03/12/2023
# সন্দেহ
সকাল সাড়ে ছয়টার সময় মর্নিং ওয়াক করে বাড়ি ফিরছিলেন কাকলি দেবী আর অবিনাশবাবু। নিচতলায় ভাড়াটিয়া দের ঘরের পাশ থেকে সিঁড়িতে ওঠার সময় ঘরের মধ্যে থেকে বাচ্চাটার গলায় 'কাকু' ডাকটা শুনে একটু অবাক হন তিনি।
পরশু নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে, স্বামী স্ত্রী ও তাদের বছর চারেক এর ছোট্ট মেয়ে তিতলি,ছিমছাম সংসার, কোনো ঝুট-ঝামেলা নেই দেখে ভাড়া দিয়েছেন তারা|
'কাকু' ডাকটা শুনে কৌতুহলী হলেন কাকলি দেবী।এত্ত সকালে 'কাকু' বলে কাকে ডাকছে বাচ্ছা টা! কিন্তু অন্যের ঘরে যখন তখন উঁকি দেওয়াটা তাঁর রুচিতে বাঁধে, তাই কৌতূহল মনের মধ্যে রেখেই দোতালায় নিজের ঘরে এলেন তারা।
যদিও অবিনাশ বাবু খেয়াল করেননি বিষয় টা, কাকলি দেবী মনে মনে ভাবলেন, নতুন ভাড়াটিয়া গৌতম বাবুর ভাই টাই এসেছেন মনে হয় !! কিন্তু তাও এতো সকালে? অবিনাশ বাবুকে তিনি কিছু না বললেও চিন্তার একটা সূক্ষ্ম রেশ মনের মধ্যেই রয়ে গেলো কাকলি দেবীর।
বেলা দশটায় অবিনাশবাবু অফিস বেরিয়ে গেলেন রোজকার মতো , এখন অখণ্ড অবসর কাকলি দেবীর, নিচ থেকে মাঝে মাঝে বাচ্চাটির খিলখিল হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছিল, মনটা বেশ ভালো লাগলো তার। মিষ্টি ফুটফুটে বাচ্চাটা, বুক থেকে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেল, ছেলের ঘরে নাতি নাতনির মুখ দেখা তার কপালে আর নেই, যদিও তাঁদের এক ছেলে, আর এক মেয়ে।
ছেলে তো তাদের সমস্ত স্বাদ-আহ্লাদ বিসর্জন করে এক বিধবা মেয়েকে বিয়ে করেছে আজ মাস ছয়েক হলো, আত্মীয় স্বজন সবাই ছি ছি করছে। কারো কাছে মুখ দেখানোর অবস্থা রাখেনি ছেলে, কত আশা ছিল ছেলের বৌ নিয়ে, কিন্তু একটা বিধবা মেয়েকে ঘরের বৌমা!! এটা মেনে নেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয় কাকলি দেবীর পক্ষে , একটা অপয়া মেয়ে, আগের স্বামীকে অল্প বয়সে খেয়েছে, এবার তার ছেলের মাথাটাও খাচ্ছে। ছেলেকে অনেক বার বুঝিয়ে বলেছেন তিনি , কিন্তু ছেলে কোনো কথা শোনেনি তাদের, তাই তারা রাগে-অভিমানে ছেলের সাথে সব সম্পর্ক ছেদ করেছেন, আর একমাত্র মেয়েও চাকরিসূত্রে বাইরে ব্যাঙ্গালোরে থাকে। অতএব কাকলি দেবী সারাটা দিন একা।
কিন্তু এই একা একা সারা দিন কাটতে চায়না তার, একাকীত্ব কাটানোর জন্যই অনেক ভেবেচিন্তে দেখেশুনে এই দম্পতিকে ভাড়া দিয়েছেন তারা। গ্রামে বাড়ি, এখানে কাছেই কোম্পানিতে কাজ করেন গৌতম বাবু। যাতায়াতের সুবিধার জন্য ভাড়ায় আসা, স্বামী-স্ত্রী আর একটা মেয়ে, বেশ হাসিখুশি পরিবার ...কোনো ঝুট ঝামেলা নেই, নইলে ভুলভাল ভাড়াটে ভাড়ায় দিয়ে আজকাল যা হচ্ছে চারিদিকে।
ব্যালকনির সোফায় বসে এইসব ভাবতে ভাবতে সকালের কৌতুহলটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল তার। গৌতম বাবুর ভাই কি এখনো আছেন? নাকি চলে গেছেন !! সাড়াশব্দ তো কিচ্ছু পাওয়া যাচ্ছেনা।
