকবাল। জাফর ইকবালের উল্লেখ তার লেখাতে পাই। ব্যাক্তিগত আলাপেও জাফর ইকবালের প্রসঙ্গে তাকে উচ্ছ্বসিত হতে দেখি। শুধু আমার ব্যাপারেই এক ধরণের শীতলতা। হয়তো তার ধারণা হয়েছিল, যে মহান আন্দোলনের নেতৃত্ব তিনি দিচ্ছেন আমি সেই আন্দোলন এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছি। যে ১০১ জনকে নিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আদি যাত্রা, আমি সেই ১০১ জনের একজন। অথচ পরে আমার আর কোন খোঁজ নেই। কাজেই আমার ভূমিকায় অস্পষ্টতাতো আছেই। তিনি আমার প্রতি শীতল ভাব পোষণ করতেই পারেন। সেটাই স্বাভাবিক।

আরেক দিনের কথা, তিনি টেলিফোন করেছেন। গলার স্বর অস্পষ্ট। কথা কেমন জড়িয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম, ‘আপনার শরীর কি খারাপ করেছে?’

তিনি ক্লান্ত গলায় বললেন, ‘শরীর আছে শরীরের মতই। আপনাকে একটা ব্যাপারে টেলিফোন করেছি।’

‘বলুন কি ব্যাপার।’

‘এই যে একটা আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এতে অর্থ ব্যায় হচ্ছে। আমাকে চলতে হচ্ছে মানুষের চাঁদায়। আপনি প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা দেবেন।’

‘অবশ্যই দেব।’

‘আমি একজনকে পাঠাচ্ছি। এ মাসের চাঁদা দিয়ে দিন।’

‘জ্বি আচ্ছা, কত করে দেব?’

‘আপনি আপনার স্বামর্থ্য মত দেবেন। মাসে দু’হাজার করে দিতে পারবেন?’

‘পারব।’

একজন এসে চাঁদা নিয়ে গেলো। পরের দু’মাস কেউ চাঁদ নিতে এলো না। আমার মন একটু খারাপ হল। মনে হল হয়ত সিদ্ধান্ত হয়েছে আমার কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হবে না। তৃতীয় মাসে তিনি টেলিফোন করে বললেন, ‘কি ব্যাপার আপনি আপনার চাঁদার টাকা দিচ্ছেন না কেন?’

আমি বিনীতভাবে বললাম, ‘কেউ তো নিতে আসেনি।’

‘আমার এত লোকজন কোথায় যে পাঠাবো! আপনি নিজে এসে দিয়ে যেতে পারেন না? আপনিতো এলিফেন্ট রোডেই থাকন। দু’মিনিটের পথ।’

‘আমি আসছি। ভালো কথা আপার সাথে রাগারাগি করার মত একটা ঘটনা ঘটেছে। আমি এসেই কিন্তু রাগারাগি করব।’

তিনি বিস্মিত হলে বললেন, ‘আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।’

‘এসে নেই তারপর বুঝবেন।’

‘না এখনই বলুন।’

‘আমার বড় মেয়ে নোভার ছিল মাথা ভর্তি চুল। আপনি হচ্ছেন তার আদর্শ। আপনার মাথার ছোট ছোট চুল তার খুব পছন্দ। সে আপনার মত হবার প্রথম ধাপ হিসেবে তার মাথার সব চুল কেটে ফেলেছে।’

‘সত্যি।’

‘বাসায় আসুন। বাসায় এসে দেখে যান।’

একেবারে কিশোরী গলায় তিনি অনেকক্ষণ হাসলেন। তারপর বললেন, ‘আপনার মেয়েকে বললেন লম্বা চুল আমার খুব প্রিয়। আমি যখন তার বয়সী ছিলাম তখন আমার হাঁটু পর্যন্ত লম্বা চুল ছিল। ছবি আছে। আমি আপনার মেয়েকে দেখাব। চুল কেটে ছোট করতে হয়েছে ক্যান্সারের জন্য। কেমোথেরাপির কারণে চুল পড়ে যাচ্ছিলো। কি আর করব?’

