08/18/2024
মওলানা ভাসানী ও তার রাজনীতি
১৯৪৭ সালের পরপরই পাকিস্তান রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক চেহারা প্রকাশ পেতে দেরি হয়নি। ধর্মীয় পরিচয়ে রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রতি কোনো সুবিচার করেনি পাকিস্তানি শাসকশ্রেণি। জনগণের ভাষা, স্বায়ত্তশাসন, ভোটাধিকার ও অর্থনৈতিক প্রগতির প্রশ্নে শুরু থেকেই শাসকরা উদাসীন ছিল। রাষ্ট্রের নীতি প্রণয়নের সময় তারা গণতান্ত্রিক আচরণের কোনো পরোয়া করেনি। মুসলিম লীগকে জনগণের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্ব বাংলার নেতা-কর্মীরা উদ্যোগ নিয়ে কায়েমি স্বার্থের কারণে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নতুন রাষ্ট্রে নতুন ভাবনাচিন্তা থেকে সংগঠনকে সম্প্রসারিত করতে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সংগঠনের গণভিত্তি দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। বরং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিত্তশালী ও সামন্তবাদী ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
মুসলিম লীগের গণবিরোধী চেহারা প্রকাশিত হলে ১৯৪৯ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে দেশে প্রথম বিরোধী রাজনীতি শুরু হয়। যে মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার বিরোধিতা করার কাজটি সহজ ছিল না সে সময়। কিন্তু ভাসানী তা সম্ভব করেছিলেন। আসামে থাকাকালীন তিনি প্রাদেশিক সরকারের তরফ থেকে নানা বাধা পেয়েও রাজনৈতিক কাজ করে সফলতা পেয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে লাইন প্রথার বিরুদ্ধে বাঙালি কৃষকের সংগ্রাম যেমন সফল হয়েছিল তেমনিভাবে আসাম মুসলিম লীগ সংগঠিত হয়েছিল। সংগঠন ও সংগ্রাম, উভয় ক্ষেত্রে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা তাকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহস জুগিয়েছিল।
আবদুল হামিদ খানের নামের শেষে ‘ভাসানী’ পদবি কুড়িয়ে পাওয়া কোনো নাম নয়। ‘ভাসানী’ তার আসল নামের অংশও ছিল না। বাংলাদেশের কয়েকজন নেতার নামের সঙ্গে উপাধি হিসেবে কিছু শব্দ জড়িয়ে আছে। এ কে ফজলুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি করতে গিয়ে যথাক্রমে শেরেবাংলা ও বঙ্গবন্ধু উপাধি অর্জন করেছিলেন। আসামের ‘ভাসান’ চর থেকে ভাসানীর সংগ্রাম শুরুর সময় শব্দটা তার আসল নামের থেকে বড় হয়ে উঠেছিল। তার আরেকটা পদবি ‘মজলুম জননেতা’। শুধু তার রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্যই নয়, বরং কৃষক-শ্রমিক-শ্রমজীবী মানুষের সামনে থেকে তাদের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে এই উপাধি তাকে দেয়া হয়েছে।
সমগ্র জীবনে মওলানা ভাসানী শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করেননি। তিনি জানতেন যে মানুষের সংগ্রামী চেতনা তাদের অধিকার আদায়ে একমাত্র অস্ত্র হতে পারে। এই উপলব্ধি তাকে পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা থেকে আলাদা করেছিল। আয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠক সেই সময়ে মানুষের সংগ্রামকে ভুল পথে চালিত করতে পারে বুঝতে পেরে তিনি সেই বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভাসানীর ধারণাই সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল। গোলটেবিল আলোচনা থেকে কোনো ফল আসেনি। বরং এক সামরিক স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতা নতুন সামরিক স্বৈরাচারী শাসক ইয়াহিয়া খানের হাতে হস্তান্তরিত হয়েছিল।
ভাসানী তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এক মক্তবের শিক্ষক হিসেবে। তিনি মক্তবের শিক্ষক হিসেবে ঝামেলামুক্ত সুন্দর জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে আমৃত্যু এক সংগ্রামীর জীবনযাপন করে গেলেন। প্রথমে আসাম এবং পরে পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে তার মধ্যেই কাটিয়ে দিতে পারতেন তার সময়। কিন্তু তিনি তার জীবন শুরুই করেছিলেন পুঁজিবাদবিরোধী হিসেবে। তাই সেই মানুষের কাছে সাধারণ আটপৌড়ে জীবন কখনোই কাম্য হতে পারে না।
