06/27/2025
অনুভূতি: অস্তিত্বের প্রতিধ্বনি
প্রিয় বন্ধুরা,
আজ আমি আবারও আপনাদের সামনে 'অনুভূতি' নিয়ে কথা বলতে এসেছি, তবে এবার এমন একটি দিক নিয়ে যা প্রায়শই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। অনুভূতি কেবল আমাদের ভেতরের অবস্থা নয়, এটি আমাদের চারপাশের জগতের সাথে সংযোগ স্থাপনের সেতু।
আমরা অনেকেই মনে করি, অনুভূতি মানেই হলো ব্যক্তিগত এক অভিজ্ঞতা, যা শুধু আমাদের মনের গভীরে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আসলে তা নয়। আপনার হাসি যখন অন্যের মুখে হাসি ফোটায়, আপনার সহমর্মিতা যখন অন্যের দুঃখ লাঘব করে, কিংবা আপনার দৃঢ়তা যখন অন্যকে অনুপ্রাণিত করে – তখন অনুভূতি আর শুধু ব্যক্তিগত থাকে না, তা হয়ে ওঠে সমষ্টিগত।
কল্পনা করুন একটি সমাজ যেখানে কারো কোনো অনুভূতি নেই। সেখানে কি সহানুভূতি থাকবে? দয়া থাকবে? ভালোবাসা থাকবে? না, কিছুই থাকবে না। সেই সমাজ হবে যন্ত্রের মতো প্রাণহীন। আমাদের অনুভূতিই আমাদের মানবিকতা, আমাদের ভেতরের আলো। এই আলো দিয়েই আমরা একে অপরের সাথে যুক্ত হই, একে অপরের দুঃখ-সুখে অংশীদার হই।
আমরা যখন কোনো শিল্পকর্ম দেখি – হতে পারে একটি ছবি, একটি গান, বা একটি নৃত্য – তখন আমরা তার পেছনে থাকা শিল্পীর অনুভূতিগুলোকে অনুভব করি। সেই অনুভূতিগুলোই আমাদের হৃদয়ে প্রবেশ করে, আমাদের মনকে ছুঁয়ে যায়। এভাবেই অনুভূতিগুলো এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়, সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে।
প্রায়শই আমরা আমাদের অনুভূতিগুলোকে সঠিক উপায়ে প্রকাশ করতে দ্বিধা করি। হয়তো ভয়ে, হয়তো লোকলজ্জায়। কিন্তু মনে রাখবেন, অনুভূতি প্রকাশ করা দুর্বলতা নয়, বরং এটি আমাদের ভেতরের সততা এবং সাহসের পরিচয়। যখন আপনি আপনার অনুভূতিগুলোকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে শিখবেন, তখন আপনার সম্পর্কগুলো আরও গভীর হবে, আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং আপনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।
কিন্তু অনুভূতি প্রকাশেরও একটি ভারসাম্য প্রয়োজন। যেমন, রাগ একটি স্বাভাবিক অনুভূতি, কিন্তু সেই রাগকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ না করি এবং তা যদি সহিংসতায় রূপান্তরিত হয়, তবে তা ধ্বংসাত্মক হতে পারে। আবার, দুঃখ একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, কিন্তু সেই দুঃখে যদি আমরা ডুবে যাই এবং তা আমাদের কর্মশক্তিকে নষ্ট করে দেয়, তবে তা ক্ষতিকারক হতে পারে।
এজন্যই অনুভূতির সঠিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে হলো, অনুভূতিগুলোকে চিনতে শেখা, সেগুলোকে গ্রহণ করা, কিন্তু তাদের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত না হওয়া। এর অর্থ হলো, যখন কোনো নেতিবাচক অনুভূতি আপনাকে গ্রাস করতে চায়, তখন আপনি সচেতনভাবে সেই অনুভূতিকে ভিন্ন পথে চালিত করতে পারবেন, অথবা তার থেকে শেখার সুযোগ খুঁজতে পারবেন।
আসুন, আমরা আমাদের অনুভূতিগুলোকে উদযাপন করি। আনন্দকে উপভোগ করি, দুঃখ থেকে শিখি, রাগ থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি পাই, আর ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীটাকে আরও সুন্দর করি। প্রতিটি অনুভূতিই আমাদের জীবনের গল্পকে সমৃদ্ধ করে তোলে।
অনুভূতি আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। তারা আমাদের শেখায় কে আমরা, কি চাই আমরা, আর কীভাবে আমরা আরও ভালো মানুষ হতে পারি। তারা আমাদের শেখায় কিভাবে আমরা একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারি।
আপনার অনুভূতিগুলো আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাদের লালন করুন, তাদের সম্মান করুন এবং তাদের মাধ্যমে আপনার জীবনকে আলোকিত করুন।
ধন্যবাদ।