তিনি একবার আমার বাসায় আসার ইচ্ছা পোষণ করলেন। আমার মেয়েদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করবেন। তার গল্প করতে ইচ্ছা করছে। গাড়ি পাঠিয়ে তাকে আনালাম। গ্রহ যেমন সূর্যকে ঘিরে রাখে আমার মেয়েরাও তাকে সেই ভাবে ঘিরে গোল হয়ে বসে পড়ল। তিনি তাদের বললেন তার শৈশবের কথা। আমি আসরে যোগ দিতে চেয়েছিলাম। তিনি বললেন, আপনি আসবেন না। এই আসরে আপনার প্রবেশাধিকার নেই।

অন্যান্য ফ্ল্যাটে খবর চলে গেছে। ছেলেমেয়েরা আসছে। তারাও গল্প শুনতে চায়।

আমার স্ত্রী ব্যস্ত হয়ে পড়ল, অতি সন্মানিত এই মানুষটিকে সে কি খাওয়াবে? তিনি তো কিছুই খেতে পারেন না।

তিনি আমার স্ত্রীকে আশ্বস্ত করলেন, শুধু মুখে যাবেন না। কিছু খাবেন। পাকা পেঁপে থাকলে ভালো হয়।

ঘরে পাকা পেঁপে নেই। আমি ছুটলাম পাকা পেঁপের সন্ধানে। লিফট থেকে নামতেই এক ভদ্রলোক চোখ বড় বড় করে বললেন, জানেন, আমাদের এই ফ্ল্যাটের কোন এক বাড়িতে জাহানারা ইমাম এসেছেন।

আনন্দে আমার মন দ্রবীভূত হল। এই মহীয়সী নারী কত অল্প সময়ে মানুষের হৃদয় দখল করে নিয়েছেন।

তার মৃত্যু সংবাদ আমাকে দেন আসাদুজ্জামান নূর।

বাসায় তখন ক্যাসেট প্লেয়ার বাজছে। আমার মেয়েরা জন ডেনভারের গান শুনছে ‘রকি মাউন্টেন হাই, কলারাডো।’ সঙ্গে সঙ্গে গান বন্ধ হয়ে গেলো। মেয়েরা তাদের নিজেদের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আমার মা আমার কাছে জানতে চাইলেন, আন্দোলন এখন কে এগিয়ে নিয়ে যাবে? আমি তাকে বললাম, দ্বিতীয় জাহানারা ইমাম আমাদের নেই। জাহানারা ইমাম দু’টা তিনটা করে জন্মায় না। একটাই জন্মায়। তবে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেই। অপেক্ষা করুন।

মা জায় নামাজে বসলেন।

আর আমি একা একা বসে রইলাম বারান্দায়। এক ধরনের শূণ্যতা বোধ আমার ভেতর জমা হতে থাকল। কেবলি মনে হতে লাগল একটা মস্ত ভুল হতে গেছে। কি পরিমান শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা এই মানুষটির প্রতি আমার ছিল তা তাকে জানানো হয় নি। আমার একটাই স্বান্ত্বনা মৃত্যুর ওপাশের জগত থেকে আজ তিনি নিশ্চয়ই আমার বিপুল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অনুভব করতে পারছেন। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি সবসময়ই তার পাশে ছিলাম। যে ক’দিন বেঁচে থাকবো তাই থাকব। বঙ্গ-জননীর পাশে তার সন্তানরা থাকবে না তা কি কখনো হয়?

বাংলার পবিত্র মাটিতে তার পায়ের চিহ্ন আর পড়বে না। স্বাধীনতাবিরোধীদের এই সংবাদে উল্লসিত হবার কিছু নেই। বাংলার হৃদয়ে তিনি জ্বেলে দিয়েছেন অনির্বাণ শিখা। ঝড়-ঝাপ্টা যত প্রচন্ডই হোক না কেন সেই শিখা জ্বলতে থাকবে।

কি সৌভাগ্য আমাদের, তিনি জন্মেছিলেন এই দেশে।

27/04/2021

৪২ বছর পরের হেমন্তে
তোমার জলে অনল ভিজাবো,বাংলাদেশ।
আবার তোমার প্রেমে পড়বো,বাংলাদেশ।
- অমিত লাবণ্য

Adress

Huddinge

Aviseringar

Var den första att veta och låt oss skicka ett mail när পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব postar nyheter och kampanjer. Din e-postadress kommer inte att användas för något annat ändamål, och du kan när som helst avbryta prenumerationen.

Dela