১৯৪৭ সালের পরপরই পাকিস্তান রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক চেহারা প্রকাশ পেতে দেরি হয়নি। ধর্মীয় পরিচয়ে রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রতি কোনো সুবিচার করেনি পাকিস্তানি শাসকশ্রেণি। জনগণের ভাষা, স্বায়ত্তশাসন, ভোটাধিকার ও অর্থনৈতিক প্রগতির প্রশ্নে শুরু থেকেই শাসকরা উদাসীন ছিল। রাষ্ট্রের নীতি প্রণয়নের সময় তারা গণতান্ত্রিক আচরণের কোনো পরোয়া করেনি। মুসলিম লীগকে জনগণের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্ব বাংলার নেতা-কর্মীরা উদ্যোগ নিয়ে কায়েমি স্বার্থের কারণে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নতুন রাষ্ট্রে নতুন ভাবনাচিন্তা থেকে সংগঠনকে সম্প্রসারিত করতে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সংগঠনের গণভিত্তি দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। বরং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিত্তশালী ও সামন্তবাদী ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
মুসলিম লীগের গণবিরোধী চেহারা প্রকাশিত হলে ১৯৪৯ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে দেশে প্রথম বিরোধী রাজনীতি শুরু হয়। যে মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার বিরোধিতা করার কাজটি সহজ ছিল না সে সময়। কিন্তু ভাসানী তা সম্ভব করেছিলেন। আসামে থাকাকালীন তিনি প্রাদেশিক সরকারের তরফ থেকে নানা বাধা পেয়েও রাজনৈতিক কাজ করে সফলতা পেয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে লাইন প্রথার বিরুদ্ধে বাঙালি কৃষকের সংগ্রাম যেমন সফল হয়েছিল তেমনিভাবে আসাম মুসলিম লীগ সংগঠিত হয়েছিল। সংগঠন ও সংগ্রাম, উভয় ক্ষেত্রে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা তাকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহস জুগিয়েছিল।
আবদুল হামিদ খানের নামের শেষে ‘ভাসানী’ পদবি কুড়িয়ে পাওয়া কোনো নাম নয়। ‘ভাসানী’ তার আসল নামের অংশও ছিল না। বাংলাদেশের কয়েকজন নেতার নামের সঙ্গে উপাধি হিসেবে কিছু শব্দ জড়িয়ে আছে। এ কে ফজলুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি করতে গিয়ে যথাক্রমে শেরেবাংলা ও বঙ্গবন্ধু উপাধি অর্জন করেছিলেন। আসামের ‘ভাসান’ চর থেকে ভাসানীর সংগ্রাম শুরুর সময় শব্দটা তার আসল নামের থেকে বড় হয়ে উঠেছিল। তার আরেকটা পদবি ‘মজলুম জননেতা’। শুধু তার রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্যই নয়, বরং কৃষক-শ্রমিক-শ্রমজীবী মানুষের সামনে থেকে তাদের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে এই উপাধি তাকে দেয়া হয়েছে।
সমগ্র জীবনে মওলানা ভাসানী শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করেননি। তিনি জানতেন যে মানুষের সংগ্রামী চেতনা তাদের অধিকার আদায়ে একমাত্র অস্ত্র হতে পারে। এই উপলব্ধি তাকে পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা থেকে আলাদা করেছিল। আয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠক সেই সময়ে মানুষের সংগ্রামকে ভুল পথে চালিত করতে পারে বুঝতে পেরে তিনি সেই বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভাসানীর ধারণাই সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল। গোলটেবিল আলোচনা থেকে কোনো ফল আসেনি। বরং এক সামরিক স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতা নতুন সামরিক স্বৈরাচারী শাসক ইয়াহিয়া খানের হাতে হস্তান্তরিত হয়েছিল।
ভাসানী তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এক মক্তবের শিক্ষক হিসেবে। তিনি মক্তবের শিক্ষক হিসেবে ঝামেলামুক্ত সুন্দর জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে আমৃত্যু এক সংগ্রামীর জীবনযাপন করে গেলেন। প্রথমে আসাম এবং পরে পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে তার মধ্যেই কাটিয়ে দিতে পারতেন তার সময়। কিন্তু তিনি তার জীবন শুরুই করেছিলেন পুঁজিবাদবিরোধী হিসেবে। তাই সেই মানুষের কাছে সাধারণ আটপৌড়ে জীবন কখনোই কাম্য হতে পারে না।
উল্লেখ করা দরকার, নিতান্ত পেশাগত কারণে মওলানা ভাসানী প্রথমে আসামে গেলেও কালক্রমে বাঙালি কৃষকদের অধিকারের পক্ষে তাদের সংগঠিত করতে গিয়ে তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তি হয়ে উঠলেন। তার কোনো রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু ছিল না। পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাকে রাজনীতি শিক্ষা দিয়েছিল। একজন ভূমিহীন কৃষকের সন্তান হিসেবে তার পক্ষে কৃষকদের দৈনন্দিন জীবনের কষ্ট বোঝা খুবই স্বাভাবিক ছিল। তাই আসামে গিয়ে কৃষকদের সংগঠিত করে যে রাজনীতি শুরু করলেন তা পাকিস্তান যুগেও অব্যাহত রেখেছিলেন। কৃষকদের বাইরে অন্যান্য শ্রমজীবীর সঙ্গে তার ওঠা-বসা ছিল। তাদের রাজনীতি তাকে আকৃষ্ট করত। একসময় তিনি শ্রমিক সংগঠনে ভূমিকা রাখতে শুরু করলেন।