***দিন চারেক পরে সন্ধ্যেবেলা....
সন্ধ্যের দিকে বাচ্চাটার কান্নার আওয়াজ শুনে নিচে নামলেন কাকলিদেবী , ওদের ঘরে গিয়ে বউটাকে জিজ্ঞেস করলেন 'কি হয়েছে এতো কাঁদছে কেন?'.. "ওর বাবার সাথে ফোনে কথা বলছিল, যেই ফোন রেখে দিয়েছে, তখন থেকে কাঁদছে এক্ষুনি বাবার কাছে যাবে, কি যে করি মেয়েটাকে নিয়ে, কথা শোনেনা একটুও।"
কাকলি দেবী আদর করে তিতলিকে কোলে নিয়ে বলল "কি হয়েছে মা... কাঁদেনা ... বাবা এক্ষুনি চলে আসবে। "
বাচ্চাটা কাঁদতে কাঁদতে বলল... "কাকু যাবোওওও।"
বউটা অপ্রস্তুত হয়ে তাড়াতাড়ি করে বাচ্চাটাকে কাকলি দেবীর কাছ থেকে নিয়ে একটা চকলেট দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো।
কাকলি দেবী ভীষণ অবাক হলেন ফের, বাবাকে 'কাকু 'বলছে বাচ্চাটা?? কিন্তু কেন?!
নাকি 'কাকু' বলে বিশেষ কেউ আছে!!.. যাকে ঢাকা দেবার চেষ্টা করছে বউটা, বাবার' জন্য কাঁদছে বলে ... !!
ব্যাপারটা বেশ গোলমালে লাগলেও ভদ্রতার খাতিরে তিনি কোনো প্রশ্ন না করে নিজের ঘরে ফিরলেন।
সেদিন রাত্রে চিন্তিত কাকলি দেবী স্বামীর কাছে তার এই সন্দেহের কথা না বলে পারলেন না, এই 'কাকু' ব্যক্তিটি কে? বাচ্চাটা সব সময় 'কাকু কাকু' বলে কেন?
অবিনাশবাবুর শুনেও একটু চিন্তায় পড়লেন, কিন্তু বাড়তি ঝামেলা এড়াতে তিনি বড্ড ভালোবাসেন..
তাই বললেন "আরে ছাড়ো তো, ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে.. কি বলতে কি বলেছে.. সেই নিয়ে তুমি রাতের ঘুম নষ্ট করোনা। "
কিন্তু কাকলি দেবীর মাথা থেকে সন্দেহটা গেল না...নিশ্চই কিছু গোলমাল আছে।
পরদিন সকালে সন্দেহটা আরো বেড়ে গেল যখন কাজের লোক মিনতির কাছে শুনলেন, বাচ্চাটা নাকি তার বাবাকেই 'কাকু' বলে ডাকে, মিনতি অনেকবার শুনেছে।
কি সব্বনাশ..একি কথা...!! তাহলে কি ওরা স্বামী স্ত্রী নয়? মিথ্যে বর বৌ সেজে.... একি কেলেঙ্কারি!!
