
15/02/2025
#তিন_অক্ষরের_এক_যন্ত্রণার_নাম_বিদায়"!
প্রতিটি সূচনার যেমন অন্ত রয়েছে। তেমনিভাবে প্রতিটি সুখের পরিশেষে রয়েছে বেদনা। পূণ্যভূমিতে প্রশান্তিময় ক্ষনের ইতি টানার পালা। পেয়ারা নবীকে আজকে বিদায় জানাতে হবে এটা ভাবতেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে উঠছে। মনটা খুবই ভারি লাগতেছে। চোখ দিয়ে মনের অজান্তেই অঝোরে স্রোত বয়ে যাচ্ছে। চিৎকার করে কান্না করতে মন চাচ্ছে; হয়েছেও বটে। তিন অক্ষরের "বিদায়" শব্দটি সত্যিই যন্ত্রণার। বাইতুল্লাহ থেকে পৃথক হওয়ার সময় একই রকম অনুভুতি কাজ করেছিল। তবে বাইতুল্লাহ থেকে তার হাবিবের কাছে যাচ্ছি বলে ভারাক্রান্ত হৃদয়কে বোঝ দেওয়া সম্ভবপর হয়েছিল। কিন্তূ এখন যে তার হাবিব থেকে, এই পবিত্র ভূমি থেকে একেবারেই আলাদা হয়ে যাওয়ার পালা!
বিষণ্ণ মণে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে "আসর নামায" পরে পয়গাম্বরে জিশান, সারকারে দো আলাম, পেয়ারা নবীকে বিদায়ী সালাম দিতে তার রওজার দ্বারস্ত হলাম। আজকের সালামের লাইনটা ছিল অন্যদিনের থেকে তুলনামূলক অনেক লম্বা এবং ভিড়। আস্তে আস্তে সায়্যিদিল কাওনাইনের রওজার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। চারদিকে শুধু দুরুদ-সালামের ধ্বনি বুলন্দ হচ্ছে। লাইনে থাকা অধিকাংশ লোকগুলোর চোখগুলো পানিতে টলমল করছে। আর কেউবা কান্নায় ভেঙে পড়ছে। তাদের এই দৃশ্য অবলোকন করে ব্যাথিত হৃদয় দুয়ারে পূনরায় উত্তাল শুরু হয়ে গেল। হয়তবা তারা সবাই-ই এই অধমের ন্যায় বিদায়ী সালাম অর্পণ করতে দুনো জাহানের সরদারের দরবারে হাজির হয়েছেন।
পেয়ারা নবীকে সালাম দিয়ে আশ-পাশটা একটু হেঁটে হেঁটে দেখে মসজিদে নববীর ভিতরে ঢুকে পড়লাম। এশা অব্দি ভিতরে মনিবের সান্নিধ্যে থেকে নামায পরে বাহিরে হের হলাম। অবোঝ মনে এদিক ওদিক হেঁটে বেড়াচ্ছি। মনটা বড়ই ছটফট করছে। দু এক কদম ফেলতেই আঁখি দুটো সবুজ গম্বুজের দিকে চলে যাচ্ছে। আর চোখ দিয়ে বিদায়ী অশ্রুজল তার নিজ গতিতে নেমেই চলেছে। সবুজ গম্বুজের সাথে গড়ে উঠা নিবিড় সম্পর্ক যে, আমাকে বিদায়ী যন্ত্রণায় কাবু করে রেখেছে। তাই তো আঁখি দুটো সরানো যে বড়ই দায় হয়ে যাচ্ছে। হবেই বা না কেন!? দরিয়ার ন্যায় বিশাল এই হৃদয় পিন্ড যেন নিমিষেই সংকীর্ণ হয়ে আসছে। এর উপর যে, বঙ্গোপসাগরের উত্তাল সমপরিমাণ ঢেউ প্রবহমান। উত্তাল ঢেউয়ের সলিউশন অজানা।
এমনতাবস্থায় আনমনা হয়ে বাবু-স সালাম (মসজিদে নববীর বাউন্ডারির টা) দিয়ে বের হয়ে মসজিদে গামামার সামনে দিয়ে কুবার (মসজিদে কুবা) দিকে অগ্রসর হলাম। হাঁটতে যে বড়ই কষ্ট হচ্ছিল। পা গুলো কেমন জানি সামনে কদম ফেলতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। কচ্ছবের গতিতে হাটা যে আমার গন্তব্যে পৌছাতে বাঁধা হয়ে ধারাবে। কারণ, হাতে যে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মত সময় আছে। অবশেষে সেটাই হলো, যেটা আগে ভেবেছিলাম। ধীর গতিতে হাটা আমার গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশেষে মাঝ পথ থেকে পুনরায় রওজার দিকে রুজু হলাম।
জীবনের কিছু চির বাস্তবতা রয়েছে। ফিরতে হবে আপন নীড়ে। যার কারণে রুজু করতেই হবে। কারণ ফ্লাইটের সময়টাও ঘনিয়ে আসছিল। এসে প্রিপারেশন নিয়ে পুনরায় তুরষ্কের উদ্দেশ্যে মদিনা এয়ারপোর্টের দিকে অগ্রসর হতে হবে। তাই তো ব্যাথিত হৃদয় শায় না দিলেও চির বাস্তবতার তাগিদে গন্তব্যে পৌঁছাতেই হবে।
পেয়ারা নবী থেকে এখন বিদায় নেওয়ার পালা। দূর থেকে অশ্রুসিক্ত আঁখিতে সালাম বিনিময় করে পূনরায় আসার আর্জি পেশ করে মসজিদে নববী থেকে আল বিদা। আবার দেখা হবে কোন এক সুবহে সাদিকের পর আলোকিত দিনে অথবা পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্তমিত যাওয়ার পরে পূর্ণিমার চাঁদের আলোতে তাহাজ্জুদের আগ মুহূর্তে এই প্রত্যাশায় ইনশা আল্লাহ্।