মুসলমান কৃষকদের কাছে মওলানা ভাসানীর ভাবমূর্তি ছিল এক ধর্মীয় নেতা, তথা পিরের। তাদের তিনি পানি পড়া দিতেন। তবে একই সঙ্গে তাদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শও দিতেন। এতে প্রমাণ হয় যে, তার পির পরিচয় থাকলেও তিনি নিজে পিরগিরিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। অধিকার আদায় করতে তাদের সংগঠনের ভেতর কাজ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছিলেন। আসামে মুসলিম লীগের রাজনীতি তার হাতে সূত্রপাত হয়েছিল। কালক্রমে মুসলিম লীগকে এই অঞ্চলে সংগঠিত করার দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত হয়েছিল।
মওলানা ভাসানী সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদবিরোধী নেতা ছিলেন। এ কারণে নিজে কমিউনিস্ট না হয়েও কমিউনিস্টদের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি আওয়ামী লীগ গঠনে শীর্ষ নেতৃত্বের একজন হলেও রক্ষণশীল ও সাম্রাজ্যবাদের অনুগতদের সঙ্গে একই দলে থাকা অসম্ভব হওয়ায় তিনি প্রগতিশীল ও কমিউনিস্টদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কাগমারি সম্মেলনে ১৯৫৭ সালে তার দেয়া বক্তব্যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদ অনুগত বিদেশনীতির সমালোচনা ছিল। ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা চুক্তি করার ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘যত কঠিন বাধা আসুক না কেন, আমি পাকিস্তানের জনগণের ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির জন্য সংগ্রাম করে যাব’। কাগমারিতে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিতর্কের ফলে দলে ভাঙন তৈরি হয়েছিল। তিনি আওয়ামী লীগের কমিউনিস্ট ও বামপন্থি কর্মীদের নিয়ে ন্যাপ গঠন করেছিলেন।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভেতর আঞ্চলিক বৈষম্যের বিষয়টি ভাসানীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ১৯৪৮ সালে ব্যবস্থাপক সভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি পাট রপ্তানির টাকা থেকে পূর্ব বাংলাকে বঞ্চিত করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। তার সেই বক্তৃতায় তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, বাঙালিরা কি ‘গোলাম’ যে তাদের বঞ্চিত করা হবে? কাগমারি সম্মেলনে তিনি আঞ্চলিক বৈষম্যের প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, প্রয়োজনে বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ জানাবে। তার এ উক্তির মধ্যে প্রয়োজনে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ইঙ্গিত ছিল।
মওলানার রাজনৈতিক শত্রুরা তাকে ‘জ্বালাও-পোড়াও’ রাজনীতির প্রবর্তক বলেছেন। বিদেশি সাংবাদিকরা তাদের প্রতিবেদনে তাকে ‘প্রফেট অব ভায়োলেন্স’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি কি আদতে সহিংস নীতির পক্ষে ছিলেন? তার রাজনৈতিক সংগ্রামে কোনো আপস না করার নীতি তাকে এভাবে ভুল ব্যাখ্যা করার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রাক্কালে কৃষকদের প্রতি হাট অবরোধ ও ঘেরাও করার আহ্বান-পরবর্তী সময়ের বিশাল আন্দোলনে ইন্ধন দিয়েছিল।
ভাসানী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভারত সরকারের বাংলাদেশ নীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন। গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য ভাগাভাগির দাবিতে তিনি অবিচল ছিলেন। মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগেও ফারাক্কা মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন একই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। তাকে অনেকে ভারতবিরোধী বলে থাকেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনার প্রসঙ্গ উঠলে বাংলাদেশের একশ্রেণির মানুষ বিরোধিতাকারীদের সাম্প্রদায়িক ও ভারতবিরোধী বলতে কুণ্ঠিত হয় না।
মৃত্যুর পর ইতিহাসের পাতা থেকে মওলানা ভাসানীকে মুছে দেয়ার কিছু প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ভাসানী। অথচ সেই আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করে না। মওলানা ভাসানীর রাজনীতির একসময়ের তরুণ সমর্থকদের একটা অংশ পরবর্তীকালে ক্ষমতাপ্রত্যাশী হয়ে তার আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এমনও লক্ষ করা যায় যে বিভিন্ন আলোচনা সভায় মওলানার রাজনীতির ইতিবাচক মূল্যায়নকারী বুদ্ধিজীবীরা বর্তমান রাষ্ট্রীয় কাঠামো টিকিয়ে রাখার উদ্যোগে শাসকদের ডাকে আলোচনায় সাড়া দেন!
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাবেক সভাপতি।