কাকলি দেবী তৎক্ষণাৎ মেয়েকে ফোন করে সব জানালেন, মেয়ের কাছে শলা-পরামর্শ করে ... অবিনাশবাবু বাড়ি ফিরলে বেশ চিন্তিত ও রাগত স্বরে বললেন.... "কাল তো আমার কথায় পাত্তাই দিলে না.. আমি যা সন্দেহ করেছিলাম, ঠিক করেছিলাম। জানো!! বাচ্চাটা ওর বাবাকে 'কাকু' বলে !! কিন্তু কেন বলবে? নিশ্চয়ই ওরা স্বামী-স্ত্রী নয়, ছোট মানুষরা কখনো মিথ্যা বলে না, দেখো খোঁজ নিয়ে.. আমার মনে হচ্ছে অন্যের বউ নিয়ে পালিয়ে এসেছে এখানে নিশ্চয়ই.. ছ্যাঃ ছ্যাঃ... তুমি কাল ই ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা বলো, ওদের বিয়ের সার্টিফিকেট দেখাতে বলো। "
অবিনাশবাবু বিব্রত হয়ে বললেন "আচ্ছা তুমি ব্যস্ত হয়ো না, আমাকে একটু ভাবতে দাও, ওইভাবে ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ম্যারেজ সার্টিফিকেট চাওয়া যায় নাকি!!"
কাকলি দেবী অধৈর্য হয়ে বলেন "বিয়ের সার্টিফিকেট না দেখাতে পারলে ওই ভাড়াটেকে কালই বিদেয় করবার ব্যবস্থা করো ... কি সাংঘাতিক ভেবেছো একবারও ?
তলে তলে এত নোংরামি!! সামনে দেখলে তো কিছুই বোঝা যায় না, এক্কেবারে সুখী পরিবার, ছিঃ ছিঃ ছিঃ, শেষে কিনা অন্যের বউ!! অন্যের বাচ্চা নিয়ে!! ইসসস, আমি সারাদিন একা থাকি, দিনকাল যা খারাপ..কি করতে কী করবে!! তুমি কালকেই এর বিহিত করবে একটা। এই বলে দিলুম।"
সব শুনে অবিনাশবাবুও বেশ চিন্তায় পড়লেন, কিন্তু গৌতম বাবু ওমন মানুষ, কেন জানেননা এটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না তাঁর।
তবুও স্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বললেন. "আচ্ছা কাল রবিবার আছে, সকালে ওদের সাথে কথা বলতে যাব।"
পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে নটা নাগাদ স্ত্রীর তাড়ায় অবিনাশবাবু অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভাড়াটিয়াদের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন, কাকলি দেবী ও সঙ্গ নিলেন।
অবিনাশবাবু কদিন গৌতম বাবুর সাথে কথা বলে যা বুঝেছিলেন ভদ্রলোক খুবই অমায়িক, ভদ্র।
কিভাবে যে ওনাকে জিজ্ঞেস করবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি , কিন্তু নিজের স্ত্রীকে তিনি ভালো করেই জানেন, এর বিহিত না করে তিনি শান্ত হবেন না কিছুতেই।
নিচতলা নামতেই পায়েসের গন্ধ নাকে এসে লাগল তাদের, কাকলি দেবী মনে মনে ভাবলেন, 'মনের সুখে পায়েস রান্না করাচ্ছি।'
গৌতম বাবু মনে হয় সবে বাজার করে ফিরেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে দেখে বাজার ভর্তি ব্যাগ হাত থেকে নামিয়ে তিনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলেন বসতে দেবার জন্য।
বউটা পায়েস রাঁধছিলো, তাড়াতাড়ি করে দুটো চেয়ার টেনে বসতে দিল। এমন অসময়ে বাড়িয়ালার উপস্থিতিতে একটু অবাক হয়েছিল তারা...তিতলি কাকলি দেবীর কাছে এসে দাঁড়ালেও কাকলি দেবী কিন্তু আজ আর অন্যান্য দিনের মতো তিতলিকে কোলে নিয়ে আদর করলেন না।
অবিনাশ বাবু একটু শব্দ করে গলা ঝেড়ে বললেন "কিছু মনে করবেন না গৌতম বাবু, আমরা একটা কথা বলতে এসেছি, আপনাদের ম্যারেজ সার্টিফিকেটটা একটু দেখতে চাই।"
গৌতম বাবু এই কথায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন, ধীর স্বরে বললেন, "ওটা তো এখানে নেই, গ্রামের বাড়িতে আছে, কিন্তু কেন বলুনতো, কিছু সমস্যা হয়েছে? "
অবিনাশবাবুর মৃদুস্বরে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন।
তাঁকে থামিয়ে কাকলি দেবী বললেন... "দেখো বাছা কিছু মনে করো না, তোমাদের ভালোমানুষ মনে করে ভাড়ায় দিয়েছি, কিন্তু তোমাদের সম্পর্কটা বড্ড গোলমেলে, নইলে কোনো বাচ্ছা তার নিজের বাবাকে কাকু বলে!!.. এ কেমন ধরনের কথা.. এটা মোটেই স্বাভাবিক না, তোমরা স্বামী-স্ত্রী কিনা সে নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে আমাদের , তাই বাপু ম্যারেজ সার্টিফিকেট না দেখালে এখানে থাকা হবেনা তোমাদের।"
কাকলি দেবীর কথা শুনে গৌতম বাবু খুবই অপ্রতিভ হয়ে কিছু বলার আগেই...তিতলি ঠাম্মি' বলে বাইরে ছুটে গেলো। পরমুহূর্তে এক বৃদ্ধা তিতলিকে কোলে নিয়ে ঢুকলেন, সঙ্গে একটা মেয়ে ব্যাগ হাতে...।
ঘরে ঢুকে... ঘরের গম্ভীর অপ্রীতিকর পরিস্থিতি বুঝতে বৃদ্ধার বেশীক্ষন লাগলো না, গৌতম বাবুর কাছে সব শুনে বৃদ্ধা বলতে শুরু করলেন...
"নিজে দেখে শুনে বড়ো ছেলের জন্য বৌ এনেছিলুম, কিন্তু আমার বড় ছেলেটা বিয়ের কয়েক বছরের মাথায়.. আমার দিদিভাই এর যখন মাত্র তিন বছর বয়স..তখন হটাৎ একদিন রাত্রে বুকের ব্যাথায় ছটফট করতে করতে... মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়।"
কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখের জল মুছে সঙ্গে আসা মেয়েটিকে দেখিয়ে বলেন " আমি নিজে তিনটে বাচ্চাকে নিয়ে বিধবা হয়েছিলুম যখন, আমার এই ছোটো মেয়ে দিদিভাইয়ের বয়সী হবে , একা হাতে তিনটে বাচ্চা সামলে, সমাজের নোংরা চোখ থেকে নিজেকে ঠিক রেখে,একটা সোমত্ত বেধবার বেঁচে থাকা যে কি কষ্টের সে আমি জানতুম, ধীরে ধীরে ছেলের শোক কাটিয়ে উঠতে পারলেও, আমার ঘরের লক্ষ্মী চোখের সামনে সাদা থান পরে ঘুরে বেড়াবে, সেটা আমি সহ্য করতে পারছিলুম না কিছুতেই , একে অল্প বয়স তারপর কোলে কচি একটা মেয়ে, ওর চিন্তায় আমার ঘুম হত না।
আমার ছোট ছেলে এখানকার কোম্পানিতে চাকরি করে , বাইরে বাইরে থাকতো।শেষে অনেক ভেবে-চিন্তে ছোট ছেলে গৌতমকে ডেকে পাঠালুম, ছেলে আমার কথা ফেলবে না জানতুম।তেমন শিক্ষেও দিইনি, বৌমাকে বোঝাতে আমার বেশ সমস্যা হয়েছিল, তারপর আমি নিজের উদাহরন দেখিয়ে আমার দিব্যি দিয়ে রাজি করিয়ে ... মাস ছয়েক আগে ওদের বিয়ে দিলুম। গাঁয়ের লোক আত্মীয়-স্বজন ছি ছি করতে লাগলো, বললো অপয়া বিধবা বৌ.. এক ছেলেকে খেয়েছে.....তা তারা যা পারে বলুক গে,সমাজে মেয়েরাই মেয়েদের শত্তুর গো, সবসময় মেয়েরা অপয়া হয় কেন? আমার স্বামীটা চলে যাবার পর আমাকেও শুনতে হয়েছিল এমন।
তারপরে কাকলির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন... "আচ্ছা দিদিভাই আপনেই বলেন আমি অপয়া হলে একা হাতে তিনটে বাচ্ছাকে এইভাবে মানুষ কোত্তে পারতুম? আপনে কি বলেন? তাই কারোর কথায় কান দিইনি, পরের কথায় কাজ কি! দুঃখের দিনে এরা কেউ পাশে থাকবেনা , আমার ঘরের মানুষ গুলো কিসে শান্তিতে থাকে, সেটাই তো দেখবো। এতে আমার ঘরের লক্ষীও ঘরে থাকলো, আর আমার দিদিভাইও আবার বাপ পেল। আর আমিও শান্তি পেলুম, কিন্তু আমার দিদিভাই তো ছোট ছেলেকে 'কাকু' বলেই চেনে, ওদের বিয়ে হবার পর আমি প্রথম প্রথম 'বাবা' বলানোর অনেক চেষ্টা করেছিলুম।
কিন্তু ছেলেই বললো "থাক না মা জোর করতে হবে না, ছোট মানুষ, যেদিন ওর মন থেকে ইচ্ছা হবে সেদিন ও বাবা' বলে ডাকুক, সেই দিনের অপেক্ষায় থাকবো আমি। "
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ছেলের দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধা আবার বললেন, " দেখলি তো বাবা... কথা না শুনলে কি হয়!! তুই তো বারণ করেছিলি, কিন্তু কতটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছিল এই নিয়ে। আমি যদি এসে না পড়তাম ওই সময়ে, আরো কত অপমান যে হতে হত।"
এইসময় ঘরের কোন দিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ এলো, বৃদ্ধা চেঁচিয়ে বলল... "বৌমা, ঘরের লক্ষ্মীর চোখের জল ফেলতে নেই, অমঙ্গল হবে, আমার বড় খোকা কষ্ট পাবে।"
এতক্ষণ অবিনাশবাবু মাথা নিচু করে সব শুনছিলেন,অনুশোচনায় ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছিলো তার, কাকলি দেবীর মনটাও কেমন যেন হয়ে গেছিলো বৃদ্ধার কথা শুনে, লজ্জিত হলেন তিনি। কেন জানিনা বৃদ্ধার কথা শুনতে শুনতে আজ খুব নিজের ছেলের কথা মনে পড়ছিল তার।
অবিনাশবাবু গৌতম বাবুর হাত ধরে বললেন.." কিছু মনে করো না বাবা, একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল.. ক্ষমা করে দিও," গৌতম বাবু জিভ বের করে অবিনাশ বাবুকে বললেন.... "মেসোমশাই ওমন কথা বলবেননা, আপনি গুরুজন " এই বলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন।
কাকলিদেবী তিতলিকে কাছে ডেকে কপালে একটা চুমু দিয়ে ভাবলেন কালকেই ছেলে বৌমাকে ডেকে পাঠাবেন তিনি।
দুজনে চলে আসতে গেলে বৃদ্ধা হাসিমুখে বললেন "আপনেরা আর একটু বসুন। একটু পায়েস খেয়ে যান, আজ আমার দিদিভাইয়ের জন্মদিন যে, পাঁচ পুন্ন হলো আজ, ওই জন্যই আসা আমার।"
তার পর ছেলের উদ্দেশে বললেন "ও বাপ .. বৌমাকে বল দুই বাটি পায়েস দিতে।"
তিতলি এতক্ষণ সব শুনছিলো.. যদিও সে ছোট্ট মেয়ে, এতকিছু বোঝার বয়স তার হয়নি, কিন্তু তবুও ছোটো মনে ও কি বুঝলো কে জানে !! গৌতম বাবুর কাছে গিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল "বাবা আমিও পায়েস খাব।"
এই প্রথম 'বাবা' ডাক শুনে গৌতমবাবু চমকে উঠলেন যেন, অশ্রু সজল চোখে মেয়েকে কোলে তুলে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিলেন তাকে।
© লিখেছেন- ঝুম্পা মন্ডল